GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকতা, যুক্তি ও তাওহিদ: এক নাস্তিকের জিজ্ঞাসা ও আলেমের জবাব (খণ্ড ৮)

নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৮ (১ম অংশ)



আলো ও অন্ধকারের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি ও একটি ইসলামী কিতাব"
নাস্তিকের চিন্তা ও ইসলামের জবাব—আলো ও যুক্তির পথে ফিরে আসার গল্প""


“আল্লাহ কোথায়? বিজ্ঞান কি আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করে?”


আলমাছ (নাস্তিক):

“ভাই, আপনি অনেক কিছু বললেন। এখন একটা ব‍্যাপার পরিষ্কার করে বলুন—

আল্লাহ কোথায়? কখনো দেখিনি, ছুঁয়ে দেখিনি।

আমরা বিজ্ঞানের যুগে আছি, বিজ্ঞান কি প্রমাণ করেছে যে আল্লাহ আছেন?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (হাসিমুখে):

“তুমি বাতাসকে দেখো? ছুঁতে পারো?”

আলমাছ: “না, কিন্তু অনুভব করি।”

শায়খ: “তাই তো! তুমি অনুভব করো, তার প্রভাব দেখো।

তেমনই আল্লাহকে দেখা যায় না, কিন্তু তাঁর অস্তিত্বের প্রভাব মহাবিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে।”


প্রশ্ন:

“বিজ্ঞান কি আল্লাহকে প্রমাণ করে?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:

“বিজ্ঞান বলে—এই মহাবিশ্ব হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি।

কিছু না কিছু চূড়ান্ত শক্তি, পরিপূর্ণ জ্ঞানসম্পন্ন সত্তা এটা সৃষ্টি করেছে।

সেই সত্তাই ‘আল্লাহ’।

এটাকে বলে: Argument from Design (নকশা থেকে স্রষ্টার প্রমাণ)।”


একটি বৈজ্ঞানিক যুক্তি:


Watchmaker Theory —

একটা ঘড়ি দেখে যেমন বোঝা যায় এটা নিজে নিজে তৈরি হয়নি,

তেমনি সূর্য-চন্দ্র-গ্রহ-নক্ষত্র, মানবদেহের জটিলতা ইত্যাদিও প্রমাণ করে

এই সবের একটি সুনিপুণ পরিকল্পনাকারী আছেন।


আলমাছ (সরাসরি):

“তবে তো বিজ্ঞান আল্লাহর পক্ষে সাক্ষী দিচ্ছে?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (হেসে):

“বিজ্ঞান আল্লাহর অস্তিত্বের বিরুদ্ধে না, বরং পক্ষে—

যদি নিরপেক্ষভাবে ভাবো।”


কুরআনের আয়াত:


إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ

“নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের পরিবর্তনে

বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯০)


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:

“এই মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা তোমাকে বলে, ‘আমরা এমনিতেই আসিনি।’

যদি তুমি চোখ খোলো, তুমি আল্লাহকে দেখতে না পেলেও—

তাঁর নিদর্শন দেখতে পাবে।”


(চলবে… খণ্ড ১০ (২য় অংশ): ‘নাস্তিকতার দর্শন ও আত্মমোহের প্রতিক্রিয়া’)


@@@

নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৮ (২য় অংশ)


“নাস্তিকতা কি আসলে বুদ্ধিবৃত্তিক? নাকি এক ধোঁকা?”


আলমাছ (নাস্তিক):

“আমরা নাস্তিক হয়েছি জ্ঞানের কারণে। চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি না।

সন্দেহ, প্রশ্ন, খোঁজ—এটাই তো বিজ্ঞানের পথ!”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (ধীর স্বরে):

“সন্দেহ খারাপ নয়। প্রশ্ন করা অপরাধ নয়।

কিন্তু এক সময় সন্দেহকে যুক্তি দিয়ে জবাব না দিলে

সন্দেহ হয়ে যায় আত্মম্ভরিতা আর গোঁজামিল।”


তুমি কি সত্যিই জানো না, নাকি জানতেও চাও না?


