GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকের কঠিন প্রশ্ন ও ইসলামের দাঁতভাঙা জবাব – ৩য় খণ্ড

 

 এখানে নাস্তিক ইমরান এবার নারীদের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন করবে, আর শায়খ আবদুল রাজ্জাক প্রমাণ-যুক্তি-আলোচনায় সুনিপুণ উত্তর দেবেন।

নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামিক যুক্তির উত্তরে চোখ খুলে যাবে
নাস্তিকতার বিপরীতে ইসলামের বিজয়—যুক্তি, কোরআন ও নববী আদর্শের আলোকে


নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব (৩য় খণ্ড – ১ম অংশ)

ইসলামে কি নারীকে ছোট করে দেখা হয়?


প্রেক্ষাপট:

আজ ইমরান এসেছেন একটু গম্ভীর ভঙ্গিতে। তার চোখেমুখে কিছুটা উত্তেজনা—এবার সে এমন একটি প্রশ্ন করতে চায়, যেটা নিয়ে বহু নারীবাদীও প্রশ্ন তোলে। হয়তো সে নিজেই পুরোপুরি বুঝতে পারেনি বিষয়টা, কিন্তু সমাজে অনেক প্রচলিত ধারণা থেকে তার মনে প্রশ্নটা গেঁথে গেছে।

সে বলল,
“শায়খ, আমি কিছু ব্যাপার বুঝি না।
ইসলাম যদি সত্য হয়, তাহলে নারীদের এত সীমাবদ্ধতা কেন? কেন পুরুষ চারটা বিয়ে করতে পারে, আর নারী একটাই? কেন উত্তরাধিকারেও মেয়েরা কম পায়? কেন পুরুষ নামাযে ইমাম হয়, নারী নয়? এগুলো কি নারীদের ছোট করে দেখার নাম নয়?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের মুখে ধৈর্যের হাসি:

তিনি বললেন,
“তুমি ভালো করছ প্রশ্ন করে, ইমরান। কারণ বহু মানুষ মনে মনে এই প্রশ্ন রাখে, কিন্তু জিজ্ঞেস করে না। মনে রেখো—প্রশ্ন যদি জানার জন্য হয়, তবে তা প্রশংসনীয়। এবার শোনো, ইসলামে নারীকে ছোট করা হয়নি, বরং সবচেয়ে নিরাপদ, সম্মানিত, মর্যাদাশীল অবস্থানে রাখা হয়েছে।”

১. সম্মানের ভিত্তি সংখ্যায় নয়, ভূমিকার বিশুদ্ধতায়:

“তুমি যদি ভাবো, চারটি বিয়ে করার অনুমতি মানেই পুরুষের মর্যাদা বেশি—তাহলে সেটি ভ্রান্ত ধারণা। কারণ অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কর্তব্য নয়।
বরং শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হয়েছে, যেমন আল্লাহ বলেন—

> فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً
‘যদি মনে করো, তোমরা ন্যায়বিচার করতে পারবে না, তবে একটিই করো।’
(সূরা নিসা: ৩)

পুরুষের জন্য চার বিবাহ অনুমতি হলেও, তার প্রতিটির জন্য আছে কঠিন জবাবদিহি। পক্ষান্তরে, নারীর একটিমাত্র বৈধ বিবাহে রয়েছে স্থিতি, শান্তি ও নিরাপত্তা।”


২. উত্তরাধিকার—সমতা নয়, সুবিচার:

“তুমি হয়তো দেখো, ভাই দুই ভাগ পায়, বোন এক ভাগ। কিন্তু কি জানো, এর পেছনে ইসলাম কত সুপরিকল্পিতভাবে ভারসাম্য এনেছে?

