GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকের চ্যালেঞ্জ ও আলেমের জবাব (দ্বিতীয় খণ্ড) | মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ কেন? দ্ব্যর্থহীন উত্তর

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব (২য় খণ্ড)


একজন নাস্তিক মুসলমানদের বিভেদ নিয়ে প্রশ্ন করছেন এবং একজন আলেম কুরআন ও হাদিস দিয়ে যুক্তিনির্ভর জবাব দিচ্ছেন
মুসলমানদের বিভেদ ও ইসলামের অবস্থান নিয়ে নাস্তিকের প্রশ্ন এবং আলেমের সংগতিপূর্ণ জবাব



সত্য ধর্ম কোনটি? ইসলাম কেন একমাত্র সত্য?


পরিচিতি:

ইমরান এবার আগের চেয়েও বেশি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। গত দুটি আলোচনায় শায়খ আবদুল রাজ্জাক তাকে যে প্রমাণ ও যুক্তি দিয়েছেন, তা তার চিন্তাভাবনায় ঝড় তুলেছে। কিন্তু এখন তার সামনে আরেকটি গভীর প্রশ্ন—যদি একজন স্রষ্টা থাকেন, তাহলে তিনি কেবল ইসলামকেই কেন সত্য ধর্ম হিসেবে পাঠিয়েছেন? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কিংবা ইহুদি ধর্ম কি তাহলে মিথ্যা?

শায়খ আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ইমরান আজ এই প্রশ্নই তুলবে। তাই তিনি প্রস্তুত ছিলেন।


ইমরানের প্রশ্ন:

"শায়খ, আপনি যদি বলেন যে একজন স্রষ্টা আছেন, আমি সেটাকে আপাতত মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমি জানতে চাই, এত ধর্মের মধ্যে ইসলামই কেন একমাত্র সত্য হবে? সব ধর্ম তো মানুষকে ভালো কাজ শেখায়, শান্তির কথা বলে, ন্যায়ের পথে আহ্বান জানায়। তাহলে ইসলাম ছাড়া অন্যগুলো বাদ কেন?"


শায়খ আবদুল রাজ্জাকের জবাব:


শায়খ বললেন,

"প্রথমত, আমরা যদি ধরে নিই যে একজন মহান স্রষ্টা আছেন, তাহলে তার পক্ষ থেকে অবশ্যই একটি নির্ভরযোগ্য, নির্ভুল বার্তা থাকার কথা। এবং সেই বার্তা সব মানুষের জন্য, সব যুগের জন্য প্রযোজ্য হতে হবে।

চলুন ধাপে ধাপে দেখি—ইসলাম কি এই শর্ত পূরণ করে?


১. ধর্মগুলোর মধ্যে প্রেরিত গ্রন্থ ও বার্তার বিশুদ্ধতা:

 শায়খ বললেন, “আমরা দেখি—ইহুদি ধর্মের মূল গ্রন্থ ‘তওরাত’, খ্রিস্টানদের ‘ইঞ্জিল’। কিন্তু এই গ্রন্থগুলো বারবার পরিবর্তন ও সম্পাদনার শিকার হয়েছে।

অথচ কুরআনের বিষয়ে আল্লাহ বলেন—


إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا ٱلذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ

“নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণকারী।” (সূরা আল-হিজর: ৯)


“কুরআন ১৪০০ বছরেও হুবহু একই আছে, এক অক্ষরও পরিবর্তন হয়নি। বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার হাফেজের মুখস্থ থাকা, এক অক্ষরের ভিন্নতা না থাকা এই অলৌকিক বিষয়টি অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থে নেই।”


২. বার্তার সর্বজনীনতা ও স্থায়িত্ব:


শায়খ বললেন,

“খ্রিস্টান ধর্মে বলা হয়, ঈসা (আঃ) কেবল বনী ইস্রাইলের জন্য প্রেরিত। তাওরাতও ছিল ইহুদিদের জন্য।

কিন্তু ইসলাম কি বলে?


 وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا رَحْمَةًۭ لِّلْعَٰلَمِينَ

“আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ।” (সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৭)


“অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এক জাতি নয়, গোটা মানবতার জন্য প্রেরিত।”


৩. ইসলাম শুধু ধর্ম নয়, পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা:


“ইসলাম কেবল আধ্যাত্মিক উপদেশ নয়—এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, নৈতিক—সব দিক দিয়ে দিকনির্দেশনা দেয়।

ইসলামে ব্যবসা, রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তি, শত্রু-মিত্র, পরিবার—সবকিছুর বিধান আছে, যা অন্য ধর্মে অনুপস্থিত বা অসম্পূর্ণ।”


৪. ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ, প্রকৃত স্রষ্টার প্রতি:

“‘ইসলাম’ শব্দের অর্থই হচ্ছে আত্মসমর্পণ। কে উদ্দেশ্য? আল্লাহ, যিনি এক, যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেন না, যিনি জন্ম নেন না, যিনি সৃষ্টি হয়েছেন না—এই আকিদা কেবল ইসলামে পরিষ্কারভাবে আছে।


> قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ۝ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ۝ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ۝ وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌ

(সূরা ইখলাস)


ইমরানের বিস্ময়:

ইমরান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। “আমি কখনো ভাবিনি এত সুস্পষ্টভাবে এগুলো ব্যাখ্যা করা যায়। আমি ভাবতাম সব ধর্মই সমান ভালো। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য আছে। ইসলাম সত্য হওয়ার পক্ষে অনেক যুক্তি রয়েছে।”


শায়খ মুচকি হেসে বললেন,

“এটাই হচ্ছে সত্যের শক্তি। আল্লাহ চান মানুষ যেন নিজ বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে সত্য খুঁজে পায়। আর ইসলাম হচ্ছে সেই সত্য—যা কেবল বিশ্বাস নয়, প্রমাণ ও বুদ্ধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত।”


@@@

(“তাহলে কেন মুসলমানদের মধ্যেই এত ভেদাভেদ ও অবিশ্বাস?”)

নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব।

মুসলমানরাই যদি সত্যের অনুসারী হয়, তাহলে তাদের মধ্যেই এত ভেদাভেদ কেন?


প্রেক্ষাপট:

ইমরান আজকের প্রশ্নে একটু আত্মবিশ্বাসী। তার মনে হচ্ছে, এবার হয়তো শায়খ আবদুল রাজ্জাক আটকে যাবেন। আগের খণ্ডে সে ইসলামকে ‘সত্য ধর্ম’ হিসেবে কিছুটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু এখন তার প্রশ্ন ধর্ম নয়, মুসলমানদের নিয়ে—যারা এই ধর্মের অনুসারী।


সে জিজ্ঞাসা করল,

“শায়খ, যদি ইসলাম সত্য ধর্ম হয়, তাহলে তার অনুসারীদের মধ্যে এত বিভক্তি, এত দল, এত মতপার্থক্য কেন? শিয়া-সুন্নি, আহলে হাদিস-হানাফি, তরিকা-পন্থা, আবার কিছু জঙ্গিবাদী দল পর্যন্ত—এসব দেখে মনে হয়, ইসলাম মানেই বিভেদ। যদি সত্য ইসলাম হতো, তাহলে তো সবাই এক হতো, তাই না?”


শায়খের ধৈর্যশীল উত্তর:

শায়খ মুচকি হাসলেন। বললেন,

“তোমার প্রশ্নটি সাধারণ মনে হলেও গভীর। কিন্তু মনে রেখো—একটি সত্য ধর্ম বা মতবাদের সঠিকতা তার অনুসারীদের আচরণ দিয়ে নয়, বরং মূল উৎস, মূল দলিল এবং প্রতিষ্ঠাতার শিক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।”


১. সত্য ধর্ম ও অনুসারীর পার্থক্য:


“প্রথমেই বুঝে নাও—একটি মতবাদ বা ধর্ম সত্য কি না, তা তার অনুসারীরা কতটা মানে বা ভাঙে, তা দিয়ে বিচার করা যায় না।

যেমন—গণিত একটি নির্ভুল বিজ্ঞান। কিন্তু কোনো ছাত্র যদি গণিতে ফেল করে, তাহলে কি বলা যাবে, গণিত ভুল?

তেমনি ইসলাম হলো স্রষ্টার পক্ষ থেকে নির্ভুল জীবন ব্যবস্থা। মুসলমানরা যদি তাতে ভিন্নমত করে, গাফেল হয়, ভুল বুঝে বা ভুল পালন করে—তাতে ইসলামের কোনো দোষ নেই।”


২. ভেদাভেদের ভবিষ্যদ্বাণী আগেই রাসূলুল্লাহ (সা.) করেছিলেন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—


افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة، وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة، وستفترق أمتي على ثلاث وسبعين فرقة، كلها في النار إلا واحدة


“ইহুদিরা বিভক্ত হয়েছে ৭১ দলে, খ্রিস্টানরা ৭২ দলে, আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ দলে। এদের মধ্যে একটিমাত্র দল ছাড়া বাকি সবই জাহান্নামে যাবে।”

— (তিরমিজি: ২৬৪১)


শায়খ ব্যাখ্যা করলেন,

“অর্থাৎ বিভেদ হবে—এটা আগে থেকেই বলা হয়েছে। কিন্তু যারা সত্য পথে থাকবে, তারা হবে সেই একমাত্র দল যারা কুরআন ও হাদিসের উপর অটল থাকবে।”

৩. বিভেদের উৎস—জ্ঞানহীনতা ও খাঁটি অনুসরণ না করা:

“বিভিন্ন মত-পথের মূল কারণ হলো—

অনেকেই কুরআন-হাদিস না বুঝে মত দেয়,


কেউ ব্যক্তিগত অভিরুচিকে ধর্ম বানিয়ে ফেলে,


আবার অনেকে রাজনীতিকে ধর্মের উপর বসিয়ে দেয়।


এছাড়াও, মিডিয়া মুসলমানদের বিভেদকে বড় করে তুলে ধরে, যাতে ইসলামকে অস্থির প্রমাণ করা যায়।”


৪. ইসলামে ভিন্নমতের সীমারেখা নির্ধারিত আছে:


“ইসলাম বলে না—সবাইকে একই রকম হতে হবে। কিন্তু ইসলাম বলে, মতের ভিন্নতা যেন সত্যের সীমা ছাড়িয়ে না যায়। সাহাবীগণও কিছু বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করতেন, কিন্তু তারা ছিলেন এক উম্মাহ, এক কিবলা, এক কুরআন, এক রাসূলের অনুসারী।”


৫. সত্য দল—কারা?


ইমরান জিজ্ঞেস করল, “তাহলে সেই ‘একমাত্র দল’ কারা, যাদের রাসূল (সা.) জান্নাতি বলেছেন?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন,

“সেই দল হলো, যারা রাসূল (সা.) এবং সাহাবাদের পথ অনুসরণ করে। যারা কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের ভিত্তিতে জীবন গঠন করে। রাসূলুল্লাহ বলেছেন—


> ما أنا عليه وأصحابي

“যার উপর আমি ও আমার সাহাবাগণ রয়েছি।” (তিরমিজি: ২৬৪১)


অতএব, বিভেদ দেখে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ নয় বরং নিজেদের আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত।”


ইমরানের উপলব্ধি:


ইমরান এবার কিছুটা চুপ। তার চোখে বোঝা যাচ্ছে—সে ভিন্ন একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা করতে শিখেছে।

“মানে, ইসলাম বিভক্ত না, বরং মানুষ বিভ্রান্ত। আমি এসব কখনো ভাবিনি। ধন্যবাদ, শায়খ।”


শায়খ বললেন,

“সত্য জানার পথে প্রশ্ন করা দোষ নয়—শর্ত হলো, তুমি সত্য পেতে চাও কি না।”


(পরবর্তী খণ্ডে: “ইসলামে কি নারীকে ছোট করে দেখা হয়?”)


লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।


নাস্তিকের চ্যালেঞ্জ ও আলেমের জবাব (প্রথম খণ্ড) - স্রষ্টার অস্তিত্ব ও পরিকল্পিত বিশ্ব

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব (১ম খণ্ড)

নাস্তিকতার প্রশ্ন, স্রষ্টার অস্তিত্ব, বিগ ব্যাং, কুরআন ও বিজ্ঞান, ইসলাম বনাম নাস্তিকতা
নাস্তিকরা কীভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে এবং ইসলাম কীভাবে তাদের প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব দেয়—জানুন এই আলোচনায়।


পরিচিতি

ঢাকা শহরের এক অভিজাত ক্যাফে। রাতের বেলা আলো-আঁধারিতে মৃদু সুর বাজছে। এক টেবিলে বসে আছেন দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। একজন নাস্তিক, অপরজন ইসলামিক পণ্ডিত।

নাস্তিকের নাম ইমরান। তিনি নিজেকে মুক্তচিন্তার মানুষ বলে দাবি করেন। ধর্মকে তিনি শুধুই কুসংস্কার বলে মনে করেন। তার বিশ্বাস, বিজ্ঞানের সামনে ধর্মের কোনো ভিত্তি নেই। অপরদিকে, ইসলামিক পণ্ডিতের নাম শায়খ আবদুল রাজ্জাক। তিনি বহু বছর ধরে কুরআন, হাদিস এবং দর্শনের গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন।

আজকের আলোচনার বিষয়: স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন


নাস্তিকের প্রশ্ন:

"আল্লাহ আছেন—এর কোনো প্রমাণ কী? আমি এমন কিছু চাই যা বিজ্ঞান মেনে নেবে। অদৃশ্য কোনো কিছুর ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাস স্থাপন করা তো যুক্তিসঙ্গত নয়!"

শায়খের জবাব:

শায়খ আবদুল রাজ্জাক মৃদু হেসে বললেন, "চমৎকার প্রশ্ন। তবে আমি পাল্টা একটি প্রশ্ন করি। ধরুন, আপনি একটি সুন্দর প্রাসাদ দেখলেন—অসাধারণ নকশা, নিখুঁত ডিজাইন, একদম ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো। আপনি কি বলবেন এটি নিজে নিজেই তৈরি হয়েছে? নাকি এর কোনো স্থপতি আছে?"

ইমরান ভ্রু কুঁচকে বললেন, "নিশ্চয়ই কোনো স্থপতি আছে। এমন নিখুঁত কিছু আপনা-আপনি তৈরি হতে পারে না।"

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন, "ঠিক! তাহলে আপনি কি ভাবতে পারেন যে এই বিশাল পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ-নক্ষত্র, মানুষ, প্রাণী—সবকিছু আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়ে গেছে?"

ইমরান‌ একটু চুপ করে গেল।

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক কুরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন:

أَمْ خُلِقُوا۟ مِنْ غَيْرِ شَىْءٍ أَمْ هُمُ ٱلْخَٰلِقُونَ
"তারা কি সৃষ্টি হয়েছে বিনা কারণে, না তারাই স্রষ্টা?" (সূরা আত-তূর: ৩৫)

"এই আয়াতে আল্লাহ তিনটি অপশন দিয়েছেন: ১. আমরা কি বিনা কারণে সৃষ্টি হয়েছি? ২. আমরা কি নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টি করেছি? ৩. নাকি আমাদের একজন মহান স্রষ্টা আছেন?"

ইমরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, "ঠিক আছে, কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কীভাবে প্রমাণ করবেন যে আল্লাহ আছেন?"

শায়খ হাসলেন, "বিজ্ঞান তো কেবল প্রকৃতির কাজ দেখে। কিন্তু আপনি কি জানেন, মহাবিশ্বে এত নিখুঁত গণিত ও বিজ্ঞান রয়েছে, যা নিজেরাই বলে দেয় একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব?"

বৈজ্ঞানিক যুক্তি:

১. Fine-tuning of the Universe:

  • আমাদের মহাবিশ্বে যদি মহাকর্ষ শক্তি বা পরমাণুর গঠন সামান্যতম পরিবর্তন হতো, তাহলে জীবন সম্ভব হতো না। এত নিখুঁত বিন্যাস আপনা-আপনি আসতে পারে?

২. DNA কোড:

  • মানব DNA তে ৩ বিলিয়নেরও বেশি 'লেটার' বা তথ্য কোড রয়েছে। আপনি কি ভাবতে পারেন যে এত জটিল কোডিং নিজে নিজে হয়ে গেছে? প্রতিটি কোডের পেছনে তো একজন কোডার থাকা দরকার।

৩. Thermodynamics-এর Second Law:

  • মহাবিশ্বের জিনিসপত্র ধীরে ধীরে বিশৃঙ্খল হতে থাকে। তাহলে প্রথমে এত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে কেন তৈরি হলো? এটা কি বোঝায় না যে কোনো মহান পরিকল্পনাকারী আছেন?


নাস্তিকের প্রতিক্রিয়া:

ইমরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, "এগুলো নতুন চিন্তার বিষয়। তবে আমার আরও কিছু প্রশ্ন আছে।"

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন, "নিশ্চয়ই! আসুন, আমরা পরবর্তী আলোচনায় এগুলো নিয়েই কথা বলব।"


@@@


পরিচিতি

আগের দিনের আলোচনার পর ইমরান গভীর চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। এতদিন ধরে সে ভাবত, ধর্মের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু শায়খ আবদুল রাজ্জাকের যুক্তিগুলো তার মনে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আজ সে আবার দেখা করতে এসেছে, আরও কঠিন প্রশ্ন করার জন্য।

ক্যাফের সেই পরিচিত টেবিলে বসে দুজন মুখোমুখি। ইমরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,


নাস্তিকের প্রশ্ন:

"আচ্ছা, আপনি বললেন যে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও সুসংগঠিত নিয়ম-কানুন প্রমাণ করে যে একজন স্রষ্টা আছেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে এই বিশ্ব আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়েছে, বা একে পরিচালনা করার মতো কোনো শক্তি লাগেই না? এমন অনেক বিজ্ঞানী আছেন, যারা ধর্মের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বলেন যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্য কোনো স্রষ্টার প্রয়োজন নেই। আপনি এ বিষয়ে কী বলবেন?"

শায়খের জবাব:

শায়খ আবদুল রাজ্জাক মৃদু হাসলেন, "বিজ্ঞানীরা তো অনেক কিছু বলেন, কিন্তু বিজ্ঞান কি কখনো প্রমাণ করেছে যে স্রষ্টা নেই? বরং আধুনিক বিজ্ঞান বলছে যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সূচনা হয়েছিল এক নির্দিষ্ট সময়ে। অর্থাৎ, এর একটি সূচনা বিন্দু আছে। আপনি নিশ্চয়ই ‘বিগ ব্যাং থিওরি’ সম্পর্কে শুনেছেন?"

ইমরান মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ, এটা তো বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত যে মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে।"

শায়খ বললেন, "ঠিক! তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, কীভাবে কিছুই না থাকা থেকে হঠাৎ করে মহাবিশ্বের জন্ম হলো? কোনো কিছু কি নিজে নিজে অস্তিত্ব লাভ করতে পারে?"

ইমরান কিছু বলার আগে শায়খ কুরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন:

أَوَلَمْ يَرَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا أَنَّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَٰهُمَا

"যারা কুফরী করে তারা কি দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী একসাথে ছিল, তারপর আমি এ দুটিকে পৃথক করে দিলাম?" (সূরা আল-আম্বিয়া: ৩০)

শায়খ ব্যাখ্যা করলেন, "এটি কীসের কথা বলে? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে আকাশ ও পৃথিবী একসময় একত্রে ছিল, পরে তারা আলাদা হলো। এটা তো ১৪০০ বছর আগেই কুরআনে বলে দেওয়া হয়েছে!"

ইমরান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর বলল, "কিন্তু এটা তো কাকতালীয়ও হতে পারে, তাই না?"

যুক্তির দ্বিতীয় ধাপ:

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন, "ঠিক আছে, তাহলে আমি আপনাকে আরও গভীর কিছু বলি। মহাবিশ্ব যদি আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে এর পিছনে কি কোনো পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য আছে? নাকি সবকিছু এলোমেলো?"

ইমরান বলল, "আমি মনে করি, মহাবিশ্ব এলোমেলোভাবে সৃষ্টি হয়নি। এটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলছে।"

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন, "যদি নিয়ম মেনে চলে, তাহলে কে এই নিয়ম নির্ধারণ করল? কুরআন বলছে:

وَٱلسَّمَآءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ ٱلْمِيزَانَ
"তিনি আকাশকে উঁচু করেছেন এবং সবকিছু নির্দিষ্ট পরিমাপে সাজিয়েছেন।" (সূরা আর-রহমান: ৭)

"আপনি যদি স্বীকার করেন যে মহাবিশ্ব পরিকল্পিত, তাহলে এর পেছনে একজন মহান পরিকল্পনাকারী আছেন—এটাই স্বাভাবিক, তাই না?"

ইমরান এবার বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল।

নাস্তিকের নতুন প্রশ্ন:

"আচ্ছা, ধরে নিলাম একজন স্রষ্টা আছেন। কিন্তু কীভাবে নিশ্চিত হব যে ইসলামই সত্য? কেন অন্য ধর্ম নয়?"

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হাসলেন, "অসাধারণ প্রশ্ন! আসুন, পরবর্তী আলোচনায় আমরা এই বিষয়েই কথা বলি।"


(পরবর্তী খণ্ডে: ‘নবী-রাসূলগণ কীভাবে সত্য প্রমাণিত হন?’)


লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।

বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৫

চতুর্থ খন্ড: নতুন সূচনা

 চতুর্থ খণ্ড: চূড়ান্ত পরীক্ষা

দুই যুবক সত্যের পথ অবলম্বন করে সমাজের মানুষকে আলোর পথে ডাকার দায়িত্ব নিয়েছে।
"হৃদয় যদি আলো পায়, তাহলে পথ হারানোর ভয় থাকে না।"


কাশিমের ওপর শত্রুরা হামলা চালানোর পর হাসান আর বসে থাকেনি। সে জানত, সত্যের পথচলা কখনো সহজ নয়।

এক রাতে কাশিম মাদরাসার বাইরে এশার নামাজের পর হাঁটছিল। আচমকা, পিছন থেকে কেউ একজন বলল, “তোর শেষ সময় এসে গেছে, কাশিম!”

কাশিম ঘুরে দাঁড়াল। আগের সেই মুখোশধারীরা এবার দলবেঁধে এসেছে।


ঠিক তখনই হাসান সেখানে পৌঁছাল। তার হাতে ছিল মিসওয়াকের কাঠি, কিন্তু চেহারায় ছিল এক অদম্য সাহস।

“তোমরা কি মনে করো, অন্যায় করে পার পেয়ে যাবে?” হাসান বলল।


একজন হাসল, “তুই একা আমাদের ঠেকাবি?”

হাসান বলল, “আমি একা নই, আমার সঙ্গে আছে আল্লাহ!”


শত্রুরা আক্রমণ করতে এলে হঠাৎ মাদরাসার দরজা খুলে গেল। ভেতর থেকে ছাত্ররা বেরিয়ে এল, মাওলানা আহমদ শফি এগিয়ে এলেন।


শত্রুরা বুঝল, তারা এবার পেরে উঠবে না। কিছুক্ষণ পর তারা পালিয়ে গেল।


কাশিম হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি আগে ভাবতাম শক্তি মানেই অস্ত্র, কিন্তু আজ বুঝলাম—সবচেয়ে বড় শক্তি হলো ঈমান।”


হাসান হাসল, “সত্যিকারের বিজয় তো এখানেই।”


 নতুন সূচনা

সব ঝড় পেরিয়ে কাশিম এখন নতুন এক যাত্রায়। সে মাদরাসায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, ইসলামি জ্ঞান অর্জন করছে। কিন্তু তার অন্তরে এক তীব্র ইচ্ছা—এই সত্যের আলো যেন আরও অনেকের কাছে পৌঁছায়।

একদিন হাসান তাকে বলল, “কাশিম, তুমি কি ভেবেছো, আমাদের কাজ এখানেই শেষ?”

কাশিম বলল, “না, বরং এখনই শুরু।”

তারা মাদরাসার অন্যান্য ছাত্রদের নিয়ে পরিকল্পনা করল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, সমাজের পথভ্রষ্ট যুবকদের কাছে গিয়ে ইসলামের বার্তা পৌঁছাবে।

প্রথমেই তারা গেল এক অভিজাত এলাকার এক তরুণ রুস্তম কাছে, যে বিলাসিতায় মগ্ন ছিল। হাসান বলল, “ভাই, আমরা তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।”

রুস্তম বিরক্ত হয়ে বলল, “আমি সময় নষ্ট করতে চাই না!”

কাশিম হাসল, “একটা প্রশ্নের উত্তর দিলেই চলে যাবো তুমি কি নিশ্চিত, আজকের রাতেই তোমার মৃত্যু হবে না?”