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:

“একজন সত্যিকারের অনুসন্ধানী যখন আল্লাহর অস্তিত্ব খোঁজে—

তাকে রাস্তা দেখান হয়।

কিন্তু যারা প্রশ্নের পিছনে ঢাল বানায়, কখনও সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না—

তাদের নিয়তেই সমস্যা।”


আলমাছের চুপ হয়ে যাওয়া...


শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের শান্ত স্বরে উচ্চারিত যুক্তিগুলো যেন আলমাছের ভেতরে কোনো কিছু নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল।

তার চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ। যেন কিছু ভাবছে, কিন্তু ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।

সে কি সত্যিই জানতে চায়?


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আবার বললেন:

“তুমি আলো খুঁজছো না। তুমি অন্ধকারে নিজের আরাম খুঁজে নিয়েছো।

আলো আসলে চোখে লাগে, তাই চোখ বন্ধ করে রেখেছো।”


হাদীসের কথা:


"যে ব্যক্তি সত্যের সন্ধানে এক কদম এগোয়, আল্লাহ তার কাছে আসেন আরও বেশি কদমে।”

(সহীহ মুসলিম)


আলমাছ:

“আপনি কি বলতে চান, আমি নিজের যুক্তিকেই ভুল প্রমাণ করছি?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (হেসে):

“না, আমি বলছি—তুমি এখনো আলোর দরজায় দাঁড়িয়ে আছো।

ভেতরে ঢুকবে কিনা, সেটা তোমার সিদ্ধান্ত।”


(চলবে… খণ্ড ১১: “নাস্তিকতা থেকে তাওহিদের পথে—আলো ও অন্ধকারের সন্ধিক্ষণে”)


লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – (খণ্ড ৭)

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৭ (১ম অংশ)

তওবা ও আল্লাহর দয়া নিয়ে নাস্তিক ও আলেমের যুক্তিভিত্তিক আলোচনা
তওবা ও আল্লাহর দয়ার ব্যাখ্যায় এক চমৎকার ইসলামী যুক্তি ও আত্মানুসন্ধানের গল্প


“আল্লাহ যদি দয়ালু হন, তবে জাহান্নাম কেন?”


বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় কফি শপের জানালায় বসে আলমাছ আবার মুখ খুলল।


আলমাছ:

“আপনার যুক্তিগুলো গতকাল মাথায় ঘুরেছে সারারাত।

তবে একটা প্রশ্ন আমার বুক পুড়িয়ে দিচ্ছে…”


শায়খ:

“বলুন, দ্বিধা করবেন না।”


আলমাছ:

“আপনারা বলেন, আল্লাহ দয়ালু, করুণাময়, আর সব ক্ষমাশীল।

তাহলে তিনি মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে কেন দিবেন?

দয়ালু কেউ কি আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মাথা নিচু করলেন। কপালে চিন্তার রেখা।

তারপর ধীরে বললেন—


“প্রশ্নটা সহজ না, কিন্তু উত্তরটা গভীর ও সুন্দর।

চলো ধাপে ধাপে বুঝি—

প্রথমেই ভাবো, তুমি যদি দয়ালু হও, তবে কি কখনও কাউকে শাস্তি দাও না?”


আলমাছ:

“শাস্তি দিলে তো দয়া থাকল না।”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:

“তাহলে তুমি যদি শিশু নির্যাতনকারীকে আজীবন কারাগারে দাও—তবে কি তুমি নিষ্ঠুর?

না কি এই শাস্তিটাই মানবতার প্রতি দয়া?”


আলমাছ চুপ। শায়খ আবার বললেন—

“আল্লাহর দয়া মানে সব অন্যায় ছেড়ে দেওয়া না।

আল্লাহর দয়া মানে, তিনি কাউকে না জানিয়ে, না বুঝিয়ে শাস্তি দেন না।

তিনি কিতাব পাঠিয়েছেন, নবী পাঠিয়েছেন, একাধিক সুযোগ দিয়েছেন।

তারপরও যদি কেউ অহংকারে সত্যকে অস্বীকার করে—তাকে শাস্তি দেওয়া ন্যায়বিচারের দাবী।”


একটি আয়াত:


وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا

“আমি কখনো কোনো জাতিকে শাস্তি দিই না, যতক্ষণ না তাদের কাছে রাসূল পাঠাই।”

(সূরা আল-ইসরা, আয়াত ১৫)


শায়খ বললেন—

“এই আয়াতই আল্লাহর দয়ার প্রমাণ।

তিনি কাউকে শাস্তি দেন না, যতক্ষণ না সে বারবার সুযোগ পেয়েও অস্বীকার করে।”


আলমাছ আবার প্রশ্ন করল—

“তাহলে চিরস্থায়ী শাস্তিটা কি একটু বেশি না?”


