নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৯ (১ম অংশ)
 |
যেখানে যুক্তি থেমে যায়, সেখানেই ঈমানের আলো জেগে ওঠে। |
“তাওহিদ কি শুধু বিশ্বাস, না কি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা?”
আলমাছ এবার চুপচাপ। মুখে কোনো প্রশ্ন নেই, কিন্তু চোখে লুকানো দ্বন্দ্ব।
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বুঝলেন—এবার সময় এসেছে ‘তাওহিদের’ গভীর ব্যাখ্যার।
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (শুরু করলেন):
"আলমাছ, তুমি তো বলেছিলে—'আমি বিজ্ঞান মানি, ধর্ম না।'
তাওহিদ কি তুমি শুধু বিশ্বাস বলেই উড়িয়ে দাও, নাকি যুক্তির জায়গা দিয়েও দেখেছো কখনো?"
আলমাছ (কিছুটা কণ্ঠ নিচু করে):
“তাওহিদ মানে তো, এক আল্লাহর বিশ্বাস। কিন্তু এটা তো কল্পনা। প্রমাণ কোথায়?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (হেসে):
“চলো তবে বিজ্ঞান দিয়েই বুঝি।”
তাওহিদ ও বিজ্ঞান – এক বিস্ময়কর সাদৃশ্য
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বলেন:
“বিজ্ঞানের প্রতিটি শৃঙ্খলা একটি মূল নিয়ম মানে—একক সূত্র, একক সিস্টেম, একক সৃষ্টিকর্তা।
ফিজিক্সে যেমন 'Law of Conservation',
জেনেটিক্সে যেমন 'একক কোড'।
এই কসমিক ইউনিফর্মিটি প্রমাণ করে, গোটা বিশ্ব কোনো এলোমেলো বিস্ফোরণে নয়,
বরং একক সত্তার সুপরিকল্পনায় গঠিত।”
কুরআনের যুক্তি ও বিজ্ঞানের সমান্তরালতা
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আবৃত্তি করলেন:
أَفِي ٱللَّهِ شَكٌّ فَاطِرِ ٱلسَّمَـٰوَٟتِ وَٱلْأَرْضِ؟
“আল্লাহ সম্পর্কে কি কোনো সন্দেহ আছে? যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা?”
(সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ১০)
আলমাছ এবার চুপ...
সে যেন শুনছে, ভাবছে, আবারো এক অজানা আলো তার ভেতরে ধাক্কা দিচ্ছে।
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“তাওহিদ কেবল এক বিশ্বাস নয়, বরং বিজ্ঞান ও যুক্তির পরম শেষ ঠিকানা—
যেখানে প্রতিটি সৃষ্টির সূচনা এক মহান পরিকল্পনার ছোঁয়ায়।”
(চলবে… খণ্ড ৯: দ্বিতীয় অংশে…)
নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৯ (২য় অংশ)
“যেখানে বিজ্ঞান থেমে যায়, সেখানেই আল্লাহর অস্তিত্ব জেগে ওঠে”
আলমাছ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল:
“বুঝলাম, আপনার কুরআনের আয়াতগুলো একধরনের দর্শন বহন করে।
তবে ধর্মের চেয়ে বিজ্ঞান তো বেশি এগিয়ে—এটা তো সত্য!
তাওহিদের ধারণা যদি বৈজ্ঞানিক হয়, তাহলে আজকের বিজ্ঞান কেন আল্লাহর কথা বলেনা?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক ধীরে বললেন:
“আধুনিক বিজ্ঞান সত্যকে খোঁজে, কিন্তু সব সত্যকে মানতে প্রস্তুত নয়।
বিজ্ঞান আবিষ্কার করে ‘কেন’, আর ধর্ম বলে ‘কার জন্য’।
দুইয়ের কাজ আলাদা।
তুমি কি চাও—মাইক্রোস্কোপ দিয়ে আত্মা দেখতে? বা টেলিস্কোপে আল্লাহর চেহারা?”
