প্রশ্নের মুখোমুখি সত্য
![]() |
“পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন? জানতে হলে পড়ুন ইসলাম কী বলে — যুক্তি, কুরআন-হাদীস ও বাস্তবতা মিলিয়ে এক নির্ভুল বিশ্লেষণ!” |
তের নম্বর খণ্ড: পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন?
অংশ ১: প্রশ্নের তীর ছুটে এলো
সকালবেলা। শীতল বাতাসে সেমিনার হলের কাচের জানালাগুলো কাঁপছে হালকাভাবে। কফির মৃদু গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সভাস্থলে। আগের দিন হিজাব নিয়ে বিতর্ক ছিল তুমুল, আজ নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ যেন আরও প্রস্তুত হয়ে এসেছে।
মুফতি হারুন ইজহার শান্ত মুখে চেয়ারে বসা, হাতে তসবিহ। কিন্তু নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ আজ আর কোন ভূমিকা ছাড়াই প্রশ্ন ছুড়ে দিল—
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ:
“একটা সোজা প্রশ্ন করি, হুজুর!
পুরুষ চারটা বিয়ে করতে পারে, অথচ নারী পারবে না কেন?
এটাই কি লিঙ্গ বৈষম্য নয়? ইসলাম কি পুরুষতান্ত্রিক নয়?”
একটা নিঃশব্দ বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে পুরো কক্ষে।
কেউ কাশতে থাকে, কেউ চোখে চোখ রাখে না।
মুফতি হারুন ইজহার তসবিহ থামিয়ে বললেন—
মুফতি হারুন ইজহার:
“প্রশ্নটা সোজা নয়, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। গভীর। কিন্তু ভয় নেই, উত্তরও রয়েছে — কোরআনের আলোয়, হাদীসের আলোকে এবং প্রকৃতির নিজস্ব যুক্তিতে।”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (হেসে):
“আমি যুক্তি চাই, কাহিনি না। আর হ্যাঁ, আধুনিক যুক্তি যা এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ঠিক মনে হয়।”
মুফতি হারুন ইজহার:
“তুমি যুক্তির কথা বলো, অথচ প্রকৃতি ও সমাজ বাস্তবতা উপেক্ষা করো!
ভালো, আমি পালিয়ে যাব না। আজকের প্রশ্ন তোমার, উত্তর আমার — তবে সবার জন্য শিক্ষা হবে।”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (চোখ কুঁচকে):
“আমি শোনার অপেক্ষায় আছি, তবে শুধু ধর্মীয় বুলি নয়। যদি কোনোদিন মেয়ের বিয়ে দেই, চাইব না তার স্বামী যেন দ্বিতীয় বিয়ে করে। তবুও তোমার ইসলাম তাকে সুযোগ দেয়! এটা বৈষম্য না?”
মুফতি হারুন ইজহার (শান্ত কণ্ঠে):
“তুমি যা বললে, সেটা আবেগ। আমি বলব বাস্তবতা।
তবে তার আগে, একটু জানিয়ে নিই— কোরআনে পুরুষকে চারটি বিবাহের অনুমতি এক শর্তে দেওয়া হয়েছে। তা হলো, ‘ন্যায়বিচার’।
আর নারীর একাধিক স্বামীর ব্যাপারে কোরআনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (চোখ বড় করে):
“তা হলে তুমি বলছো, একজন পুরুষ চারজন নারীকে ভালোবাসতে পারে, আর নারী পারবে না?”
মুফতি হারুন ইজহার:
“‘ভালোবাসা’ নয়, বরং ‘দায়িত্ব’ এখানে মূল বিষয়।
যার ব্যাখ্যা আমি দিই পরের পর্বে, ইনশাআল্লাহ।
তুমি চাও যুক্তি, আমি দেবো। কোরআন, হাদীস, প্রকৃতি, ইতিহাস, এমনকি মেডিকেল সায়েন্স দিয়েও ব্যাখ্যা করব—
কেন ইসলাম পুরুষকে সীমিতভাবে একাধিক বিবাহের অনুমতি দেয়, আর নারীকে নয়।”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (চ্যালেঞ্জিং ভঙ্গিতে):
“ঠিক আছে, দেখি কতটা যুক্তি দিতে পারো। আজকের মতো রাখি তাহলে?”
