GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিক আলমাছের মনে আলোর সঞ্চার | - খণ্ড ১১

 নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | প্রথম অংশ

আলমাছ ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, সন্ধ্যার আলোয় ভাবনার জগতে ডুবে গেছে।

আলমাছের ভাবনার সন্ধ্যা, যেখানে এক চিরন্তন প্রশ্ন জন্ম নেয়—আল্লাহ কি আছেন?


শিরোনাম: শায়খের নীরবতা ও আকাশের আহ্বান


রাত গভীর। আকাশজোড়া নক্ষত্রের ভিড়ে চাঁদের আলো যেন আলমাছের চিন্তার দরজায় নরম কণ্ঠে কড়া নাড়ছে। দিনের আলোয় সে প্রশ্ন করেছে, যুক্তি দিয়েছে, পাল্টা যুক্তি পেয়েছে। কিন্তু এই রাতে শায়খ কেন যেন চুপ।


"শায়খ, আজ আপনি কিছু বলছেন না কেন?"

আলমাছের প্রশ্নে শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন।


"আকাশ দেখেছো আজ?"

"দেখছি, কিন্তু আমি উত্তর চাই। আপনি নীরব কেন?"


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার সোজা হয়ে বসলেন। তাঁর চোখে ছিল গভীর চিন্তার ছাপ।


"আলমাছ, কিছু প্রশ্নের উত্তর আলোতে নয়, নীরবতায় আসে। কিছু সময়ের পর হৃদয় নিজেই আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করতে শেখে।"


আলমাছ একটু হতবাক।


"আপনি কি বলতে চাইছেন আমি নিজে নিজেই উত্তর পেয়ে যাব?"


 "না, আমি বলতে চাইছি, তুমি যখন যুক্তির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাবে, তখনই শুরু হবে ঈমানের যাত্রা। এখন তুমি ভাবো—এই আকাশ, এই নক্ষত্র, এই নিখুঁত হিসেব কিভাবে এল? এর পেছনে কি সত্যিই কোনো সৃষ্টি কর্তা নেই?"


আলমাছ চুপ করে গেল। শায়খও আর কিছু বললেন না। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন শুধু।


এই প্রথম আলমাছ কোনো জবাব দিল না। প্রশ্ন করতে করতে, সে আজ যেন এক নতুন প্রশ্নে নিজেই ডুবে গেছে।



চলবে...



নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | দ্বিতীয় অংশ

শিরোনাম: যুক্তির দেয়াল ভাঙছে, আত্মার দরজা খুলছে

আলমাছ নিজের কক্ষে ফিরে এল। নীরবতা আজ যেন বুকের ওপর চেপে বসেছে। দিনের আলোয় সে অনেক বলেছে—আল্লাহর অস্তিত্ব, আখিরাত, আত্মা—এসব তার কাছে সবসময় গল্প ছাড়া কিছু ছিল না। কিন্তু আজ রাতে শায়খের নীরবতা, আকাশের প্রশান্তি, আর নিজের একাকিত্ব মিলিয়ে তার মনে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—

“যদি সত্যিই আমি ভুল হই?”

আলমাছ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকালো।
"তুই কিসে বিশ্বাস করিস আলমাছ? নিজের বুদ্ধিতে? বিজ্ঞানে? নাকি অহংকারে?"
সে নিজেকে প্রশ্ন করলো।

শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের সেই কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো—
“যে নিজেকে চেনে না, সে কিভাবে তার রবকে চিনবে?”

আলমাছ নিজের বুকের ওপর হাত রাখলো।
সে কি জানে তার ভেতর কী আছে?
সে কি জানে, মৃত্যুর পর কী হবে?

কেউ কি মৃত্যুকে জয় করতে পেরেছে? কেউ কি আত্মাকে বিজ্ঞানে পুরো ব্যাখ্যা করতে পেরেছে?

এই প্রশ্নগুলো তার গর্বিত যুক্তির দেয়ালে ফাটল ধরাচ্ছে।

পরদিন সকালে সে আবার শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের কাছে যায়।

“শায়খ, আপনি গতকাল বলেছিলেন নীরবতায় উত্তর আছে। কিন্তু আমার ভেতরে এখন শুধু ভয় কাজ করছে। ভয়, যদি আমার সব চিন্তা ভুল হয়। ভয়, যদি মৃত্যু পরেই কিছু থাকে। যদি সত্যিই একজন মহান স্রষ্টা থাকেন, যাঁর সামনে আমাকে জবাবদিহি করতে হয়?”

শায়খ এবার স্নিগ্ধ স্বরে বললেন:

 “আলমাছ, তুমি এখন সেই পথে আছো যেখানে একদিন ইবনে হিশাম, ইবনে কায়্যিম, এমনকি পূর্বের কত জ্ঞানী নাস্তিক পা রেখেছিল। ঈমানের শুরু হয় সন্দেহ থেকে নয়, শুরু হয় সত্যকে খোঁজার ইচ্ছা থেকে। আজ তুমি প্রশ্ন করছো, আগামীকাল তুমি সেজদায় যাবে।”

আলমাছ অবাক।

“সেজদা? আমি কি তা পারবো?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন:

 “আল্লাহর কাছে যেতে তোমার নামাজ জানার দরকার নেই, দরকার শুধু একটি চাওয়া:
'হে আমার মালিক, তুমি যদি সত্যি থেকো, তবে আমাকে পথ দেখাও।' এই একটিই যথেষ্ট।”

আলমাছ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুধু বলল:
“শায়খ, আমি চেষ্টা করব।”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক শুধু বললেন:
“তবে আজ রাতে আকাশের নিচে দাড়িয়ে বলো—‘হে অদৃশ্য সত্তা, তুমি যদি সত্যিই থেকে থাকো, তবে আমাকে চিনিয়ে দাও।’ দেখো, কেমন আলো নামে তোমার হৃদয়ে।”

আলমাছ মাথা নিচু করলো। তার গর্বিত চিবুকের বাঁধ ভেঙে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

প্রথমবার সে ভয় পেল না, বরং যেন প্রশান্তি অনুভব করল।


চলবে…



নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | তৃতীয় অংশ

শিরোনাম: সন্ধ্যার আকাশে এক চিরন্তন প্রশ্ন

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আলমাছ। আকাশে তারা জ্বলছে, যেন কোনো অলৌকিক চোখ তাকিয়ে আছে তার হৃদয়ের ভেতর। সে ধীরে ধীরে মুখ তুলে বলে উঠলো—
“হে অদৃশ্য সত্তা, যদি তুমি থেকে থাকো, তবে আমাকে চিনিয়ে দাও…”

মুহূর্তেই বাতাস থমকে যায়। যেন প্রকৃতি শুনছে তার কান্নাভেজা মিনতি। আলমাছের চোখে পানি আসে, কিন্তু সে জানে না—কেন? ভয়? ভালোবাসা? এক শূন্যতা, নাকি অচেনা প্রশান্তি?

তার মনে পড়ে, শায়খ বলেছিলেন—
"সত্য খুঁজলে সে নিজেই ধরা দেয়।"

আলমাছ হঠাৎ মনে করে, তার মা তাকে ছোটবেলায় শিখিয়েছিল—
"বিসমিল্লাহ" বললে শয়তান দূরে সরে যায়।

আজ সে জীবনে প্রথমবার মনে মনে বলে ফেলে—
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"
(শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।)

তার বুকের ভেতর যেন ঝড় থেমে যায়। এমন অনুভব তার আগে কখনো হয়নি। মনে হয় কেউ তাকে স্পর্শ করেছে—অদৃশ্য কারও কোমল হাত যেন বুকে রাখলো।

তখনই সে হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখে—রাস্তার মোড়ে একজন বৃদ্ধা মহিলা সাহায্য চাইছে।
তার হাতে একটা সাদা বোর্ড—
"আল্লাহ তোমার ভাল করুক, যদি কিছু দিতে পারো।"

আলমাছ মুহূর্তেই নিজের পকেটে থাকা টাকা এগিয়ে দেয়। বৃদ্ধার মুখে একরাশ দোয়ার হাসি—
"আল্লাহ তোমাকে হেদায়াত দিন বাবা।"

আলমাছ অবাক হয়। সে তো জানত না, কেন দিল। কিন্তু দিল। আর সেই মুহূর্তে তার মনে হলো,
“হেদায়াত... আমিই কি সেটা খুঁজছি না?”

সে দ্রুত ফোন বের করে গুগলে সার্চ দেয়:
“কুরআনের প্রথম আয়াত কি?”
ফলাফল আসে:
"আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন"
(সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের প্রতিপালক।)

আলমাছের চোখ ভিজে ওঠে। আজ সে নিজের জগতের মধ্যে এক নতুন দিগন্ত খুঁজে পেয়েছে।
প্রশ্ন করার আত্মবিশ্বাস, কিন্তু উত্তর পাবার বিনয়—এই দুইয়ের মাঝে জন্ম নিচ্ছে তার ঈমান।

সে মনে মনে বলে—
“হে রব, আমি জানি না তুমি কোথায় আছো, কিন্তু তুমি যদি থাকো, আমায় ছেড়ে দিও না।”

সেই রাতে সে প্রথমবার সেজদাহর চেহারা গুগলে খোঁজে।
প্রথমবার কিবলার দিক খোঁজে।
প্রথমবার একটা নামাজের ভিডিও দেখে।

এবং, প্রথমবার নিজের বিছানায় বসেই বলে—
“রব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।”
(হে আমার রব, আমার মা-বাবার উপর দয়া করো, যেমন তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন করেছেন।)

সে জানে না, সে কি মুসলিম হয়ে যাচ্ছে...
কিন্তু সে জানে, তার হৃদয় কোনো অজানা আলোতে ধুয়ে যাচ্ছে।


চলবে…

লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

1 টি মন্তব্য:

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"