GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

অজানা সত্যের দরজায় – পর্ব ৩২ | সত্যের সন্ধানে হাসান ও জাবের

 

পর্ব ৩২: অজানা সত্যের দরজায় (১ম অংশ)

“একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুই তরুণ, অন্ধকার রাত, এক রহস্যময় বৃদ্ধ তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।”
“হাসান ও জাবের সত্যের পথে এক নতুন রহস্যের মুখোমুখি হলো।”


রাত গভীর। সারা শহর নিস্তব্ধ।

হাসান আর জাবের ছুটতে ছুটতে একটা পুরনো গলির ভেতর ঢুকে পড়লো। তারা দুজনেই হাঁপাচ্ছে, পেছনে শত্রুর ধাওয়ার শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না।

আমরা কি এখন নিরাপদ?” জাবের ফিসফিস করে বললো।

হাসান চারপাশ দেখলো। অন্ধকার গলি, পুরনো বাড়িগুলো যেন একটা রহস্য লুকিয়ে রেখেছে।

“কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের দ্রুত বইয়ের দোকানে পৌঁছাতে হবে।”

রহস্যময় দোকান

এই পুরনো শহরের মাঝখানে একটা অদ্ভুত বইয়ের দোকান আছে, যেখানে সাধারণত রাতেও আলো জ্বলে থাকে।

সেখানে কিছু বিরল বই পাওয়া যায়, যেগুলোতে এমন সব তথ্য আছে, যা অনেকেই জানতে চায় না।

হাসান আর জাবের সাবধানে দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

একটা কাঠের বোর্ডে লেখা—

“আলোর পথের সন্ধান”

জাবের অবাক হয়ে বললো, “এটা তো একটা সাধারণ বইয়ের দোকান নয়! এখানে কী আছে?”

হাসান দরজায় হাত রাখলো, ধাক্কা দিলো।

কড়াৎ!

দরজা নিজের থেকেই খুলে গেলো…

অজানা আতঙ্ক

ভেতরে ঢুকতেই একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে এলো।

কোনো মানুষ নেই, কেবল আলোর নিচে পুরনো ধূলিধূসর বই সাজানো।

হঠাৎ, পেছন থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এলো—

“তোমরা সত্য জানতে চাও?”

হাসান আর জাবের চমকে পেছনে তাকালো!

এক বিদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখে এক রহস্যময় দৃষ্টি।

নতুন ইঙ্গিত

“তোমাদের আসার কথা আগেই জানা ছিল।”

জাবের বিস্মিত হয়ে বললো, “কীভাবে?”

বৃদ্ধ একটা পুরনো বই টেবিলের ওপর রাখলো।

বইটার পাতা উল্টে দিলো হাসানের দিকে।

একটা লাইনে লেখা—

“যারা সত্যের সন্ধানে আসে, তাদের জন্য পথ কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু যারা হাল ছাড়ে না, তারাই শেষ পর্যন্ত আলো খুঁজে পায়।”

হাসান আর জাবের পরস্পরের দিকে তাকালো।

এটা কীসের ইঙ্গিত?

চলবে…



পর্ব ৩২: অজানা সত্যের দরজায় (২য় অংশ)

বৃদ্ধ ধীরে ধীরে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিল। প্রতিটি পাতায় পুরনো আরবি হরফে কিছু লেখা ছিল, যেগুলো ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল।

“এই বইটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?” হাসান জিজ্ঞেস করলো।

বৃদ্ধ গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন, তারপর বললেন, “কারণ এটা এমন কিছু তথ্য বহন করে, যা বদলে দিতে পারে তোমাদের সবকিছু।”

জাবের অবাক হয়ে বললো, “কিন্তু আমরা তো শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি, এর মধ্যে এত রহস্য কেন?”

বৃদ্ধ হাসলেন, তারপর বললেন—

“প্রত্যেক সত্যের পেছনে এক অজানা রহস্য লুকিয়ে থাকে। তোমরা যদি এগিয়ে যেতে চাও, তবে এই সত্যের ভার বহন করার জন্য প্রস্তুত হও।”

সন্দেহ ও সংকেত

হাসান বইটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মনে একটা দ্বিধা জন্ম নিলো।

হঠাৎ বৃদ্ধ বইয়ের মাঝখান থেকে একটা হলুদ রঙের কাগজ বের করে দিলেন।

সেখানে কিছু লেখা ছিল—

“শয়তান তোমাদের ভয় দেখাবে, কিন্তু আল্লাহর পথে যারা থাকে, তারা কখনো পথ হারায় না।” (সূরা আল-ইমরান: ১৭৫)

হাসান আর জাবের একে অপরের দিকে তাকালো।

“তাহলে সত্যের পথেই আমাদের থাকতে হবে, তাই না?” হাসান বললো।

বৃদ্ধ মাথা ঝাঁকালেন।

“কিন্তু মনে রেখো, শয়তান শুধু ভয় দেখায় না, সে ধোঁকাও দেয়।”

গুপ্ত হামলার আশঙ্কা

ঠিক তখনই দরজার বাইরে একটা শব্দ হলো।

ধপ! ধপ!

