GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

ধর্ম দিয়ে কি দেশ চলে? — এক যুক্তিপূর্ণ জবাব (খণ্ড-৫)

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – ৫ম খণ্ড (১ম অংশ)

ধর্ম দিয়ে দেশ চলে কি না — ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ

এক নাস্তিকের প্রশ্ন ও এক আলেমের শান্তিপূর্ণ জবাবে ইসলামি রাষ্ট্রনীতি




“ধর্ম দিয়ে কি দেশ চলে?” এক মারাত্মক প্রশ্নের বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব।


সন্ধ্যার আলোয় ঢাকা পড়া আকাশের নিচে এবার নতুন একজন উঠল প্রশ্নের আসরে। তার নাম আলমাছ—নিজেকে সমাজতান্ত্রিক ও যুক্তিবাদী দাবি করে।


সে শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের সামনে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলল


“শায়খ, আমার প্রশ্ন হলো—ধর্ম দিয়ে কি কখনো দেশ চলে?

আপনারা সব সময় বলেন, ‘ইসলামী রাষ্ট্র’, ‘শরিয়াহ আইন’।

কিন্তু আজকের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তো ধর্মনিরপেক্ষতায় দাঁড়িয়ে।

ধর্ম তো ব্যক্তি জীবন বিষয়, রাষ্ট্রের নয়!”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক ধীরে মাথা নাড়লেন। মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন—


“আলমাছ, এই প্রশ্নটা ছোট নয়—বড়ই বিষময়।

তবে উত্তরটাও বড়। শুনো ধীরে ধীরে।”


শায়খের প্রথম কথা: ধর্মহীন নৈতিকতা কি টিকতে পারে?


“তুমি বলো ধর্ম ব্যক্তি জীবন বিষয়—ঠিক আছে।

তবে বলো তো, একজন রাষ্ট্রনায়ক যদি বলে, ‘সত্য বলা জরুরি নয়’,

তাহলে কি রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার থাকবে?

একজন অর্থমন্ত্রী যদি মুনাফা আর সুদের পার্থক্য না বোঝে,

তাহলে অর্থনীতির নামে ধোঁকা চলবে না?”


আলমাছ বলল—

“তাহলে আপনি বলছেন ধর্ম ছাড়া দেশ চলে না?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হেসে বললেন—


“আমি বলছি—নৈতিকতা ছাড়া দেশ চলে না, আর সেই নৈতিকতার সর্বোচ্চ ভিত্তি যদি কোথাও থাকে,

তা হলো আল্লাহর দেয়া ধর্ম।”


ইসলামী রাষ্ট্র মানে কি জবরদস্তি?


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আবার বললেন—


“আলমাছ, ইসলামি রাষ্ট্র মানে হাতিয়ার দিয়ে মানুষকে মুসলিম বানানো নয়।

বরং ইসলামি রাষ্ট্র মানে—ন্যায়, নিরাপত্তা, করুণার ছায়া।

রাসূল সা. এর মদিনা রাষ্ট্রে ইহুদি, খ্রিস্টান, এমনকি মুনাফিকরাও ছিল—তাদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।

তবে রাষ্ট্রের আইন ইসলামি ছিল—সবার জন্য ন্যায়ের নিশ্চয়তা।”


ধর্মনিরপেক্ষতা কি সত্যিই নিরপেক্ষ?


“তুমি বলো, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ মানে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা।

তবে আমি বলি—যেখানে ‘ধর্মকে দূরে রাখো’ বলা হয়,

সেখানে আসলে ঈমানদারদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়,

আর নাস্তিক্যবাদ স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়।

এই কি নিরপেক্ষতা?”