আলমাছ চুপ। কণ্ঠ স্তব্ধ।
সৃষ্টিজগতের নিখুঁত ভারসাম্য – কুরআনের চ্যালেঞ্জ
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন:
“আলমাছ, তুমি তো বিজ্ঞানের ছাত্র। তাহলে বলো—এ বিশ্বে সবকিছু কি এলোমেলো?”
আলমাছ:
“না, বিশ্ব তো নিখুঁতভাবে চলে।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“তবে শোন আল্লাহ কী বলছেন—”
ٱلَّذِى خَلَقَ سَبْعَ سَمَـٰوَٟتٍۢ طِبَاقًۭا ۖ مَّا تَرَىٰ فِى خَلْقِ ٱلرَّحْمَـٰنِ مِن تَفَـٰوُتٍۢ ۖ فَٱرْجِعِ ٱلْبَصَرَ هَلْ تَرَىٰ مِن فُطُورٍۢ
“তিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ স্তরে স্তরে।
রহমানের সৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?
তুমি চোখ ফেরাও, ত্রুটি খুঁজে পাও কিনা!”
(সূরা আল-মুলক, আয়াত ৩)
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক জোরে বললেন:
“আলমাছ, তুমি নিজেই বলেছো—বিশ্ব নিয়মে চলে।
এই নিয়ম কোথা থেকে এলো?
তুমি কি কোনো ‘নিয়মদাতা’ ছাড়া নিয়ম কল্পনা করতে পারো?”
একটি জটিল উদাহরণ: DNA ও কোডিং সিস্টেম
শায়খ ব্যাখ্যা করলেন:
“মানব DNA-তে চারটি বেস—A, T, C, G—এই কোড ৩ বিলিয়নেরও বেশি অক্ষরের মতো।
এটি একটি জটিল প্রোগ্রাম, যেন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার লিখেছেন!
এখন তুমি বলো—এই প্রোগ্রামটি কি এমনিতেই তৈরি হয়েছে?
না কি কোনো ‘Programmer’ আছেন যিনি জানেন কাকে কেমন বানাতে হবে?”
আলমাছ ধীরে বলল:
“বিজ্ঞানের ভাষায়, এটা তো 'র্যান্ডম মিউটেশন'...”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হেসে বললেন:
“বাহ! র্যান্ডম মিউটেশন কি কখনো এত নির্ভুল প্রোগ্রাম তৈরি করে—যা প্রতিদিন কোটি কোটি কোষে নকল হয়,
অথচ ভুল হয় না?
তাহলে বলো, র্যান্ডম যদি সবকিছু হয়, তুমি নিশ্চিন্তে বাসের নিচে যেতে পারো।
কারণ হয়তো র্যান্ডমলি তুমি বেঁচে যাবে, কে জানে!”
আলমাছ হেসে উঠল—
প্রথমবার, নিজের প্রশ্নেই যেন সে খেই হারিয়ে ফেলেছে।
যুক্তি যেখানে শেষ, ঈমান সেখানে শুরু
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার আবেগী কণ্ঠে বললেন:
“আলমাছ, তুমি জানতে চাও আল্লাহ কোথায়?
তুমি যদি তাঁর নিদর্শন না দেখো, তবে কেন আকাশের দিকে তাকাও না?
তুমি যদি তাঁর কণ্ঠ না শুনো, তবে কেন নিজের বিবেকের আওয়াজ শোনো না?”
আলমাছ এবার বলল:
“শায়খ, আপনি এমনভাবে ব্যাখ্যা করলেন, যা আগে কেউ করেনি।
আমার মনে হচ্ছে, আমি হাঁটছি... এক অজানা আলোয়।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“আলো তো সবসময় ছিল,
তুমি চোখ বন্ধ রেখেছিলে।”
(চলবে... খণ্ড ১০-তে…)
লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।