পুরুষকে তার পরিবারকে ভরণ-পোষণ করতে হয়,

বোন সেই সম্পদ নিজের জন্যই রাখে,

তার বিয়ের খরচ দেয় স্বামী,

ভরণ-পোষণ দেয় বাবা বা ভাই।


অর্থাৎ, ইসলাম ভাগ কম দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু খরচও দিয়েছে কম। এই হলো সুবিচার—সমতা নয়, প্রাসঙ্গিক দায়িত্বানুযায়ী বণ্টন।”


৩. নেতৃত্ব নয়, সম্মান:

“নামাযে ইমামতি বা রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব। নারীকে রক্ষা ও সম্মানের মাঝে রাখা হয়েছে। কারণ নারী যত বাইরে থাকবে, তত শিকার হবে দৃষ্টি, কুপ্রবৃত্তি ও ক্ষতির।

তুমি যদি একটুকরো সোনা রাস্তায় ফেলে রাখো, সবাই হাত দিবে। কিন্তু যদি সেটা লুকিয়ে রাখো, তবে সে রক্ষা পায়। নারী হলো রত্ন—তাকে সম্মান দিয়ে রক্ষা করা ইসলামের মূলনীতি।”


৪. ইতিহাস কি বলে?

“ইসলাম পূর্বে নারীরা ছিল পণ্য, ক্রীতদাস, জীবন্ত কবরস্থ হতো। ইসলামই প্রথম বলে—

> وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ
‘নারীদের অধিকার আছে, যেমন তাদের উপর কর্তব্য আছে।’
(সূরা বাকারা: ২২৮)

রাসূল (সা.) বলেছেন—

> "তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর জন্য উত্তম।"
(তিরমিজি: ৩৮৯৫)


এমন শিক্ষা পৃথিবীর আর কোনো ধর্ম দেয়নি।”
ইমরান হতবাক:

সে চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ।
তারপর বলে,
“আমি তো এসব জানতামই না! মানে—নারীদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এত গভীর, এত সুবিচারপূর্ণ... কিন্তু মানুষ যে ভিন্নভাবে বোঝে!”

শায়খ বললেন,
“এই ভিন্ন বোঝার নামই অজ্ঞতা। আর অজ্ঞতা দূর করতে হয় আলো ছড়িয়ে—not by hate, but by hikmah (হিকমা)।”

– দ্বিতীয় অংশ | নারীদের শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও পর্দা নিয়ে নাস্তিকের প্রশ্ন এবং ইসলামিক উত্তর]


নারীদের কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা ও পর্দা নিয়ে প্রশ্ন

ইমরান এবার আরেকটি প্রশ্ন নিয়ে আসে। আগের দিনের আলোচনায় তার কিছু ভুল ধারণা ভেঙেছে ঠিকই, কিন্তু মনে জেগে উঠেছে নতুন প্রশ্ন:

সে বলল,
“শায়খ, আপনি বললেন ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে। কিন্তু তাহলে কেন মেয়েদের বলা হয়—তোমরা বাইরে যেও না, কাজ করো না, পর্দা করো?
শিক্ষা নিলে সমস্যা কোথায়? আর নারীরা যদি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হতে না পারে, তাহলে তো সমাজ থেমে যাবে! এটা কি নারীকে দমিয়ে রাখার একটা কৌশল নয়?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক একটু মাথা নেড়ে বললেন,
“প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে মনে রেখো, ইসলামের বিধান হলো ভারসাম্যের প্রতীক। এখানে আছে নারীকে রক্ষা, সম্মান দেওয়া, আবার তাদের উপযুক্ত স্বাধীনতাও। চল একে একে দেখো…”


১. ইসলাম নারীদের শিক্ষা বাধা দেয় না—বরং উৎসাহ দেয়:

“রাসূল (সা.) বলেছেন—

> طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
‘জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ: ২২৪)


অনেক সাহাবিয়া ছিলেন জ্ঞানের সমুদ্র, যেমন হযরত আয়েশা (রা.)—যার থেকে বহু পুরুষ সাহাবিও হাদিস শিখেছেন।

তাই শিক্ষা কখনোই হারাম না। বরং ইসলাম চায়, নারীরা এমন জ্ঞান অর্জন করুক—যা দুনিয়া ও আখিরাতে উপকারী।”


২. কাজের অনুমতি আছে—কিন্তু শর্তসাপেক্ষে:

“হ্যাঁ, নারীরা কাজ করতে পারে। কিন্তু শর্ত হলো—

তা যেন শরিয়তের সীমার ভেতরে হয়,

পর্দা রক্ষা করে হয়,

পুরুষদের সঙ্গে অনর্থক মেলামেশা না হয়,

এবং পরিবারের দায়িত্ব ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।


হজরত খাদিজা (রা.) ছিলেন ব্যবসায়ী, উম্মে আতিয়্যা (রা.) যুদ্ধে সেবা দিয়েছেন। তারা কেউ পর্দা ভেঙে কাজ করেননি।

ইসলাম চায়—নারীর কাজ হোক প্রয়োজন অনুযায়ী, সম্মান বজায় রেখে।”


৩. পর্দা মানে বন্দি নয়—বরং সৌন্দর্যের রক্ষা:

“তুমি যদি ভাবো পর্দা মানেই নারীকে আটকে রাখা, তাহলে ভুল করো।

পর্দা হচ্ছে নারীর সৌন্দর্যকে রক্ষা করার এক শক্ত দেয়াল। আল্লাহ বলেন—

> وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, যা আপনা-আপনি প্রকাশিত হয় তা ছাড়া।’
(সূরা নূর: ৩১)



পর্দা নারীকে লুকায় না, বরং তাকে অশ্লীলতার চাহনি থেকে মুক্ত রাখে। এই পর্দা শুধু কাপড় নয়—চলন, বলন, চিন্তা সবকিছুর শুদ্ধতা।”


৪. মুক্তি মানে বেহায়াপনা নয়:

“আজকের সভ্যতা নারীকে স্বাধীনতা দিয়েছে ঠিকই—কিন্তু কিসের? শরীর বিক্রির? বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের?
ইসলাম চায় না নারীরা হোক ভোগ্যপণ্য।
বরং ইসলাম চায় তারা হোক আলোকবর্তিকা, যারা গড়বে পরিবার, সমাজ ও জাতি।”

ইমরান এবার আবার চুপ।

তার চোখে যেন একটু বিস্ময়, একটু মুগ্ধতা। সে ধীরে ধীরে বলল,
“শায়খ, আপনার কথা শুনলে মনে হয়—যে ইসলামকে আমি চিনি বলে ভেবেছিলাম, আসলে সেটাই অচেনা ছিল আমার কাছে…”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক তার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“জ্ঞানহীন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ইসলামকে বুঝলে তা হবে বিকৃত। ইসলামকে জানতে হয় তার মূল উৎস থেকে—কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে।”

 | নারী সাক্ষ্য ও পুরুষ আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন এবং ইসলামের জবাব]

 

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব (৩য় খণ্ড – ৩য় অংশ)

নারীর সাক্ষ্য, পুরুষ আধিপত্য ও ইসলাম কি নারীকে অধস্তন করে?

ইমরানের তৃতীয় প্রশ্ন আগুন ছড়িয়ে দিলো উপস্থিত সবার মাঝে।
সে বলল—
“ইসলামে নারীর সাক্ষ্য নাকি অর্ধেক? পুরুষই সব কিছুর মালিক, নারীরা সবসময় পুরুষের অধীন! তাহলে কোথায় গেল সমানাধিকার?”

একটি চাপা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে—অনেকেরই মনে এমন প্রশ্ন ছিল, কিন্তু কেউ উচ্চারণ করেনি। শায়খ আব্দুর রাজ্জাক একটু হেসে বললেন—

“তুমি আজ এমন প্রশ্নগুলো করছো, যেগুলো আধুনিক সময়ের তরুণদের মনে বারবার আসে। আসো, কুরআন-সুন্নাহ থেকে দেখে নিই উত্তর।”


১. নারীর সাক্ষ্য সবখানে অর্ধেক নয়!

“প্রথমেই জানো—নারীর সাক্ষ্য সবক্ষেত্রে অর্ধেক নয়। কুরআনের নির্দিষ্ট একটি আয়াতে শুধু আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাপারে নারীর সাক্ষ্যকে পুরুষের তুলনায় অর্ধেক রাখা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন—

> فَرَجُلٌ وَٱمْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ ٱلشُّهَدَآءِ
‘তবে এক পুরুষ ও দুই নারী সাক্ষী রাখবে, যাদেরকে তোমরা গ্রহণযোগ্য মনে করো।’
(সূরা বাকারা: ২৮২)



কেন?
আর্থিক লেনদেন তখন পুরুষদের মধ্যেই বেশি হতো। নারীরা এসব বিষয়ে অনভ্যস্ত ছিলেন। তাই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দ্বিতীয় নারীকে রাখা হয়েছে ‘স্মরণ করিয়ে’ দেওয়ার জন্য, যেন ভুল না হয়।

তবে হত্যা, ইজ্জতহানি, দুধপান প্রমাণ, সন্তান পরিচয় ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে নারীর একক সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য।
(ফিকহুস সুন্নাহ, ইবনে হুযাইমা, আবু দাউদ, আহমদ)


২. নারী অধস্তন নয়—পুরুষের দায়িত্ব বেশি:

“আল্লাহ বলেন—

> ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ
‘পুরুষেরা নারীদের রক্ষক ও দায়িত্বশীল।’
(সূরা নিসা: ৩৪)


‘ক্বওয়াম’ মানে কর্তৃত্ব নয়—দায়িত্বশীল।
পুরুষকে বলা হয়েছে নারীর দায়িত্ব নিতে হবে—তার খরচ, নিরাপত্তা, প্রয়োজন পূরণ করা পুরুষের দায়িত্ব। নারীর নয়।

এই আয়াত নারীদের নিচু দেখায় না—বরং তাদের অধিকার নিশ্চিত করে।”


৩. ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দিয়েছে—কিন্তু দায়িত্ব মুক্তি নয়:

“ইসলাম নারীকে এমন একটি স্তরে রেখেছে যেখানে সে যেন আঘাত থেকে রক্ষা পায়, সন্মান পায় এবং তার উচিত নয়—জীবনের কঠিন দায়িত্ব তাকে বইতে দেওয়া।
তুমি কি চাও, একজন মা গর্ভে সন্তান রেখে রিকশা চালাক? কিংবা বাসে হেল্পার হয়ে ঘুরে বেড়াক?

পুরুষের উপর দায়িত্ব, নারীর উপর রক্ষা।”


৪. আধুনিক সভ্যতার ‘সমানাধিকার’ নারীর মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে:

“তুমি কি দেখোনি? আজ নারীর সমানাধিকার মানে হয়েছে—দিনে চাকরি, রাতে বাজার, আর মিডিয়ায় শরীর দেখানো!

ইসলাম চায় না নারী হোক ‘শ্রমদাসী’, ইসলাম চায় সে হোক রাণী।
পুরুষ হবে প্রহরী, আর নারী হবে মর্যাদার মালা।”

ইমরানের মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। সে বলল—
“তাহলে তো অনেক ভুল জানতাম! মিডিয়ায় এসব কথাই তো বলে না…”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক ধীরে বললেন,
“কেন বলবে? ইসলাম যদি মানুষকে মুক্ত করে দেয়—তাহলে শয়তানের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে তো!”

সবাই একসাথে হেসে উঠল, আর ইমরান হঠাৎ বলল—
“শায়খ, আমার আরও প্রশ্ন আছে… আপনি সময় দেবেন তো?”

“নিশ্চয়ই,” শায়খ বললেন, “যতদিন তোমার সন্দেহ থাকবে, ততদিন আমরা আলো জ্বালিয়ে যাব।”



ইসলাম কি দাসত্ব সমর্থন করে? জিহাদ কি সন্ত্রাসবাদ?


রায়হান এবার একেবারে কঠিন ও বিতর্কিত প্রশ্ন নিয়ে হাজির হলো।

সে বলল—
“শায়খ, আপনি ইসলামের পক্ষ নিচ্ছেন ঠিক আছে, কিন্তু বলুন—
ইসলাম কি দাসপ্রথা সমর্থন করে না?
আর ‘জিহাদ’ মানে কি কাফের মারার লাইসেন্স?
সত্যি করে বলুন—এসব শুনলে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা আসবে না ঘৃণা?”

হলঘরে নীরবতা। অনেকেই চমকে উঠল।
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার একটু থেমে গলায় দৃঢ়তা এনে বললেন—

“চমৎকার প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলোই আজ মিডিয়ায় ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে দেখাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এবার শোনো বাস্তবতা।”



১. ইসলাম কি দাসপ্রথা সমর্থন করে?

“না, ইসলাম দাসপ্রথা তৈরি করেনি—বরং ধীরে ধীরে এর বিলুপ্তির পথ তৈরি করেছে।

তখনকার সমাজে যুদ্ধ ও দুর্বল জাতিদের দাস বানানো ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। ইসলাম সে সমাজে এসে একদিনে দাসপ্রথা উচ্ছেদ করেনি, কিন্তু এমন কিছু করল—

দাস মুক্ত করাকে সর্বশ্রেষ্ঠ সাদকা বানালো

পাপ করলে কাফফারা হিসেবে দাসমুক্তি নির্ধারণ করল

দাসদেরকে ভাইয়ের মতো ব্যবহার করতে বলল


রাসূল (সা.) বললেন—

> ‘তোমাদের অধীনস্থদেরকে ভাই মনে করো। তাদের খাবার দাও যা তোমরা খাও, পোশাক দাও যা তোমরা পরো।’
(সহীহ মুসলিম)



এভাবে দাসপ্রথা প্রাকৃতিকভাবে বিলীন হয়ে গেছে মুসলিম সমাজ থেকে। বরং ইসলামই একমাত্র ধর্ম—যা দাসমুক্তিকে ইবাদতের অংশ বানিয়েছে।”


২. জিহাদ মানেই কি সন্ত্রাস?

“না। জিহাদ মানে সন্ত্রাস নয়—বরং জিহাদ মানে চেষ্টা, সংগ্রাম, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো।

কুরআনে বলা হয়েছে—

> وَجَٰهِدُوهُم بِهِ جِهَادًۭا كَبِيرًا
‘তাদের বিরুদ্ধে এর (কুরআনের) মাধ্যমে বড় জিহাদ করো।’
(সূরা ফুরকান: ৫২)


এখানে যুদ্ধ নয়—বক্তব্য, যুক্তি ও সত্য প্রচারই জিহাদ।

হ্যাঁ, আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে যখন সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, তখন অস্ত্র হাতে নেওয়াও জিহাদ। কিন্তু তা কখনোই নিরীহ মানুষ হত্যা নয়।

রাসূল (সা.) বলেন—

> ‘যুদ্ধে শিশু, নারী, পীর, ইবাদতকারীকে হত্যা করো না।’
(আবু দাউদ)



তুমি কি কোনো সন্ত্রাসবাদে এমন আদর্শ দেখেছো?”


৩. সন্ত্রাসবাদ ও ইসলাম—সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি শব্দ:

“সন্ত্রাস মানে নিরীহ মানুষ হত্যা করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা। ইসলাম স্পষ্ট করে বলে—

> مَن قَتَلَ نَفْسًۭا بِغَيْرِ نَفْسٍۢ أَوْ فَسَادٍۢ فِى ٱلْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعًۭا
‘যে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করল, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল।’
(সূরা মায়েদা: ৩২)



তুমি কি জানো?
সারা বিশ্বের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে মুসলিমদের অনুপাত মাত্র ৬%-এর কম। কিন্তু মিডিয়ায় শুধু মুসলমানকেই সন্ত্রাসী বানানো হয়!”


৪. প্রকৃত মুসলিম হলো শান্তির দূত:

“মুসলিম শব্দটি এসেছে ‘সালাম’ থেকে—যার মানে শান্তি।

রাসূল (সা.) বলেছেন—

> ‘মুসলিম সে ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে অন্যরা নিরাপদ।’
(সহীহ বুখারী)



তাই যারা মানুষ হত্যা করে ‘জিহাদ’ বলে দাবি করে, তারা ইসলামকে ব্যবহার করছে তাদের জঘন্য উদ্দেশ্যে।

তাদের ইসলাম বলে না—
তাদের বলে ‘সন্ত্রাস’। তারা ইসলামের শত্রু, কেবল বাহ্যিক চেহারায় মুসলমান।”

ইমরান চোখ নিচু করল। এবার আর উচ্চস্বরে কিছু বলল না। কেবল ধীরে বলল—
“মিডিয়ায় আমরা কত কিছুই দেখি, কিন্তু বাস্তবতা তো একেবারে আলাদা…”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হেসে বললেন—
“হ্যাঁ, যারা ইসলামকে শত্রু বানিয়েছে, তারা চায় না তুমি সত্য জানো।
তাই জিহাদ নয়—জ্ঞান চর্চাই হোক তোমার অস্ত্র!”



(৩য় খণ্ড শেষ)
[পরবর্তী খণ্ডে থাকবে—চতুর্থ খণ্ড | নাস্তিক ইমরানের ভিতর কি বদল আসবে? এক গভীর দ্বন্দ্ব ও হৃদয় পরিবর্তনের গল্প]

লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

২টি মন্তব্য:

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"