গল্প: নশ্বর ভালোবাসার করুণ পরিণতি
![]() |
ধৈর্য ও ভালোবাসার পরীক্ষায় সাফল্য অর্জিত হয়, কিন্তু অবহেলা ও অহংকারের পরিণতি থাকে কেবল দুঃখ ও অনুশোচনায়।" |
প্রথম অধ্যায়: স্বপ্নের শুরু
মাওলানা সাকিব, একজন ধর্মপ্রাণ যুবক, যার হৃদয় ছিল সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য প্রস্তুত। কুরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনা করাই ছিল তার লক্ষ্য। একদিন এক উস্তাদের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় সাবিহা আক্তার মুক্তার সাথে—এক অনন্য সুন্দরী, যার সৌন্দর্য যেন চাঁদের আলোকে হার মানায়।
কিন্তু মাওলানা সাকিব ভালো করে জানত না, সাবিহা আক্তার মুক্তার অতীত ছিল একটি ভাঙা সংসার। তার প্রথম স্বামী, মাওলানা ফরহাদ, ছিল একজন সৎ ও দায়িত্ববান মানুষ, কিন্তু সাবিহা আক্তার মুক্তা তার প্রতি কখনোই অনুগত ছিল না। সে মাওলানা ফরহাদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করত, তাকে অবহেলা করত, অবশেষে সংসার ভেঙে দেয়।
মাওলানা সাকিব যখন সাবিহা আক্তার মুক্তাকে বিয়ে করল, সে বিশ্বাস করেছিল, ভালোবাসা ও ধৈর্য দিয়ে সে তার জীবন বদলে দিতে পারবে।
দ্বিতীয় অধ্যায়: ধৈর্যের পরীক্ষা
বিয়ের প্রথম কটি দিন আনন্দে কাটলেও, খুব দ্রুতই সাবিহা আক্তার মুক্তার আসল রূপ প্রকাশ পেল। সে মাওলানা সাকিব কে দূরে ঠেলে দিতে লাগল, কথা বললে বিরক্ত হতো, এবং স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার সাধারণ দাবিকেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করত।
মাওলানা সাকিব কষ্ট পেলেও ধৈর্য ধরে রাখল। সে কুরআনের এই আয়াতটি বারবার মনে করত—
ওয়াসবির ফাইন্নাল্লাহা লা ইউদ্বি’উ আজরাল মুহসিনীন।"
(আর তুমি ধৈর্য ধর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।) (সুরাহ হুদ: ১১৫)
কিন্তু সাবিহা আক্তার মুক্তা বদলায়নি। একদিন সে রাগের মাথায় মাওলানা সাকিবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলে,
"তুমি আমার যোগ্য নও! আমি তোমার মতো সাধারণ একজন মানুষের সাথে সারাজীবন কাটাতে পারব না!"
তৃতীয় অধ্যায়: বিচ্ছেদ ও প্রতারণা
একদিন সাবিহা আক্তার মুক্তা কোনো কিছু না বলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। মাওলানা সাকিব জানত না সে কোথায় গেল, কার সাথে গেল।
সে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া করল,
রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ ওয়া ক্বিনা আযাবান্নার।"
(হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।) (সুরাহ আল-বাকারা: ২০১)
কিন্তু সাবিহা আক্তার মুক্তা ফিরে এল না। কিছুদিন পর মাওলানা সাকিব শুনল, সে অন্য এক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু সেই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি।
চতুর্থ অধ্যায়: মাওলানা সাকিবের নতুন জীবন শুরু ও ধৈর্যের পুরস্কার
মাওলানা সাকিব তার কষ্ট বুকে নিয়ে ধৈর্য ধরল। সময়ের পরিক্রমায় সে আরেকটি বিয়ে করল—সুমাইয়া সুলতানা নামে একজন ধার্মিক, কোমলমতি নারীকে।
সুমাইয়া সুলতানা তার জন্য এক শান্তির আশ্রয় হয়ে উঠল। সে মাওলানা সাকিবকে ভালোবাসত, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল, এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনায় সবসময় মাওলানা সাকিবের পাশে থাকত।
মাওলানা সাকিব বুঝতে পারল, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জন্য উত্তম কিছু সংরক্ষণ করেন।
ইন্নামা ইউওয়াফ্বাস সাবিরূনা আজরাহুম বিগাইরি হিসাব।"