হাসান দ্রুত পেছনে তাকালো।

কেউ কি ওদের অনুসরণ করছে?

জাবের ফিসফিস করে বললো, “আমরা কি বিপদে পড়তে যাচ্ছি?”

বৃদ্ধ শান্ত স্বরে বললেন, “তোমাদের জন্য সময় খুব কম। যদি সত্য জানতে চাও, তাহলে কাল রাতের আগেই এই কাগজের ইঙ্গিত খুঁজে বের করতে হবে।”

হাসান কাগজটা হাতে নিলো।

সেখানে একটা অদ্ভুত ঠিকানা লেখা ছিল।

“পুরনো শহরের ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ… সেখানেই তোমাদের উত্তর লুকিয়ে আছে।”

নতুন পথে যাত্রা

হাসান আর জাবের বৃদ্ধকে সালাম জানিয়ে বের হয়ে এলো।

কিন্তু দরজার বাইরে পা দিতেই…

হঠাৎ একটা গা ছমছমে অনুভূতি হলো।

কেউ কি সত্যিই তাদের উপর নজর রাখছে?

চলবে…



পর্ব ৩২: অজানা সত্যের দরজায় (৩য় অংশ)

রাত নেমেছে, কিন্তু অন্ধকার যেন আরও ঘন হয়েছে।

হাসান আর জাবের দ্রুত পা চালিয়ে গলির শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়ালো। পেছনে কেউ আছে কি না, সেটা বোঝার জন্য একবার ঘুরে তাকালো হাসান।

কেউ নেই।

কিন্তু মনে হচ্ছে, যেন কারও নজরদারির মধ্যেই আছে তারা।

“হাসন, তুমি কি নিশ্চিত যে আমাদের ওখানে যাওয়া উচিত?” জাবের ধীরে বলল।

“আমাদের কাছে আর কোনো উপায় নেই। আমরা যদি সত্য জানতে চাই, তাহলে যেতে হবে।” হাসান দৃঢ় স্বরে বলল।

ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের পথে

হাসান ও জাবের শহরের পুরনো অংশের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

একসময় তারা এমন একটা জায়গায় পৌঁছাল, যেখানে বাতি নেই, মানুষ নেই—শুধু ভাঙাচোরা দালান আর ধুলোমাখা পথ।

সামনে একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেলো।

“এটাই সেই জায়গা।” হাসান ফিসফিস করে বলল।

অদ্ভুত ছায়া

মসজিদের সামনে পৌঁছাতেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো।

চারপাশ নিস্তব্ধ ছিল, কিন্তু হঠাৎ বাতাস বইতে শুরু করলো।

একটা দীর্ঘ ছায়া দূরে নড়াচড়া করলো।

হাসান দ্রুত জাবেরের হাত চেপে ধরলো।

“কেউ একজন আমাদের দেখছে।”

জাবের গিলে ফেললো তার লালারস।

“আমরা কি ফিরে যাবো?”

হাসান মাথা নাড়লো। “না, আমরা সামনে এগোবো।”

প্রবেশ

তারা ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের ভেতরে ঢুকলো।

ভেতরটা অন্ধকার, মাটিতে ধুলো জমে আছে।

হঠাৎ একটা ফিসফিস করা কণ্ঠ ভেসে এলো—

“তোমরা কি সত্য জানতে চাও?”

হাসান আর জাবের থমকে দাঁড়ালো।

চারপাশে কেউ নেই, কিন্তু কণ্ঠটা যেন খুব কাছ থেকেই আসছে।

জাবের আতঙ্কিত হয়ে হাসানের দিকে তাকালো।

“এটা কি আমাদের জন্য ফাঁদ?”

হাসান গভীর শ্বাস নিলো।

“কিন্তু আমাদের সামনে এগোতেই হবে।”

চলবে…



পর্ব ৩২: অজানা সত্যের দরজায় (৪র্থ অংশ)

ভেতরে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। বাতাসে ধুলোর গন্ধ, ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের মেঝেতে পায়ের নিচে শুকনো পাতা মচমচ করছে।

হাসান আর জাবের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।

হঠাৎ আবার সেই কণ্ঠ ভেসে এলো—

“তোমরা কি সত্য জানতে প্রস্তুত?”

