পর্ব ৩২: অজানা সত্যের দরজায় (১ম অংশ)
![]() |
“হাসান ও জাবের সত্যের পথে এক নতুন রহস্যের মুখোমুখি হলো।” |
রাত গভীর। সারা শহর নিস্তব্ধ।
হাসান আর জাবের ছুটতে ছুটতে একটা পুরনো গলির ভেতর ঢুকে পড়লো। তারা দুজনেই হাঁপাচ্ছে, পেছনে শত্রুর ধাওয়ার শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না।“
আমরা কি এখন নিরাপদ?” জাবের ফিসফিস করে বললো।
হাসান চারপাশ দেখলো। অন্ধকার গলি, পুরনো বাড়িগুলো যেন একটা রহস্য লুকিয়ে রেখেছে।
“কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের দ্রুত বইয়ের দোকানে পৌঁছাতে হবে।”
রহস্যময় দোকান
এই পুরনো শহরের মাঝখানে একটা অদ্ভুত বইয়ের দোকান আছে, যেখানে সাধারণত রাতেও আলো জ্বলে থাকে।
সেখানে কিছু বিরল বই পাওয়া যায়, যেগুলোতে এমন সব তথ্য আছে, যা অনেকেই জানতে চায় না।
হাসান আর জাবের সাবধানে দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
একটা কাঠের বোর্ডে লেখা—
“আলোর পথের সন্ধান”
জাবের অবাক হয়ে বললো, “এটা তো একটা সাধারণ বইয়ের দোকান নয়! এখানে কী আছে?”
হাসান দরজায় হাত রাখলো, ধাক্কা দিলো।
কড়াৎ!
দরজা নিজের থেকেই খুলে গেলো…
অজানা আতঙ্ক
ভেতরে ঢুকতেই একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে এলো।
কোনো মানুষ নেই, কেবল আলোর নিচে পুরনো ধূলিধূসর বই সাজানো।
হঠাৎ, পেছন থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এলো—
“তোমরা সত্য জানতে চাও?”
হাসান আর জাবের চমকে পেছনে তাকালো!
এক বিদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখে এক রহস্যময় দৃষ্টি।
নতুন ইঙ্গিত
“তোমাদের আসার কথা আগেই জানা ছিল।”
জাবের বিস্মিত হয়ে বললো, “কীভাবে?”
বৃদ্ধ একটা পুরনো বই টেবিলের ওপর রাখলো।
বইটার পাতা উল্টে দিলো হাসানের দিকে।
একটা লাইনে লেখা—
“যারা সত্যের সন্ধানে আসে, তাদের জন্য পথ কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু যারা হাল ছাড়ে না, তারাই শেষ পর্যন্ত আলো খুঁজে পায়।”
হাসান আর জাবের পরস্পরের দিকে তাকালো।
এটা কীসের ইঙ্গিত?
চলবে…
পর্ব ৩২: অজানা সত্যের দরজায় (২য় অংশ)
বৃদ্ধ ধীরে ধীরে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিল। প্রতিটি পাতায় পুরনো আরবি হরফে কিছু লেখা ছিল, যেগুলো ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল।
“এই বইটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?” হাসান জিজ্ঞেস করলো।
বৃদ্ধ গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন, তারপর বললেন, “কারণ এটা এমন কিছু তথ্য বহন করে, যা বদলে দিতে পারে তোমাদের সবকিছু।”
জাবের অবাক হয়ে বললো, “কিন্তু আমরা তো শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি, এর মধ্যে এত রহস্য কেন?”
বৃদ্ধ হাসলেন, তারপর বললেন—
“প্রত্যেক সত্যের পেছনে এক অজানা রহস্য লুকিয়ে থাকে। তোমরা যদি এগিয়ে যেতে চাও, তবে এই সত্যের ভার বহন করার জন্য প্রস্তুত হও।”
সন্দেহ ও সংকেত
হাসান বইটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মনে একটা দ্বিধা জন্ম নিলো।
হঠাৎ বৃদ্ধ বইয়ের মাঝখান থেকে একটা হলুদ রঙের কাগজ বের করে দিলেন।
সেখানে কিছু লেখা ছিল—
“শয়তান তোমাদের ভয় দেখাবে, কিন্তু আল্লাহর পথে যারা থাকে, তারা কখনো পথ হারায় না।” (সূরা আল-ইমরান: ১৭৫)
হাসান আর জাবের একে অপরের দিকে তাকালো।
— “তাহলে সত্যের পথেই আমাদের থাকতে হবে, তাই না?” হাসান বললো।
বৃদ্ধ মাথা ঝাঁকালেন।
“কিন্তু মনে রেখো, শয়তান শুধু ভয় দেখায় না, সে ধোঁকাও দেয়।”
গুপ্ত হামলার আশঙ্কা
ঠিক তখনই দরজার বাইরে একটা শব্দ হলো।
ধপ! ধপ!
হাসান দ্রুত পেছনে তাকালো।
কেউ কি ওদের অনুসরণ করছে?
জাবের ফিসফিস করে বললো, “আমরা কি বিপদে পড়তে যাচ্ছি?”
বৃদ্ধ শান্ত স্বরে বললেন, “তোমাদের জন্য সময় খুব কম। যদি সত্য জানতে চাও, তাহলে কাল রাতের আগেই এই কাগজের ইঙ্গিত খুঁজে বের করতে হবে।”
হাসান কাগজটা হাতে নিলো।
সেখানে একটা অদ্ভুত ঠিকানা লেখা ছিল।
“পুরনো শহরের ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ… সেখানেই তোমাদের উত্তর লুকিয়ে আছে।”
নতুন পথে যাত্রা
হাসান আর জাবের বৃদ্ধকে সালাম জানিয়ে বের হয়ে এলো।
কিন্তু দরজার বাইরে পা দিতেই…
হঠাৎ একটা গা ছমছমে অনুভূতি হলো।
কেউ কি সত্যিই তাদের উপর নজর রাখছে?
চলবে…
পর্ব ৩২: অজানা সত্যের দরজায় (৩য় অংশ)
রাত নেমেছে, কিন্তু অন্ধকার যেন আরও ঘন হয়েছে।
হাসান আর জাবের দ্রুত পা চালিয়ে গলির শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়ালো। পেছনে কেউ আছে কি না, সেটা বোঝার জন্য একবার ঘুরে তাকালো হাসান।
কেউ নেই।
কিন্তু মনে হচ্ছে, যেন কারও নজরদারির মধ্যেই আছে তারা।
“হাসন, তুমি কি নিশ্চিত যে আমাদের ওখানে যাওয়া উচিত?” জাবের ধীরে বলল।
“আমাদের কাছে আর কোনো উপায় নেই। আমরা যদি সত্য জানতে চাই, তাহলে যেতে হবে।” হাসান দৃঢ় স্বরে বলল।
ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের পথে
হাসান ও জাবের শহরের পুরনো অংশের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
একসময় তারা এমন একটা জায়গায় পৌঁছাল, যেখানে বাতি নেই, মানুষ নেই—শুধু ভাঙাচোরা দালান আর ধুলোমাখা পথ।
সামনে একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেলো।
“এটাই সেই জায়গা।” হাসান ফিসফিস করে বলল।
অদ্ভুত ছায়া
মসজিদের সামনে পৌঁছাতেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো।
চারপাশ নিস্তব্ধ ছিল, কিন্তু হঠাৎ বাতাস বইতে শুরু করলো।
একটা দীর্ঘ ছায়া দূরে নড়াচড়া করলো।
হাসান দ্রুত জাবেরের হাত চেপে ধরলো।
“কেউ একজন আমাদের দেখছে।”
জাবের গিলে ফেললো তার লালারস।
“আমরা কি ফিরে যাবো?”
