GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫

"ভালোবাসার করুণ পরিণতি: সাবিহা আক্তার মুক্তার দুঃখের পথ"

 গল্প: নশ্বর ভালোবাসার করুণ পরিণতি

ধৈর্য ও ভালোবাসার পরীক্ষায় সাফল্য অর্জিত হয়, কিন্তু অবহেলা ও অহংকারের পরিণতি থাকে কেবল দুঃখ ও অনুশোচনায়।"


প্রথম অধ্যায়: স্বপ্নের শুরু

মাওলানা সাকিব, একজন ধর্মপ্রাণ যুবক, যার হৃদয় ছিল সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য প্রস্তুত। কুরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনা করাই ছিল তার লক্ষ্য। একদিন এক উস্তাদের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় সাবিহা আক্তার মুক্তার সাথে—এক অনন্য সুন্দরী, যার সৌন্দর্য যেন চাঁদের আলোকে হার মানায়।

কিন্তু মাওলানা সাকিব ভালো করে জানত না, সাবিহা আক্তার মুক্তার অতীত ছিল একটি ভাঙা সংসার। তার প্রথম স্বামী, মাওলানা ফরহাদ, ছিল একজন সৎ ও দায়িত্ববান মানুষ, কিন্তু সাবিহা আক্তার মুক্তা তার প্রতি কখনোই অনুগত ছিল না। সে মাওলানা ফরহাদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করত, তাকে অবহেলা করত, অবশেষে সংসার ভেঙে দেয়।

মাওলানা সাকিব যখন সাবিহা আক্তার মুক্তাকে বিয়ে করল, সে বিশ্বাস করেছিল, ভালোবাসা ও ধৈর্য দিয়ে সে তার জীবন বদলে দিতে পারবে।

দ্বিতীয় অধ্যায়: ধৈর্যের পরীক্ষা

বিয়ের প্রথম কটি দিন আনন্দে কাটলেও, খুব দ্রুতই সাবিহা আক্তার মুক্তার আসল রূপ প্রকাশ পেল। সে মাওলানা সাকিব কে দূরে ঠেলে দিতে লাগল, কথা বললে বিরক্ত হতো, এবং স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার সাধারণ দাবিকেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করত।

মাওলানা সাকিব কষ্ট পেলেও ধৈর্য ধরে রাখল। সে কুরআনের এই আয়াতটি বারবার মনে করত—

ওয়াসবির ফাইন্নাল্লাহা লা ইউদ্বি’উ আজরাল মুহসিনীন।"

(আর তুমি ধৈর্য ধর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।) (সুরাহ হুদ: ১১৫)

কিন্তু সাবিহা আক্তার মুক্তা বদলায়নি। একদিন সে রাগের মাথায় মাওলানা সাকিবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলে,

"তুমি আমার যোগ্য নও! আমি তোমার মতো সাধারণ একজন মানুষের সাথে সারাজীবন কাটাতে পারব না!"

তৃতীয় অধ্যায়: বিচ্ছেদ ও প্রতারণা

একদিন সাবিহা আক্তার মুক্তা কোনো কিছু না বলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। মাওলানা সাকিব জানত না সে কোথায় গেল, কার সাথে গেল।

সে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া করল,

রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ ওয়া ক্বিনা আযাবান্নার।"

(হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।) (সুরাহ আল-বাকারা: ২০১)

কিন্তু সাবিহা আক্তার মুক্তা ফিরে এল না। কিছুদিন পর মাওলানা সাকিব শুনল, সে অন্য এক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু সেই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি।

চতুর্থ অধ্যায়: মাওলানা সাকিবের নতুন জীবন শুরু ও ধৈর্যের পুরস্কার

মাওলানা সাকিব তার কষ্ট বুকে নিয়ে ধৈর্য ধরল। সময়ের পরিক্রমায় সে আরেকটি বিয়ে করল—সুমাইয়া সুলতানা নামে একজন ধার্মিক, কোমলমতি নারীকে।

সুমাইয়া সুলতানা তার জন্য এক শান্তির আশ্রয় হয়ে উঠল। সে মাওলানা সাকিবকে ভালোবাসত, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল, এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনায় সবসময় মাওলানা সাকিবের পাশে থাকত।

