GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫

নবীজির বিয়ে ও বাল্যবিবাহ নিয়ে নাস্তিকের কঠিন প্রশ্ন ও আলেমের দাঁতভাঙা জবাব: মঞ্চ কাঁপানো এক সত্যভিত্তিক সংলাপ"

 ✨ ১৫ নম্বর খন্ড প্রথম অংশ : সময়ের পার্থক্য ও ইসলামের নির্ভুল অবস্থান

একজন আলেম ও একজন নাস্তিক মঞ্চে তর্ক করছেন, পাশে পর্দানশীন নারী দাঁড়িয়ে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন, পেছনে দর্শকদের চোখে জল।
🕌 নাস্তিক বনাম আলেম: নবীজির বিয়ে ও বাল্যবিবাহ নিয়ে তর্ক, যুক্তি ও সত্যের বিজয়


মঞ্চ এখনো স্তব্ধ, কিন্তু উত্তেজনায় ফেটে পড়ার মতো অবস্থা।

কুখ্যাত নাস্তিক আসাদ নূর পুনরায় কথা তোলে:


🗣️ নাস্তিক আসাদ নুর:

“আচ্ছা হুজুর, যদি সব কিছু সময়ের প্রেক্ষিতে বিচার করা হয়—তাহলে কি আজকের যুগে শিশুদের বিয়ে জায়েজ? যদি এখন না হয়, তাহলে তখন কিভাবে হয়? আপনি বলছেন নবীজি সময় অনুযায়ী করেছেন। তাহলে শরিয়ত কি সময়ভেদে বদলায়? এটা কি দ্বিমুখিতা না?”


💬 মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী (চোখে তেজ, কণ্ঠে শান্ত ভরসা):

“তুমি খুব ধূর্তভাবে প্রশ্ন করছো, কিন্তু ইসলাম অত্যন্ত স্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ। একে ‘ধর্ম’ বললেও কম বলা হয়, বরং এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।


📌 প্রথমে একটি আয়াত মনে করিয়ে দিই:


> ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম, এবং আমার নেয়ামত তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করলাম।”

— (সূরা আল-মায়িদা: ৩)


অতএব, শরিয়ত অপরিবর্তনীয় — কিন্তু শরিয়তের কিছু ব্যবস্থা সময় ও প্রেক্ষাপটভেদে ভিন্ন রূপে প্রযোজ্য হয়, ঠিক যেমন:

আজকের দিনে কেউ পথচারীকে উটের পিঠে উঠিয়ে নিতে হয় না, এখন গাড়ি আছে। কিন্তু আতিথেয়তা এখনো ফরজ। বাহন বদলেছে, নীতিমালা নয়।


🧠 আলেম বলেন (দর্শকদের দিকে তাকিয়ে):

“শোনো, সমাজের প্রেক্ষাপট বদলায়, মানুষের জীবনচর্যা বদলায়, কিন্তু ইসলামের মূলনীতি কখনো বদলায় না।

নবীজির যুগে একটা মেয়ে ৯ বছর বয়সে পরিপক্ব হয়ে যেতো, এখন সেটা হয় ১৩–১৪ বা তারও বেশি বয়সে।

তাই ইসলামে বিয়ে বৈধ তখনই, যখন শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রাপ্তবয়স্কতা অর্জিত হয়।


> 📖 ইবনে কাসির তাফসিরে বলা হয়:

“যার বিয়েতে উপযুক্ততা নেই—তার বিয়ে ভেঙে দেয়া হবে।”


📌 একটি মাসআলা জানুন:


ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন:


“কোনো মেয়ের মধ্যে signs of puberty (বালেগ হওয়া) না থাকলে, তার বিয়ে হতে পারে না।”


🛑 তাহলে কি নবীজি (সা.) তখনকার সমাজকে অমান্য করে বিয়ে করেছিলেন? না!

তিনি এমন সমাজে ছিলেন, যেখানে ৯-১০ বছর বয়সেই কন্যারা গর্ভধারণে সক্ষম হতো—এটা আজকের বিজ্ঞানও মানে।


🧾 ডক্টর ম্যারগারেট ম্যাকহ্যারি, একজন আমেরিকান চিকিৎসক তাঁর জার্নালে বলেন:


> “প্রাকৃতিক পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস ও বংশগতির কারণে প্রাচীনকালে মেয়েরা অনেক কম বয়সে শারীরিক পরিপক্বতা অর্জন করত।”


🎤 মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী এবার বলে ওঠেন (কণ্ঠ শক্ত করে):

“তুমি একটা বিষয় জানো না—নবীজির বিবাহ শুধু কামনার নয়, বরং এটি ছিল কৌশলগত, শিক্ষামূলক এবং সমাজ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ।


আয়েশা (রা.) প্রায় ২২০০+ হাদিস বর্ণনা করেছেন—যার অনেকগুলো গোপন অন্তরঙ্গ বিষয়ে, যা অন্য কেউ জানতেই পারত না।

আজ নারীরা পর্দা, পবিত্রতা, স্ত্রীর হক এসব তাঁর মাধ্যমেই শিখেছে।


🗣️ নাস্তিক আসাদ নুর এবার থমকে যায়। একটু স্তব্ধ।

তার জবাব নেই।

তবে সে গোঁ ধরে বলে:


“তাও বলতে হবে—আজকের যুগে বাচ্চার বিয়ে জায়েজ নয়, তাই না?”


🧕 আলেম বলেন:

“শুনো, সময় বদলেছে, বয়সের পরিপক্বতা বদলেছে। আজ কোনো মেয়ে ১৮ বছরেও প্রাপ্তবয়স্ক না হলে তার বিয়েও বৈধ নয়।

শরিয়ত বিয়ে বৈধ করে না বয়স দেখে, বরং দেখে পরিপক্বতা।

তুমি সময় ভুলে শরিয়তকে অপবাদ দিয়েছো। এটা জ্ঞান নয়, বরং কুফরি যুক্তি।”


🎉 মঞ্চে তখন টালমাটাল তালি।

কেউ কেউ ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে কেঁদে ফেলেছে।

এক বৃদ্ধা কাঁপা হাতে বলে উঠলেন:

“আজ বুঝলাম, আয়েশা (রা.) কেন আমাদের মায়ের মর্যাদায়।”


📌 এই খণ্ডের মূল বার্তা:

✅ শরিয়তের বিধান সময়ভেদে নয়, প্রেক্ষাপটভেদে প্রযোজ্য।

✅ নবীজির (সা.) বিয়ে ছিল সমাজ সংস্কারের অংশ, কামনা চরিতার্থের জন্য নয়।

✅ বিয়ে বৈধ তখনই, যখন শরীর ও মনের পরিপক্বতা হয়।

✅ অপপ্রচারকারীদের উচিত, গবেষণা করে প্রশ্ন তোলা—not ইউটিউব দেখে অপবাদ ছড়ানো।


দ্বিতীয় অংশ শেষে গল্প চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

দ্বিতীয় অংশে থাকবে নাস্তিকের নির্লজ্জ পালটা জবাব ও হঠাৎ একজন প্রগতিশীল নারীর অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা—যিনি নিজের জীবন দিয়ে বোঝাবেন, কেন ইসলামী পন্থাই সবচেয়ে নিরাপদ।


✨ চতুর্থ খণ্ড: নারীর অশ্রু ও সত্যের মুখোমুখি নাস্তিক

মঞ্চের আবহ বদলে গেছে।
তর্কের তাপ যেন ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে হৃদয়ের উষ্ণতায়।

নাস্তিক বক্তা আসাদ নূর এবার শেষ জোরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে:

🗣️ নাস্তিক আসাদ নূর:
“তুমি যাই বলো হুজুর! আমার কথা অস্বীকার করতে পারো না—একটা ৯ বছর বয়সী মেয়ে কখনোই মানসিকভাবে বিবাহ উপযুক্ত হতে পারে না! আজকালকার চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা দেখাও যে, এই বয়সে বিয়ে মানেই শিশু নির্যাতন! আর তোমরা এই কাজকে শরিয়তের মোড়কে বৈধ বলো—তোমরা আসলে ধর্মের নামে বর্বরতা কায়েম করো!”