এবার হাসান দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “হ্যাঁ! আমরা সত্য জানতে চাই।”

তখনই একটা ছায়ামূর্তি অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে সামনে এলো।

অজানা পথিক

চাঁদের ক্ষীণ আলোয় একজন লম্বা, দুর্বল শরীরের বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন। মুখটা ক্ষীণ আলোর কারণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু তার চোখ দুটো যেন গভীর অন্ধকারের মতো।

তিনি ধীরে ধীরে বললেন—

“তোমরা যে সত্য খুঁজছো, সেটা তোমাদের ধারণার চেয়েও গভীর।”

জাবের ফিসফিস করে বলল, “আপনি কে?”

“আমি একজন পথিক, যে সত্যের সন্ধানে সারাটি জীবন কাটিয়ে দিয়েছে।” বৃদ্ধের কণ্ঠ ছিল ভারী।

গোপন রহস্য

বৃদ্ধ একটি পুরনো কাঠের বাক্স বের করলেন। সেটার গায়ে কিছু আরবি লেখা ছিল।

“এই বাক্সের ভেতরে আছে এমন কিছু, যা অনেক মানুষ চায় না যে প্রকাশ পাক।”

হাসান বাক্সের দিকে তাকিয়ে রইলো।

“এতে কী আছে?”

বৃদ্ধ ধীরে বললেন—

“একটি চিঠি, যা বহু বছর আগে একজন আলেম লিখেছিলেন। তিনি এমন কিছু জানতেন, যা আজকের শাসকগোষ্ঠী ধামাচাপা দিতে চায়।”

হাসান আর জাবের একে অপরের দিকে তাকালো।

সতর্কবার্তা

বৃদ্ধ চিঠিটা হাসানের হাতে দিলেন।

“কিন্তু মনে রেখো, একবার এই পথ ধরলে আর ফিরে আসার উপায় থাকবে না।”

জাবের গিলতে গিলতে বলল, “আমরা কি বিপদে পড়বো?”

বৃদ্ধ গভীর দৃষ্টিতে বললেন—

“সত্যের পথে সবসময় বিপদ থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তারা কখনো পথ হারায় না।”

নতুন যাত্রার শুরু

হাসান চিঠিটা হাতে নিলো।

হঠাৎ বাইরে থেকে কারও পায়ের শব্দ শোনা গেলো।

কেউ যেন তাদের খুঁজতে এসেছে।

বৃদ্ধ ফিসফিস করে বললেন—

“তোমাদের এখনই চলে যেতে হবে! তারা চলে আসছে।”

হাসান আর জাবের দ্রুত পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো।

সামনে অন্ধকার পথ, কিন্তু তারা জানে—এটাই সত্যের পথে তাদের নতুন যাত্রার শুরু।

চলবে…




বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

পরীর ছোয়া - পর্ব ৩১: অজানা গন্তব্য

 

পর্ব ৩১: অজানা গন্তব্য (১ম অংশ)

অন্ধকার গুদামের দরজা ভেঙে পড়ছে, হাসান ও জাবের পালানোর পথ খুঁজছে, বাতাসে নীলাভ আলো জ্বলছে—সত্যের সন্ধানে দুই বন্ধুর সংগ্রাম।"
সত্য কখনো সহজে ধরা দেয় না। হাসান ও জাবের কি বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাবে? নাকি এটি তাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা?"


হাসান জানে, সত্যের পথ কখনো সহজ নয়।

তার হাতে থাকা নথিগুলো যেন এক অজানা রাজ্যের দরজা খুলে দিয়েছে। প্রতিটি পৃষ্ঠায় এমন কিছু তথ্য রয়েছে, যা প্রকাশ হলে কেবল তার নয়, আরও অনেকের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।

রাত গভীর। ঘরের ভেতর শুধুই নীরবতা।

হাসান ল্যাপটপ খুলে দ্রুত কিছু তথ্য সংরক্ষণ করতে শুরু করলো।

ঠিক তখনই দরজায় তিনটি টোকা পড়লো— টক! টক! টক!

তার শরীরের রক্ত যেন জমে গেল। এত রাতে কে আসতে পারে?

সে আস্তে করে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালো।

কেউ নেই।

কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে ফোনের স্ক্রিন জ্বলে উঠলো।

একটি নতুন মেসেজ—

“তুমি জানার চেষ্টা করছো… কিন্তু কি জানো, কিছু সত্য জানা মানেই মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া?”

হাসান দ্রুত ফোন রেখে দিলো।

তার মনের মধ্যে অজানা শঙ্কা কাজ করছে। কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।

সে এবার পরী নূরসাবার সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

পরীর রহস্যময় বার্তা

হাসান চোখ বন্ধ করে পরীর কথা মনে করতে লাগলো।

একটা ঠাণ্ডা বাতাস ঘরের ভেতর প্রবাহিত হলো, যেন সময় থমকে গেছে।

পরী নুরসাবা ধীরে ধীরে তার সামনে আবির্ভূত হলো।

“তুমি ভয় পেয়েছো, হাসান?”