মাওলানা সাকিব বুঝতে পারল, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জন্য উত্তম কিছু সংরক্ষণ করেন।

ইন্নামা ইউওয়াফ্বাস সাবিরূনা আজরাহুম বিগাইরি হিসাব।"

(ধৈর্যশীলদের প্রতিদান হিসাব ছাড়াই দেওয়া হবে।) (সুরাহ আজ-জুমার: ১০)

পঞ্চম অধ্যায়: সাবিহা আক্তার মুক্তার তৃতীয় বিয়ে ও করুণ পরিণতি

এদিকে সাবিহা আক্তার মুক্তা জীবন থেকে শিক্ষা নেয়নি। সে কয়েক বছর পর আবারও বিয়ে করল মিলন নামের আদা বয়স্ক এক মুরুব্বী কে  যার বয়স তার চাইতে দ্বিগুণ যে এক ছন্নছাড়া, দুশ্চরিত্র ব্যক্তি, যার জীবন কাটত নেশা, অনৈতিকতা আর দারিদ্র্যের কষ্টে। যে আগে তিনটি স্ত্রীকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে সাবিহা আক্তার মুক্তা তার চতুর্থ নম্বর স্ত্রী হলো। 

প্রথম দিকে সে ভেবেছিল, এবার হয়তো সে সুখী হবে। কিন্তু তার নতুন স্বামী মিলন ছিল একজন নির্মম ব্যক্তি। সে সাবিহা আক্তার মুক্তাকে মারধর করত, অবহেলা করত, এমনকি খাবার জোগাড় করতেও ব্যর্থ হতো যার কারণে তার জীবন হয়ে উঠলো নরকসম।

 আল্লাহ তাআলা বলেন—

> "وَمَن يُعْرِضْ عَن ذِكْرِى فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةًۭ ضَنكًۭا"

(যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জীবন সংকটপূর্ণ হয়ে যায়।) (সুরাহ ত্বহা: ১২৪) 

সাবিহা আক্তার মুক্তা এখন বুঝতে পারল, সে কী হারিয়েছে। মাওলানা সাকিবের মতো একজন ভালো স্বামীকে সে অবজ্ঞা করেছিল, কিন্তু আজ তার কপালে জুটেছে অবহেলা, দুঃখ আর কষ্ট।

একদিন সাবিহা আক্তার মুক্তা একাকী বসে কাঁদছিল। তার কানে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল কুরআনের সেই আয়াত—

ফাহাল ‘আসাইতুম ইন তাওয়াল্লাইতুম আন তুফসিদূ ফিল আরদি ওয়া তুকাত্তি’উ আরহামাকুম। উলাইকাল্লাজিনা লা’আনাহুমুল্লাহু ফা-আসমাহুম ওয়া আ’মা আবসারাহুম।"

(তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে কি পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন, তাদের কান বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন।) (সুরাহ মুহাম্মাদ: ২২-২৩)

মাওলানা সাকিব এখন সুখী ছিল, কিন্তু সাবিহা আক্তার মুক্তার জীবন দুঃখে ভরে গিয়েছিল।

শেষ অধ্যায়: অনুশোচনা, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে

একদিন সাবিহা আক্তার মুক্তা ভাবল, মাওলানা সাকিবের কাছে ফিরে যাবে। কিন্তু তখন মাওলানা সাকিব সুখী সংসারী, সুমাইয়া সুলতানার সাথে তার দাম্পত্য জীবন স্বর্গীয় প্রশান্তিতে কাটছিল।

মাওলানা সাকিবের কাছে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ রইল না।

সে একদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

"হে আল্লাহ! যদি আমি তখন বুঝতাম মাওলানা সাকিবের ভালোবাসার মূল্য!"

কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। তার জীবনে শুধু দুঃখ ও অনুশোচনার ছায়া রয়ে গেল।

উপদেশ ও শিক্ষা

এই গল্প আমাদের শেখায় যে, সত্যিকারের ভালোবাসা ও ধৈর্যই মানুষের জীবনে প্রকৃত শান্তি বয়ে আনে। যারা অন্যের ভালোবাসাকে অবজ্ঞা করে, তাদের জীবনে একসময় অনুশোচনা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।

"অবশ্যই কষ্টের পর সুসংবাদ আসে।" (সুরাহ ইনশিরাহ ৬:) 

মাওলানা সাকিব ধৈর্য ধরেছিল, আর আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করেছেন। পক্ষান্তরে, সাবিহা আক্তার মুক্তা অহংকার করেছিল, এবং তার জীবনে অনুশোচনার আগুন জ্বলতে থাকল চিরকাল।

লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব 

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫

"রক্তের দাগ মুছে যায় না: ধৈর্য, ন্যায়বিচার ও কুরআনের আলো"

 উপন্যাস: "রক্তের দাগ মুছে যায় না"

রক্তের দাগ মুছে যায় না"—একটি হৃদয়বিদারক ইসলামিক উপন্যাস, যেখানে ধৈর্য, ন্যায়বিচার ও কুরআনের আলোয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের বিজয় ফুটে উঠেছে। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব, প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমার মাহাত্ম্য এই গল্পের মূল প্রতিপাদ্য।
"ধৈর্য, ন্যায়বিচার ও কুরআনের আলো—সত্যের পথে এক হৃদয়বিদারক সংগ্রামের গল্প।"

প্রথম অধ্যায়: বিভীষিকার রাত

রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। মসজিদের মৃদু আযান বাতাসে ভাসছে, কিন্তু আমিনার হৃদয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তার বাবা-মা পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছেন, ছোট ভাই নাজিম গভীর ঘুমে। কিন্তু সে জানে, আজ রাতেই তার জীবন বদলে যাবে।

চার দিন আগে, তার একমাত্র অভিভাবক বাবা, খতিব ইবনুল মাহখুম, মসজিদ থেকে ফিরে বলেছিলেন,

মেয়ে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। মানুষ যতই অত্যাচার করুক, একদিন সুবিচার হবে।"

আমিমা জানত, এই কথার পেছনে লুকিয়ে আছে এক গোপন কষ্ট। তার বাবাকে কিছু লোক হুমকি দিয়েছিল, কারণ তিনি সাহস করে সত্য বলেছিলেন। পাড়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি, রফিক সাহেব, যিনি সমাজে দানশীলতার মুখোশ পরে থাকেন, তিনিই অবৈধ সম্পদ আর জুলুমের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। খতিব ইবনুল মাখদুম সেই ব্যক্তি, যিনি তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন।

সেদিন রাত গভীর হতেই দরজায় জোরে জোরে আঘাত পড়ল।

"দরজা খোল!"

আমিনার বুক কেঁপে উঠল। বাবা ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোলেন। দরজা খোলার মুহূর্তেই চার-পাঁচজন মুখোশধারী লোক বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। তারা বলল,

"তুমি বেশি কথা বলো, তাই না? আজ তোমার বিচার হবে!"

এরপরই শুরু হলো এক বিভীষিকাময় অধ্যায়।

দ্বিতীয় অধ্যায়: রক্তে লেখা রাত

সেই রাতে আমিনার সামনে ঘটে এমন কিছু, যা সে কখনো কল্পনাও করেনি। তার বাবা খতিব ইবনুল মাহখুমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, মা ও ছোট ভাইকেও রেহাই দিল না তারা। আমিনা কোনোমতে পাশের ঘরের জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল, কিন্তু তার মনে হচ্ছিল, তার আত্মাও রক্তাক্ত হয়ে গেছে।

সে দৌড়াতে থাকল, দৌড়াতে থাকল...

রাস্তার এক কোণে অচেতন হয়ে পড়ে গেল।

তৃতীয় অধ্যায়: আশ্রয় ও প্রতিশোধ

যখন চোখ খুলল, তখন সে দেখল, এক মাদ্রাসার কক্ষে শুয়ে আছে। পাশে এক বৃদ্ধা কুরআন পড়ছিলেন। তিনি বললেন,

 "মা, আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়েছেন। ধৈর্য ধরো।"

কিন্তু কীভাবে ধৈর্য ধরবে? তার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে।

সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,

 "আমার কী দোষ ছিল? কেন আমার প্রিয়জনদের কেড়ে নিল?"

