পর্ব ৩৫: অন্ধকারের মধ্যে আলো

"সত্যের জন্য লড়াই করতে হলে, কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে…"

(প্রথম অংশ)
চারদিকে ঘন অন্ধকার। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। হাসান ও জাবের ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে, হাতের অস্ত্রগুলো আরও শক্ত করে ধরল তারা। চারপাশে শত্রুর উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু কোথায়, কতজন—তা নিশ্চিত নয়।
"সতর্ক থেকো, জাবের," হাসান ফিসফিস করে বলল।
জাবের মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল। দুজনেই জানে, আজকের রাত খুব গুরুত্বপূর্ণ। সত্যের পথ বেছে নেওয়া কখনোই সহজ ছিল না।
এক অদ্ভুত মেয়ের আগমন
তারা যখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ পেছন থেকে এক নারীকণ্ঠ ভেসে এলো—
"আপনারা কি জানেন, আপনাদের জন্য ওরা ফাঁদ পেতেছে?"
দুজনেই চমকে উঠল! দ্রুত পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল এক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় আভিজাত্য, চোখে অপার আত্মবিশ্বাস। পরিপূর্ণ পর্দা করা, শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সে এক হাতে তলোয়ার ধরে রেখেছে!
"আপনি কে?" রাশেদ বিস্মিত কণ্ঠে বলল।
"আমার পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জেনে রাখুন, যদি এই পথে এগোন, তবে ভয়ংকর বিপদের মুখে পড়বে।"
হাসান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "আমরা সত্যের জন্য লড়ছি। ভয় পেলে তো শয়তানই জিতে যাবে।"
মেয়েটি সামান্য হাসল, তারপর বলল—
"যদি সত্যের জন্যই লড়াই করো, তবে আমি তোমাদের সাহায্য করব।"
নতুন শত্রুর আগমন
হঠাৎ পেছন থেকে কয়েকজনের গলার শব্দ শোনা গেল—
"ওরা এখানেই আছে! ঘেরাও করো!"
হাসান, জাবের ও অচেনা মেয়েটি দ্রুত সতর্ক হয়ে গেল। এবার কি সত্যিই তারা শত্রুদের কবলে পড়ে গেল? নাকি এই লড়াইয়ে নতুন এক চমক অপেক্ষা করছে?
(চলবে… দ্বিতীয় অংশ আসছে…)
পর্ব ৩৫: অন্ধকারের মধ্যে আলো
(দ্বিতীয় অংশ)
শত্রুর ফাঁদ
হাসান, জাবের ও সেই রহস্যময়ী মেয়েটি দ্রুত আড়াল খুঁজল। সামনের গাছগুলোর আড়ালে গিয়ে দাঁড়াতেই তারা দেখতে পেল, প্রায় সাত-আটজন অস্ত্রধারী চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে।
"তারা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেছে," জাবের ফিসফিস করে বলল।
"তুমি আগে থেকে কিভাবে জানলে ওরা ফাঁদ পেতেছে?" হাসান মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করল।
"আমি তাদের মধ্যে কাজ করি," মেয়েটি সংক্ষেপে বলল।
"মানে তুমি…!" হাসান বিস্ময়ে থেমে গেল।
"হ্যাঁ, আমি তাদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতাম। কিন্তু সত্য জানার পর, আর থাকতে পারিনি। এখন আমি তোমাদের সাহায্য করতে চাই।"
হাসান আর জাবের দ্রুত পরিস্থিতি বুঝে নিল। এখন কোনো ভুল করলে বেঁচে ফেরার সুযোগ থাকবে না।
প্রথম আক্রমণ
একজন শত্রু উচ্চস্বরে চিৎকার করল, "আমরা জানি তোমরা এখানে আছো! বেরিয়ে আসো, নইলে গুলি চালানো হবে!"
হাসান আর দেরি করল না। এক ঝটকায় বের হয়ে ছুরিটি ছুঁড়ে মারল! শত্রুর একজন গার্ড মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
জাবেরও গুলি চালিয়ে দিল আরেকজনের দিকে। মেয়েটিও তরবারি বের করে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল!
শত্রুরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনজন মিলে ভয়ংকর আক্রমণ শুরু করল।
আল্লাহর ওপর ভরসা
হাসানের কানে তখন একটা আয়াত বাজছিল—
"وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ"
"তোমরা দুর্বল হয়ো না, দুঃখিত হয়ো না। যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে তোমরাই বিজয়ী হবে।" (সূরা আলে ইমরান: ১৩৯)
সে জানত, এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের নয়, বরং ঈমানেরও।
এগিয়ে এলো আরও তিনজন শত্রু। এবার কি হাসান, জাবের ও সেই অচেনা মেয়েটি টিকে থাকতে পারবে?
(চলবে… তৃতীয় অংশ আসছে…)
পর্ব ৩৫: অন্ধকারের মধ্যে আলো
(তৃতীয় অংশ)
শত্রুর শেষ ফাঁদ
হাসানের হাত কাঁপছিল না, বরং প্রতিটি আঘাত ছিল দৃঢ়। জাবের পাশে দাঁড়িয়ে গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল, আর মেয়েটি তরবারি দিয়ে শত্রুদের মোকাবিলা করছিল।
কিন্তু শত্রুরা এত সহজে হার মানার পাত্র নয়।
"পেছনে দেখ!" মেয়েটি হঠাৎ চিৎকার করে উঠল।
হাসান এক লাফে সরে গেল, আর সঙ্গে সঙ্গে একটা ছুরি তার কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল!
