GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫

বাল্যবিবাহ ও আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে: অপবাদ নাকি ইতিহাস? নাস্তিকের প্রশ্নে আলেমের দাঁতভাঙা জবাব

 🕯️ উপন্যাস: অন্ধকারের মুখে আলো

আলো-অন্ধকারের দ্বন্দ্বে সত্যের প্রতিচ্ছবি—নবীজির (সা.) বিয়ের প্রেক্ষাপটে ইসলামিক ইতিহাস ও যুক্তির ব্যাখ্যা।”
যেখানে অপবাদ উঠে, সেখানে সত্য দাঁড়িয়ে জবাব দেয়। ইতিহাস, কুরআন ও যুক্তির আলোকছায়ায় নবীজির (সা.) বিয়ে নিয়ে স্পষ্ট জবাব।"


✦ ১ম অংশ: তর্কের আগুন


হলরুমজুড়ে মানুষের ভিড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়া এক বিতর্কিত বক্তা আজ মঞ্চে। নিজেকে “যুক্তিবাদী” দাবি করা সেই ব্যক্তি—নাম তার আসাদ নূর, একজন সুপরিচিত ধর্মবিরোধী বক্তা। তার কথায় আগুন আছে, তর্কে চাতুর্য আছে, কিন্তু ইমান নেই।


মঞ্চের পেছনে লেখা—

“তর্ক সভা: ধর্ম বনাম যুক্তি”

সবাই জানে, আজ একটা অগ্নিপরীক্ষা হতে যাচ্ছে।


🎤 মাইক্রোফোন হাতে নাস্তিক আসাদ নূর


– "প্রিয় বন্ধুরা, আজকের সভায় আমরা মুখোমুখি হবো কেবল অন্ধ বিশ্বাসের, অন্ধ আনুগত্যের! যাদের ধর্মগ্রন্থে একজন পঞ্চম শ্রেণির শিশুকে বিবাহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তারা নাকি আমাদের নৈতিকতার পাঠ পড়াবে!"


লোকজন হো হো করে হাসে।


– "আমি প্রশ্ন রাখছি! মুহাম্মাদ (সা.) নাকি ৬ বছর বয়সী আয়েশা (রা.)-কে বিয়ে করেছিলেন। কীভাবে একজন ৫২ বছর বয়সী পুরুষ, নিজেকে নবী দাবি করে, একজন শিশুকে বিয়ে করতে পারে? এটাই কি তাঁদের ধর্মের নীতি?"


হলঘর মুহূর্তেই উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। কেউ চিৎকার করে, কেউ হতবাক হয়ে চুপসে যায়। মুসলিমদের মাঝে কেমন যেন একটা অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।


🎙️ সঞ্চালক বলেন:


– "আমরা চাইবো ইসলামী পক্ষ থেকে কেউ উত্তর দিন।"


👤 পরিচয়হীন এক আলেম উঠে দাঁড়ান


সাদা পাগড়ি, লম্বা জোব্বা, শান্ত কিন্তু দৃঢ় চেহারা। চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি।


তিনি নাম জানান—

" মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী।"


তিনি ধীরে মঞ্চে আসেন। মঞ্চে উঠে প্রথমে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলেন।


তারপর বলেন:


– “আজকের এই অস্থির সময়ে, আমি যুক্তির উত্তর যুক্তি দিয়ে, অথচ শান্তভাবে দিতে চাই। আমি কাউকে অপমান করতে আসিনি। বরং সত্যকে তুলে ধরতে এসেছি, যেন মানুষ বুঝতে পারে, কে আলোর পক্ষে আর কে অন্ধকারে।”


নাস্তিক আসাদ নুর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে:


– "আপনি সত্য বলতে চান? তাহলে প্রথমে বলুন, ৬ বছর বয়সী আয়েশা নামের শিশুটিকে বিয়ে করে আপনার নবী কী শিক্ষা দিলেন?"


চারদিকে নিস্তব্ধতা। সবাই তাকিয়ে আছে সেই আলেমের দিকে। তিনি একটু দাঁড়ালেন। তারপর মঞ্চ থেকে নেমে লোকজনের মাঝে চলে গেলেন।


তিনি বললেন:


– “তোমাদের মঞ্চে আলো আছে, মাইকে আওয়াজ আছে, কিন্তু মনে কি সত্য জানার আগ্রহ আছে? সত্য বলতে চাইলে আবেগ নয়, চাই প্রমাণ ও প্রেক্ষাপট।”


তিনি আবার মঞ্চে ফিরে এসে বললেন—


– “আমি এখন কিছু জিনিস বলবো। কিন্তু শর্ত একটাই: প্রশ্ন করার অধিকার রাখবেন, তবে অপমান নয়। সত্যের কথা আসুক, দলিল সহ।”


মঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে রহস্যঘন নীরবতা


মুফতি খাইদুল ইসলাম নোমানী বলেন:


– “নবীজির (সা.) জীবনযাপন ছিল সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন, সবচেয়ে দয়ালু। তাঁর বিয়ে, তাঁর যুদ্ধ, তাঁর আহ্বান—সব কিছুই ছিল মানবজাতির মুক্তির লক্ষ্যে। যাঁকে আল্লাহ প্রশংসা করে বলেন—

وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ

‘তুমি তো মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কলম: ৪)”


– “তুমি এক আয়েশার (রা.) বয়সকে প্রশ্ন করছো, কিন্তু ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করো। তখনকার আরবে বিয়ের বয়স কি আমাদের মতো ১৮ বছর ছিল? তখন ১২ বছর বয়সেই মেয়েরা সন্তান জন্ম দিত। মানুষ বালেগ হতো শারীরিক ও মানসিকভাবে অল্প বয়সে। সুতরাং, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অস্বাভাবিক ছিল না।”


নাস্তিক আসাদ নুর একটু নড়ে ওঠে। কিন্তু চুপচাপ।


মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী আরো বলেন—


– “আর আয়েশা (রা.)-র বয়স নিয়ে ঐতিহাসিক মতপার্থক্যও আছে। অনেক ইতিহাসবিদ তাঁর বয়স ১৬-১৯ বছরের মধ্যেও বলেছেন। আয়েশা (রা.) নিজেও বলেন—

‘নবীজিকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম।’

তুমি যদি তার জীবন পড়ো, দেখবে সে কোনো অভিযোগ তো করেইনি, বরং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি নবীজির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কথা বলেছেন।”


🔚 ১ম অংশ শেষ


মঞ্চের উত্তাপ একটু কমে আসে। নাস্তিক আসাদ নুরের মুখ থমথমে। জনতা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সেই আলেমের দিকে।

নবীজির (সা.) জীবন ইতিহাস নয়—এক জীবন্ত আলোর উৎস—এই কথাটি যেন আজ কিছু মানুষের মনে দাগ কাটে।


✅ পরবর্তী অংশে কী থাকবে?


২য় অংশে শুরু হবে আলেমের দলিলভিত্তিক জবাব, যেখানে থাকবে:


বাল্যবিবাহের ইতিহাস


বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বয়সের ব্যাখ্যা


ইসলামের বিধান ও পরিপক্বতার সংজ্ঞা


নাস্তিক আসাদ নূরের প্রতিউত্তরে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ




🕯️ উপন্যাস: অন্ধকারের মুখে আলো

✦ ২য় অংশ: যুক্তির আলোর পথে

পূর্বের অংশে:
নাস্তিক বক্তা আসাদ নূর এক জনসমাবেশে নবীজির (সা.) উপর কটাক্ষ করে বলেন, “একজন ৫২ বছরের মানুষ কীভাবে ৬ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করতে পারে?”
মঞ্চে উঠে দাঁড়ান এক আলেম— মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী, এবং তিনি যুক্তিসহ জবাব দেওয়া শুরু করেন।


🎙️ আলেম বললেন:

– “বন্ধুগণ, সত্যের পথে হাঁটতে হলে ইতিহাসকে বুঝতে হয় প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপটে। আজকের সমাজ, আইন ও শিশু সুরক্ষা নীতির আলোকে নবীজির সময়কে বিচার করলে কখনোই নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ হবে না।”

– “তবে শোনো, আমি তোমাকে তোমার ভাষাতেই উত্তর দিব। যুক্তি দিয়ে। দলিল দিয়ে।"

📜 ইতিহাস কি বলে?

“প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা জানো কি, মানব ইতিহাসের প্রায় সব জাতিতেই প্রাচীন কালে বিয়ের বয়স ছিল অনেক কম?”



– “রোমান আইন অনুসারে এক কন্যা শিশু ১২ বছর বয়সেই বিবাহযোগ্য বলে গণ্য হতো।
হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র ‘মনুস্মৃতি’-তে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—
‘অষ্টম বা নবম বছরে পিতাকে কন্যাকে বিয়ে দিতে হবে।’ (মনু ৯:৮৮–৯১)”

– “ইউরোপে মাত্র ২০০ বছর আগেও ১২-১৪ বছরেই মেয়েদের বিয়ে দিত। ব্রিটেনে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে রাজকুমারী ম্যারির বিয়ে হয় মাত্র ৬ বছর বয়সে। এমনকি ১৮৫০ সালের আগ পর্যন্ত আইনগতভাবে ১০ বছর বয়সেই বিবাহ বৈধ ছিল।”