বৃদ্ধা বললেন,

"وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ"

"জালিমরা যা করে, আল্লাহ তা থেকে গাফিল নন।" (সূরা ইবরাহীম: ৪২)

আমিনার চোখে অশ্রু জমে উঠল।

সে সিদ্ধান্ত নিল—এই অন্যায়ের প্রতিকার সে চায়, তবে প্রতিশোধের নয়, ন্যায়বিচারের!

চতুর্থ অধ্যায়: আল্লাহর ন্যায়বিচার

বছর পার হয়ে যায়। আমিনা কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করে। একদিন, সে জানতে পারে, রফিক সাহেব নিজের ক্ষমতার দম্ভে এতটাই অন্ধ হয়ে গেছেন যে, তার এক আত্মীয়ই তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে।

আদালতে যখন রফিক সাহেবকে তোলা হয়, আয়শাও সেখানে উপস্থিত ছিল। বিচারক যখন বললেন,

"তোমার কোনো শেষ কথা আছে?"

তখন রফিক কাঁপতে কাঁপতে বলল,

"আমি ভুল করেছি, আমাকে মাফ করে দাও!"

সবাই তাকিয়ে আছে আয়শার দিকে। সে ধীর কণ্ঠে বলল,

"إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ"

"নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।" (সূরা আল-মায়িদাহ: ৪২)

সে কাঁদতে কাঁদতে বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

"আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু এই অন্যায়ের শাস্তি যেন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী হয়।"

শেষ অধ্যায়: ধৈর্যের আলো

বছর কেটে যায়। আমিনা এখন নারী শিক্ষার প্রচারক, কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। একদিন এক শিক্ষার্থী তাকে জিজ্ঞেস করল,

"আপা, আপনি কি এখনো দুঃখ পান?"

সে মৃদু হেসে বলল,

"না, কারণ আমি জানি, আল্লাহর ন্যায়বিচার কখনো বিলম্বিত হয় না।"

তার চোখে পানি আসে, কিন্তু এবার সেটা কষ্টের নয়—শান্তির অশ্রু।

উপন্যাসের শিক্ষা:

এই গল্প আমাদের শেখায়, ন্যায়বিচার ও ধৈর্যই প্রকৃত বিজয়। আল্লাহ কখনো অন্যায়কে ছেড়ে দেন না, এবং যারা ধৈর্য ধরেন, তাদের জন্য রয়েছে অসীম পুরস্কার।

লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব 

"অশ্রুর আয়নায় প্রতিফলিত আলো: ধৈর্য, বিশ্বাস ও ক্ষমার এক অনন্য গল্প"

 উপন্যাস: 'অশ্রুর আয়না'

অশ্রুর আয়নায় প্রতিফলিত আলো"—একটি হৃদয়স্পর্শী ইসলামিক উপন্যাস, যেখানে ধৈর্য, বিশ্বাস ও ক্ষমার শক্তি কুরআনের আলোয় উদ্ভাসিত হয়। বাস্তব জীবনের কষ্ট, পরীক্ষা এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাসের এক অনন্য চিত্র উঠে এসেছে এই কাহিনিতে।
"ধৈর্য, বিশ্বাস ও ক্ষমার আলো—অশ্রুর আয়নায় প্রতিফলিত এক হৃদয়স্পর্শী গল্প।"

প্রথম অধ্যায়: হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন

রাত গভীর। ফজরের আযানের অপেক্ষায় থাকা কায়রো শহরটি যেন নীরব কান্না করছে। ছোট্ট ঘরটির এক কোণে বসে কুরআন হাতে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে আছে তাহেরা। বাবা-মা, ভাইবোন সবাই ঘুমিয়ে, কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই।