 “আমি জানি না এটা ভয় নাকি উত্তেজনা… কিন্তু আমি অনুভব করতে পারছি, কিছু একটা ঘটতে চলেছে।”

পরী নূরসাবা গভীরভাবে হাসানের দিকে তাকালো।

“প্রতিটি সত্যের বিনিময়ে কিছু দিতে হয়, হাসান। তুমি কি প্রস্তুত?”

হাসান এক মুহূর্ত ভাবলো।

তার সামনে এখন দুটি পথ—
১. সত্য জানার জন্য অজানা বিপদের মুখোমুখি হওয়া
২. সবকিছু থেকে সরে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া

কিন্তু সে কি পিছু হটতে পারে?

নতুন সংকেত

পরী নূরসাবা কিছু বলার আগেই হাসানের ফোন আবার বেজে উঠলো।

এইবার নাম্বার অচেনা নয়— জাবের!

সে তাড়াতাড়ি ফোন ধরলো।

হাসান! আমরা বিপদে পড়ে গেছি! আমাদের দ্রুত দেখা করতে হবে!”

ফোনের লাইন কেটে গেল।

হাসান বুঝতে পারলো, এবার সত্য উন্মোচনের জন্য তার সময় শেষ হয়ে আসছে…

চলবে…


পর্ব ৩১: অজানা গন্তব্য (২য় অংশ)

হাসান দ্রুত বেরিয়ে পড়লো। রাত গভীর হলেও শহরের বাতাসে একটা অজানা উত্তেজনা টের পাচ্ছিল। রাস্তার বাতিগুলো অস্পষ্ট মনে হচ্ছিল, যেন এই রাতেই কিছু একটা বদলে যাবে।

সে জাবেরের দেওয়া ঠিকানার দিকে এগোতে লাগলো। কিন্তু কিছুদূর যেতেই তার মনে হলো, কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে।

একবার পেছনে তাকালো—কেউ নেই।

কিন্তু অনুভব করলো, তার ছায়ার আড়ালে আরেকটি ছায়া লুকিয়ে আছে।

হাসান এবার দ্রুত পা চালালো। কিন্তু হঠাৎ…

"থামো!"

একটা কণ্ঠ অন্ধকার থেকে ভেসে এলো।

হাসান ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলো, এক লম্বা, কালো পোশাক পরা লোক দাঁড়িয়ে আছে। মুখ ঢাকা, কিন্তু চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।

“তুমি সত্যের পেছনে ছুটছো, তাই না?”

হাসান কিছু বলার আগেই লোকটি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো।

“তোমার জানা উচিত, সত্য কখনো একা আসে না… এর সঙ্গে বিপদও আসে!”

রহস্যের নতুন মোড়

হাসান পিছু হটতে লাগলো।

"তুমি কে?"

লোকটি হাসলো।

“আমি সেই মানুষ, যে তোমার মতো সত্য খুঁজেছিল… কিন্তু সত্যের বিনিময় আমাকে সবকিছু হারাতে হয়েছে!”

হাসানের শরীরে কাঁপুনি উঠলো।

"তুমি কী বলতে চাও?"

লোকটি পকেট থেকে একটা ছোট্ট কাগজ বের করে হাসানের হাতে দিলো।

“যদি বেঁচে থাকতে চাও, তবে এখানে যাও… আর তোমার বন্ধুকে সাবধান করো!”

কথাটা বলে লোকটি দ্রুত অন্ধকারে মিশে গেল।

হাসান কাগজটা খুললো।

একটি ঠিকানা লেখা…

“পুরনো বইয়ের দোকান, গলির শেষ মাথায়।”

পরীর সতর্কবার্তা

হাসান দ্বিধায় পড়ে গেল। এখন কি সে জাবেরের কাছে যাবে, নাকি এই রহস্যময় ঠিকানায়?

সে চোখ বন্ধ করলো।

একটা ঠাণ্ডা বাতাস ছড়িয়ে পড়লো।

পরী নূরসাবার কণ্ঠ ভেসে এলো—

“হাসান, তুমি যদি সত্য জানতে চাও, তবে একাই এগোতে হবে। সবাই তোমার সঙ্গে থাকবে না।”

হাসান ধীরে ধীরে বললো,

“তাহলে কি আমার বন্ধু জাবেরকে বিপদে ফেলা ঠিক হবে?”

পরী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।

তারপর বললো,

“তোমাকে বেছে নিতে হবে, কোন সত্য আগে জানবে—তোমার বন্ধুর বিপদ, নাকি সেই অজানা রহস্য?”

হাসান গভীর শ্বাস নিলো।

সে কী সিদ্ধান্ত নেবে?

পুরনো বইয়ের দোকান… নাকি জাবের?