রুস্তম চুপ হয়ে গেল।

এরপর ধীরে ধীরে আরও অনেকে তাদের দাওয়াহ গ্রহণ করল।

এভাবেই কাশিম ও হাসান সত্যের আলো ছড়িয়ে দিতে লাগল। তারা বুঝল, শুধু নিজেদের সঠিক পথে থাকা যথেষ্ট নয়—এই সত্য অন্যদের কাছেও পৌঁছানো দায়িত্ব।

সমাপ্ত 
লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।


ঈমানের পরীক্ষা (৩ য় খন্ড)

 তাওবার আলো
একজন যুবক অন্ধকার জীবন ছেড়ে সত্যের পথে এসেছে, কিন্তু তার পুরনো বন্ধুরা তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়।

"যখন তুমি সত্যের পথে চলবে, তখন বাধা আসবে—কিন্তু আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন।"



রাত গভীর। আকাশের বুকে জ্বলজ্বল করছে অসংখ্য তারা। মাদরাসার আঙ্গিনায় শাওয়াল মাসের বিশেষ আমলের ফজিলত নিয়ে আলোচনা চলছিল। মাওলানা আহমদ শফি ছাত্রদের বোঝাচ্ছিলেন, “শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখার সওয়াব কী জানো? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যে রমজানের রোজা রাখে এবং এরপর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখে, সে যেন পুরো বছরের রোজা রাখল।’ (সহিহ মুসলিম)”

ছাত্রদের মধ্যে হাসান গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। কিন্তু তার চোখেমুখে কিছুটা অস্থিরতা ছিল। সে যেন কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর সে বলেই ফেলল, “হুজুর, গুনাহগার মানুষের জন্য কি এই রোজার কোনো বিশেষ ফজিলত আছে?”

মাওলানা আহমদ শফি একটু হেসে বললেন, “গুনাহগার তো সবাই, কিন্তু যারা তওবা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। শাওয়ালের ছয় রোজা হলো এক বিশেষ সুযোগ, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের অতীত ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এটি এমন এক আমল, যা আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করে এবং আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে সাহায্য করে।”

হাসান কিছুটা হালকা অনুভব করল। কিন্তু তার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছিল।

এরপর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটল। মাদরাসার প্রধান ফটকে একজন অপরিচিত লোক এসে দাঁড়াল। তার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, চোখ লালচে। সে নিঃশব্দে ফটকের সামনে বসে পড়ল।

হাসান এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “ভাই, আপনি এখানে কেন?”

লোকটি একটু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, “আমি… আমি হেদায়াতের পথ খুঁজছি… আমি খুব বড় গুনাহগার… আমাকে সাহায্য করুন।”

মাওলানা আহমদ শফি এগিয়ে এলেন। তার চেহারায় মমতার ছাপ ফুটে উঠল। তিনি বললেন, “আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, ভাই। তুমি যদি সত্যিই তওবা করতে চাও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন।”

লোকটি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সে বলল, “আমি শাওয়ালের এই রাতেই আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে চাই।”

মাওলানা সালেহ তাকে বুকে টেনে নিলেন। চারপাশে থাকা ছাত্রদের চোখেও পানি জমে গিয়েছিল।

এভাবেই তাওবার আলো ছড়িয়ে পড়ল মাদরাসার আঙিনায়…

@@@

শাওয়ালের সেই রাতে তওবা করে লোকটি যেন নতুন করে জন্ম নিল। সে তার নাম বলল—কাশিম। একসময় ছিল সমাজের এক ভয়ঙ্কর অপরাধী, কিন্তু আজ সে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

মাদরাসার একপাশে বসে কাশিম ভাবছিল, “আল্লাহ আমাকে যদি আরেকটি সুযোগ দেন, তবে আমি কি সত্যের পথে চলতে পারব?”

মাওলানা আহমদ শফি কাশিমের পাশে এসে বসলেন। তিনি কোমল কণ্ঠে বললেন, “তুমি জানো, আল্লাহ বলেন—‘তোমরা সবাই তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সূরা নূর: ৩১)”

কাশিম মাথা নিচু করে বলল, “কিন্তু আমার অতীত খুবই কালো…”

হাসান এবার মুখ খুলল, “আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর যুগেও অনেক ভয়ঙ্কর অপরাধী ইসলামের ছায়ায় এসে পবিত্র হয়েছিলেন। তুমি যদি সত্যিই আল্লাহর পথে আসতে চাও, তবে তিনিই তোমাকে কবুল করবেন।”

কাশিম চোখ মুছল। এরপর বলল, “আমি সত্যের পথে চলতে চাই। আমি কি এখানে থেকে দীনের শিক্ষা নিতে পারব?”

মাওলানা আহমদ শফি হেসে বললেন, “অবশ্যই। সত্যের পথ সবার জন্য খোলা।”

@@@

কাশিম মাদরাসায় থেকে নতুন জীবন শুরু করল। সে প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করে, হাদিস শিখে, নামাজ পড়ে। হাসান তার অন্যতম সঙ্গী হয়ে গেল।

কিন্তু শয়তান তো আর বসে থাকবে না!

একদিন সন্ধ্যায়, কাশিম যখন মাদরাসার উঠোনে বসে কোরআন তিলাওয়াত করছিল, তখন দুজন মুখোশধারী লোক গোপনে তার দিকে এগিয়ে এল। তারা আসলে কাশিমের পুরনো দলের লোক!

“তুই এখানে কী করছিস?” একজন চাপা গলায় বলল।

কাশিম চমকে উঠল। সে কিছু বলার আগেই তারা বলল, “তোর জায়গা এখানে না, ফিরে চল! আমরা তোকে বড় অফার দিতে এসেছি। অনেক টাকা, ক্ষমতা, সব তোর জন্য!”

কাশিম তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি ফিরে যেতে পারব না। আমি আল্লাহর পথে আছি।”

তারা এবার হেসে উঠল। “তাহলে মরার জন্য তৈরি থাক!”

ঠিক তখনই হাসান এসে দাঁড়াল, “তোমরা কি মনে করো, সত্যের পথ এত সহজে হার মানবে?”

একজন ছুরি বের করল। কিন্তু মাদরাসার ভেতর থেকে ছাত্ররা ছুটে এলো। মুখোশধারীরা পালিয়ে গেল।

কাশিম কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ল। মাওলানা আহমদ শফি এগিয়ে এসে বললেন, “এটাই ঈমানের পরীক্ষা। যখন তুমি সত্যের পথে আসবে, তখন বাধা আসবেই। কিন্তু ধৈর্য ধরো, আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন।”

কাশিম এবার চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল। সে দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “আমি সত্যের পথেই থাকব, ইনশাআল্লাহ।”

লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।



মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫

অন্ধকারের প্রতিশোধ

 চতুর্থ খণ্ড: সত্যের সন্ধানে

মাওলানা আহমদ শফি গভীর রাতে মাদরাসায়, মুখোশধারীদের চক্রান্ত, শাওয়াল মাসের বিশেষ আমল
সত্যের পথে বাধা আসবেই, কিন্তু আল্লাহ তার দ্বীনের রক্ষকদের ছেড়ে দেন না।


শহরের একপ্রান্তে বসে থাকা মাওলানা মাওলানা আহমদ শফি সাহেবের মনের মধ্যে নানা চিন্তা ঘুরছিল। তারা যেখানেই গিয়েছিলেন, সেখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছিলেন। তিনি জানতেন, তাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছে, তা শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক নয়, এটি একটি ধর্মীয় যুদ্ধ। তাদের লক্ষ্য ছিল শুধু ইসলাম নয়, বরং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা।


তবে শাওয়াল মাসের বরকত তাকে সাহস দিচ্ছিল। তিনি জানতেন, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এ যুদ্ধ জয় করা সম্ভব নয়। এখন সময় এসেছে সত্যের দিকে পথ চলা শুরু করার, এবং মসজিদে ফিরে গিয়ে তিনি সকল ছাত্রদের একত্রে ডেকে বললেন, “আমরা কিছু বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। প্রথমেই আমাদের নিজেদের ঈমান ও দ্বীনি জ্ঞানকে শক্তিশালী করতে হবে।”


তিনি আবারো শাওয়াল মাসের আমলের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিলেন, “এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা যেমন সওয়াবের কাজ, তেমনি আমাদের প্রতিদিনের ইবাদত ও দ্বীনি শিক্ষা আরও দৃঢ় করবে।”


তারপর, তিনি সবাইকে একটি নতুন পরিকল্পনার কথা জানালেন। “আমরা একটি মিটিং আয়োজন করব, যেখানে শহরের নেতৃবৃন্দ, আলেম-উলামা ও যুবকদের সমন্বয়ে ইসলামি মূল্যবোধ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা হবে।”


এটি ছিল শহরে প্রথম বৃহৎ উদ্যোগ, যেখানে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরা হবে। মাওলানা আহমদ শফি জানতেন, একটি সংগঠন তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও শক্তি।


অন্যদিকে, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের পরিকল্পনা আরও গভীরভাবে বাস্তবায়ন করতে লাগল। তারা মাওলানা সালেহ এবং তার সমর্থকদের সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিতে শুরু করল। তাদের লক্ষ্য ছিল যুবকদের বিভ্রান্ত করা, যাতে তারা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে চলে যায়।


একদিন, মাওলানা আহমদ শফি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। তিনি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গিয়ে এক বড় বক্তৃতা দেবেন, যেখানে ইসলামিক মূল্যবোধ, ন্যায় এবং ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরবেন। তবে জানতেন, এই বক্তৃতা সহজ হবে না। ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের সব শক্তি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। কিন্তু মাওলানা আহমদ শফি কখনও পিছু হটবেন না।


@@@


 শহরের প্রধান বক্তৃতা, ষড়যন্ত্রকারীদের চ্যালেঞ্জ এবং মাওলানা সালেহের নেতৃত্বের প্রথম বড় পরীক্ষা।


সন্ধ্যা নেমে এসেছে শহরের আকাশে। বাতাসে যেন এক অদৃশ্য উত্তেজনা—মাওলানা আহমদ শফির ঘোষিত বক্তৃতার দিন এসেছে। মসজিদ চত্বরে জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ। যুবক, প্রবীণ, ব্যবসায়ী, ছাত্র—সবাই অপেক্ষা করছে, এক মহৎ বাণী শোনার জন্য।


মাওলানা আহমদ শফি ধীর পায়ে মিম্বারের দিকে এগিয়ে গেলেন। তার চেহারায় এক অদ্ভুত দৃঢ়তা। তিনি জানতেন, এই মুহূর্তে কেবল দ্বীনি জ্ঞান নয়, বরং ঈমান ও সাহসেরও পরীক্ষা চলছে।


তিনি বর্ণনা করলেন, “আমরা আজ এক সংকটময় সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। সত্য-মিথ্যার সংঘাত চিরকাল ছিল, থাকবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কোন পথে হাঁটব?”


তিনি কুরআনের আয়াত ও রাসুল (সা.)-এর হাদিস তুলে ধরলেন, যা মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। “শাওয়াল মাস আমাদের শিক্ষা দেয়, শুধু ছয়টি রোজা রাখাই নয়, বরং আমাদের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করাও জরুরি।”


কিন্তু জনতার ভিড়ে লুকিয়ে ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের লোক। তাদের নেতা, মাসুদ, একজন বিদ্বেষী এবং বিভ্রান্তিকর লোক। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে মাওলানা সালেহের কথা শুনছিল, কিন্তু তার মুখে ছিল এক রহস্যময় হাসি।


হঠাৎ জনতার মাঝে এক বিশৃঙ্খলা দেখা দিল! কেউ একজন চিৎকার করে উঠল, “মাওলানা আহমদ শফি সত্য গোপন করছেন! তিনি মানুষকে ভুল পথে চালিত করছেন!”


ভিড়ের একাংশ ধোঁকায় পড়ে ফিসফিস করতে লাগল। মাওলানা সালেহ সামান্য থামলেন, তারপর বললেন, “আমাদের দ্বীনে প্রশ্ন তোলার অনুমতি আছে, তবে মিথ্যার প্রচার ইসলাম সমর্থন করে না।”


এরপর তিনি সরাসরি সেই লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনার অভিযোগের পক্ষে দলিল দিন, আমি কুরআন-হাদিস থেকে জবাব দেব।”


লোকটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। সে জানত, তার অভিযোগের পেছনে কোনো ভিত্তি নেই। মাসুদ বুঝতে পারল, তার ষড়যন্ত্র এক মুহূর্তেই নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে।


@@@

ষড়যন্ত্র আরও গভীর হবে। মাওলানা সালেহ কীভাবে তাদের মোকাবিলা করবেন? শহরে কি সত্যের আলো জ্বলবে, নাকি অন্ধকারের ছায়া দীর্ঘতর হবে?