আলমাছ এবার একটু চুপ হয়ে যায়।


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক তখন বললেন—


“ধর্ম দিয়ে দেশ চললে, সেই দেশ হয় ইনসাফভিত্তিক।

ধর্ম ছাড়া দেশ চললে, সেটা হয় স্বার্থ আর শক্তির খেলা।”


(চলবে…)



নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – ৫ম খণ্ড (২য় অংশ)


“ধর্ম দিয়ে কি দেশ চলে?”—প্রশ্নের ধারালো জবাব (শেষাংশ)


আলমাছ এবার একটু নিচু স্বরে বলল

“আপনি যেটা বললেন, সেটা তো আদর্শ কথা।

কিন্তু বাস্তবে তো ইসলামী রাষ্ট্র মানেই কট্টরতা, শাস্তি আর স্বাধীনতা হরণ।

তালেবান, আইএস এসব তো ইসলামি রাষ্ট্র দাবি করে, তাই না?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার গম্ভীর কণ্ঠে বললেন—


“এই প্রশ্ন আজকের যুবসমাজের মনে সবচেয়ে বেশি গাঁথা—তাই এই উত্তরের গভীরতা বোঝা জরুরি।”


ইসলামি রাষ্ট্র বনাম সন্ত্রাসবাদ: তুলনা নয়, বিভ্রান্তি


“দেখো আলমাছ, যারা রাসূল সা. এর নামে মানুষ হত্যা করে,

তারা রাসূল সা. এর শিক্ষাকে একবারও ভালোভাবে বোঝেনি।

তালেবান বা আইএস নয়—

আমরা যখন বলি ইসলামি রাষ্ট্র, আমরা বুঝি মদিনার মতো শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র,

যেখানে অমুসলিম নাগরিকরাও নিরাপদে বাস করে।”


আলমাছ বলল—

“তবে কি আপনি বলছেন ইসলামি রাষ্ট্র গণতন্ত্রের বিকল্প?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—


“গণতন্ত্র যদি মানে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মত—তাহলে সত্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু ইসলামী শাসন মানে ন্যায়ের শাসন—যেখানে সংখ্যার বদলে সত্য নির্ধারক।

যেখানে শাসকও জবাবদিহিতার আওতায়।

ইসলামি রাষ্ট্র মানে—ক্ষমতা নয়, খিদমত।”


কোরআনের দৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও আইন


“কোরআনে আল্লাহ বলেন—

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمۡ بِمَا أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَـٰفِرُونَ

‘যে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার করে না, তারা কাফের।’

(সূরা মায়িদা: ৪৪)


এই আয়াত কোনো দল বা দেশের হাতে নয়, বরং আমাদের কাছে এক সাফ বার্তা—

আল্লাহর বিধানই চূড়ান্ত, আর সেই বিধানের আলোয় রাষ্ট্র পরিচালিত হলে তবেই আসবে ইনসাফ।”


শেষ কথায় আস্থা ও প্রশ্ন


আলমাছ এবার চোখ নামিয়ে বলল—

“শায়খ, আজ আপনি আমার ভেতরের বহু ভুল ধারণা ভেঙে দিলেন।

তবে আমি এখনো ভাবছি—মানুষের তৈরি আইন আর আল্লাহর আইন কি একসঙ্গে চলতে পারে না?”


শায়খ মৃদু হেসে বললেন—

“আল্লাহর আইন সর্বোচ্চ, মানুষের আইন যদি তা বিরোধী না হয়, তাহলে তারও স্থান আছে।

তবে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব থাকবে কোরআনের হাতে—এই বিশ্বাস থেকেই তৈরি হয় ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র।”


আলমাছের চোখে যেন নতুন এক আলো—

ভেতর থেকে সে বুঝে যাচ্ছে—ধর্ম দিয়ে দেশ চলে, যদি সেই ধর্ম হয় সত্য আর মানবতার প্রতীক—ইসলাম।



(পরবর্তী খণ্ডে আসবে—আত্মা, পরকাল ও বিচার দিবস নিয়ে যুক্তিবাদীদের চ্যালেঞ্জ এবং জবাব)



লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।


৪টি মন্তব্য:

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"