(ধৈর্যশীলদের প্রতিদান হিসাব ছাড়াই দেওয়া হবে।) (সুরাহ আজ-জুমার: ১০)
পঞ্চম অধ্যায়: সাবিহা আক্তার মুক্তার তৃতীয় বিয়ে ও করুণ পরিণতি
এদিকে সাবিহা আক্তার মুক্তা জীবন থেকে শিক্ষা নেয়নি। সে কয়েক বছর পর আবারও বিয়ে করল মিলন নামের আদা বয়স্ক এক মুরুব্বী কে যার বয়স তার চাইতে দ্বিগুণ যে এক ছন্নছাড়া, দুশ্চরিত্র ব্যক্তি, যার জীবন কাটত নেশা, অনৈতিকতা আর দারিদ্র্যের কষ্টে। যে আগে তিনটি স্ত্রীকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে সাবিহা আক্তার মুক্তা তার চতুর্থ নম্বর স্ত্রী হলো।
প্রথম দিকে সে ভেবেছিল, এবার হয়তো সে সুখী হবে। কিন্তু তার নতুন স্বামী মিলন ছিল একজন নির্মম ব্যক্তি। সে সাবিহা আক্তার মুক্তাকে মারধর করত, অবহেলা করত, এমনকি খাবার জোগাড় করতেও ব্যর্থ হতো যার কারণে তার জীবন হয়ে উঠলো নরকসম।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
> "وَمَن يُعْرِضْ عَن ذِكْرِى فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةًۭ ضَنكًۭا"
(যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জীবন সংকটপূর্ণ হয়ে যায়।) (সুরাহ ত্বহা: ১২৪)
সাবিহা আক্তার মুক্তা এখন বুঝতে পারল, সে কী হারিয়েছে। মাওলানা সাকিবের মতো একজন ভালো স্বামীকে সে অবজ্ঞা করেছিল, কিন্তু আজ তার কপালে জুটেছে অবহেলা, দুঃখ আর কষ্ট।
একদিন সাবিহা আক্তার মুক্তা একাকী বসে কাঁদছিল। তার কানে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল কুরআনের সেই আয়াত—
ফাহাল ‘আসাইতুম ইন তাওয়াল্লাইতুম আন তুফসিদূ ফিল আরদি ওয়া তুকাত্তি’উ আরহামাকুম। উলাইকাল্লাজিনা লা’আনাহুমুল্লাহু ফা-আসমাহুম ওয়া আ’মা আবসারাহুম।"
(তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে কি পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? তারাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন, তাদের কান বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন।) (সুরাহ মুহাম্মাদ: ২২-২৩)
মাওলানা সাকিব এখন সুখী ছিল, কিন্তু সাবিহা আক্তার মুক্তার জীবন দুঃখে ভরে গিয়েছিল।
শেষ অধ্যায়: অনুশোচনা, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে
একদিন সাবিহা আক্তার মুক্তা ভাবল, মাওলানা সাকিবের কাছে ফিরে যাবে। কিন্তু তখন মাওলানা সাকিব সুখী সংসারী, সুমাইয়া সুলতানার সাথে তার দাম্পত্য জীবন স্বর্গীয় প্রশান্তিতে কাটছিল।
মাওলানা সাকিবের কাছে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ রইল না।
সে একদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
"হে আল্লাহ! যদি আমি তখন বুঝতাম মাওলানা সাকিবের ভালোবাসার মূল্য!"
কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। তার জীবনে শুধু দুঃখ ও অনুশোচনার ছায়া রয়ে গেল।
উপদেশ ও শিক্ষা
এই গল্প আমাদের শেখায় যে, সত্যিকারের ভালোবাসা ও ধৈর্যই মানুষের জীবনে প্রকৃত শান্তি বয়ে আনে। যারা অন্যের ভালোবাসাকে অবজ্ঞা করে, তাদের জীবনে একসময় অনুশোচনা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
"অবশ্যই কষ্টের পর সুসংবাদ আসে।" (সুরাহ ইনশিরাহ ৬:)
মাওলানা সাকিব ধৈর্য ধরেছিল, আর আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করেছেন। পক্ষান্তরে, সাবিহা আক্তার মুক্তা অহংকার করেছিল, এবং তার জীবনে অনুশোচনার আগুন জ্বলতে থাকল চিরকাল।
লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব
Masaallah
উত্তরমুছুনঅনেক সুন্দর এ রকম গল্প আরও চাই
উত্তরমুছুনNice
উত্তরমুছুন