একটা পথ তাকে সত্যের আরও গভীরে নিয়ে যাবে, অন্যটা হয়তো জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।

কিন্তু হাসান জানে—সত্যের জন্য কখনো কখনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

চলবে…


পর্ব ৩১: অজানা গন্তব্য (৩য় অংশ)

হাসান সিদ্ধান্ত নিলো—সে আগে বন্ধু জাবেরের কাছে যাবে।

কারণ, সত্য যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, বন্ধুর জীবন আরও বেশি মূল্যবান।

সে দ্রুত জাবেরের ঠিকানার দিকে ছুটে চললো। চারপাশের পরিবেশ অস্বাভাবিকভাবে নীরব লাগছিল।

রাস্তার শেষ মাথায় এসে দেখলো, পুরনো একটা গুদামের সামনে জাবের দাঁড়িয়ে আছে।

“জাবের! তুমি ঠিক আছো?” হাসান দৌড়ে কাছে গেলো।

জাবেরের মুখটা ফ্যাকাশে।

“আমরা ভুল পথে পা দিয়েছি, হাসান…”

“কী বলছো? কী হয়েছে?”

হাসান ভয়ার্ত চোখে চারপাশ দেখলো, যেন কেউ তাদের আড়াল থেকে শুনছে।

“তারা আমাদের অনুসরণ করছে! আমি কিছু প্রমাণ পেয়েছি, কিন্তু এখন আমরা তাদের টার্গেট হয়ে গেছি!”

হাসান বুঝতে পারলো, এটা শুধুই গুজব নয়—আসলেই কিছু একটা ভয়ংকর ঘটছে।

আতঙ্কের রাত

জাবের দ্রুত একটা কাগজ বের করে হাসানের হাতে দিলো।

“এখানে এমন কিছু নাম আছে, যারা এই রহস্যের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু…”

হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ হলো!

ধড়াম!

গুদামের লোহার দরজাটা বিকট শব্দে কেঁপে উঠলো।

কেউ বা কিছু দরজার বাইরে থেকে আঘাত করছে!

জাবের আতঙ্কিত গলায় বললো, “ওরা এসে গেছে!”

হাসান দ্রুত চারপাশ দেখলো। পালানোর কোনো উপায় নেই।

বাইরে থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো—

“দরজা খুলে দাও, নাহলে খারাপ কিছু ঘটবে!”

হাসান আর জাবের একে অপরের দিকে তাকালো।

এখন কী করবে?

পরীর গোপন ইশারা

ঠিক তখনই, কক্ষের বাতাসে একটা শীতল ভাব এলো।

পরী নূরসাবার উপস্থিতি অনুভব করলো হাসান।

তার কানে কেবল একটা বাক্য ভেসে এলো—

“শান্ত থাকো, সুযোগ এলে বেরিয়ে যেও…”

কিন্তু কীভাবে?

চলবে…


পর্ব ৩১: অজানা গন্তব্য (৪র্থ অংশ)

গুদামের দরজায় আবারো বিকট শব্দ হলো। যেন কেউ লোহার দরজাটা ভেঙে ফেলতে চাচ্ছে।

হাসান দ্রুত চারপাশ দেখলো। একটা জানালা রয়েছে, কিন্তু সেটা অনেক উঁচুতে। পালানোর সহজ উপায় নেই।

জাবের আতঙ্কিত স্বরে বললো, “আমরা এখন কী করবো, হাসান? এরা যদি ভেতরে ঢুকে পড়ে, তাহলে শেষ!”

হাসান গভীর শ্বাস নিলো।

তার মনে পড়লো পরীর ইঙ্গিত—“শান্ত থাকো, সুযোগ এলে বেরিয়ে যেও।”

কিন্তু কীভাবে?

প্রশান্তির আলো

ঠিক তখনই, একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো।

হঠাৎ বাতাসে একটা মৃদু সুবাস ছড়িয়ে পড়লো।

তারপর…

একটা নীলাভ আলো ঘরের এক কোণে উদ্ভাসিত হলো।

জাবের বিস্মিত হয়ে বললো, “এটা কী?”

হাসান জানে—এটা পরী নূরসাবার উপস্থিতির ইঙ্গিত।

আলোর মধ্যে একটা অদৃশ্য পথ তৈরি হলো, যেন জানালার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।

হাসান বুঝতে পারলো, এটাই তাদের বের হওয়ার সুযোগ!

শেষ মুহূর্তের বিপদ

“জাবের, এটাই আমাদের পথ। দ্রুত চলো!”

জাবের দ্বিধান্বিত হলেও হাসানের দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত দেরি করলো না।

তারা দু’জন দ্রুত জানালার দিকে দৌড় দিলো।

ঠিক তখনই…

ধড়াম!

