পরীর প্রেম: এক মর্মান্তিক কাহিনি
 |
মানুষ ও পরীর প্রেম—এক অবাস্তব ভালোবাসার বাস্তবtragédie, কুরআন-হাদিসের আলোকে এক মর্মান্তিক কাহিনি।" |
পরিচিতি
আহমাদুল্লাহ একজন সাধারণ যুবক, যার হৃদয়ে ইসলামের প্রতি গভীর অনুরাগ। ছোটবেলা থেকেই সে স্বপ্ন দেখে এমন এক জীবনসঙ্গীর, যে তাকওয়া ও নৈতিকতায় অনন্য। কিন্তু এক অদ্ভুত ঘটনা তার জীবনকে বদলে দেয় চিরতরে।
প্রথম অধ্যায়: রহস্যময় সাক্ষাৎ
এক রাতে আহমাদুল্লাহ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নিজেদের ছাদ বাগানে বসে আল্লাহর জিকির করছিল। হঠাৎ সে অনুভব করল, চারপাশের পরিবেশ কেমন যেন ভারী হয়ে উঠছে। বাতাসে এক অদ্ভুত মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর সামনে এক অপরূপা সুন্দরী নারীকে দেখতে পেল, যার রূপ মানুষের নয়—সে যেন অন্য জগতের সত্তা।
আহমাদুল্লাহ কিছুটা ভয় পেল, কিন্তু নারীটি মৃদু হাসল এবং বলল,
“হে আহমাদুল্লাহ, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি মানুষ নই, এক পরী। আল্লাহর আদেশে আমি তোমার সামনে এসেছি।”
আহমাদুল্লাহ বিস্মিত হয়ে বলল, “পরী! কিন্তু কেন?”
পরী উত্তরে বলল, “তুমি একজন মুত্তাকি ব্যক্তি। আল্লাহ তোমার জন্য আমাকে নির্ধারণ করেছেন।”
আহমাদুল্লাহ কিছুক্ষণ নীরবে রইল। তার হৃদয়ে দ্বিধা, কারণ মানুষ ও পরীর মধ্যে সম্পর্ক কি আদৌ সম্ভব?
দ্বিতীয় অধ্যায়: ভালোবাসার অগ্নিপরীক্ষা
পরী তাকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দেয়। আহমাদুল্লাহও অনুভব করে, তার হৃদয়ে অজানা এক টান সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সে দ্বিধান্বিত ছিল—এ সম্পর্ক কি ইসলামসম্মত?
তখন সে কুরআনের এই আয়াতটি স্মরণ করল:
وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
“আর তিনি সৃষ্টি করেন যা তোমরা জানো না।” (সূরা النحل: ৮)
সে বুঝতে পারল, পরী আল্লাহরই সৃষ্টির একটি অংশ। কিন্তু তাদের বিয়ে কি বৈধ?
সে একটি হাদিস স্মরণ করল, যেখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
"আল্লাহর রাসূলকে জিনদের বিবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা তোমাদের ধর্ম গ্রহণ করলে বিয়ে বৈধ হতে পারে, অন্যথায় নয়।'” (ইমাম ইবন তায়মিয়া, মাজমুউল ফাতাওয়া)
তাহলে পরী যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তবে কি তাদের বিয়ে সম্ভব? আহমাদুল্লাহ সাহস করে পরীকে বলল, “তুমি কি ইসলামের বিধান মেনে চলবে?”
পরী চোখ বন্ধ করল, তারপর বলল, “আমি ইসলাম গ্রহণ করছি, যদি তুমি আমাকে দ্বীনের পথে পরিচালিত কর।”
তৃতীয় অধ্যায়: দুঃখের সাগর
তাদের বিবাহ সম্পন্ন হলো, কিন্তু কিছুদিন পরেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল। আহমাদুল্লাহ দেখল, প্রতিদিন গভীর রাতে পরী কোথাও চলে যায়। এক রাতে সে তার অনুসরণ করল।
সে দেখতে পেল, পরী বাতাসের বেগে এক অজানা স্থানে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ সে থমকে গেল—সে দেখল পরী আগুনের সাদা শিখার মতো কিছু একটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আহমাদুল্লাহ আতঙ্কিত হয়ে বুঝল, পরীর পূর্বের জগত এখনো তাকে টানছে।
আহমাদুল্লাহ তাকে বলল, “তুমি কি এই জগত ছাড়তে পারবে না?”
পরী কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমার জন্ম অন্য জগতে। তোমার ভালোবাসার জন্য আমি পৃথিবীতে থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি এখানে পুরোপুরি থাকতে পারছি না। আমার আত্মা এখনো আমার জগতে টানে।”
আহমাদুল্লাহ বুঝতে পারল, মানুষ ও পরীর ভালোবাসা কখনোই স্থায়ী হতে পারে না। সে মনে করল আল্লাহর এই বাণী:
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ
“পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল।” (সূরা الرحمن: ২৬)
শেষ অধ্যায়: বিচ্ছেদ ও আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন
এক রাতে আহমাদুল্লাহ জাগ্রত হলো এবং দেখল পরী আর নেই। কেবল বাতাসে এক মিষ্টি সুবাস রয়ে গেছে। সে জানত, এটাই ছিল শেষ দেখা।
তারপর সে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং আল্লাহর কাছে কেঁদে বলল, “হে রব, আমাকে এ দুনিয়ার ভালোবাসার চেয়ে তোমার ভালোবাসায় মগ্ন করে দাও।”
আহমাদুল্লাহ বুঝতে পারল, দুনিয়ার সকল সম্পর্ক ক্ষণস্থায়ী। কেবল আল্লাহর ভালোবাসাই চিরন্তন।
উপসংহার
এই গল্প আমাদের শেখায়, পরী বা মানুষ—সব সম্পর্কই একদিন শেষ হয়ে যায়। আমাদের উচিত আল্লাহর ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
اللهم اجعل حبك أحب إليّ من نفسي وأهلي ومن الماء البارد
“হে আল্লাহ, তোমার ভালোবাসাকে আমার নিজের, আমার পরিবার এবং শীতল পানির চেয়েও প্রিয় করে দাও।” (তিরমিজি, ৩৪৯০)
আপনার মতামত দিন!
গল্পটি কেমন লাগল? কমেন্টে জানান!
লেখক: মাওলানা মোঃ সাকিব