পরীর ছোঁয়া (৪৩তম খণ্ড)
 |
| পরীর ছোঁয়া ৫০তম খণ্ড – সত্য ও ন্যায়ের চূড়ান্ত বিজয়! হাসান ও তার সঙ্গীদের ত্যাগের গল্প, যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
|
শত্রুরা যখন গ্রাম ছেড়ে চলে গেল, তখন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্তু হাসান জানত, এটা শেষ নয়। শত্রুরা আবার ফিরে আসতে পারে, নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারে।
নতুন সংকেত
সুফিয়ান এসে বলল, “আমাদের একজন গুপ্তচর খবর এনেছে, শত্রুরা গোপনে একত্রিত হচ্ছে। এবার তারা বাইরের আরও কিছু দলকে সঙ্গে নিচ্ছে।”
জাবের বলল, “তাহলে এবার লড়াই আরও কঠিন হবে।”
হাসান দৃঢ় স্বরে বলল, “আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তারা আমাদের ঈমান পরীক্ষা করতে চায়, কিন্তু আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।”
শত্রুর ফাঁদ
এরপরের দিন রাতে রহস্যময় কিছু ঘটনা ঘটতে লাগল। গ্রামের আশপাশে অপরিচিত ছায়া দেখা যাচ্ছিল। কিছু জায়গায় ধোঁয়া উড়ছিল। হঠাৎ একজন পাহারাদার দৌড়ে এসে বলল, “আমাদের কিছু লোক নিখোঁজ হয়েছে!”
হাসান দ্রুত লোকজন জড়ো করল। “এটা শত্রুর নতুন ফাঁদ। আমাদের বুদ্ধি খাটিয়ে চলতে হবে।”
সুফিয়ান বলল, “আমাদের নিখোঁজ লোকদের খুঁজতে হবে।”
তারা রাতের অন্ধকারে সতর্কতার সঙ্গে খোঁজ করতে বের হলো। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একটি পরিত্যক্ত কুটির দেখতে পেল। ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল, নিখোঁজ লোকগুলো বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে।
প্রতারণার জাল
ঠিক তখনই বাহির থেকে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। শত্রুরা ফাঁদে ফেলেছে!
একজন শত্রু ব্যঙ্গের হাসি দিয়ে বলল, “তোমরা ভেবেছিলে, আমাদের হারিয়ে দিয়েছ? এবার আমরা তোমাদের শেষ করে দেব!”
হাসান বলল, “আমাদের ধ্বংস করতে এসে তোমরাই ধ্বংস হবে, ইনশাআল্লাহ।”
শত্রুরা আক্রমণ করতে এলো, কিন্তু হাসান ও তার দল তৈরি ছিল। তারা দ্রুত বাঁধন খুলে সবাইকে মুক্ত করল। তারপর শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হলো।
আল্লাহর সাহায্য
যুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন হঠাৎ আকাশে মেঘ ঘনিয়ে এলো। প্রবল বাতাস বইতে শুরু করল। ধূলিঝড়ের মতো কিছু একটা শত্রুদের চোখে প্রবেশ করল, তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না।
হাসান উচ্চস্বরে বলল, “আল্লাহ আমাদের সাহায্য করছেন! এখনই আক্রমণ করো!”
গ্রামবাসীরা একযোগে আক্রমণ করল। শত্রুরা দিশেহারা হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো।
নতুন প্রতিজ্ঞা
যুদ্ধ শেষ হলে গ্রামে ফিরে সবাই শুকরিয়া আদায় করল। বৃদ্ধ গ্রামপ্রধান শওকত হোসেন বললেন, “তোমাদের কারণে আজ সত্যের বিজয় হলো।”
হাসান বলল, “এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা কখনো অন্যায়ের সামনে মাথা নত করব না।”
সুফিয়ান বলল, “কিন্তু শত্রুরা আবার ফিরে আসতে পারে।”
হাসান মুচকি হেসে বলল, “তাহলে আমরা আবারও লড়াই করব। কারণ সত্য কখনো পরাজিত হয় না।”
@@@
শত্রুর শেষ চাল
গ্রামের মানুষ যখন মনে করছিল যে সব বিপদ কেটে গেছে, তখনই এক ভয়ংকর সংবাদ এলো। এক গুপ্তচর দৌড়ে এসে বলল, “শত্রুরা আবার জোট বেঁধেছে, এবার তাদের সাথে বাইরের শক্তিশালী বাহিনীও আছে!”