মঞ্চে এক মুহূর্তের নীরবতা।
দর্শকদের মধ্যে গুঞ্জন।
কিছু মুখে সংশয়, কেউ কেউ চোখে জল।
ঠিক তখন, মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী সাহেব কিছু বলতে যাচ্ছেন, এমন সময়…


👩‍🦱 একজন নারী দাঁড়িয়ে পড়লেন। পর্দানশীন, পরিপাটি। গলায় কাঁপা কণ্ঠ। হাতে মাইক্রোফোন।

“আমি সুমাইয়া রহমান। আপনারা কেউ হয়ত চিনবেন না। আমি একসময় নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন কর্মী ছিলাম।
আমি বিয়ে করেছিলাম ২২ বছর বয়সে। পড়াশোনা শেষ করে, ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।
আমার স্বামী ছিলেন শিক্ষিত, প্রগতিশীল—সব সামাজিক আন্দোলনে ছিলেন।
আমরা ভাবতাম, ইসলামের মত পুরনো নিয়মে নয়—আমরা আধুনিক উপায়ে জীবন সাজাবো।”


😔 “কিন্তু আজ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি...

আমার স্বামী ছিল এক্সট্রা ফ্রিডমের নামে বিকৃত চিন্তার মানুষ।
শরীর ছিল উপভোগের বস্তু, নয় ভালোবাসার আমানত।
তার কথায় প্রেম, আর আচরণে বিষ।
তিন বছরের মাথায় আমাদের সংসার ভেঙে যায়।

আমি হতাশ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করি।
তখন আমি এক বৃদ্ধা হুজুর বেগমের সংস্পর্শে আসি।
তিনি আমাকে ইসলামের নারীত্ব শেখালেন।
আমি হিজাব নিতে শিখলাম, তাকওয়া বুঝতে শিখলাম।


😭 “আজ আমার বয়স ৩৫। আমি বলছি—

নবীজির (সা.) সংসার ছিল ভালোবাসা, জ্ঞান ও নিরাপত্তার ঘর।
যাকে তোমরা শিশু বলে গালি দাও—তিনি আয়েশা (রা.) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানবতী নারী,
যাঁর হাদিস ছাড়া তোমরা স্ত্রীর অধিকার, তালাক, রজঃস্রাবকালীন নামাজ ইত্যাদি জানতেই না।

আজ আধুনিক বিয়ে মানে প্রেমের নামে শরীরের ব্যবসা।
আর ইসলামের বিয়ে মানে—ভালোবাসা, দায়িত্ব, ও প্রশ্রয়।”


🌟 “আজ আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।

নাস্তিকতা আমাকে স্বাধীনতা দেয়নি, দিয়েছে দুঃখ।
ইসলাম আমাকে দিয়েছে মর্যাদা, আশ্রয়, মা হয়ে ওঠার সম্মান।”


মঞ্চ স্তব্ধ।
নাস্তিকের চোখ নিচু।
মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী হুজুর ধীরে ধীরে বলেন:

"সত্য কখনো হারে না—সে দেরিতে হলেও জিতে যায়।
আর নারী—শুধু শরীর নয়, সে একটা মহাসংজ্ঞা।
ইসলামে সে একজন মা, একজন শিক্ষক, একজন বেহেশতের দরজা।”


📌 এই খণ্ডের মূল শিক্ষা:

✅ একান্ত বাস্তবতা ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়
✅ ইসলামের নারীর মর্যাদা আজো তুলনাহীন
✅ আধুনিকতার নামে নারীরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে
✅ সত্য নিজেই কথা বলে—শুধু শোনার মন লাগে


তৃতীয় অংশে- থাকবে:
🔹 নাস্তিক বক্তার হঠাৎ ইসলাম বিষয়ে আগ্রহ
🔹 কোরআনের আয়াত শুনে তার আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া
🔹 এবং শেষ মুহূর্তে সে যা বলবে, তা সবার চোখে জল এনে দেবে...


🕌 মঞ্চে নিস্তব্ধতা, কিন্তু হৃদয়ে তুফান...

মুফতি খায়রুল ইসলাম নোমানী হুজুর এক হাত উঁচু করে বললেন:

🗣️
"হে ভাই, তুমি ইসলাম বুঝতে না পেরে তাকে দোষ দাও।
তুমি মুসলিম পরিবারের সন্তান, কিন্তু ইসলাম শেখার সময় পাওনি।
আজ তুমি বলো, ৯ বছরের কন্যার বিয়ে অন্যায়!
আমি বলি, আধুনিক সমাজে ৯ বছরের শিশুরা কী করছে, তা কি জানো?"


📉 তিনি বলেন:

"এক জরিপে দেখা গেছে—
১২ বছর বয়সে ৪৩% মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ইউরোপে।
৯ বছর বয়সে মোবাইলে পর্নগ্রাফি দেখা শুরু করে আমেরিকান শিশুরা।
১৫ বছরে সন্তান জন্ম দিচ্ছে ১০% কিশোরী।
তাদের কেউ বিয়ে করেনি, কেউ নিরাপত্তা পায়নি।
তারা হয়ে উঠেছে সমাজের উপভোগ্য বস্তু, নয় তো বোঝা।"


📖 “আর আয়েশা (রাঃ)?

তিনি বিয়ে করেছেন নবিজিকে,
যিনি মানবতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
তিনি শুধু স্ত্রী ছিলেন না,
ছিলেন জ্ঞানের উৎস, উম্মাহর মায়ের মর্যাদায় ভূষিত একজন মহীয়সী।”


😳 মঞ্চের সামনে বসে থাকা নাস্তিক বক্তার চোখে জল জমে...

সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।

হাত তুলে বলল:

🧔 নাস্তিক:
"হুজুর, আমি এতদিন ইসলামকে যেভাবে চিনতাম, তা আসল ইসলাম ছিল না।
আমি শুধু কিছু ভিডিও দেখেই পুরো ধর্মকে ঘৃণা করেছি।
কিন্তু আজ আমি আপনাকে শুনে ভেঙে পড়েছি।
এই ইসলাম যদি সত্যিই এমন শ্রদ্ধা, নিরাপত্তা আর জ্ঞানের ধর্ম হয়—
তাহলে আমি আরও জানতে চাই।"


📖 মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী হুজুর বললেন:

"আল্লাহ বলেন—
'فَبَشِّرْ عِبَادِ. الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ'
অর্থ: “সুসংবাদ দাও আমার সেই বান্দাদেরকে, যারা কথা শুনে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠটিকে গ্রহণ করে।” (সূরা যুমার ১৭-১৮)



🎤 মঞ্চে সবার চোখে অশ্রু।

কেউ আর তর্ক করেনা।
কেউ আর অপমান করেনা।
সবাই বোঝে—জবাব গালি দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে দিতে হয়।
সত্যের আলো যাকে স্পর্শ করে, সে আর আগের মতো থাকে না।


---

📌 এই খণ্ডের শিক্ষা:

✅ ইসলামকে বুঝে জানতে হবে, শুনে নয়
✅ সত্য উপস্থাপনের সেরা পদ্ধতি—আদব ও প্রজ্ঞা
✅ নারী স্বাধীনতা মানেই শরীরের মুক্তি নয়—মর্যাদার নিরাপত্তাই আসল
✅ একটি মঞ্চ, একটি প্রশ্ন, একটি চোখের জল—পরিবর্তন এনে দিতে পারে একটি জীবনেও


লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫

বাল্যবিবাহ ও আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে: অপবাদ নাকি ইতিহাস? নাস্তিকের প্রশ্নে আলেমের দাঁতভাঙা জবাব

 🕯️ উপন্যাস: অন্ধকারের মুখে আলো

আলো-অন্ধকারের দ্বন্দ্বে সত্যের প্রতিচ্ছবি—নবীজির (সা.) বিয়ের প্রেক্ষাপটে ইসলামিক ইতিহাস ও যুক্তির ব্যাখ্যা।”
যেখানে অপবাদ উঠে, সেখানে সত্য দাঁড়িয়ে জবাব দেয়। ইতিহাস, কুরআন ও যুক্তির আলোকছায়ায় নবীজির (সা.) বিয়ে নিয়ে স্পষ্ট জবাব।"


✦ ১ম অংশ: তর্কের আগুন


হলরুমজুড়ে মানুষের ভিড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়া এক বিতর্কিত বক্তা আজ মঞ্চে। নিজেকে “যুক্তিবাদী” দাবি করা সেই ব্যক্তি—নাম তার আসাদ নূর, একজন সুপরিচিত ধর্মবিরোধী বক্তা। তার কথায় আগুন আছে, তর্কে চাতুর্য আছে, কিন্তু ইমান নেই।


মঞ্চের পেছনে লেখা—

“তর্ক সভা: ধর্ম বনাম যুক্তি”

সবাই জানে, আজ একটা অগ্নিপরীক্ষা হতে যাচ্ছে।


🎤 মাইক্রোফোন হাতে নাস্তিক আসাদ নূর


– "প্রিয় বন্ধুরা, আজকের সভায় আমরা মুখোমুখি হবো কেবল অন্ধ বিশ্বাসের, অন্ধ আনুগত্যের! যাদের ধর্মগ্রন্থে একজন পঞ্চম শ্রেণির শিশুকে বিবাহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তারা নাকি আমাদের নৈতিকতার পাঠ পড়াবে!"


