GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

নারীর হিজাব: দমন নাকি মুক্তির পথ? | প্রশ্নের মুখোমুখি সত্য (খণ্ড ১২, অংশ ২)

 উপন্যাস: প্রশ্নের মুখোমুখি সত্য

আলোচনার টক শোতে আলেম ও নাস্তিক তরুণ মুখোমুখি, হিজাব নিয়ে যুক্তি-তর্ক চলছে।
নারীর হিজাব নিয়ে আলেম ও নাস্তিকের মধ্যে যুক্তিনির্ভর আলোচনা — কোরআনের আলোকে।""



খণ্ড ১২ | অংশ ১: কণ্ঠের জন্ম, সংশয়ের বিস্তার


ঢাকার কেন্দ্রস্থলে এক গাঢ় সন্ধ্যায় জনাকীর্ণ একটি মিলনায়তনে আলো ঝলমল আলোয় দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি তার ঠোঁটে হালকা বিদ্রুপমিশ্রিত হাসি নিয়ে বলে উঠল,


“নারীদের হিজাব বাধ্যতামূলক কেন? এটা তো দমন।

আর আমাদের নবী কি বাল্যবিবাহ করেননি?

সূর্য কাদায় ডুবে যায় — এটা কি বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব?

নারী যদি সমান হয়, তাহলে সাক্ষ্য অর্ধেক কেন?”


ঘরে হঠাৎই নিস্তব্ধতা নেমে এলো। এরপর চিৎকার, হাততালি, হাসাহাসি। কারও চোখে উৎসাহ, কারও চোখে আগুন।


লোকটির নাম — আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।

একদা মাদ্রাসার ছাত্র, পরে ধর্মে বীতস্পৃহ হয়ে ওঠা এক 'যুক্তিবাদী' বক্তা।

তার ইউটিউব চ্যানেল ‘সত্যের সন্ধানে’ — যেখানে সে ইসলাম, কোরআন, হাদীসের ব্যাখ্যার নামে ছড়িয়ে দেয় ভুল ব্যাখ্যা ও বিকৃত তথ্য। অনেকে বলে, সে এক সময় হিফজ বিভাগে পড়তো; কেউ কেউ বলে, ধর্মের উপর কোনোদিনই ছিল না তার মমতা। কিন্তু আজ সে জনতার সামনে "ধর্মের মুখোশ খোলার" ঘোষণা দিয়েছে।


তার বক্তব্য চলতে থাকে —

“আল্লাহ যদি দয়ালু হন, তাহলে এত দুঃখ কষ্ট কেন?

জিন-ফেরেশতা কোথায়? বিজ্ঞানে তো নেই!

কুরআনে তো সঙ্গীত হারাম বলা হয়নি, তাহলে আলেমরা কেন হারাম বলেন?”


পাশে বসা এক বৃদ্ধ দাঁড়ালেন। শালীন কণ্ঠে বললেন, “তুমি প্রশ্ন করো, কিন্তু উত্তর তো শোনো না। উত্তর দেয়ার কেউ কি নেই?”


আব্দুল্লাহ আল মাসুদ মুচকি হেসে বলল,

 “উত্তর দিতে চাইলে মঞ্চে আসুন। তবে কোরআন আর বিজ্ঞানের মিল খুঁজে এনে দেখান! কল্পকাহিনি দিয়ে নয়।”


একদল যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করছে। ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার — চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের বক্তব্য। কিছু মানুষ অন্ধ অনুসারী হয়ে উঠছে। কিছু বিদ্বেষে ফুঁসছে।


অন্যদিকে...


এক অজানা মসজিদের এক কোণে বসে ছিলেন হাফেজ মাওলানা হারুন ইজহার। বয়স পঁয়ত্রিশ, দীপ্ত চোখে মেধার দীপ্তি, মুখভর্তি সুন্নতি দাঁড়ি, কণ্ঠে কোমলতা আর যুক্তির দৃঢ়তা। তার ছাত্র একজন লাইভ দেখে চুপচাপ ফোন বাড়িয়ে ধরল।


তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদের প্রশ্নগুলো। শেষে বললেন,

“জবাব দেবো। একে একে, ধৈর্য ধরে। কোরআন দিয়েই, হাদীস দিয়েই, বিজ্ঞান দিয়েই।”


ছাত্র বলল, “তাহলে আপনি কি তাকে সামনে দাঁড়িয়ে উত্তর দেবেন?”


তিনি উত্তর দিলেন,

“না, আমিই তার সামনে যাবো না — সে নিজেই আসবে আমার সামনে।

জ্ঞান ও যুক্তির আহ্বানে কেউ ঠকায় না — ভয় পায় সে, যার ভিতরে সত্য নেই।”



উপন্যাস: প্রশ্নের মুখোমুখি সত্য

খণ্ড ১২ | অংশ ২: মুখোমুখি সত্য

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। রাজধানীর বহুল আলোচিত টক শো — “যুক্তির আঙিনায়” — আজ বিশেষ আয়োজন করেছে।
বিষয়: "ধর্ম বনাম যুক্তি — নাকি দুইয়েরই অপব্যাখ্যা?"

