GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – (খণ্ড ৭)

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৭ (১ম অংশ)

তওবা ও আল্লাহর দয়া নিয়ে নাস্তিক ও আলেমের যুক্তিভিত্তিক আলোচনা
তওবা ও আল্লাহর দয়ার ব্যাখ্যায় এক চমৎকার ইসলামী যুক্তি ও আত্মানুসন্ধানের গল্প


“আল্লাহ যদি দয়ালু হন, তবে জাহান্নাম কেন?”


বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় কফি শপের জানালায় বসে আলমাছ আবার মুখ খুলল।


আলমাছ:

“আপনার যুক্তিগুলো গতকাল মাথায় ঘুরেছে সারারাত।

তবে একটা প্রশ্ন আমার বুক পুড়িয়ে দিচ্ছে…”


শায়খ:

“বলুন, দ্বিধা করবেন না।”


আলমাছ:

“আপনারা বলেন, আল্লাহ দয়ালু, করুণাময়, আর সব ক্ষমাশীল।

তাহলে তিনি মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে কেন দিবেন?

দয়ালু কেউ কি আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মাথা নিচু করলেন। কপালে চিন্তার রেখা।

তারপর ধীরে বললেন—


“প্রশ্নটা সহজ না, কিন্তু উত্তরটা গভীর ও সুন্দর।

চলো ধাপে ধাপে বুঝি—

প্রথমেই ভাবো, তুমি যদি দয়ালু হও, তবে কি কখনও কাউকে শাস্তি দাও না?”


আলমাছ:

“শাস্তি দিলে তো দয়া থাকল না।”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:

“তাহলে তুমি যদি শিশু নির্যাতনকারীকে আজীবন কারাগারে দাও—তবে কি তুমি নিষ্ঠুর?

না কি এই শাস্তিটাই মানবতার প্রতি দয়া?”


আলমাছ চুপ। শায়খ আবার বললেন—

“আল্লাহর দয়া মানে সব অন্যায় ছেড়ে দেওয়া না।

আল্লাহর দয়া মানে, তিনি কাউকে না জানিয়ে, না বুঝিয়ে শাস্তি দেন না।

তিনি কিতাব পাঠিয়েছেন, নবী পাঠিয়েছেন, একাধিক সুযোগ দিয়েছেন।

তারপরও যদি কেউ অহংকারে সত্যকে অস্বীকার করে—তাকে শাস্তি দেওয়া ন্যায়বিচারের দাবী।”


একটি আয়াত:


وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا

“আমি কখনো কোনো জাতিকে শাস্তি দিই না, যতক্ষণ না তাদের কাছে রাসূল পাঠাই।”

(সূরা আল-ইসরা, আয়াত ১৫)


শায়খ বললেন—

“এই আয়াতই আল্লাহর দয়ার প্রমাণ।

তিনি কাউকে শাস্তি দেন না, যতক্ষণ না সে বারবার সুযোগ পেয়েও অস্বীকার করে।”


আলমাছ আবার প্রশ্ন করল—

“তাহলে চিরস্থায়ী শাস্তিটা কি একটু বেশি না?”


শায়খ হাসলেন:

“এই প্রশ্নটাই দ্বিতীয় ধাপ… চল আমরা একটু ব্যাখ্যায় যাই পরের অংশে।”


(চলবে… খণ্ড ৭, দ্বিতীয় অংশে: ‘চিরস্থায়ী শাস্তির যৌক্তিকতা ও সত্যিকার দয়ালু রূপ’)



নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৭ (২য় অংশ)

“চিরস্থায়ী শাস্তির যৌক্তিকতা ও দয়ার পরিপূর্ণ রূপ”


আলমাছ:
“শাস্তি দেওয়া মানে অপরাধের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ঠিক আছে।
কিন্তু আমি তো বুঝতেই পারছি না—এই দুনিয়ার ৬০–৭০ বছরের পাপের জন্য চিরকাল জাহান্নাম!
এটুকু সময়ের ভুলের জন্য অনন্তকাল আগুন? এটা কি ন্যায়বিচার?”