মুফতি হারুন ইজহার (মৃদু হেসে):
“জ্ঞান কখনো লড়াই নয়, আলো ছড়ানো। দেখা হবে আগামী পর্বে, মাসুদ। সেদিন আমি বলব, তুমি ভাববে।”
তের নম্বর খণ্ড: পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন?
অংশ ২: কুরআনের আলোয় ব্যাখ্যা
সকাল গড়িয়েছে। মুফতি হারুন ইজহার তাঁর নিজস্ব মাদরাসায় ফিরে গেছেন, কিন্তু নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চিন্তা থামাতে পারছে না। চারবার বিয়ে করার অনুমতি, অথচ নারীর জন্য নয় — কথাটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
পরদিন আবারো একটি চায়ের আড্ডা, পাশে কুরআন-হাদীসের বইয়ের স্তূপ। নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলে উঠল—
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ:
“গতকালের কথা মনে আছে? আজ উত্তর শোনার দিন। এখন বলুন—কেন পুরুষ চারটি বিয়ে করতে পারে, আর নারী একটিও বাড়াতে পারে না?”
মুফতি হারুন ইজহার (হালকা হেসে):
“তুমি যদি কুরআনের ভাষা বুঝতে, তাহলে প্রশ্নটি এমনভাবে করতে না।
তবু শুনো— সূরা নিসা, আয়াত ৩-তে আল্লাহ বলেন:
"وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً"
অর্থ: যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, এতিমদের প্রতি ইনসাফ করতে পারবে না, তবে তোমাদের পছন্দমতো নারীদের মধ্যে থেকে দুই, তিন অথবা চারজনকে বিবাহ করো। কিন্তু যদি মনে করো যে, ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে একজনই বিবাহ করো।
আল্লাহ এখানে প্রথমেই বললেন ‘ইনসাফ’-এর কথা। একাধিক বিবাহের শর্ত হলো পূর্ণ ন্যায়ের সাধন। আর জানো তো?
সুরা নিসার আরেকটি আয়াতে (৪:১২৯) বলা হয়েছে:
"وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ"
অর্থ: তোমরা চাইলেও নারীদের মাঝে পুরোপুরি ন্যায়বিচার করতে পারবে না।
মানে?
ইসলাম একাধিক বিবাহকে উৎসাহ দেয়নি, বরং সীমিত ও কঠিন শর্তে বৈধ করেছে।
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (ভ্রু কুঁচকে):
“তাহলে তো এটা পুরুষের সুবিধা হয়ে গেল! নারীর জন্য কেন নয়?”
মুফতি হারুন ইজহার:
“চল, একটি প্রশ্ন করি—
একজন নারী যদি একসাথে একাধিক পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে, তবে তার গর্ভে জন্মানো সন্তানের পিতৃপরিচয় কী হবে?
তুমি কি চাইবে তোমার সন্তান ‘অজানা’ বাবার পরিচয়ে বেড়ে উঠুক?
ইসলামে বংশধারা পরিচিতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান কার — তা জানা থাকা অপরিহার্য। আর এটি সম্ভব শুধুমাত্র নারীর এক স্বামী থাকার মাধ্যমে।
ইসলাম নারীর মর্যাদা রক্ষা করে। একজন পুরুষ ৪টি স্ত্রী রাখলেও তার উপর রয়েছে দায়িত্ব, ভরণপোষণ, ইনসাফ এবং সন্তানের যত্ন।
আর জানো? কোনো স্ত্রী যদি চায়, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে না করুক, তাহলে নিকাহের শর্তেই সে তা নির্ধারণ করে দিতে পারে। ইসলাম এটাও সম্মান করে।”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (চুপচাপ):
“এই দিকটা আগে ভাবিনি...”
