নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৮ (১ম অংশ)
![]() | |
নাস্তিকের চিন্তা ও ইসলামের জবাব—আলো ও যুক্তির পথে ফিরে আসার গল্প" | " |
“আল্লাহ কোথায়? বিজ্ঞান কি আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করে?”
আলমাছ (নাস্তিক):
“ভাই, আপনি অনেক কিছু বললেন। এখন একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে বলুন—
আল্লাহ কোথায়? কখনো দেখিনি, ছুঁয়ে দেখিনি।
আমরা বিজ্ঞানের যুগে আছি, বিজ্ঞান কি প্রমাণ করেছে যে আল্লাহ আছেন?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (হাসিমুখে):
“তুমি বাতাসকে দেখো? ছুঁতে পারো?”
আলমাছ: “না, কিন্তু অনুভব করি।”
শায়খ: “তাই তো! তুমি অনুভব করো, তার প্রভাব দেখো।
তেমনই আল্লাহকে দেখা যায় না, কিন্তু তাঁর অস্তিত্বের প্রভাব মহাবিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে।”
প্রশ্ন:
“বিজ্ঞান কি আল্লাহকে প্রমাণ করে?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“বিজ্ঞান বলে—এই মহাবিশ্ব হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি।
কিছু না কিছু চূড়ান্ত শক্তি, পরিপূর্ণ জ্ঞানসম্পন্ন সত্তা এটা সৃষ্টি করেছে।
সেই সত্তাই ‘আল্লাহ’।
এটাকে বলে: Argument from Design (নকশা থেকে স্রষ্টার প্রমাণ)।”
একটি বৈজ্ঞানিক যুক্তি:
Watchmaker Theory —
একটা ঘড়ি দেখে যেমন বোঝা যায় এটা নিজে নিজে তৈরি হয়নি,
তেমনি সূর্য-চন্দ্র-গ্রহ-নক্ষত্র, মানবদেহের জটিলতা ইত্যাদিও প্রমাণ করে
এই সবের একটি সুনিপুণ পরিকল্পনাকারী আছেন।
আলমাছ (সরাসরি):
“তবে তো বিজ্ঞান আল্লাহর পক্ষে সাক্ষী দিচ্ছে?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (হেসে):
“বিজ্ঞান আল্লাহর অস্তিত্বের বিরুদ্ধে না, বরং পক্ষে—
যদি নিরপেক্ষভাবে ভাবো।”
কুরআনের আয়াত:
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ
“নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের পরিবর্তনে
বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।”
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯০)
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“এই মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা তোমাকে বলে, ‘আমরা এমনিতেই আসিনি।’
যদি তুমি চোখ খোলো, তুমি আল্লাহকে দেখতে না পেলেও—
তাঁর নিদর্শন দেখতে পাবে।”
(চলবে… খণ্ড ১০ (২য় অংশ): ‘নাস্তিকতার দর্শন ও আত্মমোহের প্রতিক্রিয়া’)
@@@
নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৮ (২য় অংশ)
“নাস্তিকতা কি আসলে বুদ্ধিবৃত্তিক? নাকি এক ধোঁকা?”
আলমাছ (নাস্তিক):
“আমরা নাস্তিক হয়েছি জ্ঞানের কারণে। চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি না।
সন্দেহ, প্রশ্ন, খোঁজ—এটাই তো বিজ্ঞানের পথ!”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (ধীর স্বরে):
“সন্দেহ খারাপ নয়। প্রশ্ন করা অপরাধ নয়।
কিন্তু এক সময় সন্দেহকে যুক্তি দিয়ে জবাব না দিলে
সন্দেহ হয়ে যায় আত্মম্ভরিতা আর গোঁজামিল।”
তুমি কি সত্যিই জানো না, নাকি জানতেও চাও না?
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“একজন সত্যিকারের অনুসন্ধানী যখন আল্লাহর অস্তিত্ব খোঁজে—
তাকে রাস্তা দেখান হয়।
কিন্তু যারা প্রশ্নের পিছনে ঢাল বানায়, কখনও সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না—
তাদের নিয়তেই সমস্যা।”
আলমাছের চুপ হয়ে যাওয়া...
শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের শান্ত স্বরে উচ্চারিত যুক্তিগুলো যেন আলমাছের ভেতরে কোনো কিছু নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল।
তার চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ। যেন কিছু ভাবছে, কিন্তু ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
সে কি সত্যিই জানতে চায়?
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আবার বললেন:
“তুমি আলো খুঁজছো না। তুমি অন্ধকারে নিজের আরাম খুঁজে নিয়েছো।
আলো আসলে চোখে লাগে, তাই চোখ বন্ধ করে রেখেছো।”
হাদীসের কথা:
"যে ব্যক্তি সত্যের সন্ধানে এক কদম এগোয়, আল্লাহ তার কাছে আসেন আরও বেশি কদমে।”
(সহীহ মুসলিম)
আলমাছ:
“আপনি কি বলতে চান, আমি নিজের যুক্তিকেই ভুল প্রমাণ করছি?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (হেসে):
“না, আমি বলছি—তুমি এখনো আলোর দরজায় দাঁড়িয়ে আছো।
ভেতরে ঢুকবে কিনা, সেটা তোমার সিদ্ধান্ত।”
(চলবে… খণ্ড ১১: “নাস্তিকতা থেকে তাওহিদের পথে—আলো ও অন্ধকারের সন্ধিক্ষণে”)