গুদামের দরজা ভেঙে পড়লো!

কালো পোশাক পরা কয়েকজন লোক বন্দুক হাতে দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো!

“তারা পালাচ্ছে! থামাও!”

কিন্তু ততক্ষণে হাসান আর জাবের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে নিচে নেমে গেছে।

তারা দৌড়াতে লাগলো, অন্ধকার গলির দিকে…

সত্যের পথে নতুন যাত্রা

পেছনে ধাওয়া করার শব্দ শোনা যাচ্ছে, কিন্তু তারা কোনোভাবে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে যেতে পারলো।

একসময়, নির্জন একটা জায়গায় এসে দাঁড়ালো।

“আমরা কি বেঁচে গেছি?” জাবের ক্লান্ত কণ্ঠে বললো।

হাসান বললো, “এখনো না। সত্যের পথ এখনো বাকি…”

কিন্তু এখন তাদের আরেকটি কাজ করতে হবে।

পুরনো বইয়ের দোকানে যেতে হবে।

কারণ, রহস্যের আসল উত্তর ওখানেই লুকিয়ে আছে…

চলবে…


লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব। 


মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

পরীর ছোঁয়া - পর্ব ৩০: ধোঁয়ার আড়ালে সত্য |

 পর্ব ৩০: ধোঁয়ার আড়ালে সত্য (১ম অংশ)

হসান, পরী নূরসাবা এবং এক ভয়ঙ্কর সত্যের সন্ধান
"সত্যের পথে বাধা আসবেই, কিন্তু ঈমানের শক্তি কখনো হার মানে না!"



রাত গভীর। চারপাশ নিস্তব্ধ, অথচ হাসানে মনে যেন এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে যা ঘটছে, তা স্বাভাবিক কিছু নয়। কেউ একজন তাকে অনুসরণ করছে, তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে জানে, এই পথ থেকে সে পিছু হটতে পারে না।

"সত্য জানতে চাইলে এর জন্য মূল্য দিতে হবে…"

এই কথাটা বারবার তার কানে বাজছে।

সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকালো। রাস্তার অপর প্রান্তে একটা কালো ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারলো—তাকে আবারও অনুসরণ করা হচ্ছে!


হুমকির ছায়া

হাসানের মোবাইল বেজে উঠলো। অচেনা নাম্বার।

"তুমি থামবে না, তাই তো?"

হাসান ঠোঁট কামড়ে ধরলো।

 "সত্য জানার অধিকার আমার আছে।"

"তাহলে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও!"

কথাটা বলেই লাইন কেটে গেল।

একটা ঠাণ্ডা শিহরণ বয়ে গেল তার শরীর বেয়ে।

সে জানে, শয়তান সবসময় সত্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে। কুরআনের আয়াত মনে পড়লো—


وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

"তোমরা শয়তানের পথ অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।" (সূরা বাকারা: ১৬৮)


পরী নুরসাবার আগমন

হাসান চোখ বন্ধ করে পরীর কথা ভাবতে লাগলো।

হঠাৎ বাতাসের মধ্যে একটা কোমল সুবাস ছড়িয়ে পড়লো। কক্ষের আলো যেন একটু ম্লান হয়ে গেল। তারপর এক মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে এলো—

 "তুমি ভয় পেয়েছো, হাসান?"

হাসান তাকিয়ে দেখলো, পরী নূরসাবা দাঁড়িয়ে আছে।

"কেউ আমাকে হুমকি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারা চায় না যে আমি সত্যটা জানি," হাসান বলল।

পরী নূরসাবা গভীরভাবে তাকালো।

"তুমি জানো, হাসান? যখন কেউ সত্যের পথে আসে, তখন শয়তান তাকে সরিয়ে দিতে চায়।"

হাসান ধীরে ধীরে মাথা নাড়লো।

"তাহলে এখন কী করবো?"


নূরসাবা হাসলো।

 "তুমি কি সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত?"


পর্ব ৩০ ধোঁয়ার আড়ালে সত্য (২য় অংশ)


হাসান পরী নূরসাবার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে হবে?

এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া কি এত সহজ?

তার মাথার ভেতরে হাজারটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।

 "আমি ভয় পাই না, নূরসাবা। কিন্তু আমি জানি না, সামনে কী অপেক্ষা করছে।"

পরী নূরসাবা একটু হাসলো।

ভয় পাওয়া স্বাভাবিক, হাসান। কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।"

তারপর সে কুরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করলো—


وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَهُ مَخْرَجًا ۝ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

"যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।" (সূরা আত-তালাক: ২-৩)

হাসানের মনে কিছুটা প্রশান্তি এলো।


অজানা শত্রুর ছায়া

পরী নূরসাবার সাথে কথা বলার পর হাসানের মনে শক্তি এলো। কিন্তু কিছু একটা ঠিকঠাক মনে হচ্ছে না।

কেউ একজন তাকে অনুসরণ করছে, তার গতিবিধি লক্ষ্য করছে।

সে জানে, কেবল পরীর সাহায্যে সব সমস্যার সমাধান হবে না।

তাকে নিজেকেও প্রস্তুত হতে হবে।

নতুন সংকেত

মোবাইল ফোনটা আবার বেজে উঠলো।

এইবার নাম্বারটা পরিচিত।

তার সাংবাদিক বন্ধু, জাবের।

হাসান, আমি কিছু তথ্য পেয়েছি। কিন্তু সাবধান, এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়!"


