নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৬ (১ম অংশ)
![]() |
আলমাছ প্রশ্ন করেছিল—“পরকাল কিভাবে বাস্তব?” শায়খ আব্দুর রাজ্জাক তার মনোজ্ঞ জবাবে তুলে ধরেছেন পরকালের সত্যতা, ন্যায়বিচার, ও আত্মার প্রয়োজনীয়তা। |
“পরকাল আছে, সেটা আপনি কীভাবে প্রমাণ করবেন?”
আলমাছ এবার একটু ব্যঙ্গ মিশিয়ে বলল—
“শায়খ, একটা প্রশ্ন ছিল। আপনি সব সময় বলছেন পরকাল, কিয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম...
কিন্তু এগুলোর তো কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই!
আপনি কীভাবে বিশ্বাস করেন এমন কিছু, যা কেউ কখনো দেখেনি?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক তার সাদা দাঁড়িগুলোতে হাত বুলিয়ে হাসলেন।
তার চোখে মমতা, কিন্তু কথায় দৃঢ়তা—
“তুমি বলেছ—দেখিনি, তাই বিশ্বাস করি না।
তবে বলো তো, তুমি কি কখনো তোমার দাদার দাদাকে দেখেছ?”
আলমাছ একটু থমকে গেল, তারপর বলল—
“না, দেখিনি। তবে তার অস্তিত্ব ছিল—
কারণ আমি আছি।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“ঠিক তাই! তুমি দেখোনি, কিন্তু প্রমাণ তোমার মধ্যেই রয়েছে।
এভাবে বহু জিনিস আছে, যা আমরা দেখিনি—
তবুও স্বীকার করি, কারণ তার চিহ্ন, তার নিদর্শন রয়ে গেছে।”
অদৃশ্য জগৎ ও বাস্তবতা: বিজ্ঞান কি সব কিছু বুঝে ফেলে?
“বলো তো আলমাছ, মনের ব্যথা তুমি কখনো মাপো?
ভালোবাসা কি কোনো পরীক্ষাগারে ধরা পড়ে?”
আলমাছ একটু গম্ভীর হয়ে বলল—
“না, তবে সেটা অনুভব করি।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“তুমি যেটা অনুভব করো, সেটা বাস্তব নয় কি?
আচ্ছা, তাহলে মৃত্যুর পরের জীবন যদি শুধু অনুভবেই ধরা দেয়—
তাহলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি ঠিক?”
আলমাছ এবার চুপচাপ।
তার চোখে যেন কৌতূহল—
“আচ্ছা, তাহলে আপনি বলেন, পরকালের অস্তিত্বের পক্ষে কী প্রমাণ আছে?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“সেটাই বলবো। কিন্তু তার আগে বলো, তুমি কি বিশ্বাস করো—
এই পৃথিবী একদিন শেষ হবে?”
আলমাছ বলল—
“হ্যাঁ, এটা তো বিজ্ঞানেও বলা হয়েছে। একদিন সূর্য নিভে যাবে,
জীবন ধ্বংস হবে।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“তাহলে মৃত্যুর পর কি নিঃশেষ, না কি নতুন এক শুরু?
এই প্রশ্নের উত্তর না পেলে তোমার অস্তিত্বের অর্থই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।”
(চলবে... ২য় অংশে আসছে পরকালের প্রমাণ, কোরআনের যুক্তি ও জবাব)
নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৬ (২য় অংশ)
“পরকাল শুধু বিশ্বাস না, এটা এক কঠিন বাস্তবতা”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার নিজের ছোট ব্যাগ থেকে একটা ছোট কুরআন বের করলেন।
তিনি পৃষ্ঠা উল্টে বললেন—
“আল্লাহ তাআলা বলেন—
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ
‘তোমরা কি মনে করো, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি শুধু খেলা-তামাশার জন্য?
এবং তোমরা আমার দিকে ফিরে যাবে না?’”
(সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত ১১৫)
আলমাছ এবার চুপ। শায়খ কথা চালিয়ে গেলেন—
“এই আয়াতটা কেবল ভয় দেখানোর জন্য না।
এটা একটা প্রশ্ন—যার উত্তর দিতে হয় আত্মার গভীর থেকে।
এই জীবন যদি শুধু খাওয়া, ঘুম, চাকরি—তাহলে তা পশুর জীবন থেকে আলাদা কী?”
আলমাছ ধীরে ধীরে বলল—
“তা ঠিক, কিন্তু পরকালকে কিভাবে বাস্তব বলবেন?”
পরকালের যুক্তি – আত্মা, ন্যায়বিচার ও স্রষ্টার উদ্দেশ্য
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“তুমি কি বিশ্বাস করো যে, এই পৃথিবীতে সব মানুষ সমান ন্যায়বিচার পায়?”
আলমাছ বলল—
“না, বরং জালিমরা অনেক সময় পার পেয়ে যায়।”
“তবে কি তুমি বিশ্বাস করো—একজন শিশু ধর্ষক, একজন গণহত্যাকারী,
সব পাপ করে মরে গেলেও সে চিরতরে শেষ হয়ে যাবে?”
আলমাছ এবার অস্বস্তিতে পড়ে গেল।
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“এই অন্যায়কে যদি কেউ শেষবারের মতো বিচার না করে,
তাহলে তুমি বলো—এই পৃথিবীর স্রষ্টা কি আদৌ ন্যায়বান?”
আলমাছ চুপ করে আছে।
শেষ কথায় শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“তুমি বলেছিলে, ‘পরকাল কিভাবে বাস্তব?’
আমি বলি—যে ব্যক্তি বিচার চায়, যে ন্যায়ের স্বপ্ন দেখে,
যে ভালো কাজ করে প্রতিদান চায়—
তার জন্য পরকাল শুধু বিশ্বাস নয়,
এটা তার আত্মার প্রয়োজন, এটা বাস্তবতা।”
আলমাছ বলল—
“আপনার কথাগুলো আমার মনে লাগছে…
তবে আমাকে সময় দিন, আমি ভাবতে চাই।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন।
“ইসলাম জোর করে বিশ্বাস করে না, সে আলো দেখায়।
তুমি দেখো, বোঝো, তারপর হৃদয়ে স্থান দাও।”
(চলবে... খণ্ড ৭-এ থাকছে নাস্তিক আলমাছের নতুন প্রশ্ন: “আল্লাহ দয়ালু হলে জাহান্নাম কেন?”)
লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"