 অন্ধকারের প্রতিশোধ

মাওলানা আহমদ শফির দৃঢ় কথাগুলো জনতার হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছিল। সত্যের ডাক এমনই হয়—যারা মন থেকে শোনে, তারা আলো পায়, আর যারা বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা আরও গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যায়।

বক্তৃতা শেষে জনতা ধীরে ধীরে ছ散 হয়ে যেতে লাগল, কিন্তু মাসুদ মনের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু সে সহজে হাল ছাড়বে না। সে চুপচাপ তার অনুগত কয়েকজন লোককে একত্র করল এবং তাদের নির্দেশ দিল, “এই মাওলানা আহমদ শফি আমাদের পরিকল্পনা বানচাল করছে। এবার তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”

সেদিন রাতেই মাওলানা আহমদ শফি মাদরাসায় ফিরে আসেন। তার সঙ্গীরা তাকে সতর্ক করল, “হুজুর, আমরা শুনেছি কিছু মানুষ আপনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। আপনার চলাফেরা সাবধানতার সাথে করা উচিত।”

তিনি হেসে বললেন, “সত্যের পথ কখনোই সহজ হয় না। তবে আমি যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাই, তাহলে আল্লাহর সামনে কী জবাব দেব?”

শাওয়াল মাসের আমল ও এক অদ্ভুত ঘটনা

সেই রাতে তিনি দীর্ঘ কিয়ামুল লাইল করলেন। শাওয়াল মাসের বরকতের কথা স্মরণ করে তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আমার রব! তুমি আমাকে শক্তি দাও, আমাকে হেদায়েত দাও এবং আমাকে ধৈর্য ধরার তাওফিক দাও।”

ফজরের পর, তিনি তাঁর ছাত্রদের বললেন, “শাওয়াল মাস আমাদের শুধু ছয়টি রোজা রাখার শিক্ষা দেয় না, এটি আমাদের আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাসে যে বেশি বেশি নফল ইবাদত করে, আল্লাহ তাকে অতীতের গুনাহ মাফ করে দেন। অতএব, আমরা শুধু বাহ্যিক ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করব না, বরং আত্মারও পরিশুদ্ধি করব।”

হঠাৎ এক গভীর রাতে…

তিন দিন পর, গভীর রাতে মাদরাসার পাশে কিছু অস্পষ্ট পদধ্বনি শোনা গেল। একজন ছাত্র তা শুনে চমকে উঠল। সে ধীরে ধীরে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল, কয়েকজন মুখোশধারী লোক মাদরাসার দিকে এগিয়ে আসছে! তাদের হাতে ছিল লাঠি ও দড়ি।

ছাত্রটি দ্রুত দৌড়ে গিয়ে মাওলানা আহমদ শফিকে খবর দিল, “হুজুর! কিছু মানুষ আমাদের ওপর হামলা করতে আসছে!”

মাওলানা আহমদ শফি ধীরস্থির কণ্ঠে বললেন, “ভয় পেও না। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন।” তিনি অল্প সময়ের মধ্যে সবাইকে একত্র করলেন এবং বললেন, “সত্যের পথে যে বাধা আসে, তা ধৈর্য ও কৌশল দিয়ে মোকাবিলা করতে হয়। আমরা দোয়া করব, তবে আত্মরক্ষা করাও জরুরি।”

তিনি দ্রুত কয়েকজন সাহসী ছাত্রকে দরজার কাছে দাঁড় করালেন এবং অন্যদের ভেতরে পাঠিয়ে দিলেন। মুখোশধারীরা দরজায় পৌঁছানো মাত্রই একদল ছাত্র তাদের বাধা দিল। ধাক্কাধাক্কি শুরু হলো। একপর্যায়ে একজন আক্রমণকারী চিৎকার করে উঠল, “তুমি আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখাচ্ছ?”

মাওলানা আহমদ শফি সামনে এসে দাঁড়ালেন। তার চোখে ছিল ইমানের শক্তি। তিনি বললেন, “আমি সত্যের পথে আছি, এবং সত্য কখনো পরাজিত হয় না।”

পরবর্তী খণ্ডে:

এই রাত কি শুধু একটা সাধারণ হামলা ছিল, নাকি এর পেছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে? সত্য-মিথ্যার সংঘর্ষ কোথায় গিয়ে শেষ হবে?

লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।

অন্ধকারের ছায়া: সত্যের লড়াই

 উপন্যাসের নাম: ন্যায়ের প্রদীপ

ইসলামিক নৈতিকতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
সত্যের সন্ধানে—এক মহাযাত্রার শুরু


প্রথম খণ্ড: শুরুটা যেখানে


পশ্চিম আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। দীর্ঘ এক মাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর ঈদের আনন্দে মুখরিত গোটা শহর। তবে এই উৎসবের আমেজের মধ্যেও কিছু মানুষ আছে, যারা ঈদের খুশির চেয়েও বড় একটি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে—ন্যায় প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব।


মাওলানা আহমদ শফি ছিলেন একজন বিশাল আলেম ও মুজাহিদ। শুধু মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়াই নয়, প্রয়োজনে তলোয়ার হাতে নিয়ে ময়দানে নেমে আসার মতো সাহস ও যোগ্যতা ছিল তার। জালিম শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ছিল তার জীবনের একমাত্র ব্রত।


ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর মসজিদের এক কোণে কিছু যুবককে তিনি কুরআন ও হাদিসের আলোকে ন্যায়ের পথে চলার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ এক যুবক অকিল উদ্দিন এসে বলল, “শাইখ! শহরের এক বৃদ্ধা আমাদের সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তার একমাত্র ছেলে মাওলানা সোহাইলকে অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে গেছে কিছু দুর্বৃত্ত!”


মাওলানা আহমদ শফি সামান্য সময়ও অপচয় না করে সাথে সাথে রওনা হলেন। তার সঙ্গী হলেন তারই ছাত্রদের কয়েকজন, যারা দ্বীনের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে জানা গেল, ছেলেটিকে একদল নাস্তিক ধরে নিয়ে গেছে, কারণ সে তাদের ভুল যুক্তির প্রতিবাদ করেছিল।


এই নাস্তিকরা শহরের তরুণদের মধ্যে সন্দেহ ছড়ানোর জন্য কুরআন-হাদিসের কিছু আয়াতকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করত। কিন্তু মাওলানা আহমদ শফির ছাত্ররা ছিল দৃঢ়চেতা, তাদের কাছে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ছিল কুরআন-হাদিসের আলোকেই।


মাওলানা সোহাইলের সন্ধানে তারা শহরের নির্জন প্রান্তে এক গোপন আস্তানায় পৌঁছাল। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একদল যুবক মাওলানা সোহাইলকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের নেতা প্রশ্ন করছিল, “আল্লাহ যদি এত দয়ালু হন, তবে পৃথিবীতে এত কষ্ট কেন?”


মাওলানা আহমদ শফি দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিলেন, “এই পৃথিবী পরীক্ষা স্থল। যারা ধৈর্য ধরে, তাদের জন্য জান্নাত অপেক্ষা করছে। আর যারা দুনিয়াতেই সব চায়, তারা আখিরাত ভুলে যায়।”


এভাবে একের পর এক কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হলো, আর মাওলানা আহমদ শফি তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কুরআন-হাদিসের দলিল দিয়ে তাদের খণ্ডন করলেন। নাস্তিকরা বোঝার চেষ্টা করল, কিন্তু তাদের অন্তর কালো হয়ে গিয়েছিল। তারা একপর্যায়ে রেগে গিয়ে মাওলানা সুহাইলকে মারতে উদ্যত হল। কিন্তু মাওলানা আহমদ শফি ও তার সাথীরা বাধা দিলেন।


একপর্যায়ে তাদের এক নেতা রাগে ফেটে বলল, “আমরা এই শহর ছেড়ে যাব, তবে মনে রেখো, সত্য-মিথ্যার এই লড়াই চলবে।”


মাওলানা আহমদ শফি মুচকি হেসে বললেন, “সত্যের আলো কখনো নিভে না। আল্লাহর নূর তিনি যার জন্য চান, তার হৃদয়ে জ্বালিয়ে দেন।”


মাওলানা সুহাইল মুক্ত হলো, আর বৃদ্ধা তার ছেলেকে ফিরে পেয়ে অশ্রু ঝরালেন। ঈদের খুশি যেন তখন সত্যিকারের অর্থ পেল।


এভাবেই শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়—ন্যায়ের প্রদীপ জ্বালানোর অধ্যায়।


@@@

 শাওয়াল মাসের বরকত ও ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত


শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদ উদযাপনের পর, মাওলানা সালেহ আহমদ শফী তার ছাত্রদের নিয়ে মসজিদে বসে আলোচনা করছিলেন। ঈদের আনন্দের মাঝেও তার হৃদয়ে ছিল এক গভীর ভাবনা—সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, ইসলামি জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া, এবং যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলা।


মাওলানা আহমদ শফি বললেন, “রমজান আমাদের আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু শাওয়াল মাস আমাদের আরেকটি বড় সুযোগ দেয়—এটি তাকওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাস। নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এবং শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪)”


তার কথা শুনে ছাত্রদের মধ্যে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ল। তারা জানতে চাইল, “শাইখ! এই ছয়টি রোজার গুরুত্ব কী?”


মাওলানা আহমদ শফি উত্তর দিলেন, “এটি আমাদের অতিরিক্ত নফল ইবাদতের প্রতি মনোযোগী করে এবং রমজানের পরও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ দেয়। যারা এই রোজাগুলো রাখে, তারা পুরো জীবনের জন্য রোজার সওয়াব অর্জন করতে পারে।”


তাদের আলোচনা যখন গভীর হচ্ছিল, তখন একজন যুবক দ্রুত মসজিদে প্রবেশ করল। তার মুখে চিন্তার ছাপ।


“শাইখ! শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আপনাকে দেখা করতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, শহরে এক ভয়ানক ষড়যন্ত্র চলছে, যা ইসলাম ও ন্যায়পরায়ণতার বিরুদ্ধে।”


মাওলানা আহমদ শফি কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তিনি জানতেন, সত্যের পথে বাধা আসবেই। তিনি ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “প্রস্তুত হও। শাওয়াল মাস শুধু ইবাদতের মাস নয়, এটি সত্যের জন্য সংগ্রামের মাসও।”


@@@

 শহরে এক ভয়ানক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হবে সালেহ বিন তামীম ও তার সাথীরা।


মাওলানা আহমদ শফি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলেন যুবকের কথা। ষড়যন্ত্রের গন্ধ তিনি স্পষ্ট অনুভব করছিলেন। শহরের অভিজাত এলাকার এক ব্যক্তি তাকে গোপনে ডেকে পাঠিয়েছেন, যার পরিচয় এখনো অজানা। তিনি ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছালেন।


জায়গাটি ছিল শহরের এক প্রান্তে, যেখানে সাধারণত মানুষের আনাগোনা কম। সেখানে এক বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার সাহেব বসে ছিলেন, তার চোখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।


"শাইখ, আমি বহুদিন ধরে একটি গোপন দলকে পর্যবেক্ষণ করছি। তারা ইসলামকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের নেতা কিছু নাস্তিক ও কুফরবাদী চিন্তাবিদ, যারা তরুণদের বিভ্রান্ত করতে চায়। তারা কুরআনের আয়াতকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, ইসলামকে পশ্চাৎপদ ধর্ম হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে।" বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার সাহেব থেমে গেলেন, যেন তার ভয় আরও গভীর হয়ে উঠল।


মাওলানা আহমদ শফি ধীরে ধীরে বললেন, "আপনি কি নিশ্চিত যে এরা শুধুই বুদ্ধিবৃত্তিক ষড়যন্ত্র করছে, নাকি আরও বড় কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?"


বৃদ্ধ নিঃশ্বাস নিলেন। "তারা শুধু কথা বলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। আমি শুনেছি, তারা শহরের কিছু যুবককে অর্থ ও প্রলোভনের মাধ্যমে ভুল পথে চালিত করছে। তারা এমন একটি পরিকল্পনা করছে, যা ইসলামি শিক্ষার ভিত্তি নষ্ট করে দেবে।"


মাওলানার ছাত্রদের মধ্যে একজন বলল, "শাইখ! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে এখনই কিছু করতে পারি?"