"কী পেয়েছো?"

"তুমি যাদের কথা বলছিলে, তারা কোনো সাধারণ চক্র নয়। তারা এমন কিছু লুকিয়ে রেখেছে, যা প্রকাশিত হলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।"

হাসানের হাত শক্ত হয়ে এলো।

"তাহলে আমাদের আরও গভীরে যেতে হবে।"

আমি তোমার পাশে আছি, কিন্তু সাবধান থেকো।"

হাসান ফোন রেখে দিলো।

তারপর কুরআনের আয়াত মনে পড়লো—


إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا

"নিশ্চয়ই আল্লাহ ঈমানদারদের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা করেন।" (সূরা হজ্জ: ৩৮)


সে জানে, সত্যের পথে বাধা আসবেই।

কিন্তু সে পিছিয়ে যাবে না।


পর্ব ৩০ ধোঁয়ার আড়ালে সত্য  (৩য় অংশ ) 


হাসান জানে, সত্যের সন্ধানে নেমে সে এমন এক খেলার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে, যেখানে প্রতিপক্ষ অদৃশ্য, কিন্তু ভয়ঙ্কর।

তার মনে প্রশ্ন জাগে—
এই হুমকিদাতারা কারা?
তারা কী লুকিয়ে রাখতে চায়?
এবং কেনই বা তাকে থামিয়ে দিতে চায়?

সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গভীর রাতে আকাশের দিকে তাকালো।

"আল্লাহ, তুমি আমাকে সঠিক পথ দেখাও…"

গোপন রহস্যের খোঁজে

পরদিন সকালে হাসান তার সাংবাদিক বন্ধু জাবেরের সঙ্গে দেখা করতে গেল।

জাবের একটি পুরনো অফিসে অপেক্ষা করছিল। মুখে চাপা উদ্বেগ।

"তুমি কি নিশ্চিত, হাসান? তুমি যদি এই পথে এগোও, তাহলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারবে না।"

 "আমি থামবো না। সত্য জানতে চাই।"

রাশেদ গভীর শ্বাস নিলো। তারপর তার ব্যাগ থেকে কিছু কাগজ বের করলো।

 "এগুলো দেখো। এগুলো এমন কিছু প্রমাণ, যা প্রকাশ হলে কিছু মানুষের মুখোশ খুলে যাবে।"

হাসান দ্রুত নথিগুলো দেখতে লাগলো।

হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল একটা নামের উপর।

— "এটা কী! এতো…!"

সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।

কেন পরী নূরসাবা হাসানের পাশে?

হাসানের মাথায় ঝড় বইছে।

সে জানে, পরী নূরসাবা তাকে সাহায্য করছে, কিন্তু কেন?

সে রাতে আবার পরীর নূরসার সাথে দেখা করতে চাইল।

চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো ভাবতে লাগলো।

আলো ছড়িয়ে পড়লো…
পরী নূরসাবা এসে দাঁড়ালো তার সামনে।

"তুমি কি প্রস্তুত, হাসান?"

"তুমি কি আগে থেকেই জানতে, আমি কী জানতে চাই?"

পরী নূরসাব হালকা হাসলো।

"আমি জানি, সত্যের জন্য তুমি লড়াই করছো। আর আমি জানি, এই সত্যের মধ্যে ভয়ংকর কিছু লুকিয়ে আছে।"

 "তুমি কি আমাকে পুরোটা বলবে, নূরসাবা?"

পরী নূরসাবা একটু থেমে বললো—

"তুমি কি সত্য সহ্য করতে পারবে?"

মাহির গভীরভাবে পরীর চোখের দিকে তাকালো।

তার সামনে সত্যের দরজা খুলতে চলেছে…

চলবে…

লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব। 

রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

পরীর ছোঁয়া – পর্ব ২৯: অন্ধকারের ছায়া

 

পর্ব ২৯: অন্ধকারের ছায়া

হাসান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তিত। তার হাতে একটি কালো কাগজ, যেখানে লেখা—"তুমি শেষ!" অন্ধকারে কেউ তাকে নজরদারি করছে।
❝ সত্যের সন্ধান কখনো সহজ নয়… হাসান কি ভয় কাটিয়ে সামনে এগোতে পারবে? পড়ুন ‘পরীর ছোঁয়া’ পর্ব ২৯! ❞


রাত গভীর, তবে হাসানের চোখে ঘুম নেই। টেবিলের ওপর ছড়িয়ে থাকা কাগজপত্রের দিকে তাকিয়ে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিছু একটা সে নিশ্চিত বুঝতে পারছে—এখানে বিশাল এক ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে।

"তুমি বেশি জানার চেষ্টা করছো। সাবধান!"