শায়খ হাসলেন:

“এই প্রশ্নটাই দ্বিতীয় ধাপ… চল আমরা একটু ব্যাখ্যায় যাই পরের অংশে।”


(চলবে… খণ্ড ৭, দ্বিতীয় অংশে: ‘চিরস্থায়ী শাস্তির যৌক্তিকতা ও সত্যিকার দয়ালু রূপ’)



নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৭ (২য় অংশ)

“চিরস্থায়ী শাস্তির যৌক্তিকতা ও দয়ার পরিপূর্ণ রূপ”


আলমাছ:
“শাস্তি দেওয়া মানে অপরাধের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ঠিক আছে।
কিন্তু আমি তো বুঝতেই পারছি না—এই দুনিয়ার ৬০–৭০ বছরের পাপের জন্য চিরকাল জাহান্নাম!
এটুকু সময়ের ভুলের জন্য অনন্তকাল আগুন? এটা কি ন্যায়বিচার?”

শায়খ:
“চমৎকার প্রশ্ন। এবার যুক্তি দিয়ে ভাবো—
আচরণের শাস্তি সময় নয়, অপরাধের গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারিত হয়।”

আলমাছ ভ্রু কুঁচকাল। শায়খ ব্যাখ্যা করলেন—
“ধরো, তুমি এক সাধারণ পিয়নকে চড় মারলে, হয়তো তেমন কিছু হবে না।
কিন্তু যদি তুমি দেশের প্রধান বিচারপতিকে প্রকাশ্যে চড় মারো, তখন কি শাস্তি এক হবে?
অপরাধ একই—চড় মারা। কিন্তু অবস্থান ও মর্যাদার কারণে তার গুরুত্ব অনেক বেশি হয়।”

আলমাছ ধীরে মাথা নেড়ে বলল:
“তাহলে আপনি বলতে চান, আল্লাহর মর্যাদা যেহেতু সর্বোচ্চ, তাই তাঁর সঙ্গে বিদ্রোহ করলে শাস্তিও সর্বোচ্চ?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন। বললেন:
“ঠিক তাই। এই বিদ্রোহ, এই অবজ্ঞা, এই অহংকার—এটাই চিরস্থায়ী জাহান্নামের কারণ।
কেউ যদি আল্লাহর অস্তিত্ব বুঝেও অস্বীকার করে, তাঁর বিধান নিয়ে ঠাট্টা করে,
তাহলে সে শুধু একটা ভুল নয়, চরম এক বিদ্রোহ করেছে।”


একটি আয়াত:

إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَمَاتُواْ وَهُمْ كُفَّارٌ أُو۟لَـٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ ٱللَّهِ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ وَٱلنَّاسِ أَجْمَعِينَ - خَـٰلِدِينَ فِيهَا
“যারা কুফরী করল এবং কাফির অবস্থায় মারা গেল, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবজাতির লানত রয়েছে। তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।”
(সূরা বাকারা, আয়াত ১৬১–১৬২)



শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“তবে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে, না বুঝে কোনো ভুল করে ফেলে—
তাকে আল্লাহ ক্ষমা করেন, দয়া করেন, এমনকি সামান্য তওবাতেই মাফ করে দেন।
তোমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে তিনি নবী পাঠিয়েছেন, কিতাব দিয়েছেন,
আর শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন।”

আলমাছ:
“তাহলে সত্যিকার অর্থে জাহান্নাম কার জন্য?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“সেইসব অহংকারী, ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিদ্রোহীদের জন্য—
যারা আল্লাহর আলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ইচ্ছাকৃতভাবে, এবং দুনিয়াকে চিরস্থায়ী মনে করে।”


(চলবে… খণ্ড ৭, তৃতীয় অংশে: ‘তওবা ও আল্লাহর দয়ার সীমানা’)


নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৭ (৩য় অংশ)

“তওবা ও আল্লাহর দয়ার সীমানা”


আলমাছ:
“আপনার কথাগুলো শুনে মনে হলো, আল্লাহ অনেক দয়ালু।
তবে একটা প্রশ্ন—তাঁর দয়ার সীমা কোথায়? সব ভুল কি মাফ হয়?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“তুমিই বলো, মা তার সন্তানকে কতবার মাফ করে?
সন্তান যত ভুল করুক, মা কি তাকে চিরতরে ত্যাগ করে?”