মাওলানা আহমদ শফি বললেন, "কোনো কাজ তাড়াহুড়া করে করা যাবে না। আমাদের প্রথমে জানতে হবে, তাদের মূল উদ্দেশ্য কী। কেবল বাহ্যিক শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেই হবে না, আমাদের নিজেদের ঈমানও শক্তিশালী করতে হবে। শাওয়াল মাস আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছে। আমাদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও দ্বীনি জ্ঞানের মাধ্যমে।"


সবাই চুপ হয়ে গেল। শহরের আকাশে তখন সন্ধ্যার আলো-আঁধারি খেলা করছিল। সামনে অপেক্ষা করছিল এক কঠিন লড়াই—সত্যের জন্য, ইসলামের জন্য।


পরবর্তী খণ্ডে: ষড়যন্ত্রের মূল হোতারা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হবে, এবং তাদের মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু হবে।


লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।

পরীর ছোঁয়া (৪৪ তম খণ্ড) – চূড়ান্ত পরিণতি

 পরীর ছোঁয়া (৪৪ তম খণ্ড)

পরীর ছোঁয়া ৪৪ তম খণ্ড – হাসান ও তার সঙ্গীদের চূড়ান্ত যুদ্ধ এবং সত্যের আলো

পরীর ছোঁয়া ৪৪ তম খণ্ড – শেষ যুদ্ধ, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং সত্যের চিরন্তন বিজয়!


নতুন পথচলা

যুদ্ধ শেষ হয়েছে, শত্রুরা পালিয়ে গেছে, কিন্তু হাসানের মন অশান্ত। বিজয়ের আনন্দের মাঝেও তার মনে একটাই প্রশ্ন—“এখন কী?”


গ্রামপ্রধান শওকত হোসেন তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “সত্যের বিজয় অর্জন করা যেমন কঠিন, তা ধরে রাখা আরও কঠিন। তুমি কি প্রস্তুত?”


হাসান মাথা নাড়ল। “আমাদের সমাজে শিক্ষার আলো ছড়াতে হবে, মানুষকে ন্যায়ের পথে আনতে হবে। কেবল যুদ্ধ করলেই চলবে না, বরং ভালোবাসা ও জ্ঞানের মাধ্যমে সত্যের পথে ধরে রাখতে হবে।”


নতুন নেতৃত্বের সূচনা


গ্রামের সবাই জড়ো হলো।


জাবের বলল, “আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে, যেন শত্রুরা আর কখনো ফিরে আসতে না পারে।”


সুফিয়ান বলল, “আমাদের একটি পরিষদ গঠন করা উচিত, যারা গ্রামের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও ন্যায়বিচারের দায়িত্ব নেবে।”


হাসান বলল, “হ্যাঁ, আমরা একটি দল তৈরি করব, যারা গ্রামকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন।”


গ্রামের মানুষেরা উচ্ছ্বসিত হয়ে তাকবির দিল—

“আল্লাহু আকবার!”


পরী নূরসাবা ও হাসানের ভবিষ্যৎ


পরী নূরসাবা দূর থেকে সব দেখছিল। হাসানের প্রতি তার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। সে ভাবল, “হাসান শুধু একজন যোদ্ধা নয়, সে একজন প্রকৃত নেতা।”


এক রাতে হাসান ও পরী নূরসাবার মধ্যে কথা হলো।


পরী নূরসাবা বলল, “তুমি কি চিরকাল যুদ্ধের জীবনই বেছে নেবে? নাকি এখন থেকে কিছুটা শান্তির পথ ধরবে?”


হাসান হেসে বলল, “যুদ্ধ তো কেবল শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, নিজের নফসের বিরুদ্ধেও করতে হয়। এখন আমাদের কাজ হবে মানুষের অন্তরে সত্যের আলো পৌঁছে দেওয়া।”


পরী নূরসাবা তাকিয়ে থাকল। তার হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে গেল।


একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু


গ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর হাসান ও তার দল শিক্ষার প্রসার ঘটাতে শুরু করল। শিশুদের কুরআন শিক্ষা দেওয়া হলো, বড়দের হালাল-হারাম সম্পর্কে জানানো হলো।


কিন্তু ঠিক তখনই...


এক আগন্তুক গ্রামে প্রবেশ করল। তার চোখ ছিল বিদ্বেষে ভরা।


সে বলল, “তোমরা সত্যের পথে আছো? তবে নতুন এক পরীক্ষা আসছে!”


গ্রামের মানুষ হতবাক হয়ে গেল। নতুন কী বিপদ আসছে?


@@@


নতুন সংকট


গ্রামে এক অজানা আগন্তুক প্রবেশ করেছিল। তার চোখে বিদ্বেষের আগুন, কণ্ঠস্বর ছিল রহস্যময়।


“তোমরা সত্যের পথে আছো? তবে নতুন এক পরীক্ষা আসছে!”


হাসান এগিয়ে গিয়ে বলল, “তুমি কে? কী চাও?”


লোকটি হাসল, এক অদ্ভুত রহস্যময় হাসি। “আমি সেই মানুষ, যে অন্ধকারে থেকেও আলোর সন্ধান করেছে। কিন্তু তোমাদের আলো কি সত্যিই সব অন্ধকার দূর করতে পারবে?”


হাসান তার কথা শুনে সতর্ক হলো। সে বুঝতে পারল, নতুন এক বিপদ ধেয়ে আসছে।


বিশ্বাসের পরীক্ষা


সেদিন রাতেই গ্রামের চারদিকে ছায়াময় কিছু লোক দেখা গেল। তারা ধীরে ধীরে একত্রিত হচ্ছিল। হাসান ও তার দল দ্রুত প্রস্তুতি নিল।


“আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন,” হাসান বলল।


পরী নূরসাবা তার পাশে এসে দাঁড়াল। “তুমি কি মনে করো, আমরা সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে পারব?”


হাসান বলল, “সত্যের পথ কখনো সহজ নয়, তবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে আমরা সফল হবই।”


চূড়ান্ত লড়াই


শত্রুরা আক্রমণ করল, কিন্তু এবার হাসান ও তার দল পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। তারা শুধু অস্ত্রের শক্তিতেই নয়, বরং ন্যায় ও জ্ঞানের শক্তিতেও লড়াই করল। শত্রুরা ধীরে ধীরে পরাস্ত হলো।


শত্রুদের নেতা বলল, “তোমাদের এই একতা, তোমাদের এই ঈমান আমাদের হারিয়ে দিল।”


হাসান বলল, “সত্যের পথে যারা থাকে, তারা কখনো হারবে না।”


এক নতুন সূচনা


যুদ্ধ শেষ হলো। গ্রাম আবার শান্ত হলো।


জাবের বলল, “এখন আমরা কী করব?”


হাসান বলল, “এখন আমাদের কাজ হলো মানুষের অন্তরে সত্যের আলো পৌঁছে দেওয়া। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।”


পরী নূরসাবা বলল, “তাহলে কি আমাদের গল্প এখানেই শেষ?”


হাসান হেসে বলল, “না, পরী। সত্যের পথ কখনো শেষ হয় না। এটা শুধু এক নতুন সূচনা।”


শেষ কথা


হাসান ও তার সঙ্গীরা সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে থাকল। তারা নতুন প্রজন্মকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিতে লাগল।


পরী নূরসাবার হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে গেল। সে বুঝতে পারল, সত্যের আলো সব অন্ধকার দূর করতে পারে, যদি কেউ সত্যিকারের বিশ্বাস রাখে।


(শেষ)


লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।


সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

পরীর ছোঁয়া (৪৩ তম খণ্ড)

 পরীর ছোঁয়া (৪৩তম খণ্ড)

পরীর ছোঁয়া ৪৩ তম খণ্ড - হাসানের নেতৃত্বে শত্রুদের পরাজয় ও সত্যের জয়
পরীর ছোঁয়া ৫০তম খণ্ড – সত্য ও ন্যায়ের চূড়ান্ত বিজয়! হাসান ও তার সঙ্গীদের ত্যাগের গল্প, যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।

শত্রুরা যখন গ্রাম ছেড়ে চলে গেল, তখন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্তু হাসান জানত, এটা শেষ নয়। শত্রুরা আবার ফিরে আসতে পারে, নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারে।


নতুন সংকেত


সুফিয়ান এসে বলল, “আমাদের একজন গুপ্তচর খবর এনেছে, শত্রুরা গোপনে একত্রিত হচ্ছে। এবার তারা বাইরের আরও কিছু দলকে সঙ্গে নিচ্ছে।”


জাবের বলল, “তাহলে এবার লড়াই আরও কঠিন হবে।”


হাসান দৃঢ় স্বরে বলল, “আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তারা আমাদের ঈমান পরীক্ষা করতে চায়, কিন্তু আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।”


শত্রুর ফাঁদ


এরপরের দিন রাতে রহস্যময় কিছু ঘটনা ঘটতে লাগল। গ্রামের আশপাশে অপরিচিত ছায়া দেখা যাচ্ছিল। কিছু জায়গায় ধোঁয়া উড়ছিল। হঠাৎ একজন পাহারাদার দৌড়ে এসে বলল, “আমাদের কিছু লোক নিখোঁজ হয়েছে!”


হাসান দ্রুত লোকজন জড়ো করল। “এটা শত্রুর নতুন ফাঁদ। আমাদের বুদ্ধি খাটিয়ে চলতে হবে।”


সুফিয়ান বলল, “আমাদের নিখোঁজ লোকদের খুঁজতে হবে।”


তারা রাতের অন্ধকারে সতর্কতার সঙ্গে খোঁজ করতে বের হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একটি পরিত্যক্ত কুটির দেখতে পেল। ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল, নিখোঁজ লোকগুলো বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে।


প্রতারণার জাল


ঠিক তখনই বাহির থেকে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। শত্রুরা ফাঁদে ফেলেছে!


একজন শত্রু ব্যঙ্গের হাসি দিয়ে বলল, “তোমরা ভেবেছিলে, আমাদের হারিয়ে দিয়েছ? এবার আমরা তোমাদের শেষ করে দেব!”


হাসান বলল, “আমাদের ধ্বংস করতে এসে তোমরাই ধ্বংস হবে, ইনশাআল্লাহ।”


শত্রুরা আক্রমণ করতে এলো, কিন্তু হাসান ও তার দল তৈরি ছিল। তারা দ্রুত বাঁধন খুলে সবাইকে মুক্ত করল। তারপর শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হলো।


আল্লাহর সাহায্য


যুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন হঠাৎ আকাশে মেঘ ঘনিয়ে এলো। প্রবল বাতাস বইতে শুরু করল। ধূলিঝড়ের মতো কিছু একটা শত্রুদের চোখে প্রবেশ করল, তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না।


হাসান উচ্চস্বরে বলল, “আল্লাহ আমাদের সাহায্য করছেন! এখনই আক্রমণ করো!”


গ্রামবাসীরা একযোগে আক্রমণ করল। শত্রুরা দিশেহারা হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো।


নতুন প্রতিজ্ঞা


যুদ্ধ শেষ হলে গ্রামে ফিরে সবাই শুকরিয়া আদায় করল। বৃদ্ধ গ্রামপ্রধান শওকত হোসেন বললেন, “তোমাদের কারণে আজ সত্যের বিজয় হলো।”


হাসান বলল, “এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা কখনো অন্যায়ের সামনে মাথা নত করব না।”


সুফিয়ান বলল, “কিন্তু শত্রুরা আবার ফিরে আসতে পারে।”


হাসান মুচকি হেসে বলল, “তাহলে আমরা আবারও লড়াই করব। কারণ সত্য কখনো পরাজিত হয় না।”


@@@


শত্রুর শেষ চাল

গ্রামের মানুষ যখন মনে করছিল যে সব বিপদ কেটে গেছে, তখনই এক ভয়ংকর সংবাদ এলো। এক গুপ্তচর দৌড়ে এসে বলল, “শত্রুরা আবার জোট বেঁধেছে, এবার তাদের সাথে বাইরের শক্তিশালী বাহিনীও আছে!”

হাসান চুপচাপ শুনল। জাবের বলল, “এবার কি আমরা টিকতে পারব?”

হাসান শান্ত স্বরে বলল, “আমরা কখনো অন্যায়ের সামনে মাথা নত করব না। যদি সত্যের জন্য লড়াই করতে হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।”

গ্রামের সব যুবকরা একত্রিত হলো। তারা জানত, এবারকার যুদ্ধ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য।

পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

হাসান বলল, “আমরা রণকৌশল ঠিক করব। সরাসরি শক্তির লড়াই করলে জয় পাওয়া কঠিন হবে। আমাদের বুদ্ধি খাটিয়ে শত্রুদের ফাঁদে ফেলতে হবে।”

সুফিয়ান বলল, “আমরা কীভাবে তাদের ফাঁদে ফেলব?”