📘 আয়েশা (রা.)-এর বয়সের ইখতেলাফ

– “এখন শুনো, যাকে নিয়ে এত বিতর্ক—আয়েশা (রা.)-এর বয়স—সেটি ঐতিহাসিকভাবে নির্দিষ্ট নয়। সহিহ বুখারিতে একটি বর্ণনায় আছে, বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ৬ এবং সহবাস হয়েছিল ৯ বছর বয়সে। কিন্তু সেটিই একমাত্র সূত্র নয়।”

– “ইবন হাজার, নবাব সিদ্দিক হাসান খান, মাওলানা হাবীবুর রহমান কাঁধলভী, এমনকি আল্লামা তাকী উসমানীও বলেছেন—এই বয়সের রেওয়ায়েত 'খোলা'। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়—
আয়েশা (রা.) বিয়ের সময় অন্তত ১৬-১৯ বছর বয়সী ছিলেন। কারণ:
১. তিনি বদরের সময় যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ছিলেন।
২. বিয়ের সময় তার বড় বোন ছিলেন ২৮–৩২ বছর বয়সী।
৩. তিনি ইসলামের প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণ করেন—যা অসম্ভব হতো যদি তখন তার বয়স ৪-৫ হতো।"

– “তুমি যদি গড় হিসাব ধরো, তাহলে রেওয়ায়েত মিলিয়ে দেখতে পাবে, ৬ বছরের সূত্রটি একমাত্রিক এবং পর্যালোচনার যোগ্য।”

📚 কুরআন কি বলে?

– “আর কুরআন কী বলে বিয়ের বয়স নিয়ে? আল্লাহ বলেন—
وَابْتَلُوا ٱلۡيَتَـٰمَىٰ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغُواْ ٱلنِّكَاحَ
‘তোমরা এতিমদের পরীক্ষা নাও, যতক্ষণ না তারা বিবাহযোগ্য হয়।’ (সূরা নিসা ৪:৬)”

– “অর্থাৎ কুরআন বিয়ের শর্ত হিসেবে 'পরিপক্বতা' বা বুলুগ এবং আক্লের সামর্থ্য চায়। শুধু বয়স নয়। আজকের কাগুজে বয়স নয়, বাস্তব পরিপক্বতা—এটাই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি।”

😐 নাস্তিক আসাদ নূরের মুখে কিছুটা অস্বস্তি

সে বলল:

– “তাহলে আপনি বলছেন, নবীজি কখনোই শিশু বিয়ে করেননি?”

☝ আলেম বললেন:

– “শ্রদ্ধেয়, আমি বলছি: তিনি সময়ের রীতিনীতি অনুসরণ করেছেন, এবং তার প্রতিটি বিয়ে ছিল কোনো না কোনো সমাজ-সংশোধন, বিধবা নারীর নিরাপত্তা বা রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার উদ্দেশ্যে। শুধু আয়েশা (রা.) ছিলেন ব্যতিক্রম—তাঁকে আল্লাহর আদেশে বিয়ে করা হয়, যার পেছনে ছিল মহান উদ্দেশ্য।”

– “আয়েশা (রা.) সবচেয়ে বড় হাদীস বর্ণনাকারী। ২২০০+ হাদিস এসেছে তার মাধ্যমে। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতী, প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী, বহু সাহাবী তাঁর কাছে মাসআলা শিখেছেন। যদি তিনি শিশুকাল থেকে কষ্ট পেতেন, তবে তিনি কি নবীজিকে ভালোবাসতেন? তিনি নিজেই বলেন—
‘নবীজির মৃত্যু আমার বুকে হয়েছিল। আমি ছিলাম তাঁর প্রিয়তমা।’”


💥 জনতা চুপচাপ শুনছে

একজন তরুণ চিৎকার করে উঠে—

– “আপনি তো পুরো ইতিহাসই উল্টে দিলেন! তাহলে এতদিন যারা অপবাদ দিত, তারা কীভাবে এত স্পষ্ট জিনিস বুঝতে পারলো না?”

মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী হাসলেন:

– “তারা চায় না বুঝতে। তারা চায় অপবাদ দিতে। কিন্তু আলোর সামনে অন্ধকার টিকতে পারে না।”


---

🔚 ২য় অংশ শেষ

আজ মঞ্চে একজন নাস্তিকের ‘সাহসী প্রশ্ন’ আলোর সামনে হার মানতে শুরু করলো। কিন্তু তর্ক শেষ নয়।
পরবর্তী খণ্ডে আসবে—


---

✅ ১৪তম খণ্ডে কী থাকবে?

নাস্তিক আসাদ নুরের পাল্টা প্রশ্ন: “তবু কেন এখন ৬-৯ বছরের শিশুদের বিয়ে নিষিদ্ধ?”

ইসলামের বিকাশমান সমাজব্যবস্থা ও সময়ভিত্তিক ফিকহ

শিশুবিবাহ ও শিশু অধিকার বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

আলেমের কঠিন কিন্তু দার্শনিক জবাব

লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"