লোকজন হো হো করে হাসে।


– "আমি প্রশ্ন রাখছি! মুহাম্মাদ (সা.) নাকি ৬ বছর বয়সী আয়েশা (রা.)-কে বিয়ে করেছিলেন। কীভাবে একজন ৫২ বছর বয়সী পুরুষ, নিজেকে নবী দাবি করে, একজন শিশুকে বিয়ে করতে পারে? এটাই কি তাঁদের ধর্মের নীতি?"


হলঘর মুহূর্তেই উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। কেউ চিৎকার করে, কেউ হতবাক হয়ে চুপসে যায়। মুসলিমদের মাঝে কেমন যেন একটা অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।


🎙️ সঞ্চালক বলেন:


– "আমরা চাইবো ইসলামী পক্ষ থেকে কেউ উত্তর দিন।"


👤 পরিচয়হীন এক আলেম উঠে দাঁড়ান


সাদা পাগড়ি, লম্বা জোব্বা, শান্ত কিন্তু দৃঢ় চেহারা। চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি।


তিনি নাম জানান—

" মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী।"


তিনি ধীরে মঞ্চে আসেন। মঞ্চে উঠে প্রথমে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলেন।


তারপর বলেন:


– “আজকের এই অস্থির সময়ে, আমি যুক্তির উত্তর যুক্তি দিয়ে, অথচ শান্তভাবে দিতে চাই। আমি কাউকে অপমান করতে আসিনি। বরং সত্যকে তুলে ধরতে এসেছি, যেন মানুষ বুঝতে পারে, কে আলোর পক্ষে আর কে অন্ধকারে।”


নাস্তিক আসাদ নুর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে:


– "আপনি সত্য বলতে চান? তাহলে প্রথমে বলুন, ৬ বছর বয়সী আয়েশা নামের শিশুটিকে বিয়ে করে আপনার নবী কী শিক্ষা দিলেন?"


চারদিকে নিস্তব্ধতা। সবাই তাকিয়ে আছে সেই আলেমের দিকে। তিনি একটু দাঁড়ালেন। তারপর মঞ্চ থেকে নেমে লোকজনের মাঝে চলে গেলেন।


তিনি বললেন:


– “তোমাদের মঞ্চে আলো আছে, মাইকে আওয়াজ আছে, কিন্তু মনে কি সত্য জানার আগ্রহ আছে? সত্য বলতে চাইলে আবেগ নয়, চাই প্রমাণ ও প্রেক্ষাপট।”


তিনি আবার মঞ্চে ফিরে এসে বললেন—


– “আমি এখন কিছু জিনিস বলবো। কিন্তু শর্ত একটাই: প্রশ্ন করার অধিকার রাখবেন, তবে অপমান নয়। সত্যের কথা আসুক, দলিল সহ।”


মঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে রহস্যঘন নীরবতা


মুফতি খাইদুল ইসলাম নোমানী বলেন:


– “নবীজির (সা.) জীবনযাপন ছিল সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন, সবচেয়ে দয়ালু। তাঁর বিয়ে, তাঁর যুদ্ধ, তাঁর আহ্বান—সব কিছুই ছিল মানবজাতির মুক্তির লক্ষ্যে। যাঁকে আল্লাহ প্রশংসা করে বলেন—

وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ

‘তুমি তো মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কলম: ৪)”


– “তুমি এক আয়েশার (রা.) বয়সকে প্রশ্ন করছো, কিন্তু ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করো। তখনকার আরবে বিয়ের বয়স কি আমাদের মতো ১৮ বছর ছিল? তখন ১২ বছর বয়সেই মেয়েরা সন্তান জন্ম দিত। মানুষ বালেগ হতো শারীরিক ও মানসিকভাবে অল্প বয়সে। সুতরাং, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অস্বাভাবিক ছিল না।”


নাস্তিক আসাদ নুর একটু নড়ে ওঠে। কিন্তু চুপচাপ।


মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী আরো বলেন—


– “আর আয়েশা (রা.)-র বয়স নিয়ে ঐতিহাসিক মতপার্থক্যও আছে। অনেক ইতিহাসবিদ তাঁর বয়স ১৬-১৯ বছরের মধ্যেও বলেছেন। আয়েশা (রা.) নিজেও বলেন—

‘নবীজিকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম।’

তুমি যদি তার জীবন পড়ো, দেখবে সে কোনো অভিযোগ তো করেইনি, বরং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি নবীজির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কথা বলেছেন।”


🔚 ১ম অংশ শেষ


মঞ্চের উত্তাপ একটু কমে আসে। নাস্তিক আসাদ নুরের মুখ থমথমে। জনতা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সেই আলেমের দিকে।

নবীজির (সা.) জীবন ইতিহাস নয়—এক জীবন্ত আলোর উৎস—এই কথাটি যেন আজ কিছু মানুষের মনে দাগ কাটে।


✅ পরবর্তী অংশে কী থাকবে?


২য় অংশে শুরু হবে আলেমের দলিলভিত্তিক জবাব, যেখানে থাকবে:


বাল্যবিবাহের ইতিহাস


বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বয়সের ব্যাখ্যা


ইসলামের বিধান ও পরিপক্বতার সংজ্ঞা


নাস্তিক আসাদ নূরের প্রতিউত্তরে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ




🕯️ উপন্যাস: অন্ধকারের মুখে আলো

✦ ২য় অংশ: যুক্তির আলোর পথে

পূর্বের অংশে:
নাস্তিক বক্তা আসাদ নূর এক জনসমাবেশে নবীজির (সা.) উপর কটাক্ষ করে বলেন, “একজন ৫২ বছরের মানুষ কীভাবে ৬ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করতে পারে?”
মঞ্চে উঠে দাঁড়ান এক আলেম— মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী, এবং তিনি যুক্তিসহ জবাব দেওয়া শুরু করেন।


🎙️ আলেম বললেন:

– “বন্ধুগণ, সত্যের পথে হাঁটতে হলে ইতিহাসকে বুঝতে হয় প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপটে। আজকের সমাজ, আইন ও শিশু সুরক্ষা নীতির আলোকে নবীজির সময়কে বিচার করলে কখনোই নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ হবে না।”

– “তবে শোনো, আমি তোমাকে তোমার ভাষাতেই উত্তর দিব। যুক্তি দিয়ে। দলিল দিয়ে।"

📜 ইতিহাস কি বলে?

“প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা জানো কি, মানব ইতিহাসের প্রায় সব জাতিতেই প্রাচীন কালে বিয়ের বয়স ছিল অনেক কম?”



– “রোমান আইন অনুসারে এক কন্যা শিশু ১২ বছর বয়সেই বিবাহযোগ্য বলে গণ্য হতো।
হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র ‘মনুস্মৃতি’-তে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—
‘অষ্টম বা নবম বছরে পিতাকে কন্যাকে বিয়ে দিতে হবে।’ (মনু ৯:৮৮–৯১)”

– “ইউরোপে মাত্র ২০০ বছর আগেও ১২-১৪ বছরেই মেয়েদের বিয়ে দিত। ব্রিটেনে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে রাজকুমারী ম্যারির বিয়ে হয় মাত্র ৬ বছর বয়সে। এমনকি ১৮৫০ সালের আগ পর্যন্ত আইনগতভাবে ১০ বছর বয়সেই বিবাহ বৈধ ছিল।”

📘 আয়েশা (রা.)-এর বয়সের ইখতেলাফ

– “এখন শুনো, যাকে নিয়ে এত বিতর্ক—আয়েশা (রা.)-এর বয়স—সেটি ঐতিহাসিকভাবে নির্দিষ্ট নয়। সহিহ বুখারিতে একটি বর্ণনায় আছে, বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ৬ এবং সহবাস হয়েছিল ৯ বছর বয়সে। কিন্তু সেটিই একমাত্র সূত্র নয়।”

– “ইবন হাজার, নবাব সিদ্দিক হাসান খান, মাওলানা হাবীবুর রহমান কাঁধলভী, এমনকি আল্লামা তাকী উসমানীও বলেছেন—এই বয়সের রেওয়ায়েত 'খোলা'। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়—
আয়েশা (রা.) বিয়ের সময় অন্তত ১৬-১৯ বছর বয়সী ছিলেন। কারণ:
১. তিনি বদরের সময় যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ছিলেন।
২. বিয়ের সময় তার বড় বোন ছিলেন ২৮–৩২ বছর বয়সী।
৩. তিনি ইসলামের প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণ করেন—যা অসম্ভব হতো যদি তখন তার বয়স ৪-৫ হতো।"

– “তুমি যদি গড় হিসাব ধরো, তাহলে রেওয়ায়েত মিলিয়ে দেখতে পাবে, ৬ বছরের সূত্রটি একমাত্রিক এবং পর্যালোচনার যোগ্য।”

📚 কুরআন কি বলে?