হাসান মাটিতে একটা মানচিত্র আঁকল। “আমরা কিছু মানুষকে গ্রামের বাইরে রেখে দেব, যেন শত্রুরা ভাবে গ্রাম খালি পড়ে আছে। যখন তারা হামলা চালাবে, তখন আমরা চারদিক থেকে আক্রমণ করব।”

গ্রামের যোদ্ধারা প্রস্তুত হলো। অস্ত্র তৈরি করা হলো, খাদ্যের মজুদ নিশ্চিত করা হলো, মহিলারা ও বাচ্চারা নিরাপদ স্থানে সরে গেল।

শত্রুর আক্রমণ ও হাসানের কৌশল

রাত গভীর হলে শত্রুরা আক্রমণ চালাল। তারা দেখল, গ্রামে কোনো প্রতিরোধ নেই। শত্রুদের নেতা বিজয়ের উল্লাস করল, কিন্তু তখনই চারদিক থেকে তলোয়ারের ঝনঝনানি শোনা গেল!

হাসান ও তার সঙ্গীরা দিক দিক থেকে বেরিয়ে এল। শত্রুরা হতবাক!

সুফিয়ান চিৎকার করে বলল, “এবার আল্লাহর সাহায্যে সত্যের জয় আসবে!”

তীব্র যুদ্ধ শুরু হলো। হাসান একজন পরাক্রমশালী যোদ্ধার মতো লড়াই করছিল। তার সাহস ও বুদ্ধিমত্তার কারণে শত্রুরা ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়তে লাগল।

শত্রুদের পরাজয় ও শেষ সময়ের ঘোষণা

যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলল। একসময় শত্রুদের প্রধান গর্জন করে বলল, “আমরা পিছু হটছি! এই গ্রাম জয় করা সম্ভব নয়!”

শত্রুরা দ্রুত পালিয়ে গেল।

হাসান বলল, “এই জয় আমাদের নয়, আল্লাহর রহমতে সত্যের জয় হয়েছে।”

গ্রামবাসীরা আনন্দে কেঁদে ফেলল। বৃদ্ধ গ্রামপ্রধান শওকাত হোসেন এসে বললেন, “তুমি আমাদের জন্য আশীর্বাদ, হাসান। কিন্তু এখন আমাদের নতুন ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।”

নতুন দায়িত্ব ও ভবিষ্যতের পথচলা

শত্রুরা পরাজিত হলেও হাসান জানত, সত্যের পথ কঠিন। সে বলল, “আমাদের গ্রামের সবাইকে শিক্ষিত করতে হবে, যাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।”

জাবের বলল, “আমাদের কী করা উচিত?”

হাসান বলল, “পবিত্র কোরআন আমাদের পথ দেখাবে। আমরা এখন থেকে দ্বীনের পথে চলব, ন্যায় ও ভালোবাসার সমাজ গড়ব।”

সুফিয়ান বলল, “তাহলে আমরা আর যুদ্ধ করব না?”

হাসান মুচকি হেসে বলল, “যুদ্ধ তখনই করতে হয়, যখন অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমাদের কাজ হবে ন্যায় ও শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়া।”

গ্রামবাসীরা একসাথে তাকবির দিল—

“আল্লাহু আকবার! সত্যের জয় চিরকাল থাকবে!”

(৪৩ তম খণ্ড সমাপ্ত। পরবর্তী খণ্ডে হাসানের নতুন দায়িত্ব ও ভবিষ্যতের পথচলার গল্প থাকবে।)


লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।


পরীর ছোঁয়া (৪২তম খণ্ড)

 পরীর ছোঁয়া (৪২তম খণ্ড)

পরীর ছোঁয়া ৪৮তম খণ্ড - হাসানের নেতৃত্বে শত্রুদের বিরুদ্ধে রোমাঞ্চকর লড়াই
শত্রুরা আবারও আক্রমণ চালাল, কিন্তু হাসানের কৌশল ও সাহস তাদের পরাস্ত করল। এবার কি সত্যিই শান্তি ফিরে আসবে?


রাত গভীর হতে না হতেই গ্রামজুড়ে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এল। পাহারাদারদের চোখ সতর্ক, অস্ত্র হাতে তারা পাহারায় ব্যস্ত। শত্রুদের হামলা ব্যর্থ হওয়ার পরও হাসান জানত, ওরা এত সহজে হার মানবে না।


সন্ধ্যার আগেই হাসান ও তার সঙ্গীরা একত্রিত হয়েছিল। সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা। সুফিয়ান বলল, “আমি নিশ্চিত, ওরা আবার আসবে। তবে এবার হয়তো নতুন কোনো কৌশল নিয়ে।”


হাসান দৃঢ় স্বরে বলল, “আমরা প্রস্তুত। আল্লাহর সাহায্য চাই, তারপর আমাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করি।”


শত্রুর ছদ্মবেশ


রাতে একদল অচেনা লোক গ্রামের বাইরে অবস্থান নেয়। ওরা দেখতে নিরীহ কৃষকের মতো, কিন্তু হাসান জানত, এরা শত্রুর গুপ্তচর হতে পারে। জাবের চাপা স্বরে বলল, “ওরা কি আসলেই পথহারা, নাকি শত্রুরই দালাল?”


হাসান বলল, “আমরা ওদের যাচাই করব। কিছু লোক পাঠিয়ে দেখো, ওরা কারা।”


সুফিয়ান ও কয়েকজন গ্রামবাসী অতিথির ছদ্মবেশে ওদের কাছে গেল। একপর্যায়ে, সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল, “আপনারা এখানে কীভাবে এলেন?”


একজন বলল, “আমরা পথ হারিয়েছি, আশ্রয়ের জন্য এসেছি।”


কিন্তু সুফিয়ান লক্ষ্য করল, লোকগুলোর চোখে আতঙ্ক, যেন ধরা পড়ার ভয়। সে হাসানকে সংকেত দিল।


শত্রুর চক্রান্ত


হাসান দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল, ওদের পরীক্ষা করতে হবে। সে তাদের বলল, “আমরা আপনাদের সাহায্য করতে পারি, তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।”


লোকগুলো ইতস্তত করতে লাগল। হঠাৎ এক লোক পালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু পাহারাদাররা তাকে ধরে ফেলল।


হাসান কঠিন স্বরে বলল, “সত্য বলো, নাহলে আমরা গ্রামবাসীদের কাছে তোমাদের তুলে দেব।”


ধরা পড়া ব্যক্তি অবশেষে স্বীকার করল, “আমরা শত্রুর লোক। আমাদের পাঠানো হয়েছে গ্রামে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য।”


হাসানের বুদ্ধিমত্তা


হাসান শত্রুর পরিকল্পনা জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নিল। সে বলল, “আমরা এখনই গ্রামবাসীদের জাগিয়ে তুলব। সবাই প্রস্তুত থাকুক, কারণ শত্রুরা আবারও হামলার চেষ্টা করবে।”


রাতের অন্ধকারে সবাই প্রস্তুত হলো। পাহারাদাররা তাদের অবস্থান নিল। হাসান জানত, সত্যের পথ কঠিন, কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।


@@@


গ্রামজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শত্রুরা ছদ্মবেশে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু হাসান ও তার সঙ্গীদের তৎপরতায় তারা ধরা পড়েছে। এখন প্রশ্ন একটাই—ওদের পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

শত্রুর নতুন ষড়যন্ত্র

ধরা পড়া গুপ্তচরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। সে ভয়ে কাঁপছিল, কিন্তু মুখ খুলতে চাইছিল না। মাহির শান্ত গলায় বলল, “তোমার কাছে দুটি পথ আছে—সত্য বলে মুক্তি পাওয়া, অথবা মিথ্যা বলে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।”

লোকটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমাদের নেতারা নতুন পরিকল্পনা করেছে। তারা আরও বড় বাহিনী নিয়ে আসছে। এ বারেই তোমাদের শেষ রাত হবে।”

এই কথা শুনে সবাই শিহরিত হয়ে উঠল। জাবের বলল, “আমাদের দ্রুত কিছু করতে হবে!”

প্রস্তুতি শুরু

হাসান ভাবছিল, কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। সে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “শত্রুরা যত শক্তিশালী হোক, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আমরা রুখে দাঁড়াব। আমাদের কৌশলী হতে হবে।”

গ্রামের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করা হলো। পুরুষেরা পাহারায় থাকল, নারীরা ঘরে থাকলেও সতর্ক ছিল। মসজিদে সবাই মিলিত হয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইল।

রাতের আক্রমণ

মধ্যরাতে, গোপন সংকেত পেল হাসান—শত্রুরা এগিয়ে আসছে! পাহারাদাররা প্রস্তুত হলো। তারপরই দেখা গেল, দূর থেকে টর্চের আলো জ্বলছে, ধীরে ধীরে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করছে একদল মানুষ।

হাসান হাত তুলে সংকেত দিল, “প্রস্তুত হও! ধৈর্য ধরো, আল্লাহ আমাদের সহায়।”

শত্রুরা গ্রামে প্রবেশের আগেই ফাঁদে পড়ল। আশেপাশে লুকিয়ে থাকা হাসানের লোকেরা একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল! আকস্মিক আক্রমণে শত্রুরা দিশেহারা হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা বুঝতে পারল, তারা পরাস্ত।

সত্যের বিজয়

যুদ্ধ খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। শত্রুরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। তাদের নেতা আহত অবস্থায় হাসানের সামনে এসে পড়ল।

হাসান দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “তোমরা কী অর্জন করতে চেয়েছিলে?”

নেতা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “ক্ষমা করুন! আমরা ভুল করেছি।”

হাসান বলল, “সত্যের পথে থাকলে ভয় থাকে না। এখন গ্রাম ছেড়ে চলে যাও, আর অন্যায় পথে ফিরে এসো না।”

শত্রুরা বিদায় নিল, গ্রামবাসীরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল।

@@@

শত্রুদের পরাজয়ের পর গ্রামের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও হাসান জানত, বিপদ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। শত্রুরা ফিরে গেলেও তারা সহজে হাল ছাড়বে না।

নতুন চক্রান্তের গন্ধ

সুফিয়ান এসে বলল, “আমাদের গুপ্তচররা খবর এনেছে, শত্রুরা আবারও সমাবেশ করছে। তারা আরও বড় বাহিনী নিয়ে ফিরে আসবে।”

হাসান চিন্তিত হয়ে বলল, “এটা অনুমান করাই যাচ্ছিল। কিন্তু এবার আমরা ওদের পুরোপুরি নির্মূল করব, ইনশাআল্লাহ।”

জাবের বলল, “গ্রামবাসীদের সতর্ক করতে হবে।”

প্রতিরক্ষার নতুন পরিকল্পনা

হাসান ও তার সঙ্গীরা গ্রাম রক্ষার জন্য নতুন পরিকল্পনা করল।

১. গ্রামের চারপাশে পাহারাব্যবস্থা জোরদার করা হলো।
২. যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো যুবকদের।
3. মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হলো।

সুফিয়ান বলল, “আমাদের শক্তি শত্রুর মতো নয়, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আছে।”

হাসান মৃদু হেসে বলল, “বিশ্বাসই হলো সবচেয়ে বড় শক্তি।”

শত্রুর পুনরাগমন

তিন দিন পর, রাতে হঠাৎ পাহারাদাররা সংকেত দিল—শত্রুরা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করছে!

হাসান দ্রুত ছুটে এল। চারপাশে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে, আগুনের আভা দেখা যাচ্ছে। শত্রুরা এবার আরও বেশি সংগঠিত হয়ে এসেছে।

হাসান গর্জে উঠল, “সবাই তৈরি হও! আমরা ন্যায়ের জন্য লড়ব!”

গ্রামের যোদ্ধারা প্রস্তুত হলো। প্রথমেই তারা শত্রুদের প্রবেশপথ বন্ধ করল। তারপর চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল।

যুদ্ধ শুরু হলো। শত্রুরা প্রবল আক্রমণ চালালেও হাসান ও তার দল কৌশলে লড়াই করছিল। তারা শত্রুদের বিভ্রান্ত করছিল, যাতে ওরা একসঙ্গে আক্রমণ করতে না পারে।

চূড়ান্ত সংঘর্ষ

যুদ্ধ তীব্র হতে লাগল। সুফিয়ান শত্রুদের একজন নেতাকে ধরতে সক্ষম হলো। সে আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল, “আমরা আর লড়তে পারছি না! আমাদের ছেড়ে দাও!”

হাসান বলল, “তোমরা কেবল ধ্বংস আর নৈরাজ্য চাও। আমরা শান্তি চাই, কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে আপস করব না!”