মুফতি হারুন ইজহার (কিছুটা আবেগ নিয়ে):
“ইসলাম কখনো নারীর শত্রু নয়, বরং রক্ষক।
দুনিয়াতে বহু সমাজে বহু নারী বিধবা হন, নিঃসন্তান হন, কিংবা সমাজে অবহেলিত হয়ে থাকেন।
তাদের জন্য একজন পুরুষ যদি দয়া করে, তাদের সম্মান দিয়ে, ইনসাফ রেখে বিয়ে করে —
তা কি পাপ? নাকি নিঃস্বার্থ সমাজ গঠনের একটি অংশ নয়?”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (নরম কণ্ঠে):
“আপনি কি বলতে চাইছেন, ইসলামে দ্বিতীয় বিয়েতে পুরুষের লাভ নয়, বরং দায়িত্ব বাড়ে?”
আলেম (চোখে দৃঢ়তা):
“ঠিক তাই।
ইসলাম নারীকে পণ্য নয়, মানবিক মর্যাদায় দেখে।
আর বহুবিবাহ পুরুষের খেয়াল বা ভোগ নয় — এটি অনেক সময় দায়িত্ব, সমাজকল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য অনুমোদিত একটি উপায় মাত্র।”
তের নম্বর খণ্ড: পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন?
অংশ ৩: ইতিহাস, মনস্তত্ত্ব ও বিজ্ঞান বলছে কী?
চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়ে এসেছে। আলোচনার গভীরতা বাড়ছে। নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এখনও চুপচাপ, কিন্তু তার চোখ বলছে—সে শুনছে মন দিয়ে।
মুফতি হারুন ইজহার বলতে শুরু করলেন, ধীর ও মোলায়েম স্বরে—
“মাসুদ, আজ আমরা তিনটি দিক থেকে বুঝব কেন ইসলাম এই বিধান দিয়েছে—
(১) ইতিহাস, (২) মনস্তত্ত্ব, (৩) চিকিৎসাবিজ্ঞান।”
১. ইতিহাস কী বলে?
“তুমি কি জানো—
বহু সভ্যতায়, এমনকি ইসলামপূর্ব আরব, হিন্দু সমাজ, চীন, ইহুদী-খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও বহু বিবাহ ছিল।
ইসলাম আসার পর এই প্রথাকে সীমাবদ্ধ করল —
একজন পুরুষ সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারবে, তাও ইনসাফ করতে না পারলে একটিই বৈধ।
আর নারীর একাধিক পুরুষকে স্বামী বানানোর উদাহরণ?
সে ইতিহাস কেবল পাশবিক সমাজেই দেখা যায়, যেখানে নারীকে মানুষ নয়, ভোগ্যপণ্য ভাবা হতো।
ইসলাম নারীকে সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছে।”
২. মনস্তত্ত্বের দৃষ্টিতে:
“মাসুদ, মনোবিজ্ঞান বলে—
পুরুষ ও নারীর স্বভাব আলাদা।
পুরুষ বহির্মুখী, শারীরিক চাহিদা তার মধ্যে তুলনামূলক বেশি ও সক্রিয়,
নারী আবেগনির্ভর, স্থিতিশীল সম্পর্ক চায়।
একজন নারী যখন প্রেম করে, সে মিশে যায় পুরোটা হৃদয় দিয়ে—
অন্য কাউকে সহজে জায়গা দেয় না।
তাই একসাথে একাধিক স্বামী রাখা তার স্বভাবেরও বিরুদ্ধে।”
৩. চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রমাণ:
“এখন শুনো, বিজ্ঞান কী বলছে।
নারী যদি একাধিক পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে—
Human Papilloma Virus (HPV), HIV/AIDS, Bacterial Vaginosis, Cervical Cancer সহ বহু জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
একইভাবে সন্তান জন্মের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়—
কোন পুরুষের শুক্রাণু থেকে সন্তান হয়েছে, তা জানা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আর এটি শুধু সামাজিক নয়, চিকিৎসাগতভাবেও বিপদজনক।”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ কিছুটা বিচলিত হয়ে বলে উঠল—
“তাহলে, ধর্ম আর বিজ্ঞান একসাথেই বলছে—নারীর একাধিক স্বামী থাকা অস্বাভাবিক?”
মুফতি হারুন ইজহার মাথা নাড়লেন:
“তাই তো।
আর ইসলাম যখন কোনো বিধান দেয়, তা কেবল আখেরাত নয়, দুনিয়াবী কল্যাণও মাথায় রেখে দেয়।
যেমন—
এক পুরুষ বহু নারীর দায়িত্ব নিতে পারে, তাদের সম্মান রক্ষা করতে পারে, সন্তানদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারে, এবং সমাজে ভারসাম্য আনতে পারে।”
একটি বাস্তব উদাহরণ:
“তুমি জানো, যুদ্ধের পরে বহু পুরুষ মারা যায়, সমাজে নারীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
যেমন ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বহু নারী অবিবাহিত থেকে যায়।
তখন যদি কেউ চাইতেও, তবুও বিয়ে করার মতো পুরুষ ছিল না।
এমন পরিস্থিতিতে—
একজন পুরুষ যদি দুটি নারীর সম্মান রক্ষা করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে,
তাকে কি নিন্দা করা হবে, না বরং সম্মান জানানো উচিত?”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চোখ নিচু করে বলল:
“আপনার যুক্তিগুলো আগে কেউ এমনভাবে বলেনি... মনে হচ্ছে ধর্ম শুধু বিশ্বাস নয়, বুদ্ধিও।”
মুফতি হারুন ইজহার ধীর কণ্ঠে বললেন:
“ইসলামের কোনো বিধান অন্ধভাবে নয়।
সব কিছুর পেছনে আছে হিকমাহ (জ্ঞানের ভিত্তি),
আছে রহমত,
আছে সামাজিক ভারসাম্য।
তুমি যে প্রশ্ন করেছিলে—
‘নারীর একাধিক স্বামী কেন বৈধ নয়?’—
তা আজ শুধু কুরআনের নয়,
বিজ্ঞান, ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান—সব দিক থেকেই উত্তর পেয়ে গেছো।
এটাই ইসলাম— যুক্তিবাদী, বাস্তববাদী, ন্যায়নিষ্ঠ।”
তের নম্বর খণ্ড: পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন?
অংশ ৪: অপব্যবহার বনাম ভারসাম্য — ইসলামের সত্যিকারের দৃষ্টিভঙ্গি
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এবার কিছুটা ভিন্ন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল—
“আচ্ছা হুজুর, আপনি যেসব যুক্তি দিলেন সেগুলো বোঝা গেল। কিন্তু আমাদের সমাজে তো দেখি কেউ কেউ একাধিক বিয়ে করে নারীদের কষ্ট দেয়। কেউ বিয়ের কথা গোপন রাখে, কেউ আবার এক স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দিয়ে অন্যকে উপেক্ষা করে। এটা কি ইসলামের চাওয়া?”
মুফতি হারুন ইজহার এক চুমুক দিয়ে চায়ের শেষ চুমুকটাও শেষ করলেন।
তারপর ধীরে বললেন—
১. অপব্যবহারের দায় ইসলাম নেয় না
“মাসুদ,
একজন মানুষ ওষুধের অপব্যবহার করে আত্মহত্যা করলে—
তখন কি ওষুধ দায়ী,
নাকি সেই ব্যক্তি?