– “আর কুরআন কী বলে বিয়ের বয়স নিয়ে? আল্লাহ বলেন—
وَابْتَلُوا ٱلۡيَتَـٰمَىٰ حَتَّىٰٓ إِذَا بَلَغُواْ ٱلنِّكَاحَ
‘তোমরা এতিমদের পরীক্ষা নাও, যতক্ষণ না তারা বিবাহযোগ্য হয়।’ (সূরা নিসা ৪:৬)”

– “অর্থাৎ কুরআন বিয়ের শর্ত হিসেবে 'পরিপক্বতা' বা বুলুগ এবং আক্লের সামর্থ্য চায়। শুধু বয়স নয়। আজকের কাগুজে বয়স নয়, বাস্তব পরিপক্বতা—এটাই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি।”

😐 নাস্তিক আসাদ নূরের মুখে কিছুটা অস্বস্তি

সে বলল:

– “তাহলে আপনি বলছেন, নবীজি কখনোই শিশু বিয়ে করেননি?”

☝ আলেম বললেন:

– “শ্রদ্ধেয়, আমি বলছি: তিনি সময়ের রীতিনীতি অনুসরণ করেছেন, এবং তার প্রতিটি বিয়ে ছিল কোনো না কোনো সমাজ-সংশোধন, বিধবা নারীর নিরাপত্তা বা রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার উদ্দেশ্যে। শুধু আয়েশা (রা.) ছিলেন ব্যতিক্রম—তাঁকে আল্লাহর আদেশে বিয়ে করা হয়, যার পেছনে ছিল মহান উদ্দেশ্য।”

– “আয়েশা (রা.) সবচেয়ে বড় হাদীস বর্ণনাকারী। ২২০০+ হাদিস এসেছে তার মাধ্যমে। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতী, প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী, বহু সাহাবী তাঁর কাছে মাসআলা শিখেছেন। যদি তিনি শিশুকাল থেকে কষ্ট পেতেন, তবে তিনি কি নবীজিকে ভালোবাসতেন? তিনি নিজেই বলেন—
‘নবীজির মৃত্যু আমার বুকে হয়েছিল। আমি ছিলাম তাঁর প্রিয়তমা।’”


💥 জনতা চুপচাপ শুনছে

একজন তরুণ চিৎকার করে উঠে—

– “আপনি তো পুরো ইতিহাসই উল্টে দিলেন! তাহলে এতদিন যারা অপবাদ দিত, তারা কীভাবে এত স্পষ্ট জিনিস বুঝতে পারলো না?”

মুফতি খাইরুল ইসলাম নোমানী হাসলেন:

– “তারা চায় না বুঝতে। তারা চায় অপবাদ দিতে। কিন্তু আলোর সামনে অন্ধকার টিকতে পারে না।”


---

🔚 ২য় অংশ শেষ

আজ মঞ্চে একজন নাস্তিকের ‘সাহসী প্রশ্ন’ আলোর সামনে হার মানতে শুরু করলো। কিন্তু তর্ক শেষ নয়।
পরবর্তী খণ্ডে আসবে—


---

✅ ১৪তম খণ্ডে কী থাকবে?

নাস্তিক আসাদ নুরের পাল্টা প্রশ্ন: “তবু কেন এখন ৬-৯ বছরের শিশুদের বিয়ে নিষিদ্ধ?”

ইসলামের বিকাশমান সমাজব্যবস্থা ও সময়ভিত্তিক ফিকহ

শিশুবিবাহ ও শিশু অধিকার বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

আলেমের কঠিন কিন্তু দার্শনিক জবাব

লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

বহুবিবাহ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি: ইসলামের নির্ভুল দৃষ্টিভঙ্গি”।( তের নম্বর খন্ড)

 প্রশ্নের মুখোমুখি সত্য


ইসলামে একাধিক বিবাহের বৈধতা ও নারীর নিষেধাজ্ঞার পেছনের হিকমাহ, ইসলামিক যুক্তি, নবিজির জীবনের আদর্শ, এবং সমাজে বহুবিবাহের অপব্যবহারের জবাব।
“পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন? জানতে হলে পড়ুন ইসলাম কী বলে — যুক্তি, কুরআন-হাদীস ও বাস্তবতা মিলিয়ে এক নির্ভুল বিশ্লেষণ!”


তের নম্বর খণ্ড: পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন?


অংশ ১: প্রশ্নের তীর ছুটে এলো


সকালবেলা। শীতল বাতাসে সেমিনার হলের কাচের জানালাগুলো কাঁপছে হালকাভাবে। কফির মৃদু গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সভাস্থলে। আগের দিন হিজাব নিয়ে বিতর্ক ছিল তুমুল, আজ নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ যেন আরও প্রস্তুত হয়ে এসেছে।


মুফতি হারুন ইজহার শান্ত মুখে চেয়ারে বসা, হাতে তসবিহ। কিন্তু নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ আজ আর কোন ভূমিকা ছাড়াই প্রশ্ন ছুড়ে দিল—


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ:

“একটা সোজা প্রশ্ন করি, হুজুর!

পুরুষ চারটা বিয়ে করতে পারে, অথচ নারী পারবে না কেন?

এটাই কি লিঙ্গ বৈষম্য নয়? ইসলাম কি পুরুষতান্ত্রিক নয়?”


একটা নিঃশব্দ বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে পুরো কক্ষে।


কেউ কাশতে থাকে, কেউ চোখে চোখ রাখে না।

মুফতি হারুন ইজহার তসবিহ থামিয়ে বললেন—


মুফতি হারুন ইজহার:

“প্রশ্নটা সোজা নয়, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। গভীর। কিন্তু ভয় নেই, উত্তরও রয়েছে — কোরআনের আলোয়, হাদীসের আলোকে এবং প্রকৃতির নিজস্ব যুক্তিতে।”


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (হেসে):

“আমি যুক্তি চাই, কাহিনি না। আর হ্যাঁ, আধুনিক যুক্তি যা এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ঠিক মনে হয়।”


মুফতি হারুন ইজহার:

“তুমি যুক্তির কথা বলো, অথচ প্রকৃতি ও সমাজ বাস্তবতা উপেক্ষা করো!

ভালো, আমি পালিয়ে যাব না। আজকের প্রশ্ন তোমার, উত্তর আমার — তবে সবার জন্য শিক্ষা হবে।”


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (চোখ কুঁচকে):

“আমি শোনার অপেক্ষায় আছি, তবে শুধু ধর্মীয় বুলি নয়। যদি কোনোদিন মেয়ের বিয়ে দেই, চাইব না তার স্বামী যেন দ্বিতীয় বিয়ে করে। তবুও তোমার ইসলাম তাকে সুযোগ দেয়! এটা বৈষম্য না?”


মুফতি হারুন ইজহার (শান্ত কণ্ঠে):

“তুমি যা বললে, সেটা আবেগ। আমি বলব বাস্তবতা।

তবে তার আগে, একটু জানিয়ে নিই— কোরআনে পুরুষকে চারটি বিবাহের অনুমতি এক শর্তে দেওয়া হয়েছে। তা হলো, ‘ন্যায়বিচার’।

আর নারীর একাধিক স্বামীর ব্যাপারে কোরআনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।”


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (চোখ বড় করে):

“তা হলে তুমি বলছো, একজন পুরুষ চারজন নারীকে ভালোবাসতে পারে, আর নারী পারবে না?”