সে আজও সেই রাতের কথা ভুলতে পারেনি—যে রাতে তার জীবন বদলে গিয়েছিল।

দ্বিতীয় অধ্যায়: নিঃস্ব হৃদয়ের কান্না

তিন বছর আগে, এক শীতের রাতে, তার বাবা আব্দুল খালেক তাকে ডেকে বলেছিলেন,

তাহেরা, মেয়েদের চলাফেরা সীমিত থাকা উচিত। তুমি বেশি বেশি দ্বীন শিখো, বাইরের দুনিয়ায় মেয়েদের সম্মান কমে যাচ্ছে।"

তাহেরা মাথা নত করে বলেছিল,

"আব্বা, আমি তো কেবল কুরআন ও হাদিস শিখতে চাই।"

কিন্তু বাবা আব্দুল খালেকের চোখে ছিল শঙ্কা। তাহেরার চাচাতো ভাই রিয়াজ দ্বীনের পথে ছিল না, অথচ সে তাহেরার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল।

একদিন, রিয়াজ তাকে প্রস্তাব দেয়,

তুমি যদি আমার না হও, তবে তোমাকে এই দুনিয়াতেও শান্তি পেতে দেব না!"

তাহেরা চমকে ওঠে। সে জানত, এই ভালোবাসা হারাম। সে স্পষ্ট বলেছিল,

"আমি আল্লাহকে ভালোবাসি, আমার হৃদয় কেবল তাঁর জন্য!"

রিয়াজ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এক রাতে তার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘুমন্ত মা-বাবা, ছোট্ট ভাই—সবাই পুড়ে যায়। তাহেরা সেদিন দগ্ধ শরীর নিয়ে বেঁচে গিয়েছিল, কিন্তু তার মন পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।

তৃতীয় অধ্যায়: কুরআনের আলো

মাদ্রাসার এক ওস্তাদ তাকে বলেছিলেন,

"إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ"

"নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।" (সূরা আল-বাকারাহ: ১৫৩)

সে ধৈর্য ধরে ছিল। জীবনের সব কিছু হারিয়েও কুরআন পড়া ছাড়েনি।

চতুর্থ অধ্যায়: ন্যায়বিচারের আলো

একদিন, আদালতের রায় আসে—তার চাচাতো ভাই রিয়াজ দোষী! কিন্তু তাহেরা আদালতে বলল,

— "আমি ওকে ক্ষমা করলাম, যেন আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করেন!"

শুনে সবাই বিস্মিত হয়। এক বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করে,

 "তুমি কি ওর উপর ক্ষুব্ধ নও?"

তাহেরা কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দেয়,

 "আমি বিচার চাই, কিন্তু প্রতিশোধ চাই না। আল্লাহ বলছেন,

"وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ"

"যারা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।" (সূরা আলে ইমরান: ১৩৪)

এ কথা শুনে পুরো আদালত স্তব্ধ হয়ে যায়। অনেকের চোখে পানি চলে আসে।

শেষ অধ্যায়: অশ্রুর আয়না

বছর কেটে যায়। তাহেরা আজ একজন আলেমা, কুরআনের শিক্ষীকা। একদিন এক ছাত্রী তাকে জিজ্ঞেস করে,

 "আপা, আপনি কষ্ট পেলে কী করেন?"

তাহেরা কুরআন খুলে পড়তে থাকে,

"إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا"

"নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে সহজি আছে।" (সূরা আল-ইনশিরাহ: ৬)

তার চোখে পানি চলে আসে, কিন্তু এবার সেটা দুঃখের নয়—শান্তির অশ্রু।


শেষ কথা

এই দুনিয়ার সব কষ্টই একদিন শেষ হয়ে যাবে, যদি আমরা ধৈর্য ধরি ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাই। তাহেরার গল্প আমাদের শেখায়—প্রতিশোধ নয়, বরং ক্ষমা ও ধৈর্যই প্রকৃত বিজয়।

লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫

"প্রার্থনার আলোয় ফিরে পাওয়া ভালোবাসা"