আলমাছ:
“না, মা কখনোই শেষ পর্যন্ত ছাড়ে না।”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক শান্ত কণ্ঠে বললেন:
“তাহলে আল্লাহ, যিনি তোমার মা থেকেও বেশি দয়ালু,
তাঁর কাছে তওবা করলে তিনি কীভাবে ফিরিয়ে দেবেন?”


আল-কুরআনের ঘোষণা:

قُلْ يَـٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ ۚ
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে,
তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।”
(সূরা যুমার, আয়াত ৫৩)


শায়খ:
“এই আয়াত হচ্ছে তওবাকারীর জন্য সবচেয়ে আনন্দের ঘোষণা।
তুমি যদি সত্যিকারের অনুতপ্ত হও, আল্লাহ শুধু তোমাকে মাফই করবেন না—
তোমার গোনাহগুলোকে নেকিতে রূপান্তর করে দেবেন।”


আরও একটি প্রমাণ:

إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلًۭا صَـٰلِحًۭا فَأُو۟لَـٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمْ حَسَنَـٰتٍ
“যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে—
আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলোকে ভালো কাজে পরিণত করে দেবেন।”
(সূরা ফুরকান, আয়াত ৭০)


আলমাছ:
“তাহলে একজন কুফরি করা ব্যক্তি যদি মৃত্যুর আগেই সত্যিকার তওবা করে নেয়,
তবে কি সেও জান্নাতে যেতে পারে?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“হ্যাঁ, যদি তা হয় আন্তরিকভাবে, তবে তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
তবে মৃত্যুর পর আর সুযোগ নেই—সেটাই শেষ সীমা।”


আলমাছ চোখ নামিয়ে ফেলল।
তার ভেতরে কাঁপন। চিন্তার গভীরে সে ডুবে গেল।
তাওবা... মাফ... জান্নাত—সবকিছু এখন বাস্তব মনে হচ্ছে তার কাছে।


---

(চলবে… খণ্ড ৮: আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তি)

লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – (খণ্ড ৬)

 

নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৬ (১ম অংশ)

পরকাল সম্পর্কে ইসলামিক জবাব, যুক্তিভিত্তিক আলোচনা
আলমাছ প্রশ্ন করেছিল—“পরকাল কিভাবে বাস্তব?” শায়খ আব্দুর রাজ্জাক তার মনোজ্ঞ জবাবে তুলে ধরেছেন পরকালের সত্যতা, ন্যায়বিচার, ও আত্মার প্রয়োজনীয়তা।


“পরকাল আছে, সেটা আপনি কীভাবে প্রমাণ করবেন?”


আলমাছ এবার একটু ব্যঙ্গ মিশিয়ে বলল—

“শায়খ, একটা প্রশ্ন ছিল। আপনি সব সময় বলছেন পরকাল, কিয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম...

কিন্তু এগুলোর তো কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই!

আপনি কীভাবে বিশ্বাস করেন এমন কিছু, যা কেউ কখনো দেখেনি?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক তার সাদা দাঁড়িগুলোতে হাত বুলিয়ে হাসলেন।

তার চোখে মমতা, কিন্তু কথায় দৃঢ়তা—


“তুমি বলেছ—দেখিনি, তাই বিশ্বাস করি না।

তবে বলো তো, তুমি কি কখনো তোমার দাদার দাদাকে দেখেছ?”


আলমাছ একটু থমকে গেল, তারপর বলল—

“না, দেখিনি। তবে তার অস্তিত্ব ছিল—

কারণ আমি আছি।”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—

“ঠিক তাই! তুমি দেখোনি, কিন্তু প্রমাণ তোমার মধ্যেই রয়েছে।

এভাবে বহু জিনিস আছে, যা আমরা দেখিনি—

তবুও স্বীকার করি, কারণ তার চিহ্ন, তার নিদর্শন রয়ে গেছে।”


অদৃশ্য জগৎ ও বাস্তবতা: বিজ্ঞান কি সব কিছু বুঝে ফেলে?