মুফতি হারুন ইজহার:

“‘ভালোবাসা’ নয়, বরং ‘দায়িত্ব’ এখানে মূল বিষয়।

যার ব্যাখ্যা আমি দিই পরের পর্বে, ইনশাআল্লাহ।

তুমি চাও যুক্তি, আমি দেবো। কোরআন, হাদীস, প্রকৃতি, ইতিহাস, এমনকি মেডিকেল সায়েন্স দিয়েও ব্যাখ্যা করব—

কেন ইসলাম পুরুষকে সীমিতভাবে একাধিক বিবাহের অনুমতি দেয়, আর নারীকে নয়।”


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (চ্যালেঞ্জিং ভঙ্গিতে):

“ঠিক আছে, দেখি কতটা যুক্তি দিতে পারো। আজকের মতো রাখি তাহলে?”


মুফতি হারুন ইজহার (মৃদু হেসে):

“জ্ঞান কখনো লড়াই নয়, আলো ছড়ানো। দেখা হবে আগামী পর্বে, মাসুদ। সেদিন আমি বলব, তুমি ভাববে।”




তের নম্বর খণ্ড: পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন?


অংশ ২: কুরআনের আলোয় ব্যাখ্যা


সকাল গড়িয়েছে। মুফতি হারুন ইজহার তাঁর নিজস্ব মাদরাসায় ফিরে গেছেন, কিন্তু নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চিন্তা থামাতে পারছে না। চারবার বিয়ে করার অনুমতি, অথচ নারীর জন্য নয় — কথাটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।


পরদিন আবারো একটি চায়ের আড্ডা, পাশে কুরআন-হাদীসের বইয়ের স্তূপ। নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলে উঠল—


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ:

“গতকালের কথা মনে আছে? আজ উত্তর শোনার দিন। এখন বলুন—কেন পুরুষ চারটি বিয়ে করতে পারে, আর নারী একটিও বাড়াতে পারে না?”


মুফতি হারুন ইজহার (হালকা হেসে):

“তুমি যদি কুরআনের ভাষা বুঝতে, তাহলে প্রশ্নটি এমনভাবে করতে না।

তবু শুনো— সূরা নিসা, আয়াত ৩-তে আল্লাহ বলেন:

"وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً"

অর্থ: যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, এতিমদের প্রতি ইনসাফ করতে পারবে না, তবে তোমাদের পছন্দমতো নারীদের মধ্যে থেকে দুই, তিন অথবা চারজনকে বিবাহ করো। কিন্তু যদি মনে করো যে, ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে একজনই বিবাহ করো।


আল্লাহ এখানে প্রথমেই বললেন ‘ইনসাফ’-এর কথা। একাধিক বিবাহের শর্ত হলো পূর্ণ ন্যায়ের সাধন। আর জানো তো?

সুরা নিসার আরেকটি আয়াতে (৪:১২৯) বলা হয়েছে:


"وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ"

অর্থ: তোমরা চাইলেও নারীদের মাঝে পুরোপুরি ন্যায়বিচার করতে পারবে না।


মানে?

ইসলাম একাধিক বিবাহকে উৎসাহ দেয়নি, বরং সীমিত ও কঠিন শর্তে বৈধ করেছে।


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (ভ্রু কুঁচকে):

“তাহলে তো এটা পুরুষের সুবিধা হয়ে গেল! নারীর জন্য কেন নয়?”


মুফতি হারুন ইজহার:

“চল, একটি প্রশ্ন করি—

একজন নারী যদি একসাথে একাধিক পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে, তবে তার গর্ভে জন্মানো সন্তানের পিতৃপরিচয় কী হবে?

তুমি কি চাইবে তোমার সন্তান ‘অজানা’ বাবার পরিচয়ে বেড়ে উঠুক?


ইসলামে বংশধারা পরিচিতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান কার — তা জানা থাকা অপরিহার্য। আর এটি সম্ভব শুধুমাত্র নারীর এক স্বামী থাকার মাধ্যমে।


ইসলাম নারীর মর্যাদা রক্ষা করে। একজন পুরুষ ৪টি স্ত্রী রাখলেও তার উপর রয়েছে দায়িত্ব, ভরণপোষণ, ইনসাফ এবং সন্তানের যত্ন।

আর জানো? কোনো স্ত্রী যদি চায়, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে না করুক, তাহলে নিকাহের শর্তেই সে তা নির্ধারণ করে দিতে পারে। ইসলাম এটাও সম্মান করে।”


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (চুপচাপ):

“এই দিকটা আগে ভাবিনি...”


মুফতি হারুন ইজহার (কিছুটা আবেগ নিয়ে):

“ইসলাম কখনো নারীর শত্রু নয়, বরং রক্ষক।

দুনিয়াতে বহু সমাজে বহু নারী বিধবা হন, নিঃসন্তান হন, কিংবা সমাজে অবহেলিত হয়ে থাকেন।

তাদের জন্য একজন পুরুষ যদি দয়া করে, তাদের সম্মান দিয়ে, ইনসাফ রেখে বিয়ে করে —

তা কি পাপ? নাকি নিঃস্বার্থ সমাজ গঠনের একটি অংশ নয়?”


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (নরম কণ্ঠে):

“আপনি কি বলতে চাইছেন, ইসলামে দ্বিতীয় বিয়েতে পুরুষের লাভ নয়, বরং দায়িত্ব বাড়ে?”


আলেম (চোখে দৃঢ়তা):

“ঠিক তাই।

ইসলাম নারীকে পণ্য নয়, মানবিক মর্যাদায় দেখে।

আর বহুবিবাহ পুরুষের খেয়াল বা ভোগ নয় — এটি অনেক সময় দায়িত্ব, সমাজকল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য অনুমোদিত একটি উপায় মাত্র।”



তের নম্বর খণ্ড: পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন?


অংশ ৩: ইতিহাস, মনস্তত্ত্ব ও বিজ্ঞান বলছে কী?


চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়ে এসেছে। আলোচনার গভীরতা বাড়ছে। নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এখনও চুপচাপ, কিন্তু তার চোখ বলছে—সে শুনছে মন দিয়ে।


মুফতি হারুন ইজহার বলতে শুরু করলেন, ধীর ও মোলায়েম স্বরে—


“মাসুদ, আজ আমরা তিনটি দিক থেকে বুঝব কেন ইসলাম এই বিধান দিয়েছে—

(১) ইতিহাস, (২) মনস্তত্ত্ব, (৩) চিকিৎসাবিজ্ঞান।”



১. ইতিহাস কী বলে?


“তুমি কি জানো—

বহু সভ্যতায়, এমনকি ইসলামপূর্ব আরব, হিন্দু সমাজ, চীন, ইহুদী-খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও বহু বিবাহ ছিল।

ইসলাম আসার পর এই প্রথাকে সীমাবদ্ধ করল —

একজন পুরুষ সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারবে, তাও ইনসাফ করতে না পারলে একটিই বৈধ।


আর নারীর একাধিক পুরুষকে স্বামী বানানোর উদাহরণ?

সে ইতিহাস কেবল পাশবিক সমাজেই দেখা যায়, যেখানে নারীকে মানুষ নয়, ভোগ্যপণ্য ভাবা হতো।

ইসলাম নারীকে সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছে।”



২. মনস্তত্ত্বের দৃষ্টিতে:


“মাসুদ, মনোবিজ্ঞান বলে—

পুরুষ ও নারীর স্বভাব আলাদা।

পুরুষ বহির্মুখী, শারীরিক চাহিদা তার মধ্যে তুলনামূলক বেশি ও সক্রিয়,

নারী আবেগনির্ভর, স্থিতিশীল সম্পর্ক চায়।

একজন নারী যখন প্রেম করে, সে মিশে যায় পুরোটা হৃদয় দিয়ে—

অন্য কাউকে সহজে জায়গা দেয় না।

তাই একসাথে একাধিক স্বামী রাখা তার স্বভাবেরও বিরুদ্ধে।”


৩. চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রমাণ:


“এখন শুনো, বিজ্ঞান কী বলছে।

নারী যদি একাধিক পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে—

Human Papilloma Virus (HPV), HIV/AIDS, Bacterial Vaginosis, Cervical Cancer সহ বহু জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।


একইভাবে সন্তান জন্মের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়—

কোন পুরুষের শুক্রাণু থেকে সন্তান হয়েছে, তা জানা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

আর এটি শুধু সামাজিক নয়, চিকিৎসাগতভাবেও বিপদজনক।”


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ কিছুটা বিচলিত হয়ে বলে উঠল—

“তাহলে, ধর্ম আর বিজ্ঞান একসাথেই বলছে—নারীর একাধিক স্বামী থাকা অস্বাভাবিক?”