শত্রুরা বুঝতে পারল, তারা হাসানদের পরাস্ত করতে পারবে না। তারা পিছু হটতে বাধ্য হলো।

বিজয়ের আনন্দ

যুদ্ধ শেষ হলো। গ্রামের মানুষ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। বৃদ্ধ নেতা বললেন, “তোমরা শুধু আমাদের রক্ষা করোনি, বরং সত্যের জন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছ।”

হাসান বলল, “আমরা শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। আল্লাহই আমাদের সাহায্য করেছেন।”

(৪২তম খণ্ড সমাপ্ত। পরবর্তী খণ্ডে জানা যাবে, শত্রুরা আবার কী ষড়যন্ত্র করবে এবং হাসান কীভাবে আরও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।)

রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৫

পরীর ছোঁয়া (৪১ তম খন্ড)

 পরীর ছোঁয়া (৪১তম খণ্ড)

হাসান ও তার সঙ্গীরা শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে গ্রামবাসীদের সমর্থন অর্জন করেছে। তবে তারা জানে যে শত্রুরা সহজে হাল ছাড়বেনা। তাই তারা তাদের প্রস্তুতি আরো জোরদার করে।
হাসান ও তার সঙ্গীরা শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে গ্রামবাসীদের সমর্থন অর্জন করেছে। তবে তারা জানে যে শত্রুরা সহজে হাল ছাড়বেনা। তাই তারা তাদের প্রস্তুতি আরো জোরদার করে।


হাসান ও তার সঙ্গীদের প্রতিরোধের ফলে শত্রুরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে, কিন্তু তারা জানে যে এই লড়াই এখানেই শেষ নয়। শত্রুরা নতুন কৌশল নিয়ে ফিরে আসবে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে হবে।

হাসান বলল, "আমাদের প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে এবং নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সত্যের পথে চলতে হলে আমাদের আরও দৃঢ় হতে হবে।"

তার সঙ্গীরা একমত হলো। তারা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ মানুষদের সাথে যোগাযোগ শুরু করল, যারা সত্যের পথে চলতে ইচ্ছুক।

একদিন, তারা এক যুবকের সাথে দেখা করল, যার নাম সাজিদ। সাজিদ বলল, "আমি অনেকদিন ধরে তোমাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি। আমি সত্যের পথে চলতে চাই এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই।"

হাসান মৃদু হেসে বলল, "সত্যের পথে চলা সহজ নয়, সাজিদ। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তুমি কি প্রস্তুত?"

সাজিদ দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিল, "আমি প্রস্তুত। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমি সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি।"

হাসান তার কাঁধে হাত রেখে বলল, "তাহলে আমাদের সাথে এসো। আমরা একসাথে সত্যের আলো ছড়িয়ে দেব।"

এইভাবে, নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাদের সংগঠন আরও শক্তিশালী হতে লাগল। তারা গোপনে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে লাগল এবং সত্যের বার্তা আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে লাগল।

কিন্তু শত্রুরা বসে নেই। তারা হাসান ও তার সঙ্গীদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পেরে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করল। তারা ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা প্রচার করে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করল।

একদিন, হাসান জানতে পারল যে শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। সে সিদ্ধান্ত নিল, সরাসরি গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলবে এবং সত্য উদঘাটন করবে।

গ্রামের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে হাসান বলল, "হে গ্রামবাসী, আপনারা আমাদের অনেকদিন ধরে চেনেন। আমরা কি কখনো আপনাদের ক্ষতি করেছি? আমাদের উদ্দেশ্য সবসময় সত্যের প্রচার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আপনাদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, সত্য-মিথ্যা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিন।"

গ্রামবাসীরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল। একজন বৃদ্ধ বলল, "আমরা হাসান ও তার সঙ্গীদের অনেকদিন ধরে চিনি। তারা কখনো মিথ্যা বলেনি। আমি বিশ্বাস করি, তারা সত্য বলছে।"

অন্যরা মাথা নাড়ল এবং বলল, "আমরাও তাই মনে করি। আমরা শত্রুদের মিথ্যা কথায় বিভ্রান্ত হব না।"

হাসান ও তার সঙ্গীরা গ্রামবাসীদের সমর্থন পেয়ে নতুন উদ্দীপনা পেল। তারা বুঝতে পারল, সত্যের পথে চলতে গেলে বাধা আসবেই, কিন্তু ধৈর্য, সততা ও আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই।


@@@
হাসান ও তার সঙ্গীরা শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে গ্রামবাসীদের সমর্থন অর্জন করেছে। তবে তারা জানে যে শত্রুরা সহজে হাল ছাড়বে না। তাই তারা তাদের প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে সিদ্ধান্ত নেয়।

এক সন্ধ্যায়, হাসান তার সঙ্গীদের নিয়ে বৈঠকে বসে বলল, "আমাদের আরও সজাগ ও সংগঠিত হতে হবে। শত্রুরা যে কোনো সময় আবার আক্রমণ করতে পারে।"

জাবের জিজ্ঞেস করল, "আমরা কীভাবে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি?"

হাসান উত্তর দিল, "আমরা গ্রামে পাহারা ব্যবস্থা চালু করব। প্রতিদিন রাতে পালাক্রমে পাহারা দেব, যাতে শত্রুরা গোপনে কিছু করতে না পারে।"

সঙ্গীরা একমত হলো এবং তারা পাহারা দেওয়ার জন্য একটি সময়সূচি তৈরি করল।

পরের দিন থেকে, গ্রামে পাহারা ব্যবস্থা কার্যকর হলো। সঙ্গীরা রাতে পালাক্রমে পাহারা দিতে লাগল, যা গ্রামবাসীদের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়িয়ে দিল।

এক রাতে, পাহারারত অবস্থায় জাবের দূরে কিছু সন্দেহজনক আন্দোলন লক্ষ্য করল। সে দ্রুত হাসানকে জানাল।

হাসান বলল, "চলো, আমরা গিয়ে দেখি। সতর্ক থেকো, শত্রুরা হতে পারে।"

তারা ধীরে ধীরে সেই স্থানের দিকে এগিয়ে গেল এবং দেখল কয়েকজন অচেনা লোক গোপনে কিছু করছে। হাসান সঙ্গীদের সংকেত দিল ঘিরে ধরার জন্য।

"তোমরা এখানে কী করছ?" হাসান দৃঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।

লোকগুলো হতভম্ব হয়ে গেল এবং পালানোর চেষ্টা করল। তবে হাসান ও তার সঙ্গীরা তাদের আটকাতে সক্ষম হলো।

একজন লোক বলল, "আমরা কেবল পথ হারিয়ে ফেলেছি। দয়া করে আমাদের ছেড়ে দিন।"

হাসান তাদের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে বলল, "পথ হারিয়ে ফেলেছ, অথচ গোপনে চলাফেরা করছ? সত্য বলো, নইলে আমাদের গ্রামবাসীদের কাছে নিয়ে যাব।"

লোকগুলো ভয়ে সত্য স্বীকার করল যে তারা শত্রুদের গুপ্তচর, যারা গ্রামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এসেছিল।

হাসান বলল, "তোমাদের কাজ অন্যায় ও অনৈতিক। আমরা তোমাদের শত্রুদের কাছে ফিরে যেতে দিচ্ছি, কিন্তু তাদের বলো যে সত্যের পথে চলা মানুষদের সহজে ভাঙা যায় না।"

লোকগুলো লজ্জিত হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেল।

পরের দিন, হাসান গ্রামবাসীদের একত্র করে বলল, "আমরা শত্রুদের একটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছি। তবে আমাদের সজাগ থাকতে হবে এবং একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। সত্যের পথে চলা সহজ নয়, কিন্তু আমরা যদি একসাথে থাকি, তাহলে কোনো শত্রুই আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।"

গ্রামবাসীরা সমস্বরে বলল, "আমরা তোমাদের সাথে আছি, হাসান!"

এই সমর্থন হাসান ও তার সঙ্গীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করল। তারা বুঝতে পারল যে সত্যের পথে চলতে গেলে বাধা আসবেই, কিন্তু ঐক্য, সততা ও আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এগিয়ে গেলে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।


@@@
হাসান ও তার সঙ্গীরা গ্রামবাসীদের সমর্থন ও পাহারা ব্যবস্থার মাধ্যমে শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছে। তবে তারা জানে যে শত্রুরা সহজে হাল ছাড়বে না। তাই তারা তাদের প্রস্তুতি আরও জোরদার করে।

এক সন্ধ্যায়, হাসান তার সঙ্গীদের নিয়ে বৈঠকে বসে বলল, "আমাদের শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং শত্রুদের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাও জরুরি। তবেই আমরা আগাম ব্যবস্থা নিতে পারব।"

জাবের জিজ্ঞেস করল, "আমরা কীভাবে তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারি?"

হাসান উত্তর দিল, "আমাদের মধ্যে থেকে কেউ শত্রুদের এলাকায় গিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারবে। তবে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক কাজ।"

সুফিয়ান বলল, "আমি যেতে রাজি আছি। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আমি এই দায়িত্ব পালন করব।"

হাসান তার কাঁধে হাত রেখে বলল, "তোমার সাহসিকতার প্রশংসা করি, সুফিয়ান। তবে সতর্ক থেকো এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত ফিরে এসো।"

পরের দিন, সুফিয়ান শত্রুদের এলাকায় গোপনে প্রবেশ করল। সে দেখল যে শত্রুরা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে এবং গ্রামে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। সুফিয়ান দ্রুত এই তথ্য সংগ্রহ করে গ্রামে ফিরে এল।

হাসান ও তার সঙ্গীরা এই সংবাদ শুনে প্রস্তুতি নিতে লাগল। তারা গ্রামবাসীদের সতর্ক করল এবং প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা জোরদার করল।

এক রাতে, শত্রুরা গ্রামে আক্রমণ করল। তবে হাসান ও তার সঙ্গীরা প্রস্তুত ছিল। তারা শত্রুদের প্রতিরোধ করল এবং তাদের পিছু হটতে বাধ্য করল।

এই বিজয়ে গ্রামবাসীরা আরও সাহস পেল এবং হাসান ও তার সঙ্গীদের প্রতি তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হলো।

(৪১তম খণ্ড সমাপ্ত। পরবর্তী খণ্ডে জানা যাবে, মাহির ও তার সঙ্গীরা কীভাবে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে এবং সত্যের পথে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।)

লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব


পরীর ছোঁয়া (৪০তম খণ্ড)

 

পরীর ছোঁয়া (৪০তম খণ্ড)

পরীর ছোঁয়া (৪২তম খণ্ড) – হাসান ও তার সঙ্গীদের জন্য এক নতুন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শত্রুরা নতুন কৌশল নিচ্ছে, কিন্তু সত্যের সৈনিকরা কি তাদের রুখতে পারবে?
হাসান ও তার সঙ্গীরা সত্যের পথে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু নতুন ষড়যন্ত্র তাদের পথ রুদ্ধ করতে চাইছে। তারা কি টিকে থাকতে পারবে?