এক পাশে চুপচাপ বসে আছেন মাওলানা হারুন ইজহার।
সাদা পাগড়ি, ধবধবে জোব্বা, শান্তচোখ।
অপর পাশে, প্রখর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
কালো শার্ট, হালকা গোঁফ, ঠোঁটে বিদ্রুপ।

সঞ্চালক বলে উঠলেন,

 “আজ প্রথমবারের মতো আমাদের সঙ্গে রয়েছেন দেশের আলোচিত যুক্তিবাদী বক্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এবং ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা হারুন হারুন ইজহার।
আজ আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজব কোরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে।”

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ হেসে বলল,
“আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করি, হুজুর। কিন্তু বলুন তো, নারীর হিজাব — এটা কি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়? কেন ধর্ম সবসময় নারীর উপরে বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়?”

মাওলানা হারুন ইজহার শান্তভাবে বললেন,
“ভাই মাসুদ, আমি কথা বলার আগে একটি শর্ত চাই।
আপনি কি ধৈর্য নিয়ে আমার কথা শুনবেন, নাকি প্রশ্ন করেই পালাবেন?”

 “শুনব। অবশ্যই শুনব। যদি উত্তর যৌক্তিক হয়,” আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলল।

মাওলানা হারুন ইজহার একটু সামনে ঝুঁকে বললেন,
 “আচ্ছা, আপনি কি জানেন, আজ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হিজাব পরা মেয়েরা কোথায় থাকে?”

“মধ্যপ্রাচ্যে,” — আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলল।

“ভুল। ইউরোপের ইসলাম গ্রহণকারী নারীদের বিশাল অংশ হিজাব গ্রহণ করে। তারা কেউ জোরপূর্বক নয়, বরং জ্ঞান, আত্মসম্মান ও আত্মরক্ষার জন্য বেছে নেয়।
হিজাব নারীর স্বাধীনতাকে দমন করে না; বরং দৃষ্টির দাসত্ব থেকে রক্ষা করে।
আপনার কি জানা আছে, পশ্চিমা গবেষণায় নারীদের উপর যৌন হয়রানির ৮০% কারণই পোশাক ও ভঙ্গি?”

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চুপ।

মাওলানা হারুন ইজহার আবার বললেন,
“হিজাব নারীর ঢাল। কোরআন বলে,
‘ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ’ —
‘এতে করে তারা পরিচিত হবে (লজ্জাশীলা, সম্মানিতা নারী হিসেবে), এবং তারা যেন উত্ত্যক্ত না হয়।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)”

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ একটু থতমত খেয়ে বলে,
 “কিন্তু এটা তো ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক কেন?”

 “জীবনে অনেক কিছুই বাধ্যতামূলক হয় — স্কুলে যাওয়া, ট্রাফিক আইন মানা, ট্যাক্স দেওয়া।
মানবতার কল্যাণে যা জরুরি, সেটাই বাধ্যতামূলক হয়।
যখন একটি সমাজে নারীকে পণ্য করে তোলা হয়, তখন তাদের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব সমাজ ও ধর্মের।
আর ইসলাম নারীকে শুধু ঢেকে রাখে না — তার ইজ্জত, তার নিরাপত্তা, তার মর্যাদা নিশ্চিত করে।”

মাসুদের ঠোঁট কেঁপে উঠে। সে কিছু বলতে যাচ্ছিল, তখন সঞ্চালক থামিয়ে বললেন,
“আজকের আলোচনার এখানেই বিরতি নিচ্ছি। পরবর্তী পর্বে আমরা আলোচনা করব পুরুষের একাধিক বিবাহ ও নারীর একাধিক বিবাহের প্রশ্ন নিয়ে।”

মাওলানা হারুন ইজাহার চোখ তুলে তাকালেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদের দিকে, বললেন,
“প্রশ্ন করতেই থাকুন। সত্য ভয় পায় না।
শুধু প্রস্তুত থাকুন — জবাব শুনে যেন আর পালানোর জায়গা না থাকে।”

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চুপ। ক্যামেরা ক্লোজআপ নিচ্ছে তার কাঁপা চোখে।


চলবে... (খণ্ড ২: ‘একাধিক বিবাহ — বৈষম্য, না দায়িত্ব?’)


লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিক আলমাছের মনে আলোর সঞ্চার | - খণ্ড ১১

 নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | প্রথম অংশ

আলমাছ ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, সন্ধ্যার আলোয় ভাবনার জগতে ডুবে গেছে।

আলমাছের ভাবনার সন্ধ্যা, যেখানে এক চিরন্তন প্রশ্ন জন্ম নেয়—আল্লাহ কি আছেন?


