GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

পরীর ছোঁয়া (৩৭তম খণ্ড)

 পরীর ছোঁয়া (৩৭তম খণ্ড)

হাসানের রহস্যময় এক রাত্রি, যেখানে সত্য ও মিথ্যার লড়াই শুরু হয়।
সত্যের পথে চলার জন্য হাসানের প্রস্তুতি শুরু হলো। কী অপেক্ষা করছে তার জন্য? জানতে পড়ুন ৩৭তম খণ্ড।


রাতের অন্ধকারে চাঁদের মৃদু আলো গাছের পাতায় পড়ে এক মোহনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করছিল। বাতাসে হালকা শীতলতা, আর দূর থেকে ভেসে আসা কোনো এক রাতজাগা পাখির ডাক যেন পরিবেশকে আরও রহস্যময় করে তুলছিল।

হাসান জানালার পাশে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার চিন্তাগুলো অদ্ভুতভাবে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিন আগেও তার জীবন ছিল সাধারণ, কিন্তু এখন সে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, যা সে কখনো কল্পনাও করেনি। এক রহস্যময় মেয়ের আগমন, তার কথাবার্তা, আচরণ—সবকিছুই যেন ধীরে ধীরে হাসানের জীবনকে বদলে দিচ্ছে।


সে যখন চিন্তায় মগ্ন, ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। হাসান ধীর পায়ে দরজার কাছে গিয়ে খুলতেই দেখতে পেল, সে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে অদ্ভুত এক রহস্য, যেন কোনো গোপন সত্য লুকিয়ে আছে।


"তুমি আবার এখানে?" হাসানের কণ্ঠে বিস্ময়।

মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর ধীর কণ্ঠে বলল, "আমার তোমার সঙ্গে কথা আছে।"


হাসান একটু বিরক্ত হলো। "এখন রাত অনেক হয়েছে। সকালে কথা বলা যাবে না?"

মেয়েটি এক পা বাড়িয়ে বলল, "এটা এমন এক বিষয়, যা সময় অপেক্ষা করবে না।"

হাসান বুঝতে পারল, বিষয়টি গুরুতর হতে পারে। সে দরজাটা সম্পূর্ণ খুলে দিল। মেয়েটি ঘরে প্রবেশ করল, আর হাসানের মনে এক অজানা কৌতূহল জন্ম নিল।


মেয়েটি কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বলল, "তুমি কি কখনো এমন অনুভব করেছ যে, কেউ তোমাকে নজরে রাখছে?"


হাসানের কপালে ভাঁজ পড়ল। "না, এমন কিছু মনে হয়নি। কিন্তু আজকাল কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।"


মেয়েটি মাথা নাড়ল। "সেগুলো নিছক কাকতালীয় নয়। তোমাকে থামানোর জন্য কেউ না কেউ কাজ করছে।"


হাসান ভাবনার গভীরে তলিয়ে গেল। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাগুলো মনে পড়ল—কেউ তার ফোনে অদ্ভুত বার্তা পাঠিয়েছিল, তার ঘরের সামনে অচেনা কিছু মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছিল, এমনকি কয়েকদিন আগে কেউ তার নাম ধরে ডাকলেও সে কাউকে দেখতে পায়নি।


"তুমি কী বলতে চাচ্ছ?" হাসানের চোখে প্রশ্ন।


মেয়েটি নিচু স্বরে বলল, "তুমি হয়তো বুঝতে পারছ না, কিন্তু যারা অন্যায়ের পক্ষে, তারা কখনো চায় না যে সত্য প্রচার হোক। তোমার সাহসিকতা, তোমার প্রশ্ন করা মানসিকতা—সব কিছুই কারও না কারও জন্য হুমকি।"


হাসান চিন্তিত হয়ে গেল। "তাহলে আমার করণীয় কী?"


মেয়েটি একটু হাসল। "প্রস্তুত হও। তুমি যদি সত্যের পথে থাকতে চাও, তবে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এগোতে হবে।"


হাসান গভীরভাবে ভাবতে লাগল। সত্যের পথে চলার জন্য যে বিপদ আসবে, সে তা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু এই নতুন রহস্যময় পরিস্থিতি তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ তৈরি করল।


হঠাৎ বাইরে কোনো এক শব্দ শোনা গেল। হাসান তৎক্ষণাৎ জানালার দিকে তাকাল। অন্ধকারে কিছু ছায়ামূর্তি নড়াচড়া করছে।


"তারা চলে এসেছে," মেয়েটি ফিসফিস করে বলল।


হাসান দ্রুত আলো নিভিয়ে দিল। ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল, কিন্তু জানালার ফাঁক দিয়ে সে দেখতে পেল, কয়েকজন লোক ছায়ার মতো নীরবে এগিয়ে আসছে।


মেয়েটি বলল, "তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস করো, তাহলে এখনই বের হতে হবে।"


হাসান কিছুটা দ্বিধায় পড়ল। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল। "আচ্ছা, চলো।"


তারা পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গলির ভেতর ঢুকে পড়ল। রাতের অন্ধকার তাদের লুকিয়ে রাখল, কিন্তু পেছনে ধ্বস্তাধ্বস্তির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। যেন কেউ জোরপূর্বক দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে।


"তারা কি আমাদের খুঁজে পাবে?" হাসান ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।


মেয়েটি মাথা নাড়ল। "তুমি নিরাপদে থাকলে সময়মতো সব বুঝতে পারবে।"


হাসান আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। তারা দ্রুত পায়ে অন্ধকার পথে অদৃশ্য হয়ে গেল।


কিছুক্ষণ হাঁটার পর তারা একটি পুরোনো মসজিদের সামনে এসে দাঁড়াল। মসজিদটি ছোট হলেও স্থাপত্যশৈলীতে অপূর্ব। চারপাশ নিস্তব্ধ, শুধু মৃদু বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।


"আমরা এখানে কেন এসেছি?" মাহির অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।


মেয়েটি মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করল। "তুমি কি জানো, নিরাপত্তা কোথায় পাওয়া যায়? আল্লাহর ঘরেই।"


হাসান একটু থমকে গেল। সত্যিই তো, পৃথিবীর সব বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল আল্লাহ। সে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করল, আর মেয়েটির কথাগুলো গভীরভাবে ভাবতে লাগল।


এই রাত, এই রহস্যময় পরিস্থিতি, আর এই নতুন চ্যালেঞ্জ—সব মিলিয়ে হাসানের জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরু হলো।


@@@


হাসানের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল। কয়েকদিন ধরে সে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছিল, আজ যেন তার সামনে ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই উত্তরগুলো কি তাকে শান্তি দেবে, নাকি আরও বিভ্রান্ত করবে?


রাতের আকাশে চাঁদ স্পষ্ট, তার আলোয় পুরো উঠোন আলোকিত। হাসান গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল। হঠাৎই তার কানে ভেসে এলো এক রহস্যময় কণ্ঠস্বর। "তুমি কি সত্য জানতে চাও?"


সে দ্রুত চারপাশে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। কণ্ঠস্বরটি আবারও বলল, "তুমি কি সত্যের জন্য প্রস্তুত?"


হাসান এবার সাহস করে বলল, "আমি সত্য জানতে চাই।"


একজন রহস্যময় ব্যক্তি ছায়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত শক্তি। তিনি ধীরে ধীরে হাসানের দিকে এগিয়ে এলেন। "তবে এসো, আমি তোমাকে এমন কিছু দেখাবো যা তোমার বিশ্বাসকে আরও মজবুত করবে।"


মেয়েটি পাশ থেকে দেখছিল, যেন এই মুহূর্তটির জন্যই অপেক্ষা করছিল।


তারা ধীরে ধীরে ঘরের ভেতর প্রবেশ করল। ঘরের এক কোণে রাখা ছিল একটি পুরনো কাঠের বাক্স। রহস্যময় ব্যক্তি বাক্সটির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, "এখানে এমন কিছু আছে যা সত্যকে প্রকাশ করে। কিন্তু এটি দেখার আগে তোমাকে মনে রাখতে হবে— যখন তুমি সত্য জানতে পারবে, তখন আর আগের মতো থাকতে পারবে না।"


হাসানের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল উত্তেজনায়। সে ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল।


ব্যক্তিটি বাক্স খুললেন, এবং হাসানের সামনে এক চমকপ্রদ দৃশ্য উন্মোচিত হলো। ভেতরে রাখা ছিল কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, কিছু চিঠি এবং একটি পুরনো, হলদে হয়ে যাওয়া ডায়েরি।


"এগুলো কী?" হাসান কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল।


রহস্যময় ব্যক্তি শান্ত গলায় বললেন, "এগুলো এমন কিছু মানুষের লেখা, যারা সত্যের পথে চলতে গিয়ে বড় মূল্য দিয়েছে। কেউ শহীদ হয়েছে, কেউ জীবনভর সংগ্রাম করেছে, আর কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিখোঁজ হয়েছে।"



হাসান হাত ডায়েরির দিকে বাড়িয়ে দিল। প্রথম পাতায় লেখা ছিল—


‘সত্যের পথ কখনো সহজ নয়, কিন্তু এটি একমাত্র পথ যা আত্মাকে মুক্তি দেয়। যে এই পথ বেছে নেবে, তাকে শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে, ভালোবাসার মানুষদের হারাতে হবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আলোর পথে পৌঁছাবে।’


লেখাগুলো পড়ে হাসানের হৃদয় কেঁপে উঠল। যেন সে নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে এই পাতার প্রতিটি শব্দে।


মেয়েটি পাশে দাঁড়িয়ে বলল, "তুমি যদি সত্যিকারের ন্যায়ের পথে চলতে চাও, তবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তোমার সামনে আরও অনেক বাধা আসবে, অনেক শত্রু দাঁড়াবে। তুমি কি তা সহ্য করতে পারবে?"


হাসান গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, "আমি প্রস্তুত। যদি এটি সত্যের পথ হয়, তবে আমি পিছু হটব না।"


ব্যক্তিটি হাসলেন, যেন হাসান এই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বললেন, "তাহলে আজ থেকে তোমার যাত্রা শুরু হলো। কিন্তু মনে রেখো, প্রতিটি সত্যের জন্য মূল্য দিতে হয়। এবং তোমাকে সেই মূল্যের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"



রাত গভীর। হাসান বসে আছে ছোট্ট একটি মাটির ঘরে। বাইরে বাতাস বইছে, যেন প্রকৃতি তার সামনে আসন্ন ঝড়ের সংকেত দিচ্ছে।


মেয়েটি ধীরে ধীরে তার পাশে এসে বসল। "তুমি কি দ্বিধায় পড়ে গেছো?" সে প্রশ্ন করল।


হাসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "সত্যের পথ কঠিন হবে জানতাম, কিন্তু এতটা কঠিন হবে কল্পনাও করিনি।"


মেয়েটি মৃদু হেসে বলল, "তবে কি পিছু হটতে চাও?"


হাসান মাথা নাড়ল, "না, আমি পিছু হটবো না। আমি জানি, এই পথেই প্রকৃত মুক্তি আছে। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে, আমি কি পারবো? আমি কি সত্যিই প্রস্তুত?"


মেয়েটি তার দিকে তাকাল, তার চোখে গভীর মমতা। "আল্লাহ যার অন্তরে সত্যের আলো জ্বালিয়ে দেন, তাকে আর কিছু দরকার হয় না। তুমি শুধু নিজের নিয়ত ঠিক রাখো, আল্লাহ তোমাকে শক্তি দেবেন।"


এমন সময় দরজায় জোরে কড়া নাড়ার শব্দ হলো। হাসান চমকে উঠল।


"কে ওখানে?" মেয়েটি নিচু গলায় বলল।


কোনো উত্তর এলো না, কিন্তু দরজায় আবারও আঘাত পড়লো, এবার আরও জোরে।


মাহির উঠে দাঁড়াল। সে জানত, সত্যের পথে হাঁটতে গেলে শত্রুরা তাকে থামানোর চেষ্টা করবে।


সে ধীরে ধীরে দরজার কাছে এগিয়ে গেল এবং হাত বাড়িয়ে দরজার কপাট খুলে দিল।


এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস ঘরের ভেতর প্রবেশ করল। বাইরে অন্ধকারের মধ্যে কয়েকটি ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের চোখে বিদ্বেষের আগুন জ্বলছিল।


"তুমি কি মনে করেছো, সত্যের পথে হাঁটবে আর আমরা কিছু বলবো না?" তাদের নেতা কঠিন কণ্ঠে বলল।


হাসানের মুখে দৃঢ়তা ফুটে উঠল। সে জানত, এই রাতের পরীক্ষা কঠিন হবে। কিন্তু সে প্রস্তুত।

চলবে....


২টি মন্তব্য:

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"