 মর্মান্তিক এক প্রেম কাহিনী: আলোর পথে প্রত্যাবর্তন

জীবনের প্রতিটি ধাপে মানুষ ভালোবাসার অন্বেষণ করে। তবে সেই ভালোবাসা যদি আল্লাহর পথে পরিচালিত হয়, তবেই তা পূর্ণতা পায়। এই গল্পে রয়েছে প্রেম, প্রতীক্ষা ও তাওবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। শয়তানের প্ররোচনায় পথ হারালেও আল্লাহর রহমতে সত্যিকার ভালোবাসা কীভাবে ফিরে পাওয়া যায়, তার এক মর্মস্পর্শী কাহিনী। পড়ুন, "প্রার্থনার আলোয় ফিরে পাওয়া ভালোবাসা"।
ধৈর্য, তাওবা, এবং আল্লাহর পথে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে তাদের ভালোবাসা।"


উপন্যাসের ভূমিকা


জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মানুষ ভালোবাসার অন্বেষণ করে। তবে সেই ভালোবাসা যদি আল্লাহর পথে পরিচালিত হয়, তবেই তা জীবনের সত্যিকারের সার্থকতা। এই কাহিনীতে ইসলামের আলোকে প্রেম, অপেক্ষা এবং তাওবার মাধ্যমে আলোকিত এক দাম্পত্য জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।


অধ্যায় ১: পরিচয়


কথা হচ্ছিল এক গ্রামে গ্রামের নাম ইশবপুর। ওহিদ ছিল গ্রামের একজন পরিশ্রমী, নম্র যুবক। সে মসজিদের ইমামের ছেলে। অন্যদিকে সাইফা ছিল একজন নম্র, ধার্মিক মেয়ে। তাদের পরিচয় হয় একটি ইসলামী অনুষ্ঠান থেকে। পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে এক পবিত্র ভালোবাসা।


তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু তাদের দু'জনই জানত যে ইসলামে বিবাহের পূর্বে সম্পর্ক গড়া হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,


তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল এবং খুবই মন্দ পথ।" (সূরা আল-ইসরা: ৩২)


তবুও, শয়তানের প্ররোচনায় তারা নিজেদের ভালোবাসাকে অবৈধ পথে পরিচালিত করে ফেলে।


অধ্যায় ২: হারিয়ে যাওয়া


একদিন ওহিদ সাইফাকে বলে, "আমরা যা করছি, তা ইসলামের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। আমি এখান থেকে দূরে চলে যাব। আমি চাই না আমার কারণে তুমি পাপ করো।" এই কথা বলে ওহিদ কোনো ঠিকানা না দিয়ে অজানার পথে পাড়ি জমায়। নাফিসা তার চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়ে।


অধ্যায় ৩: অপেক্ষার বছরগুলো


আদিল চলে যাওয়ার পর নাফিসা আল্লাহর পথে ফিরে আসে। সে নামাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহর কাছে তার জন্য প্রার্থনা করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।" (মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ২৩৪৭)


এদিকে, ওহিদও তার ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে। দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর কেটে যায়, কিন্তু তারা একে অপরকে ভুলতে পারে না।


অধ্যায় ৪: পুনর্মিলন


একদিন সাইফার বাবা তাকে জানায়, "তোমার জন্য একজন ভালো পাত্র এসেছে। তার নাম ওহিদ।" সাইফা বিস্মিত হয় এবং বুঝতে পারে, আল্লাহ তাদের আবার মিলিয়েছেন।


বিবাহের দিন ওহিদ সাইফার সামনে এসে বলে, "তোমার জন্য আমি ফিরে এসেছি। তোমার ধৈর্য এবং প্রার্থনা আমাদের আজ এখানে এনেছে।"


আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন,


অতএব, তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।" (সূরা আল-আনফাল: ৪৬)


উপসংহার


তাদের বিবাহের মাধ্যমে তাদের প্রেম পূর্ণতা পায়। তারা বুঝতে পারে, সত্যিকার ভালোবাসা শুধু আল্লাহর পথে পরিচালিত হলে তাতে বরকত হয।


উপদেশ:

এই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যেকোনো ভুলের পর তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। প্রেম যদি পবিত্র হয়, তবে তা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া উচিত।

লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব