উপন্যাস: জীবনের আঁধার আর আলো
![]() |
সাকিব ও সাবিহার গল্প: সম্পর্কের জটিলতা, ধৈর্য, এবং তাওবার পথে এক নতুন জীবনযাত্রার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। |
ভূমিকা
মানবজীবন নানা ঘটনার জালে জড়িত, যেখানে কখনো সুখের আলো ছড়ায়, আবার কখনো তা ঢাকা পড়ে দুঃখের অন্ধকারে। এই গল্প একজন আলেম ছেলে এবং আলেমা মেয়ের জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের একটি চিত্র। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহ, সহমর্মিতা, এবং জীবনযাপনের শিক্ষণীয় দিক এখানে উঠে এসেছে।
প্রথম অধ্যায়: শুরুটা স্বপ্নময়
মেয়েটির নাম সাবিহা, একজন আলেমা, যিনি পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান নিয়ে জীবন সাজিয়েছেন। সাবিহা ছিলেন অদ্বিতীয় সুন্দরী। তিনি যেমন সুন্দর তেমনি বুদ্ধিমতী। কিন্তু তার জীবনের প্রথম বিয়ে ছিল একটি কঠিন অধ্যায়। তার প্রথম স্বামী ফরহাদ ছিল কঠোর মেজাজের, যা থেকে বিবাহজীবনে দুঃখ আর হতাশার ছায়া নেমে আসে। স্বামীর অসদাচরণ সহ্য করতে না পেরে সাবিহা ডিভোর্স দেন।
এরপর সাবিহা ভাবলেন, জীবন নতুন করে শুরু করবেন। অনেক দোয়া করলেন যেন একজন সৎ, ধার্মিক মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পান।
দ্বিতীয় অধ্যায়: সাকিবের আগমন
সাকিব, একজন আলেম, মিষ্টভাষী, এবং অত্যন্ত সৎ। তিনি মানুষের হৃদয় জয় করতেন তার নম্রতা আর সহনশীলতা দিয়ে। সাকিব জানতেন সাবিহার অতীত এবং তার দুঃখের গল্প। কিন্তু তিনি মনে করতেন, সাবিহা যদি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চান, তাহলে তাকে সাহায্য করা উচিত।
বিয়ের পর প্রথম কয়েক মাস তাদের জীবনে সুখ আর প্রশান্তি ছিল। সাকিব সাবিহাকে খুব ভালোবাসতেন এবং তার সুখের জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত ছিলো
তৃতীয় অধ্যায়: সম্পর্কের আঁধার
সাবিহার স্বভাব ছিল একটু কঠিন এবং অধৈর্য। তার মধ্যে ছিল এমন এক প্রবণতা, যা আগে তার প্রথম বিবাহ জীবনে সমস্যার কারণ হয়েছিল। সাকিবের সাথেও ধীরে ধীরে তার কঠোর আচরণ দেখা দিতে থাকে।
সাকিব প্রতিনিয়ত ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি সাবিহাকে বুঝাতেন যে, রাগ ও অভিমান সম্পর্কের ভিত্তি দুর্বল করে দেয়। তিনি ইসলামের আলোকে জীবনযাপনের পদ্ধতি সাবিহাকে স্মরণ করিয়ে দিতেন। কিন্তু সাবিহার আচরণ দিন দিন কঠোর হতে থাকে।
চতুর্থ অধ্যায়: বিচ্ছেদের কালো মেঘ
একদিন সাবিহা সাকিবকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মনে করতেন, সাকিব তার মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। সাকিব শোকাহত হয়ে যান। কিন্তু তিনি বুঝেছিলেন, আল্লাহ্ যা করেন, তা ভালো জন্যই করেন। তিনি কুরআনের এই আয়াতটি বারবার মনে করতেন:
"আল্লাহ্ কাউকে তার সহ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।" (সূরা আল-বাকারা: ২৮৬)
সাকিব আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে নেন। তিনি মসজিদে বেশি সময় দেওয়া শুরু করেন এবং ইসলামী জ্ঞান অর্জনের পিছে লেগে পড়েন তার ছাত্রদের আরও আন্তরিকভাবে ইসলামের শিক্ষা দিতে মনোযোগী হন।
পঞ্চম অধ্যায়: আলোর পথ
বেশ কয়েক মাস পর সাকিবের জীবনে আসে নতুন আলো। তিনি সুমাইয়া নামের একজন ধার্মিক মেয়েকে বিয়ে করেন। সুমাইয়া নম্র, ধৈর্যশীলা এবং সাকিবের প্রতি আন্তরিক। তাদের সংসার ছিল সুখময়। সাকিব বুঝলেন, আল্লাহ্ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, সেটাই তার জন্য উত্তম।
অন্যদিকে, সাবিহা তার ভুলগুলো বুঝতে পারেন, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।
শিক্ষা ও উপসংহার
এই গল্প আমাদের শেখায় যে ধৈর্য, নম্রতা এবং ইসলামের পথে চলাই একটি সফল দাম্পত্য জীবনের মূল ভিত্তি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতা থাকলে জীবনের যেকোনো সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আল্লাহ্ বলেন:
"তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে।" (সহীহ বুখারী: ৫০৬৬)
মানুষের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখা এবং নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: মাওলানা মোঃ সাকিব