“বলো তো আলমাছ, মনের ব্যথা তুমি কখনো মাপো?

ভালোবাসা কি কোনো পরীক্ষাগারে ধরা পড়ে?”


আলমাছ একটু গম্ভীর হয়ে বলল—

“না, তবে সেটা অনুভব করি।”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—

“তুমি যেটা অনুভব করো, সেটা বাস্তব নয় কি?

আচ্ছা, তাহলে মৃত্যুর পরের জীবন যদি শুধু অনুভবেই ধরা দেয়—

তাহলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি ঠিক?”


আলমাছ এবার চুপচাপ।

তার চোখে যেন কৌতূহল—

“আচ্ছা, তাহলে আপনি বলেন, পরকালের অস্তিত্বের পক্ষে কী প্রমাণ আছে?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—

“সেটাই বলবো। কিন্তু তার আগে বলো, তুমি কি বিশ্বাস করো—

এই পৃথিবী একদিন শেষ হবে?”


আলমাছ বলল—

“হ্যাঁ, এটা তো বিজ্ঞানেও বলা হয়েছে। একদিন সূর্য নিভে যাবে,

জীবন ধ্বংস হবে।”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—

“তাহলে মৃত্যুর পর কি নিঃশেষ, না কি নতুন এক শুরু?

এই প্রশ্নের উত্তর না পেলে তোমার অস্তিত্বের অর্থই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।”


(চলবে... ২য় অংশে আসছে পরকালের প্রমাণ, কোরআনের যুক্তি ও জবাব)


নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৬ (২য় অংশ)


“পরকাল শুধু বিশ্বাস না, এটা এক কঠিন বাস্তবতা”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার নিজের ছোট ব্যাগ থেকে একটা ছোট কুরআন বের করলেন।

তিনি পৃষ্ঠা উল্টে বললেন—


“আল্লাহ তাআলা বলেন—

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ

‘তোমরা কি মনে করো, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি শুধু খেলা-তামাশার জন্য?

এবং তোমরা আমার দিকে ফিরে যাবে না?’”

(সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত ১১৫)


আলমাছ এবার চুপ। শায়খ কথা চালিয়ে গেলেন—


“এই আয়াতটা কেবল ভয় দেখানোর জন্য না।

এটা একটা প্রশ্ন—যার উত্তর দিতে হয় আত্মার গভীর থেকে।

এই জীবন যদি শুধু খাওয়া, ঘুম, চাকরি—তাহলে তা পশুর জীবন থেকে আলাদা কী?”


আলমাছ ধীরে ধীরে বলল—

“তা ঠিক, কিন্তু পরকালকে কিভাবে বাস্তব বলবেন?”


পরকালের যুক্তি – আত্মা, ন্যায়বিচার ও স্রষ্টার উদ্দেশ্য


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—

“তুমি কি বিশ্বাস করো যে, এই পৃথিবীতে সব মানুষ সমান ন্যায়বিচার পায়?”


আলমাছ বলল—

“না, বরং জালিমরা অনেক সময় পার পেয়ে যায়।”


“তবে কি তুমি বিশ্বাস করো—একজন শিশু ধর্ষক, একজন গণহত্যাকারী,

সব পাপ করে মরে গেলেও সে চিরতরে শেষ হয়ে যাবে?”


আলমাছ এবার অস্বস্তিতে পড়ে গেল।


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—

“এই অন্যায়কে যদি কেউ শেষবারের মতো বিচার না করে,

তাহলে তুমি বলো—এই পৃথিবীর স্রষ্টা কি আদৌ ন্যায়বান?”


আলমাছ চুপ করে আছে।


শেষ কথায় শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—


“তুমি বলেছিলে, ‘পরকাল কিভাবে বাস্তব?’