মুফতি হারুন ইজহার মাথা নাড়লেন:

“তাই তো।

আর ইসলাম যখন কোনো বিধান দেয়, তা কেবল আখেরাত নয়, দুনিয়াবী কল্যাণও মাথায় রেখে দেয়।

যেমন—

এক পুরুষ বহু নারীর দায়িত্ব নিতে পারে, তাদের সম্মান রক্ষা করতে পারে, সন্তানদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারে, এবং সমাজে ভারসাম্য আনতে পারে।”


একটি বাস্তব উদাহরণ:


“তুমি জানো, যুদ্ধের পরে বহু পুরুষ মারা যায়, সমাজে নারীর সংখ্যা বেড়ে যায়।

যেমন ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বহু নারী অবিবাহিত থেকে যায়।

তখন যদি কেউ চাইতেও, তবুও বিয়ে করার মতো পুরুষ ছিল না।


এমন পরিস্থিতিতে—

একজন পুরুষ যদি দুটি নারীর সম্মান রক্ষা করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে,

তাকে কি নিন্দা করা হবে, না বরং সম্মান জানানো উচিত?”


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চোখ নিচু করে বলল:

“আপনার যুক্তিগুলো আগে কেউ এমনভাবে বলেনি... মনে হচ্ছে ধর্ম শুধু বিশ্বাস নয়, বুদ্ধিও।”



মুফতি হারুন ইজহার ধীর কণ্ঠে বললেন:


“ইসলামের কোনো বিধান অন্ধভাবে নয়।

সব কিছুর পেছনে আছে হিকমাহ (জ্ঞানের ভিত্তি),

আছে রহমত,

আছে সামাজিক ভারসাম্য।


তুমি যে প্রশ্ন করেছিলে—

‘নারীর একাধিক স্বামী কেন বৈধ নয়?’—

তা আজ শুধু কুরআনের নয়,

বিজ্ঞান, ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান—সব দিক থেকেই উত্তর পেয়ে গেছো।


এটাই ইসলাম— যুক্তিবাদী, বাস্তববাদী, ন্যায়নিষ্ঠ।”




তের নম্বর খণ্ড: পুরুষের একাধিক বিবাহ বৈধ, নারীর নয় কেন?


অংশ ৪: অপব্যবহার বনাম ভারসাম্য — ইসলামের সত্যিকারের দৃষ্টিভঙ্গি


নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এবার কিছুটা ভিন্ন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল—


“আচ্ছা হুজুর, আপনি যেসব যুক্তি দিলেন সেগুলো বোঝা গেল। কিন্তু আমাদের সমাজে তো দেখি কেউ কেউ একাধিক বিয়ে করে নারীদের কষ্ট দেয়। কেউ বিয়ের কথা গোপন রাখে, কেউ আবার এক স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দিয়ে অন্যকে উপেক্ষা করে। এটা কি ইসলামের চাওয়া?”


মুফতি হারুন ইজহার এক চুমুক দিয়ে চায়ের শেষ চুমুকটাও শেষ করলেন।

তারপর ধীরে বললেন—


১. অপব্যবহারের দায় ইসলাম নেয় না


“মাসুদ,

একজন মানুষ ওষুধের অপব্যবহার করে আত্মহত্যা করলে—

তখন কি ওষুধ দায়ী,

নাকি সেই ব্যক্তি?


একইভাবে,

কোনো বিধানের অপপ্রয়োগ হলে দোষ সেই ব্যক্তির,

শরিয়তের নয়।

আজ অনেক পুরুষ একাধিক বিবাহ করে ইনসাফ করে না—

এটা স্পষ্ট হারাম। কুরআন বলে:


فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً

“যদি ইনসাফ করতে না পারো, তাহলে একটিতেই সীমাবদ্ধ থেকো।”

(সূরা নিসা: ৩)


অন্য স্ত্রীর হক নষ্ট করে দিলে,

অন্য স্ত্রীর প্রতি অন্যায় করলে,

উপেক্ষা করলে—

প্রতিটি অন্যায়ের জন্য আলাদা করে জবাবদিহি করতে হবে কিয়ামতের ময়দানে।”



২. নবিজির জীবন: ভারসাম্যের শ্রেষ্ঠ আদর্শ


“আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক বিবাহ করেছেন।

কিন্তু তুমি কি জানো—

তিনি কেবল প্রেম বা শারীরিক কারণে বিয়ে করেননি।

প্রত্যেক বিবাহের পেছনে ছিল বিশেষ হিকমাহ:


কারো স্বামী ছিলেন শহীদ, তিনি নিঃসঙ্গ।


কেউ ছিলেন বৃদ্ধা, কেউ ছিলেন যোদ্ধার স্ত্রী।


কেউ ছিলেন ইসলামের নতুন আগত, যাকে সম্মান দিতে হতো।



সবচেয়ে বড় কথা—

প্রত্যেক স্ত্রীর প্রতি তিনি সমান সময়, সমান অর্থ, সমান আচরণ করতেন।


এক সাহাবি বলেন—

“নবীজি এতটা ইনসাফ করতেন যে আমরা পার্থক্য ধরতে পারতাম না।”



৩. সমান আচরণ না করলে কী হবে?


“মাসুদ, রাসূল (সা.) এর হাদীসে আছে—


‘যে ব্যক্তি একাধিক স্ত্রীর মধ্যে কারো প্রতি পক্ষপাত করে অন্যের হক নষ্ট করে, কিয়ামতের দিন তার দেহ একপাশে ঝুলে থাকবে।’

(আবু দাউদ, হাদীস: ২১৩৩)


তুমি বুঝতেই পারছো—

একাধিক বিয়ের অনুমতি থাকলেও,

শর্ত হলো ন্যায়বিচার।

আর তা না হলে তা জুলুমে পরিণত হয়।”



৪. আমাদের সমাজে করণীয় কী?


“আজকের সমাজে প্রলোভন, লুকোচুরি, কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়ে বিয়ে করলে—

তা ফিতনার কারণ হয়।

তাই ইসলাম বলে:


তুমি একাধিক বিয়ে করতে পারো,

কিন্তু আগে নিজে পরিপক্ব হও।


স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব, সন্তানদের হক, সময় ও অর্থ—সব কিছু বিবেচনায় নিতে হবে।


কোনো স্ত্রী যেন অবহেলিত না হয়, মানসিক কষ্ট না পায়—এটাই ইসলামের চাওয়া।



আর নারীদেরও বুঝতে হবে—

একাধিক বিবাহ মানে অন্যায় নয়, যদি তা ইনসাফের ভিত্তিতে হয়।”



নাস্তিক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—


“বুঝলাম হুজুর,

ইসলাম অনুমতি দেয় ইনসাফের শর্তে,

আর আমরা অনেকেই সে শর্ত মানি না।

তাই সমস্যা তৈরি হয়।

তাহলে ইসলাম নয়, দায় আমাদের নিজেদেরই।”


মুফতি হারুন ইজহার মুচকি হাসলেন।


“এই উপলব্ধি থেকেই তো পরিবর্তন শুরু হয়।

আর এটাই ইসলামের সৌন্দর্য—যা ভারসাম্য শিক্ষা দেয়।”



[চলবে – ১৪ নম্বর খণ্ড ইন শা আল্লাহ]


লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।


বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

নারীর হিজাব: দমন নাকি মুক্তির পথ? | প্রশ্নের মুখোমুখি সত্য (খণ্ড ১২, অংশ ২)

 উপন্যাস: প্রশ্নের মুখোমুখি সত্য

আলোচনার টক শোতে আলেম ও নাস্তিক তরুণ মুখোমুখি, হিজাব নিয়ে যুক্তি-তর্ক চলছে।
নারীর হিজাব নিয়ে আলেম ও নাস্তিকের মধ্যে যুক্তিনির্ভর আলোচনা — কোরআনের আলোকে।""



খণ্ড ১২ | অংশ ১: কণ্ঠের জন্ম, সংশয়ের বিস্তার


ঢাকার কেন্দ্রস্থলে এক গাঢ় সন্ধ্যায় জনাকীর্ণ একটি মিলনায়তনে আলো ঝলমল আলোয় দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি তার ঠোঁটে হালকা বিদ্রুপমিশ্রিত হাসি নিয়ে বলে উঠল,


“নারীদের হিজাব বাধ্যতামূলক কেন? এটা তো দমন।

আর আমাদের নবী কি বাল্যবিবাহ করেননি?