শিরোনাম: শায়খের নীরবতা ও আকাশের আহ্বান


রাত গভীর। আকাশজোড়া নক্ষত্রের ভিড়ে চাঁদের আলো যেন আলমাছের চিন্তার দরজায় নরম কণ্ঠে কড়া নাড়ছে। দিনের আলোয় সে প্রশ্ন করেছে, যুক্তি দিয়েছে, পাল্টা যুক্তি পেয়েছে। কিন্তু এই রাতে শায়খ কেন যেন চুপ।


"শায়খ, আজ আপনি কিছু বলছেন না কেন?"

আলমাছের প্রশ্নে শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন।


"আকাশ দেখেছো আজ?"

"দেখছি, কিন্তু আমি উত্তর চাই। আপনি নীরব কেন?"


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার সোজা হয়ে বসলেন। তাঁর চোখে ছিল গভীর চিন্তার ছাপ।


"আলমাছ, কিছু প্রশ্নের উত্তর আলোতে নয়, নীরবতায় আসে। কিছু সময়ের পর হৃদয় নিজেই আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করতে শেখে।"


আলমাছ একটু হতবাক।


"আপনি কি বলতে চাইছেন আমি নিজে নিজেই উত্তর পেয়ে যাব?"


 "না, আমি বলতে চাইছি, তুমি যখন যুক্তির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাবে, তখনই শুরু হবে ঈমানের যাত্রা। এখন তুমি ভাবো—এই আকাশ, এই নক্ষত্র, এই নিখুঁত হিসেব কিভাবে এল? এর পেছনে কি সত্যিই কোনো সৃষ্টি কর্তা নেই?"


আলমাছ চুপ করে গেল। শায়খও আর কিছু বললেন না। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন শুধু।


এই প্রথম আলমাছ কোনো জবাব দিল না। প্রশ্ন করতে করতে, সে আজ যেন এক নতুন প্রশ্নে নিজেই ডুবে গেছে।



চলবে...



নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | দ্বিতীয় অংশ

শিরোনাম: যুক্তির দেয়াল ভাঙছে, আত্মার দরজা খুলছে

আলমাছ নিজের কক্ষে ফিরে এল। নীরবতা আজ যেন বুকের ওপর চেপে বসেছে। দিনের আলোয় সে অনেক বলেছে—আল্লাহর অস্তিত্ব, আখিরাত, আত্মা—এসব তার কাছে সবসময় গল্প ছাড়া কিছু ছিল না। কিন্তু আজ রাতে শায়খের নীরবতা, আকাশের প্রশান্তি, আর নিজের একাকিত্ব মিলিয়ে তার মনে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—

“যদি সত্যিই আমি ভুল হই?”

আলমাছ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকালো।
"তুই কিসে বিশ্বাস করিস আলমাছ? নিজের বুদ্ধিতে? বিজ্ঞানে? নাকি অহংকারে?"
সে নিজেকে প্রশ্ন করলো।

শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের সেই কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো—
“যে নিজেকে চেনে না, সে কিভাবে তার রবকে চিনবে?”

আলমাছ নিজের বুকের ওপর হাত রাখলো।
সে কি জানে তার ভেতর কী আছে?
সে কি জানে, মৃত্যুর পর কী হবে?

কেউ কি মৃত্যুকে জয় করতে পেরেছে? কেউ কি আত্মাকে বিজ্ঞানে পুরো ব্যাখ্যা করতে পেরেছে?

এই প্রশ্নগুলো তার গর্বিত যুক্তির দেয়ালে ফাটল ধরাচ্ছে।

পরদিন সকালে সে আবার শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের কাছে যায়।

“শায়খ, আপনি গতকাল বলেছিলেন নীরবতায় উত্তর আছে। কিন্তু আমার ভেতরে এখন শুধু ভয় কাজ করছে। ভয়, যদি আমার সব চিন্তা ভুল হয়। ভয়, যদি মৃত্যু পরেই কিছু থাকে। যদি সত্যিই একজন মহান স্রষ্টা থাকেন, যাঁর সামনে আমাকে জবাবদিহি করতে হয়?”