একইভাবে,
কোনো বিধানের অপপ্রয়োগ হলে দোষ সেই ব্যক্তির,
শরিয়তের নয়।
আজ অনেক পুরুষ একাধিক বিবাহ করে ইনসাফ করে না—
এটা স্পষ্ট হারাম। কুরআন বলে:
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً
“যদি ইনসাফ করতে না পারো, তাহলে একটিতেই সীমাবদ্ধ থেকো।”
(সূরা নিসা: ৩)
অন্য স্ত্রীর হক নষ্ট করে দিলে,
অন্য স্ত্রীর প্রতি অন্যায় করলে,
উপেক্ষা করলে—
প্রতিটি অন্যায়ের জন্য আলাদা করে জবাবদিহি করতে হবে কিয়ামতের ময়দানে।”
২. নবিজির জীবন: ভারসাম্যের শ্রেষ্ঠ আদর্শ
“আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক বিবাহ করেছেন।
কিন্তু তুমি কি জানো—
তিনি কেবল প্রেম বা শারীরিক কারণে বিয়ে করেননি।
প্রত্যেক বিবাহের পেছনে ছিল বিশেষ হিকমাহ:
কারো স্বামী ছিলেন শহীদ, তিনি নিঃসঙ্গ।
কেউ ছিলেন বৃদ্ধা, কেউ ছিলেন যোদ্ধার স্ত্রী।
কেউ ছিলেন ইসলামের নতুন আগত, যাকে সম্মান দিতে হতো।
সবচেয়ে বড় কথা—
প্রত্যেক স্ত্রীর প্রতি তিনি সমান সময়, সমান অর্থ, সমান আচরণ করতেন।
এক সাহাবি বলেন—
“নবীজি এতটা ইনসাফ করতেন যে আমরা পার্থক্য ধরতে পারতাম না।”
৩. সমান আচরণ না করলে কী হবে?
“মাসুদ, রাসূল (সা.) এর হাদীসে আছে—
‘যে ব্যক্তি একাধিক স্ত্রীর মধ্যে কারো প্রতি পক্ষপাত করে অন্যের হক নষ্ট করে, কিয়ামতের দিন তার দেহ একপাশে ঝুলে থাকবে।’
(আবু দাউদ, হাদীস: ২১৩৩)
তুমি বুঝতেই পারছো—
একাধিক বিয়ের অনুমতি থাকলেও,
শর্ত হলো ন্যায়বিচার।
আর তা না হলে তা জুলুমে পরিণত হয়।”
৪. আমাদের সমাজে করণীয় কী?
“আজকের সমাজে প্রলোভন, লুকোচুরি, কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে বিয়ে করলে—
তা ফিতনার কারণ হয়।
তাই ইসলাম বলে:
তুমি একাধিক বিয়ে করতে পারো,
কিন্তু আগে নিজে পরিপক্ব হও।
স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব, সন্তানদের হক, সময় ও অর্থ—সব কিছু বিবেচনায় নিতে হবে।
কোনো স্ত্রী যেন অবহেলিত না হয়, মানসিক কষ্ট না পায়—এটাই ইসলামের চাওয়া।
আর নারীদেরও বুঝতে হবে—
একাধিক বিবাহ মানে অন্যায় নয়, যদি তা ইনসাফের ভিত্তিতে হয়।”
নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—
“বুঝলাম হুজুর,
ইসলাম অনুমতি দেয় ইনসাফের শর্তে,
আর আমরা অনেকেই সে শর্ত মানি না।
তাই সমস্যা তৈরি হয়।
তাহলে ইসলাম নয়, দায় আমাদের নিজেদেরই।”
মুফতি হারুন ইজহার মুচকি হাসলেন।
“এই উপলব্ধি থেকেই তো পরিবর্তন শুরু হয়।
আর এটাই ইসলামের সৌন্দর্য—যা ভারসাম্য শিক্ষা দেয়।”
[চলবে – ১৪ নম্বর খণ্ড ইন শা আল্লাহ]
লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।