গত রাতের সেই মেসেজটা এখনো মনে বাজছে। সত্যের সন্ধানে নামার পর থেকেই এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে থামিয়ে দিতে চাইছে।

হাসান জানে, আল্লাহর রহমতে একমাত্র পরী নূরসাবাই তাকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু পরী নূরসাবা কি সব সত্য জানে? নাকি সেও কোনো রহস্যের আবরণে ঢাকা?

গোপন বার্তা

ভোরের দিকে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে হাসান চমকে উঠলো।

 "কে?"

কোনো উত্তর নেই।

হাসান ধীরে ধীরে দরজা খুললো। কেউ নেই। কেবল মাটিতে পড়ে আছে একটা ছোট্ট খাম।

হাসান দ্রুত খামটি তুলে নিলো। কাগজ খুলতেই শিউরে উঠলো।

"সতর্ক হও! তোমার চারপাশে যারা আছে, সবাই বিশ্বাসযোগ্য নয়। শত্রু তোমার কাছেই আছে!"

কোনো স্বাক্ষর নেই, কিছুই নেই।

তার মানে… কেউ আছে, যে চায় সে সত্যের কাছে পৌঁছাক, কিন্তু প্রকাশ্যে আসতে পারছে না।

পরীর রহস্য

হাসান দ্রুত পরী নূরসাবার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলো। গভীর বনের পথ ধরে সে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো।

শীঘ্রই বাতাসে সেই পরিচিত সুবাস ছড়িয়ে পড়লো। ধীরে ধীরে আলো কমে এলো, আর এক অপার্থিব নরম কণ্ঠ ভেসে এলো—

"তুমি আমাকে খুঁজছো, হাসান?"

হাসান গভীরভাবে পরী নূরসাবার চোখের দিকে তাকালো।

"তুমি কি সত্য জানো, নূরাসাবা? আমি কি সঠিক পথে আছি?"

পরী নূরসাবা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো

 "সত্য সবসময় সহজ হয় না, হাসান। কিন্তু মনে রেখো, কেউ যদি সত্যের সন্ধানে নামে, তাকে শয়তানের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।"

"আমাকে থামিয়ে দিতে চাইছে।"

পরী নূরসাবা শান্ত গলায় বললো

"শুধু তোমাকে নয়, হাসান। সত্য খোঁজা মানেই শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। তুমি কি জানো, নূহ (আ.) যখন মানুষকে এক আল্লাহর পথে ডাকতেন, তখন কী ঘটেছিল?"

সে কুরআনের আয়াত পড়লো—

وَمَا آمَنَ مَعَهُ إِلَّا قَلِيلٌ
"তাঁর সঙ্গে খুব অল্পসংখ্যক মানুষই বিশ্বাস স্থাপন করেছিল।" (সূরা হূদ: ৪০)

 "তাহলে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে?"

পরী নূরসাবা একটু ঝুঁকে এলো, ফিসফিস করে বললো

 "মৃত্যু… কিংবা সত্যের বিজয়।"

শত্রুর ছায়া

হঠাৎ ঝোপের আড়াল থেকে একটা শব্দ ভেসে এলো। হাসান পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো কালো পোশাক পরা একজন দ্রুত অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

 "ওরা আমাদের অনুসরণ করছে!" হাসান ফিসফিস করে বললো।

পরী নূরসাবা শীতল গলায় বললো

 "তুমি তৈরি তো, হাসান?"

"কিসের জন্য?"

"তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার জন্য।"

মর্মান্তিক সত্যের মুখোমুখি

পরের দিন হাসান যখন বাসায় ফিরলো, তখন তার দরজা হালকা খোলা।

তার বুক ধক করে উঠলো।

ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকতেই টেবিলের ওপর একটা কালো কাগজ পড়ে আছে।

"তুমি আমাদের পথের বাধা। এবার তুমি শেষ।"

হাসান দ্রুত পেছনে ঘুরলো, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে।

পেছন থেকে এক শক্তিশালী ধাক্কায় সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে…

পরীর কণ্ঠ যেন দূর থেকে ভেসে আসছে—

"লড়াই শেষ নয়, হাসান… সত্যের পথ কখনো থেমে থাকে না!"

চলবে…