জাবের বুঝতে পারল, এরা শুধুমাত্র সাধারণ সন্ত্রাসী নয়, বরং সুগঠিত একটি দল।
"এরা কারা?" জাবের জানতে চাইল।
"তোমরা যা জানো, তার থেকেও বেশি শক্তিশালী এক সংগঠন।" মেয়েটি বলল।
হাসান এক ঝলকে মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে দেখল সেখানে ভয় নেই, বরং প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।
"আমাদের দ্রুত এখান থেকে বের হতে হবে," হাসান বলল।
কিন্তু ঠিক তখনই…
চতুর পলায়ন
শত্রুরা বুঝে গেছে যে সরাসরি যুদ্ধ করে জেতা সম্ভব নয়। তারা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল, এবার হাতিয়ার নয়—তাদের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন।
"ধরা দাও! নইলে…!"
এতটুকু বলেই এক শত্রু মেয়েটির দিকে বন্দুক তাক করল!
হাসান বুঝতে পারল, সরাসরি যুদ্ধ করলে এবার তারা হারতে পারে।
"জাবের, ধোঁকা দাও!"
জাবের সঙ্গে সঙ্গে একটা ধাক্কা দিয়ে শত্রুর হাত থেকে বন্দুক ফেলে দিল। মেয়েটি সেই সুযোগে একটা চাকু বের করে শত্রুর ঘাড়ে বসিয়ে দিল!
হাসান আর দেরি করল না। একটা গুলি চালিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন শত্রুকে মাটিতে ফেলে দিল।
"দ্রুত পালাও!"
তারা তিনজন দৌড়ে পাশের জঙ্গলে ঢুকে গেল। পেছন থেকে শত্রুরা গুলি চালাল, কিন্তু তারা সরে যেতে সক্ষম হলো।
নতুন সংকট
হাসানের বুক ধুকপুক করছিল।
"তুমি আমাদের সাহায্য করলে কেন?" হাসান মেয়েটিকে প্রশ্ন করল।
মেয়েটি চুপ করে ছিল কিছুক্ষণ, তারপর বলল—
"কারণ সত্যের জন্য লড়াই করাটা আমারও দায়িত্ব।"
পরীর ছোঁয়া?
ঠিক তখনই, হঠাৎ বাতাসের মধ্যে একটা অদ্ভুত সুবাস ছড়িয়ে পড়ল।
হাসান চমকে উঠল।
"এ কি…?"
একটা মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে এলো—
"হাসান, তুমি কি সত্যের জন্য প্রস্তুত?"
(চলবে… চতুর্থ অংশ আসছে…)
পর্ব ৩৫: অন্ধকারের মধ্যে আলো
(চতুর্থ অংশ)
পরীর ফিরে আসা
হাসান ঘুরে দাঁড়াল। পরিচিত সেই কণ্ঠস্বর, পরিচিত সেই মিষ্টি সুবাস!
বাতাসের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ল। অন্ধকারের মাঝেও মনে হচ্ছিল, চারপাশে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
রাশেদ ও মেয়েটি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
"পরী!" হাসান ধীরে ধীরে বলল।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই রহস্যময় সত্তা—পরী নূরসাবা। তার চোখের গভীরে ছিল অদ্ভুত এক মায়া, কিন্তু মুখে ছিল এক কঠিন বার্তা।
পরীর সতর্কতা
পরী নূরসাবা ধীরে ধীরে হাসানের দিকে এগিয়ে এল।
"তুমি বিপদের মধ্যে আছো, হাসান। তোমার শত্রুরা তোমার শেষ দেখতে চায়।"
হাসান এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল।
"আমি জানি, কিন্তু আমি পিছু হটবো না। সত্যের জন্য লড়াই করে যাবো!"
পরী নূরসাবা গভীরভাবে তাকাল।
"সত্যের পথ কঠিন, হাসান। এটা শুধু শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, বরং নিজের ভেতরের শয়তানের সাথেও যুদ্ধ। তুমি কি প্রস্তুত?"
হাসান কিছু বলল না, শুধু চোখ বন্ধ করল।
পরীক্ষার সামনে
পরী নূরসাবা একপাশে তাকিয়ে বলল—
"এই মেয়েটিকে বিশ্বাস করো, সে তোমার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু মনে রেখো, সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা আসছে।"
মেয়েটি এবার মুখ খুলল, "তাহলে তুমি আমাদের সাহায্য করবে?"
পরী নূরসাবা হালকা হাসল।
"আমি সবসময় থাকবো, কিন্তু আমার সাহায্য পেতে হলে তোমাদের ঈমান থাকতে হবে।"
শেষ মুহূর্তের সংকেত
তখনই, দূর থেকে একটা গর্জন ভেসে এলো।
হাসান দ্রুত চারপাশ দেখল।
জাবের বলল, "আমাদের এখনই বের হতে হবে!"
পরী নূরসাবা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল, আর তার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো—
"সাবধান, হাসান! সত্যের জন্য তোমাকে বড় মূল্য দিতে হবে!"
হাসান শিহরিত হলো।
নতুন লড়াই শুরু
এবার সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।
তাদের সামনে এক ভয়ংকর রাত অপেক্ষা করছে…
(চলবে…)
Plis probrte khondo taratri din
উত্তরমুছুনMasaallah
উত্তরমুছুনParir khondo taratari cai
উত্তরমুছুনNice
উত্তরমুছুন