আমি বলি—যে ব্যক্তি বিচার চায়, যে ন্যায়ের স্বপ্ন দেখে,

যে ভালো কাজ করে প্রতিদান চায়—

তার জন্য পরকাল শুধু বিশ্বাস নয়,

এটা তার আত্মার প্রয়োজন, এটা বাস্তবতা।”


আলমাছ বলল—

“আপনার কথাগুলো আমার মনে লাগছে…

তবে আমাকে সময় দিন, আমি ভাবতে চাই।”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন।

“ইসলাম জোর করে বিশ্বাস করে না, সে আলো দেখায়।

তুমি দেখো, বোঝো, তারপর হৃদয়ে স্থান দাও।”



(চলবে... খণ্ড ৭-এ থাকছে নাস্তিক আলমাছের নতুন প্রশ্ন: “আল্লাহ দয়ালু হলে জাহান্নাম কেন?”)


লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব


রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

ধর্ম দিয়ে কি দেশ চলে? — এক যুক্তিপূর্ণ জবাব (খণ্ড-৫)

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – ৫ম খণ্ড (১ম অংশ)

ধর্ম দিয়ে দেশ চলে কি না — ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ

এক নাস্তিকের প্রশ্ন ও এক আলেমের শান্তিপূর্ণ জবাবে ইসলামি রাষ্ট্রনীতি




“ধর্ম দিয়ে কি দেশ চলে?” এক মারাত্মক প্রশ্নের বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব।


সন্ধ্যার আলোয় ঢাকা পড়া আকাশের নিচে এবার নতুন একজন উঠল প্রশ্নের আসরে। তার নাম আলমাছ—নিজেকে সমাজতান্ত্রিক ও যুক্তিবাদী দাবি করে।


সে শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের সামনে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলল


“শায়খ, আমার প্রশ্ন হলো—ধর্ম দিয়ে কি কখনো দেশ চলে?

আপনারা সব সময় বলেন, ‘ইসলামী রাষ্ট্র’, ‘শরিয়াহ আইন’।

কিন্তু আজকের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তো ধর্মনিরপেক্ষতায় দাঁড়িয়ে।

ধর্ম তো ব্যক্তি জীবন বিষয়, রাষ্ট্রের নয়!”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক ধীরে মাথা নাড়লেন। মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন—


“আলমাছ, এই প্রশ্নটা ছোট নয়—বড়ই বিষময়।

তবে উত্তরটাও বড়। শুনো ধীরে ধীরে।”


শায়খের প্রথম কথা: ধর্মহীন নৈতিকতা কি টিকতে পারে?


“তুমি বলো ধর্ম ব্যক্তি জীবন বিষয়—ঠিক আছে।

তবে বলো তো, একজন রাষ্ট্রনায়ক যদি বলে, ‘সত্য বলা জরুরি নয়’,

তাহলে কি রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার থাকবে?

একজন অর্থমন্ত্রী যদি মুনাফা আর সুদের পার্থক্য না বোঝে,

তাহলে অর্থনীতির নামে ধোঁকা চলবে না?”


আলমাছ বলল—

“তাহলে আপনি বলছেন ধর্ম ছাড়া দেশ চলে না?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হেসে বললেন—


“আমি বলছি—নৈতিকতা ছাড়া দেশ চলে না, আর সেই নৈতিকতার সর্বোচ্চ ভিত্তি যদি কোথাও থাকে,

তা হলো আল্লাহর দেয়া ধর্ম।”


ইসলামী রাষ্ট্র মানে কি জবরদস্তি?


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আবার বললেন—


“আলমাছ, ইসলামি রাষ্ট্র মানে হাতিয়ার দিয়ে মানুষকে মুসলিম বানানো নয়।

বরং ইসলামি রাষ্ট্র মানে—ন্যায়, নিরাপত্তা, করুণার ছায়া।

রাসূল সা. এর মদিনা রাষ্ট্রে ইহুদি, খ্রিস্টান, এমনকি মুনাফিকরাও ছিল—তাদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।

তবে রাষ্ট্রের আইন ইসলামি ছিল—সবার জন্য ন্যায়ের নিশ্চয়তা।”


ধর্মনিরপেক্ষতা কি সত্যিই নিরপেক্ষ?


“তুমি বলো, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ মানে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা।

তবে আমি বলি—যেখানে ‘ধর্মকে দূরে রাখো’ বলা হয়,

সেখানে আসলে ঈমানদারদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়,

আর নাস্তিক্যবাদ স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়।

এই কি নিরপেক্ষতা?”