হাসান চুপচাপ শুনল। জাবের বলল, “এবার কি আমরা টিকতে পারব?”
হাসান শান্ত স্বরে বলল, “আমরা কখনো অন্যায়ের সামনে মাথা নত করব না। যদি সত্যের জন্য লড়াই করতে হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।”
গ্রামের সব যুবকরা একত্রিত হলো। তারা জানত, এবারকার যুদ্ধ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য।
পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি
হাসান বলল, “আমরা রণকৌশল ঠিক করব। সরাসরি শক্তির লড়াই করলে জয় পাওয়া কঠিন হবে। আমাদের বুদ্ধি খাটিয়ে শত্রুদের ফাঁদে ফেলতে হবে।”
সুফিয়ান বলল, “আমরা কীভাবে তাদের ফাঁদে ফেলব?”
হাসান মাটিতে একটা মানচিত্র আঁকল। “আমরা কিছু মানুষকে গ্রামের বাইরে রেখে দেব, যেন শত্রুরা ভাবে গ্রাম খালি পড়ে আছে। যখন তারা হামলা চালাবে, তখন আমরা চারদিক থেকে আক্রমণ করব।”
গ্রামের যোদ্ধারা প্রস্তুত হলো। অস্ত্র তৈরি করা হলো, খাদ্যের মজুদ নিশ্চিত করা হলো, মহিলারা ও বাচ্চারা নিরাপদ স্থানে সরে গেল।
শত্রুর আক্রমণ ও হাসানের কৌশল
রাত গভীর হলে শত্রুরা আক্রমণ চালাল। তারা দেখল, গ্রামে কোনো প্রতিরোধ নেই। শত্রুদের নেতা বিজয়ের উল্লাস করল, কিন্তু তখনই চারদিক থেকে তলোয়ারের ঝনঝনানি শোনা গেল!
হাসান ও তার সঙ্গীরা দিক দিক থেকে বেরিয়ে এল। শত্রুরা হতবাক!
সুফিয়ান চিৎকার করে বলল, “এবার আল্লাহর সাহায্যে সত্যের জয় আসবে!”
তীব্র যুদ্ধ শুরু হলো। হাসান একজন পরাক্রমশালী যোদ্ধার মতো লড়াই করছিল। তার সাহস ও বুদ্ধিমত্তার কারণে শত্রুরা ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়তে লাগল।
শত্রুদের পরাজয় ও শেষ সময়ের ঘোষণা
যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলল। একসময় শত্রুদের প্রধান গর্জন করে বলল, “আমরা পিছু হটছি! এই গ্রাম জয় করা সম্ভব নয়!”
শত্রুরা দ্রুত পালিয়ে গেল।
হাসান বলল, “এই জয় আমাদের নয়, আল্লাহর রহমতে সত্যের জয় হয়েছে।”
গ্রামবাসীরা আনন্দে কেঁদে ফেলল। বৃদ্ধ গ্রামপ্রধান শওকাত হোসেন এসে বললেন, “তুমি আমাদের জন্য আশীর্বাদ, হাসান। কিন্তু এখন আমাদের নতুন ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।”
নতুন দায়িত্ব ও ভবিষ্যতের পথচলা
শত্রুরা পরাজিত হলেও হাসান জানত, সত্যের পথ কঠিন। সে বলল, “আমাদের গ্রামের সবাইকে শিক্ষিত করতে হবে, যাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।”
জাবের বলল, “আমাদের কী করা উচিত?”
হাসান বলল, “পবিত্র কোরআন আমাদের পথ দেখাবে। আমরা এখন থেকে দ্বীনের পথে চলব, ন্যায় ও ভালোবাসার সমাজ গড়ব।”
সুফিয়ান বলল, “তাহলে আমরা আর যুদ্ধ করব না?”
হাসান মুচকি হেসে বলল, “যুদ্ধ তখনই করতে হয়, যখন অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমাদের কাজ হবে ন্যায় ও শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়া।”
গ্রামবাসীরা একসাথে তাকবির দিল—
“আল্লাহু আকবার! সত্যের জয় চিরকাল থাকবে!”
(৪৩ তম খণ্ড সমাপ্ত। পরবর্তী খণ্ডে হাসানের নতুন দায়িত্ব ও ভবিষ্যতের পথচলার গল্প থাকবে।)
লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"