শায়খ:
“চমৎকার প্রশ্ন। এবার যুক্তি দিয়ে ভাবো—
আচরণের শাস্তি সময় নয়, অপরাধের গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারিত হয়।”

আলমাছ ভ্রু কুঁচকাল। শায়খ ব্যাখ্যা করলেন—
“ধরো, তুমি এক সাধারণ পিয়নকে চড় মারলে, হয়তো তেমন কিছু হবে না।
কিন্তু যদি তুমি দেশের প্রধান বিচারপতিকে প্রকাশ্যে চড় মারো, তখন কি শাস্তি এক হবে?
অপরাধ একই—চড় মারা। কিন্তু অবস্থান ও মর্যাদার কারণে তার গুরুত্ব অনেক বেশি হয়।”

আলমাছ ধীরে মাথা নেড়ে বলল:
“তাহলে আপনি বলতে চান, আল্লাহর মর্যাদা যেহেতু সর্বোচ্চ, তাই তাঁর সঙ্গে বিদ্রোহ করলে শাস্তিও সর্বোচ্চ?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন। বললেন:
“ঠিক তাই। এই বিদ্রোহ, এই অবজ্ঞা, এই অহংকার—এটাই চিরস্থায়ী জাহান্নামের কারণ।
কেউ যদি আল্লাহর অস্তিত্ব বুঝেও অস্বীকার করে, তাঁর বিধান নিয়ে ঠাট্টা করে,
তাহলে সে শুধু একটা ভুল নয়, চরম এক বিদ্রোহ করেছে।”


একটি আয়াত:

إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَمَاتُواْ وَهُمْ كُفَّارٌ أُو۟لَـٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ ٱللَّهِ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةِ وَٱلنَّاسِ أَجْمَعِينَ - خَـٰلِدِينَ فِيهَا
“যারা কুফরী করল এবং কাফির অবস্থায় মারা গেল, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবজাতির লানত রয়েছে। তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।”
(সূরা বাকারা, আয়াত ১৬১–১৬২)



শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“তবে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে, না বুঝে কোনো ভুল করে ফেলে—
তাকে আল্লাহ ক্ষমা করেন, দয়া করেন, এমনকি সামান্য তওবাতেই মাফ করে দেন।
তোমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে তিনি নবী পাঠিয়েছেন, কিতাব দিয়েছেন,
আর শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন।”

আলমাছ:
“তাহলে সত্যিকার অর্থে জাহান্নাম কার জন্য?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“সেইসব অহংকারী, ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিদ্রোহীদের জন্য—
যারা আল্লাহর আলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ইচ্ছাকৃতভাবে, এবং দুনিয়াকে চিরস্থায়ী মনে করে।”


(চলবে… খণ্ড ৭, তৃতীয় অংশে: ‘তওবা ও আল্লাহর দয়ার সীমানা’)


নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৭ (৩য় অংশ)

“তওবা ও আল্লাহর দয়ার সীমানা”


আলমাছ:
“আপনার কথাগুলো শুনে মনে হলো, আল্লাহ অনেক দয়ালু।
তবে একটা প্রশ্ন—তাঁর দয়ার সীমা কোথায়? সব ভুল কি মাফ হয়?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“তুমিই বলো, মা তার সন্তানকে কতবার মাফ করে?
সন্তান যত ভুল করুক, মা কি তাকে চিরতরে ত্যাগ করে?”

আলমাছ:
“না, মা কখনোই শেষ পর্যন্ত ছাড়ে না।”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক শান্ত কণ্ঠে বললেন:
“তাহলে আল্লাহ, যিনি তোমার মা থেকেও বেশি দয়ালু,
তাঁর কাছে তওবা করলে তিনি কীভাবে ফিরিয়ে দেবেন?”


আল-কুরআনের ঘোষণা:

قُلْ يَـٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ ۚ
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে,
তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।”
(সূরা যুমার, আয়াত ৫৩)


শায়খ:
“এই আয়াত হচ্ছে তওবাকারীর জন্য সবচেয়ে আনন্দের ঘোষণা।
তুমি যদি সত্যিকারের অনুতপ্ত হও, আল্লাহ শুধু তোমাকে মাফই করবেন না—
তোমার গোনাহগুলোকে নেকিতে রূপান্তর করে দেবেন।”


আরও একটি প্রমাণ:

إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلًۭا صَـٰلِحًۭا فَأُو۟لَـٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمْ حَسَنَـٰتٍ
“যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে—
আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলোকে ভালো কাজে পরিণত করে দেবেন।”
(সূরা ফুরকান, আয়াত ৭০)


আলমাছ:
“তাহলে একজন কুফরি করা ব্যক্তি যদি মৃত্যুর আগেই সত্যিকার তওবা করে নেয়,
তবে কি সেও জান্নাতে যেতে পারে?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:
“হ্যাঁ, যদি তা হয় আন্তরিকভাবে, তবে তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
তবে মৃত্যুর পর আর সুযোগ নেই—সেটাই শেষ সীমা।”


আলমাছ চোখ নামিয়ে ফেলল।
তার ভেতরে কাঁপন। চিন্তার গভীরে সে ডুবে গেল।
তাওবা... মাফ... জান্নাত—সবকিছু এখন বাস্তব মনে হচ্ছে তার কাছে।


---

(চলবে… খণ্ড ৮: আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তি)

লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

1 টি মন্তব্য:

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"