শায়খ এবার স্নিগ্ধ স্বরে বললেন:

 “আলমাছ, তুমি এখন সেই পথে আছো যেখানে একদিন ইবনে হিশাম, ইবনে কায়্যিম, এমনকি পূর্বের কত জ্ঞানী নাস্তিক পা রেখেছিল। ঈমানের শুরু হয় সন্দেহ থেকে নয়, শুরু হয় সত্যকে খোঁজার ইচ্ছা থেকে। আজ তুমি প্রশ্ন করছো, আগামীকাল তুমি সেজদায় যাবে।”

আলমাছ অবাক।

“সেজদা? আমি কি তা পারবো?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন:

 “আল্লাহর কাছে যেতে তোমার নামাজ জানার দরকার নেই, দরকার শুধু একটি চাওয়া:
'হে আমার মালিক, তুমি যদি সত্যি থেকো, তবে আমাকে পথ দেখাও।' এই একটিই যথেষ্ট।”

আলমাছ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুধু বলল:
“শায়খ, আমি চেষ্টা করব।”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক শুধু বললেন:
“তবে আজ রাতে আকাশের নিচে দাড়িয়ে বলো—‘হে অদৃশ্য সত্তা, তুমি যদি সত্যিই থেকে থাকো, তবে আমাকে চিনিয়ে দাও।’ দেখো, কেমন আলো নামে তোমার হৃদয়ে।”

আলমাছ মাথা নিচু করলো। তার গর্বিত চিবুকের বাঁধ ভেঙে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

প্রথমবার সে ভয় পেল না, বরং যেন প্রশান্তি অনুভব করল।


চলবে…



নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | তৃতীয় অংশ

শিরোনাম: সন্ধ্যার আকাশে এক চিরন্তন প্রশ্ন

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আলমাছ। আকাশে তারা জ্বলছে, যেন কোনো অলৌকিক চোখ তাকিয়ে আছে তার হৃদয়ের ভেতর। সে ধীরে ধীরে মুখ তুলে বলে উঠলো—
“হে অদৃশ্য সত্তা, যদি তুমি থেকে থাকো, তবে আমাকে চিনিয়ে দাও…”

মুহূর্তেই বাতাস থমকে যায়। যেন প্রকৃতি শুনছে তার কান্নাভেজা মিনতি। আলমাছের চোখে পানি আসে, কিন্তু সে জানে না—কেন? ভয়? ভালোবাসা? এক শূন্যতা, নাকি অচেনা প্রশান্তি?

তার মনে পড়ে, শায়খ বলেছিলেন—
"সত্য খুঁজলে সে নিজেই ধরা দেয়।"

আলমাছ হঠাৎ মনে করে, তার মা তাকে ছোটবেলায় শিখিয়েছিল—
"বিসমিল্লাহ" বললে শয়তান দূরে সরে যায়।

আজ সে জীবনে প্রথমবার মনে মনে বলে ফেলে—
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"
(শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।)

তার বুকের ভেতর যেন ঝড় থেমে যায়। এমন অনুভব তার আগে কখনো হয়নি। মনে হয় কেউ তাকে স্পর্শ করেছে—অদৃশ্য কারও কোমল হাত যেন বুকে রাখলো।

তখনই সে হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখে—রাস্তার মোড়ে একজন বৃদ্ধা মহিলা সাহায্য চাইছে।
তার হাতে একটা সাদা বোর্ড—
"আল্লাহ তোমার ভাল করুক, যদি কিছু দিতে পারো।"

আলমাছ মুহূর্তেই নিজের পকেটে থাকা টাকা এগিয়ে দেয়। বৃদ্ধার মুখে একরাশ দোয়ার হাসি—
"আল্লাহ তোমাকে হেদায়াত দিন বাবা।"

আলমাছ অবাক হয়। সে তো জানত না, কেন দিল। কিন্তু দিল। আর সেই মুহূর্তে তার মনে হলো,
“হেদায়াত... আমিই কি সেটা খুঁজছি না?”

সে দ্রুত ফোন বের করে গুগলে সার্চ দেয়:
“কুরআনের প্রথম আয়াত কি?”
ফলাফল আসে:
"আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন"
(সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের প্রতিপালক।)

আলমাছের চোখ ভিজে ওঠে। আজ সে নিজের জগতের মধ্যে এক নতুন দিগন্ত খুঁজে পেয়েছে।
প্রশ্ন করার আত্মবিশ্বাস, কিন্তু উত্তর পাবার বিনয়—এই দুইয়ের মাঝে জন্ম নিচ্ছে তার ঈমান।

সে মনে মনে বলে—
“হে রব, আমি জানি না তুমি কোথায় আছো, কিন্তু তুমি যদি থাকো, আমায় ছেড়ে দিও না।”

সেই রাতে সে প্রথমবার সেজদাহর চেহারা গুগলে খোঁজে।
প্রথমবার কিবলার দিক খোঁজে।
প্রথমবার একটা নামাজের ভিডিও দেখে।

এবং, প্রথমবার নিজের বিছানায় বসেই বলে—
“রব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।”
(হে আমার রব, আমার মা-বাবার উপর দয়া করো, যেমন তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন করেছেন।)

সে জানে না, সে কি মুসলিম হয়ে যাচ্ছে...
কিন্তু সে জানে, তার হৃদয় কোনো অজানা আলোতে ধুয়ে যাচ্ছে।


চলবে…

লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।