হাসান এবং তার সঙ্গীরা গভীর রাতে একত্রিত হয়। তাদের সামনে এখন নতুন পরিকল্পনা। সত্যের বার্তা আরও দূরে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু শত্রুরা ক্রমাগত তাদের পথ রোধ করার চেষ্টা করছে।


"আমরা কি প্রস্তুত?" হাসান দৃঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল।


সঙ্গীরা মাথা নাড়ল। একজন বলল, "যত বিপদই আসুক, আমরা পিছু হটব না। আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন।"


তারা একটি নতুন পরিকল্পনা করল—গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট গোষ্ঠী তৈরি করবে, যারা গোপনে সত্য প্রচারের কাজ চালিয়ে যাবে।


পরের দিন সকালবেলা, হাসান এবং তার সঙ্গীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ মসজিদে, কেউ বাজারে, কেউ কৃষিক্ষেত্রে কাজ করছে, কিন্তু তাদের অন্তরে একটাই লক্ষ্য—সত্যের আলো ছড়িয়ে দেওয়া।


এক বৃদ্ধ মানুষ বাজারে দাঁড়িয়ে হাসানকে বললেন, "বাবা, তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তোমরা সত্যের পথে আছো। কিন্তু এ পথে অনেক কষ্ট আছে।"


হাসান মৃদু হেসে বলল, "চাচা, নবী করিম (সা.)-এর জীবনের দিকে তাকান। তিনি কি সহজ পথ পেয়েছিলেন? কিন্তু তিনি কখনো সত্য বলা থেকে পিছিয়ে যাননি।"


বৃদ্ধ মাথা নাড়লেন, "তোমাদের কাজ কঠিন, তবে আল্লাহর সাহায্য আসবে।"


এদিকে শত্রুরা বসে নেই। তারা হাসানদের প্রতিটি পদক্ষেপ নজর রাখছে। একদল দুষ্কৃতকারী তাদের পথে বাধা দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।


একজন শত্রু নেতা বলল, "তাদের কথা ছড়িয়ে পড়ার আগেই থামাতে হবে। নয়তো আমাদের কর্তৃত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।"


তারা এক গভীর রাতে হাসানদের একটি গোপন সমাবেশে হামলার পরিকল্পনা করল।


হাসান এবং তার সঙ্গীরা গভীর রাতে পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক তখনই বাইরের শব্দ শুনে সকলে সতর্ক হয়ে উঠল।


"তারা আসছে!" একজন ফিসফিস করে বলল।


হাসান দ্রুত দোয়া পড়ল: 'হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল' (আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক)।


তারপর সে সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে বলল, "ভয় পেয়ো না। আমরা সত্যের পথে আছি, আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন।"


শত্রুরা আক্রমণ করল, কিন্তু হাসান ও তার সঙ্গীরা ধৈর্য হারাল না। তারা নিজেদের রক্ষা করল এবং সত্যের পথে টিকে থাকার শপথ নিল।


@@@


রাত গভীর হতে চলেছে। হাসান ও তার সঙ্গীরা আগের রাতের আক্রমণের পর আরও সতর্ক হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে, শত্রুরা থেমে নেই।

"আমাদের পরিকল্পনা বদলাতে হবে," হাসান দৃঢ় কণ্ঠে বলল। "শত্রুরা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ফেলেছে।"

সুফিয়ান জবাব দিল, "আমরা যদি বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করি, তাহলে ধরা পড়ার আশঙ্কা কমে যাবে।"

তারা একমত হলো, এবং প্রত্যেকে তাদের নির্ধারিত স্থানে ছড়িয়ে পড়ল।


এদিকে শত্রুরা নতুন ফন্দি আঁটছে। তাদের নেতা বলল, "এদের থামানোর একটাই উপায় আছে—তাদের মধ্য থেকে কাউকে আমাদের দলে টেনে নেওয়া।"

তারা হাসানের এক সঙ্গীকে লক্ষ্য করল, যার মনে কিছু সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এক গুপ্তচর তার কাছে গিয়ে মিথ্যা প্রলোভন দেখাতে লাগল।

"তোমরা কষ্ট করে কি পাবে? আমাদের সাথে থাকলে ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি দুটোই পাবে!"

কিন্তু সে ধোঁকায় পড়ল না। বরং সে হাসানকে গিয়ে সব জানিয়ে দিল।


হাসান তার সঙ্গীদের একত্র করল। "তোমাদের মধ্যে কেউ যদি দ্বিধাগ্রস্ত হয়, তবে মনে রেখো, সত্যের পথ কখনো সহজ হয় না। কিন্তু এটি সবার জন্য কল্যাণকর।"

তার কথা শুনে সবাই নতুন উদ্দীপনা পেল। তারা শত্রুর প্রতারণার বিরুদ্ধে আরও দৃঢ় হয়ে উঠল।

"আমরা সঠিক পথে আছি," এক সঙ্গী বলল। "আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখব।"


শত্রুরা বুঝতে পারল, তাদের ফন্দি ব্যর্থ হয়েছে। তারা নতুন কৌশল নিল—হাসানকে সরাসরি আক্রমণ করার।

এক রাতে তারা গোপনে হাসানের অবস্থানের দিকে এগিয়ে এলো।

কিন্তু হাসান ও তার সঙ্গীরা প্রস্তুত ছিল। তারা দ্রুত নিজেদের রক্ষার ব্যবস্থা করল এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলল। একে একে শত্রুরা পিছু হটতে বাধ্য হলো।

হাসান ধীরে ধীরে বলল, "সত্যের পথ সহজ নয়, কিন্তু আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন।"

(৪০তম খণ্ড শেষ। পরবর্তী খণ্ডে জানা যাবে, হাসান ও তার সঙ্গীরা কীভাবে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে এবং সত্যের পথে এগিয়ে যাবে।)

পরীর ছোঁয়া (৩৯তম খণ্ড)

 

পরীর ছোঁয়া (৩৯তম খণ্ড)


হাসান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। বাইরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তিগুলোর চোখে বিদ্বেষের আগুন। বাতাস থমথমে হয়ে উঠেছে। "তুমি কি মনে করেছো, সত্যের পথে হাঁটবে আর আমরা কিছু বলবো না?" তাদের নেতা কঠিন কণ্ঠে বলল। মাহির শান্ত স্বরে বলল, "সত্যের পথে যারা চলে, তাদের রোধ করা সহজ নয়। সত্য নিজেই তার রক্ষার ব্যবস্থা করে।"
হাসান এবং তার সঙ্গীরা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তারা জানে যে সত্যের পথে চলতে গেলে বড় বড় বাধার সম্মুখীন হতে হবে, কিন্তু তারা প্রস্তুত।


হাসান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। বাইরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তিগুলোর চোখে বিদ্বেষের আগুন। বাতাস থমথমে হয়ে উঠেছে।


"তুমি কি মনে করেছো, সত্যের পথে হাঁটবে আর আমরা কিছু বলবো না?" তাদের নেতা কঠিন কণ্ঠে বলল।


হাসান শান্ত স্বরে বলল, "সত্যের পথে যারা চলে, তাদের রোধ করা সহজ নয়। সত্য নিজেই তার রক্ষার ব্যবস্থা করে।"


নেতা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল, "তোমার সাহস আছে, কিন্তু এই সাহস বেশিদিন টিকবে না। শীঘ্রই তুমি বুঝতে পারবে, এই সমাজের নিয়ম যারা ভাঙে, তাদের কী পরিণতি হয়।"


মাহির কোনো ভয় দেখাল না, বরং আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল, "আমার জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে। কারও ভয় দেখানোতে আমি পিছিয়ে যাব না।"


তাদের নেতা ক্রোধে ফুঁসে উঠল। "দেখা যাক, কতটুকু সহ্য করতে পারো!" বলে সে তার সঙ্গীদের ইঙ্গিত করল। মুহূর্তের মধ্যে তারা হাসানের দিকে এগিয়ে এলো।


মেয়েটি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তার চোখেও ভয় ছিল না। সে চিৎকার করে বলল, "আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন!"


হঠাৎই চারপাশের বাতাস যেন আরও ভারী হয়ে উঠল। এক অদ্ভুত শক্তি যেন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। হামলাকারীরা থমকে গেল। তাদের চোখে দ্বিধার ছাপ। যেন তারা কিছু অনুভব করছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না।


হাসান অনুভব করল, তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি নেমে এসেছে। সে চোখ বন্ধ করে মনে মনে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করল।


তখনই এক প্রবীণ ব্যক্তি হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ালেন। তাঁর চোখে ছিল প্রজ্ঞার আলো। তিনি ধীর কণ্ঠে বললেন, "সত্যের পথে যারা বাধা দেয়, তাদের পরিণতি কখনো ভালো হয় না। ফিরে যাও, নাহলে তোমাদের জন্যই বিপদ অপেক্ষা করছে।"


নেতা প্রথমে চমকে উঠল, তারপর হেসে উঠল, "তুমি আমাদের ভয় দেখাচ্ছো? এই বুড়ো মানুষটিকে দিয়ে আমাদের আটকাতে চাও?"


প্রবীণ ব্যক্তি শান্ত স্বরে বললেন, "আমি ভয় দেখাচ্ছি না, শুধু সতর্ক করছি। কারণ আল্লাহর ন্যায়বিচার অনিবার্য।"


হঠাৎই আশপাশে ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করল। আকাশ যেন রুদ্র হয়ে উঠল। হামলাকারীরা পেছাতে শুরু করল। তাদের নেতা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে তারা একে একে অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেল।


হাসান বিস্মিত হয়ে প্রবীণ ব্যক্তির দিকে তাকাল। "আপনি কে?"


প্রবীণ ব্যক্তি মৃদু হেসে বললেন, "আমি একজন পথিক, সত্যের পথের যাত্রী। তুমি শুধু মনে রেখো, যারা সত্যের পথে থাকে, আল্লাহ তাদের রক্ষা করেন। তোমার পথ কঠিন হবে, কিন্তু আল্লাহ তোমার সঙ্গেই থাকবেন।"


সেই রাতের ঘটনার পর, হাসান বুঝতে পারল যে সামনে আরও কঠিন পরীক্ষার সময় আসছে।


সে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি কি আমার সঙ্গে থাকবে? এই পথে চলতে হলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।"


মেয়েটি দৃঢ় কণ্ঠে বলল, "আমি জানি। এবং আমি প্রস্তুত। কারণ আমি জানি, এই পথই সত্যের পথ।"


হাসান মৃদু হাসল, "তাহলে আমরা একসঙ্গে চলব, যত বাধাই আসুক না কেন।"


পরদিন সকালে হাসান ও মেয়েটি নতুন পরিকল্পনা করল। তারা এখন আর শুধু আত্মরক্ষার কথা ভাববে না, বরং সত্য প্রচারের জন্য কাজ করবে। তারা একটি গোপন জায়গায় চলে গেল, যেখানে সত্যের অনুসারীরা একত্রিত হচ্ছিল।


তারা সবাই মিলে পরিকল্পনা করতে লাগল— কীভাবে সত্যের আলোকে আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়।


তাদের নতুন পথচলার শুরু হলো। এবং তারা জানত, এই পথে ঝড় আসবে, শত্রুরা বাধা দেবে, কিন্তু তারা প্রস্তুত। কারণ তারা জানত, সত্যের আলো কখনো নিভে না।


@@@

হাসান ও তার সঙ্গীরা সত্য প্রচারের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করল। তারা এমন একটি স্থান খুঁজে পেল, যেখানে তারা নিরাপদে মানুষের কাছে সত্যের বার্তা পৌঁছে দিতে পারবে। তবে, তাদের প্রতিপক্ষও বসে ছিল না। তারা হাসানের দলকে থামানোর জন্য নতুন ষড়যন্ত্র আঁটছিল।


একদিন সকালে, হাসান ও তার সঙ্গীরা যখন নতুন এলাকায় পৌঁছাল, তখন তারা অনুভব করল যে কেউ তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। মেয়েটি সাবধান করে বলল, "আমরা এখনো নিরাপদ নই, আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।"


হাসান মাথা ঝাঁকালো, "হ্যাঁ, আমরা জানি যে সত্যের পথে বাধা আসবেই। কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।"


ঠিক তখনই অদূরে একদল লোক তাদের দিকে এগিয়ে এল। তাদের চোখেমুখে বিদ্বেষের ছাপ স্পষ্ট। একজন চিৎকার করে বলল, "তোমরা এখানে কী করতে এসেছো? আমরা জানি, তোমরা সমাজের নিয়ম ভাঙতে চাও!"


হাসান শান্ত কণ্ঠে বলল, "আমরা সত্য প্রচার করতে এসেছি। আমরা কোনো অন্যায় করতে আসিনি।"


তাদের নেতা ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, "আমরা তোমাদের সহ্য করব না! তুমি যদি এখান থেকে চলে না যাও, তবে তোমার জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।"


মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল, "আমরা সত্যের পথ ছেড়ে যাব না। আমাদের জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তোমাদের ভয় দেখিয়ে আমাদের পথ থেকে সরানো যাবে না।"


তারা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। "তাহলে দেখিয়ে দিই, আমাদের ক্ষমতা কতটুকু!"


ঠিক তখনই, দূর থেকে প্রবীণ ব্যক্তিটি এসে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, "অন্যায়ের শক্তি বেশিদিন টিকে না। তোমরা সত্যের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে না।"


এই কথা শুনে শত্রুরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। মুহূর্তের জন্য তারা থমকে গেল।


হাসান ও তার সঙ্গীরা এই সুযোগে আরও মানুষের মধ্যে সত্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে লাগল। ধীরে ধীরে তাদের অনুসারী বাড়তে থাকল। কিন্তু শত্রুরা চুপ করে বসে থাকবে না, তারা আরও বড় পরিকল্পনা করছিল।


হাসান জানত, সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। কিন্তু সে প্রস্তুত ছিল। সে জানত, সত্যের পথে যে-ই চলে, তাকে ধৈর্য ধারণ করতেই হবে।


(৩৯তম খণ্ড শেষ। পরবর্তী খণ্ডে জানা যাবে, মাহির ও তার সঙ্গীরা কীভাবে শত্রুদের নতুন চক্রান্তের মোকাবিলা করবে।)