শিরোনাম: ন্যায় বিচারের আলোয় একটি জনপদ
![]() |
ইসলামিক ন্যায়বিচার ও তওবার শক্তি নিয়ে সমাজের পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি।" |
প্রথম অধ্যায়: শান্ত জনপদ
বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম হরিনগর। সবুজ ফসলের ক্ষেত, পাখির ডাক, আর নদীর কুলকুল ধ্বনি ঘেরা এই গ্রামে মানুষজন একে অপরকে ভাই-বোনের মতো ভালোবাসে। কিন্তু কিছু অন্ধকার শক্তি মাঝে মাঝে এই শান্তিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করে।
আয়েশা, গ্রামের একজন সম্মানিত নারী। বয়স একুশের কাছাকাছি, মধুর আচরণ আর ধার্মিক জীবনযাত্রার জন্য সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। তিনি কোরআন তিলাওয়াত করতেন এবং গ্রামের নারীদের ইসলামিক শিক্ষা দিতেন। তার স্বামী জুবায়ের ছিলেন একজন সৎ ব্যবসায়ী। তারা একসঙ্গে গ্রামের মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়: বিপদ ঘনিয়ে আসে
একদিন আয়েশা গ্রামের পাশের জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করতে যান। দুপুরবেলা, রোদের তীব্রতা কমতে শুরু করেছে। হঠাৎ তিনি বুঝতে পারেন, কেউ একজন তাকে অনুসরণ করছে। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পান একজন অচেনা পুরুষ। লোকটি দেখতে ভয়ানক, তার চোখে হিংস্রতার ছাপ।
লোকটি ধীরে ধীরে আয়েশার দিকে এগিয়ে আসে এবং তাকে চেপে ধরার চেষ্টা করে। আয়েশা ভয়ে চিৎকার করে বলেন, "ইয়া আল্লাহ! আমাকে রক্ষা করুন।"
কোরআনের এই আয়াত তার মনে পড়ে:
"যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।" (সুরা তালাক: ২-৩)
আয়েশার চিৎকার শুনে পাশের মাঠে কাজ করা নারীরা ছুটে আসে। লোকটি পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু গ্রামের পুরুষরা ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। তারা লোকটিকে ধরে ফেলে।
তৃতীয় অধ্যায়: ন্যায়বিচারের অপেক্ষা
গ্রামের মোড়ল জাকির সাহেব তখন উপস্থিত হন। গ্রামের প্রধান বিচার সভা ডাকা হয়। সবার সামনে লোকটিকে আনা হয়।
জাকির সাহেব বলেন, "ইসলামের আলোকে অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করতেই হবে।" তিনি কোরআনের একটি আয়াত পড়ে শোনান:
"তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কর এবং আল্লাহর ভয় করো।" (সুরা নিসা: ৫৮)
অপরাধী প্রথমে তার দোষ অস্বীকার করলেও পরে গ্রামবাসীর চাপ ও প্রমাণের ভিত্তিতে স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
চতুর্থ অধ্যায়: তওবা ও শিক্ষা
গ্রামবাসীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, লোকটিকে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি তার প্রতি ইসলামের জ্ঞান ছড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাকির সাহেব বলেন, "তওবা করার দরজা কখনও বন্ধ হয় না।"
আয়েশ বলেন, "পাপের পথ থেকে সরে এসে যদি কেউ আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল।"
অপরাধী তার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। গ্রামের মসজিদের ইমাম তাকে শিখিয়ে দেন কিভাবে ইসলামের পথে ফিরে আসতে হবে।
পঞ্চম অধ্যায়: পরিবর্তনের সূচনা
এই ঘটনার পর, আয়েশা গ্রামের নারীদের আত্মরক্ষা শেখানোর জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন। তিনি ইসলামের আলোকে নারীদের শিক্ষিত এবং সচেতন করার জন্য উদ্যোগ নেন। জুবায়ের ও গ্রামের যুবকেরা অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য একটি সংগঠন গঠন করেন।
গ্রামে এমন পরিবর্তন আসে যা সবাইকে আলোর পথে নিয়ে যায়। কেউ আর অপরাধের সাহস করে না। আয়েশা বলেন,
"যে আল্লাহর পথে চলবে, তার জীবনে শান্তি আসবেই।"
কোরআনের আরেকটি আয়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন,
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।" (সুরা বাকারা: ২২২)
শেষ কথা
গল্পটি থেকে একটি শিক্ষা স্পষ্ট:
পাপ ও অপরাধ কখনও স্থায়ী হয় না। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ন্যায়বিচারের জন্য এগিয়ে গেলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
লেখক: মাওলানা মোঃ সাকিব