হাসান মাথা নাড়লো। “না, আমরা সামনে এগোবো।”
প্রবেশ
তারা ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের ভেতরে ঢুকলো।
ভেতরটা অন্ধকার, মাটিতে ধুলো জমে আছে।
হঠাৎ একটা ফিসফিস করা কণ্ঠ ভেসে এলো—
“তোমরা কি সত্য জানতে চাও?”
হাসান আর জাবের থমকে দাঁড়ালো।
চারপাশে কেউ নেই, কিন্তু কণ্ঠটা যেন খুব কাছ থেকেই আসছে।
জাবের আতঙ্কিত হয়ে হাসানের দিকে তাকালো।
“এটা কি আমাদের জন্য ফাঁদ?”
হাসান গভীর শ্বাস নিলো।
“কিন্তু আমাদের সামনে এগোতেই হবে।”
চলবে…
পর্ব ৩২: অজানা সত্যের দরজায় (৪র্থ অংশ)
ভেতরে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। বাতাসে ধুলোর গন্ধ, ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের মেঝেতে পায়ের নিচে শুকনো পাতা মচমচ করছে।
হাসান আর জাবের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ আবার সেই কণ্ঠ ভেসে এলো—
“তোমরা কি সত্য জানতে প্রস্তুত?”
এবার হাসান দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “হ্যাঁ! আমরা সত্য জানতে চাই।”
তখনই একটা ছায়ামূর্তি অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে সামনে এলো।
অজানা পথিক
চাঁদের ক্ষীণ আলোয় একজন লম্বা, দুর্বল শরীরের বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন। মুখটা ক্ষীণ আলোর কারণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু তার চোখ দুটো যেন গভীর অন্ধকারের মতো।
তিনি ধীরে ধীরে বললেন—
“তোমরা যে সত্য খুঁজছো, সেটা তোমাদের ধারণার চেয়েও গভীর।”
জাবের ফিসফিস করে বলল, “আপনি কে?”
“আমি একজন পথিক, যে সত্যের সন্ধানে সারাটি জীবন কাটিয়ে দিয়েছে।” বৃদ্ধের কণ্ঠ ছিল ভারী।
গোপন রহস্য
বৃদ্ধ একটি পুরনো কাঠের বাক্স বের করলেন। সেটার গায়ে কিছু আরবি লেখা ছিল।
“এই বাক্সের ভেতরে আছে এমন কিছু, যা অনেক মানুষ চায় না যে প্রকাশ পাক।”
হাসান বাক্সের দিকে তাকিয়ে রইলো।
“এতে কী আছে?”
বৃদ্ধ ধীরে বললেন—
“একটি চিঠি, যা বহু বছর আগে একজন আলেম লিখেছিলেন। তিনি এমন কিছু জানতেন, যা আজকের শাসকগোষ্ঠী ধামাচাপা দিতে চায়।”
হাসান আর জাবের একে অপরের দিকে তাকালো।
সতর্কবার্তা
বৃদ্ধ চিঠিটা হাসানের হাতে দিলেন।
“কিন্তু মনে রেখো, একবার এই পথ ধরলে আর ফিরে আসার উপায় থাকবে না।”
জাবের গিলতে গিলতে বলল, “আমরা কি বিপদে পড়বো?”
বৃদ্ধ গভীর দৃষ্টিতে বললেন—
“সত্যের পথে সবসময় বিপদ থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তারা কখনো পথ হারায় না।”
নতুন যাত্রার শুরু
হাসান চিঠিটা হাতে নিলো।
হঠাৎ বাইরে থেকে কারও পায়ের শব্দ শোনা গেলো।
কেউ যেন তাদের খুঁজতে এসেছে।
বৃদ্ধ ফিসফিস করে বললেন—
“তোমাদের এখনই চলে যেতে হবে! তারা চলে আসছে।”
হাসান আর জাবের দ্রুত পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো।
সামনে অন্ধকার পথ, কিন্তু তারা জানে—এটাই সত্যের পথে তাদের নতুন যাত্রার শুরু।
চলবে…