আলমাছ এবার একটু চুপ হয়ে যায়।


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক তখন বললেন—


“ধর্ম দিয়ে দেশ চললে, সেই দেশ হয় ইনসাফভিত্তিক।

ধর্ম ছাড়া দেশ চললে, সেটা হয় স্বার্থ আর শক্তির খেলা।”


(চলবে…)



নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – ৫ম খণ্ড (২য় অংশ)


“ধর্ম দিয়ে কি দেশ চলে?”—প্রশ্নের ধারালো জবাব (শেষাংশ)


আলমাছ এবার একটু নিচু স্বরে বলল

“আপনি যেটা বললেন, সেটা তো আদর্শ কথা।

কিন্তু বাস্তবে তো ইসলামী রাষ্ট্র মানেই কট্টরতা, শাস্তি আর স্বাধীনতা হরণ।

তালেবান, আইএস এসব তো ইসলামি রাষ্ট্র দাবি করে, তাই না?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার গম্ভীর কণ্ঠে বললেন—


“এই প্রশ্ন আজকের যুবসমাজের মনে সবচেয়ে বেশি গাঁথা—তাই এই উত্তরের গভীরতা বোঝা জরুরি।”


ইসলামি রাষ্ট্র বনাম সন্ত্রাসবাদ: তুলনা নয়, বিভ্রান্তি


“দেখো আলমাছ, যারা রাসূল সা. এর নামে মানুষ হত্যা করে,

তারা রাসূল সা. এর শিক্ষাকে একবারও ভালোভাবে বোঝেনি।

তালেবান বা আইএস নয়—

আমরা যখন বলি ইসলামি রাষ্ট্র, আমরা বুঝি মদিনার মতো শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র,

যেখানে অমুসলিম নাগরিকরাও নিরাপদে বাস করে।”


আলমাছ বলল—

“তবে কি আপনি বলছেন ইসলামি রাষ্ট্র গণতন্ত্রের বিকল্প?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—


“গণতন্ত্র যদি মানে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মত—তাহলে সত্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু ইসলামী শাসন মানে ন্যায়ের শাসন—যেখানে সংখ্যার বদলে সত্য নির্ধারক।

যেখানে শাসকও জবাবদিহিতার আওতায়।

ইসলামি রাষ্ট্র মানে—ক্ষমতা নয়, খিদমত।”


কোরআনের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও আইন


“কোরআনে আল্লাহ বলেন—

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمۡ بِمَا أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَـٰفِرُونَ

‘যে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার করে না, তারা কাফের।’

(সূরা মায়িদা: ৪৪)


এই আয়াত কোনো দল বা দেশের হাতে নয়, বরং আমাদের কাছে এক সাফ বার্তা—

আল্লাহর বিধানই চূড়ান্ত, আর সেই বিধানের আলোয় রাষ্ট্র পরিচালিত হলে তবেই আসবে ইনসাফ।”


শেষ কথায় আস্থা ও প্রশ্ন


আলমাছ এবার চোখ নামিয়ে বলল—

“শায়খ, আজ আপনি আমার ভেতরের বহু ভুল ধারণা ভেঙে দিলেন।

তবে আমি এখনো ভাবছি—মানুষের তৈরি আইন আর আল্লাহর আইন কি একসঙ্গে চলতে পারে না?”


শায়খ মৃদু হেসে বললেন—

“আল্লাহর আইন সর্বোচ্চ, মানুষের আইন যদি তা বিরোধী না হয়, তাহলে তারও স্থান আছে।

তবে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব থাকবে কোরআনের হাতে—এই বিশ্বাস থেকেই তৈরি হয় ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র।”


আলমাছের চোখে যেন নতুন এক আলো—

ভেতর থেকে সে বুঝে যাচ্ছে—ধর্ম দিয়ে দেশ চলে, যদি সেই ধর্ম হয় সত্য আর মানবতার প্রতীক—ইসলাম।



(পরবর্তী খণ্ডে আসবে—আত্মা, পরকাল ও বিচার দিবস নিয়ে যুক্তিবাদীদের চ্যালেঞ্জ এবং জবাব)



লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।