সূর্য কাদায় ডুবে যায় — এটা কি বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব?

নারী যদি সমান হয়, তাহলে সাক্ষ্য অর্ধেক কেন?”


ঘরে হঠাৎই নিস্তব্ধতা নেমে এলো। এরপর চিৎকার, হাততালি, হাসাহাসি। কারও চোখে উৎসাহ, কারও চোখে আগুন।


লোকটির নাম — আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।

একদা মাদ্রাসার ছাত্র, পরে ধর্মে বীতস্পৃহ হয়ে ওঠা এক 'যুক্তিবাদী' বক্তা।

তার ইউটিউব চ্যানেল ‘সত্যের সন্ধানে’ — যেখানে সে ইসলাম, কোরআন, হাদীসের ব্যাখ্যার নামে ছড়িয়ে দেয় ভুল ব্যাখ্যা ও বিকৃত তথ্য। অনেকে বলে, সে এক সময় হিফজ বিভাগে পড়তো; কেউ কেউ বলে, ধর্মের উপর কোনোদিনই ছিল না তার মমতা। কিন্তু আজ সে জনতার সামনে "ধর্মের মুখোশ খোলার" ঘোষণা দিয়েছে।


তার বক্তব্য চলতে থাকে —

“আল্লাহ যদি দয়ালু হন, তাহলে এত দুঃখ কষ্ট কেন?

জিন-ফেরেশতা কোথায়? বিজ্ঞানে তো নেই!

কুরআনে তো সঙ্গীত হারাম বলা হয়নি, তাহলে আলেমরা কেন হারাম বলেন?”


পাশে বসা এক বৃদ্ধ দাঁড়ালেন। শালীন কণ্ঠে বললেন, “তুমি প্রশ্ন করো, কিন্তু উত্তর তো শোনো না। উত্তর দেয়ার কেউ কি নেই?”


আব্দুল্লাহ আল মাসুদ মুচকি হেসে বলল,

 “উত্তর দিতে চাইলে মঞ্চে আসুন। তবে কোরআন আর বিজ্ঞানের মিল খুঁজে এনে দেখান! কল্পকাহিনি দিয়ে নয়।”


একদল যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করছে। ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার — চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের বক্তব্য। কিছু মানুষ অন্ধ অনুসারী হয়ে উঠছে। কিছু বিদ্বেষে ফুঁসছে।


অন্যদিকে...


এক অজানা মসজিদের এক কোণে বসে ছিলেন হাফেজ মাওলানা হারুন ইজহার। বয়স পঁয়ত্রিশ, দীপ্ত চোখে মেধার দীপ্তি, মুখভর্তি সুন্নতি দাঁড়ি, কণ্ঠে কোমলতা আর যুক্তির দৃঢ়তা। তার ছাত্র একজন লাইভ দেখে চুপচাপ ফোন বাড়িয়ে ধরল।


তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদের প্রশ্নগুলো। শেষে বললেন,

“জবাব দেবো। একে একে, ধৈর্য ধরে। কোরআন দিয়েই, হাদীস দিয়েই, বিজ্ঞান দিয়েই।”


ছাত্র বলল, “তাহলে আপনি কি তাকে সামনে দাঁড়িয়ে উত্তর দেবেন?”


তিনি উত্তর দিলেন,

“না, আমিই তার সামনে যাবো না — সে নিজেই আসবে আমার সামনে।

জ্ঞান ও যুক্তির আহ্বানে কেউ ঠকায় না — ভয় পায় সে, যার ভিতরে সত্য নেই।”



উপন্যাস: প্রশ্নের মুখোমুখি সত্য

খণ্ড ১২ | অংশ ২: মুখোমুখি সত্য

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। রাজধানীর বহুল আলোচিত টক শো — “যুক্তির আঙিনায়” — আজ বিশেষ আয়োজন করেছে।
বিষয়: "ধর্ম বনাম যুক্তি — নাকি দুইয়েরই অপব্যাখ্যা?"

এক পাশে চুপচাপ বসে আছেন মাওলানা হারুন ইজহার।
সাদা পাগড়ি, ধবধবে জোব্বা, শান্তচোখ।
অপর পাশে, প্রখর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
কালো শার্ট, হালকা গোঁফ, ঠোঁটে বিদ্রুপ।

সঞ্চালক বলে উঠলেন,

 “আজ প্রথমবারের মতো আমাদের সঙ্গে রয়েছেন দেশের আলোচিত যুক্তিবাদী বক্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ এবং ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা হারুন হারুন ইজহার।
আজ আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজব কোরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে।”

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ হেসে বলল,
“আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করি, হুজুর। কিন্তু বলুন তো, নারীর হিজাব — এটা কি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়? কেন ধর্ম সবসময় নারীর উপরে বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়?”

মাওলানা হারুন ইজহার শান্তভাবে বললেন,
“ভাই মাসুদ, আমি কথা বলার আগে একটি শর্ত চাই।
আপনি কি ধৈর্য নিয়ে আমার কথা শুনবেন, নাকি প্রশ্ন করেই পালাবেন?”

 “শুনব। অবশ্যই শুনব। যদি উত্তর যৌক্তিক হয়,” আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলল।

মাওলানা হারুন ইজহার একটু সামনে ঝুঁকে বললেন,
 “আচ্ছা, আপনি কি জানেন, আজ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হিজাব পরা মেয়েরা কোথায় থাকে?”

“মধ্যপ্রাচ্যে,” — আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলল।

“ভুল। ইউরোপের ইসলাম গ্রহণকারী নারীদের বিশাল অংশ হিজাব গ্রহণ করে। তারা কেউ জোরপূর্বক নয়, বরং জ্ঞান, আত্মসম্মান ও আত্মরক্ষার জন্য বেছে নেয়।
হিজাব নারীর স্বাধীনতাকে দমন করে না; বরং দৃষ্টির দাসত্ব থেকে রক্ষা করে।
আপনার কি জানা আছে, পশ্চিমা গবেষণায় নারীদের উপর যৌন হয়রানির ৮০% কারণই পোশাক ও ভঙ্গি?”

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চুপ।

মাওলানা হারুন ইজহার আবার বললেন,
“হিজাব নারীর ঢাল। কোরআন বলে,
‘ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ’ —
‘এতে করে তারা পরিচিত হবে (লজ্জাশীলা, সম্মানিতা নারী হিসেবে), এবং তারা যেন উত্ত্যক্ত না হয়।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)”

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ একটু থতমত খেয়ে বলে,
 “কিন্তু এটা তো ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক কেন?”

 “জীবনে অনেক কিছুই বাধ্যতামূলক হয় — স্কুলে যাওয়া, ট্রাফিক আইন মানা, ট্যাক্স দেওয়া।
মানবতার কল্যাণে যা জরুরি, সেটাই বাধ্যতামূলক হয়।
যখন একটি সমাজে নারীকে পণ্য করে তোলা হয়, তখন তাদের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব সমাজ ও ধর্মের।
আর ইসলাম নারীকে শুধু ঢেকে রাখে না — তার ইজ্জত, তার নিরাপত্তা, তার মর্যাদা নিশ্চিত করে।”

মাসুদের ঠোঁট কেঁপে উঠে। সে কিছু বলতে যাচ্ছিল, তখন সঞ্চালক থামিয়ে বললেন,
“আজকের আলোচনার এখানেই বিরতি নিচ্ছি। পরবর্তী পর্বে আমরা আলোচনা করব পুরুষের একাধিক বিবাহ ও নারীর একাধিক বিবাহের প্রশ্ন নিয়ে।”

মাওলানা হারুন ইজাহার চোখ তুলে তাকালেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদের দিকে, বললেন,
“প্রশ্ন করতেই থাকুন। সত্য ভয় পায় না।
শুধু প্রস্তুত থাকুন — জবাব শুনে যেন আর পালানোর জায়গা না থাকে।”

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চুপ। ক্যামেরা ক্লোজআপ নিচ্ছে তার কাঁপা চোখে।


চলবে... (খণ্ড ২: ‘একাধিক বিবাহ — বৈষম্য, না দায়িত্ব?’)


লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিক আলমাছের মনে আলোর সঞ্চার | - খণ্ড ১১

 নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | প্রথম অংশ

আলমাছ ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, সন্ধ্যার আলোয় ভাবনার জগতে ডুবে গেছে।

আলমাছের ভাবনার সন্ধ্যা, যেখানে এক চিরন্তন প্রশ্ন জন্ম নেয়—আল্লাহ কি আছেন?


শিরোনাম: শায়খের নীরবতা ও আকাশের আহ্বান


রাত গভীর। আকাশজোড়া নক্ষত্রের ভিড়ে চাঁদের আলো যেন আলমাছের চিন্তার দরজায় নরম কণ্ঠে কড়া নাড়ছে। দিনের আলোয় সে প্রশ্ন করেছে, যুক্তি দিয়েছে, পাল্টা যুক্তি পেয়েছে। কিন্তু এই রাতে শায়খ কেন যেন চুপ।


"শায়খ, আজ আপনি কিছু বলছেন না কেন?"

আলমাছের প্রশ্নে শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন।


"আকাশ দেখেছো আজ?"

"দেখছি, কিন্তু আমি উত্তর চাই। আপনি নীরব কেন?"


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার সোজা হয়ে বসলেন। তাঁর চোখে ছিল গভীর চিন্তার ছাপ।


"আলমাছ, কিছু প্রশ্নের উত্তর আলোতে নয়, নীরবতায় আসে। কিছু সময়ের পর হৃদয় নিজেই আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করতে শেখে।"


আলমাছ একটু হতবাক।


"আপনি কি বলতে চাইছেন আমি নিজে নিজেই উত্তর পেয়ে যাব?"


 "না, আমি বলতে চাইছি, তুমি যখন যুক্তির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাবে, তখনই শুরু হবে ঈমানের যাত্রা। এখন তুমি ভাবো—এই আকাশ, এই নক্ষত্র, এই নিখুঁত হিসেব কিভাবে এল? এর পেছনে কি সত্যিই কোনো সৃষ্টি কর্তা নেই?"


আলমাছ চুপ করে গেল। শায়খও আর কিছু বললেন না। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন শুধু।


এই প্রথম আলমাছ কোনো জবাব দিল না। প্রশ্ন করতে করতে, সে আজ যেন এক নতুন প্রশ্নে নিজেই ডুবে গেছে।



চলবে...



নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | দ্বিতীয় অংশ

শিরোনাম: যুক্তির দেয়াল ভাঙছে, আত্মার দরজা খুলছে

আলমাছ নিজের কক্ষে ফিরে এল। নীরবতা আজ যেন বুকের ওপর চেপে বসেছে। দিনের আলোয় সে অনেক বলেছে—আল্লাহর অস্তিত্ব, আখিরাত, আত্মা—এসব তার কাছে সবসময় গল্প ছাড়া কিছু ছিল না। কিন্তু আজ রাতে শায়খের নীরবতা, আকাশের প্রশান্তি, আর নিজের একাকিত্ব মিলিয়ে তার মনে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—

“যদি সত্যিই আমি ভুল হই?”

আলমাছ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকালো।
"তুই কিসে বিশ্বাস করিস আলমাছ? নিজের বুদ্ধিতে? বিজ্ঞানে? নাকি অহংকারে?"
সে নিজেকে প্রশ্ন করলো।

শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের সেই কথাগুলো কানে বাজতে লাগলো—
“যে নিজেকে চেনে না, সে কিভাবে তার রবকে চিনবে?”

আলমাছ নিজের বুকের ওপর হাত রাখলো।
সে কি জানে তার ভেতর কী আছে?
সে কি জানে, মৃত্যুর পর কী হবে?

কেউ কি মৃত্যুকে জয় করতে পেরেছে? কেউ কি আত্মাকে বিজ্ঞানে পুরো ব্যাখ্যা করতে পেরেছে?

এই প্রশ্নগুলো তার গর্বিত যুক্তির দেয়ালে ফাটল ধরাচ্ছে।

পরদিন সকালে সে আবার শায়খ আব্দুর রাজ্জাকের কাছে যায়।

“শায়খ, আপনি গতকাল বলেছিলেন নীরবতায় উত্তর আছে। কিন্তু আমার ভেতরে এখন শুধু ভয় কাজ করছে। ভয়, যদি আমার সব চিন্তা ভুল হয়। ভয়, যদি মৃত্যু পরেই কিছু থাকে। যদি সত্যিই একজন মহান স্রষ্টা থাকেন, যাঁর সামনে আমাকে জবাবদিহি করতে হয়?”

শায়খ এবার স্নিগ্ধ স্বরে বললেন:

 “আলমাছ, তুমি এখন সেই পথে আছো যেখানে একদিন ইবনে হিশাম, ইবনে কায়্যিম, এমনকি পূর্বের কত জ্ঞানী নাস্তিক পা রেখেছিল। ঈমানের শুরু হয় সন্দেহ থেকে নয়, শুরু হয় সত্যকে খোঁজার ইচ্ছা থেকে। আজ তুমি প্রশ্ন করছো, আগামীকাল তুমি সেজদায় যাবে।”

আলমাছ অবাক।

“সেজদা? আমি কি তা পারবো?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন:

 “আল্লাহর কাছে যেতে তোমার নামাজ জানার দরকার নেই, দরকার শুধু একটি চাওয়া:
'হে আমার মালিক, তুমি যদি সত্যি থেকো, তবে আমাকে পথ দেখাও।' এই একটিই যথেষ্ট।”

আলমাছ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুধু বলল:
“শায়খ, আমি চেষ্টা করব।”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক শুধু বললেন:
“তবে আজ রাতে আকাশের নিচে দাড়িয়ে বলো—‘হে অদৃশ্য সত্তা, তুমি যদি সত্যিই থেকে থাকো, তবে আমাকে চিনিয়ে দাও।’ দেখো, কেমন আলো নামে তোমার হৃদয়ে।”

আলমাছ মাথা নিচু করলো। তার গর্বিত চিবুকের বাঁধ ভেঙে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

প্রথমবার সে ভয় পেল না, বরং যেন প্রশান্তি অনুভব করল।


চলবে…



নাস্তিকের প্রশ্নে ঈমানের দীপ্তি | খণ্ড ১১ | তৃতীয় অংশ

শিরোনাম: সন্ধ্যার আকাশে এক চিরন্তন প্রশ্ন

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আলমাছ। আকাশে তারা জ্বলছে, যেন কোনো অলৌকিক চোখ তাকিয়ে আছে তার হৃদয়ের ভেতর। সে ধীরে ধীরে মুখ তুলে বলে উঠলো—
“হে অদৃশ্য সত্তা, যদি তুমি থেকে থাকো, তবে আমাকে চিনিয়ে দাও…”

মুহূর্তেই বাতাস থমকে যায়। যেন প্রকৃতি শুনছে তার কান্নাভেজা মিনতি। আলমাছের চোখে পানি আসে, কিন্তু সে জানে না—কেন? ভয়? ভালোবাসা? এক শূন্যতা, নাকি অচেনা প্রশান্তি?

তার মনে পড়ে, শায়খ বলেছিলেন—
"সত্য খুঁজলে সে নিজেই ধরা দেয়।"

আলমাছ হঠাৎ মনে করে, তার মা তাকে ছোটবেলায় শিখিয়েছিল—
"বিসমিল্লাহ" বললে শয়তান দূরে সরে যায়।

আজ সে জীবনে প্রথমবার মনে মনে বলে ফেলে—
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"
(শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।)

তার বুকের ভেতর যেন ঝড় থেমে যায়। এমন অনুভব তার আগে কখনো হয়নি। মনে হয় কেউ তাকে স্পর্শ করেছে—অদৃশ্য কারও কোমল হাত যেন বুকে রাখলো।

তখনই সে হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখে—রাস্তার মোড়ে একজন বৃদ্ধা মহিলা সাহায্য চাইছে।
তার হাতে একটা সাদা বোর্ড—
"আল্লাহ তোমার ভাল করুক, যদি কিছু দিতে পারো।"

আলমাছ মুহূর্তেই নিজের পকেটে থাকা টাকা এগিয়ে দেয়। বৃদ্ধার মুখে একরাশ দোয়ার হাসি—
"আল্লাহ তোমাকে হেদায়াত দিন বাবা।"

আলমাছ অবাক হয়। সে তো জানত না, কেন দিল। কিন্তু দিল। আর সেই মুহূর্তে তার মনে হলো,
“হেদায়াত... আমিই কি সেটা খুঁজছি না?”

সে দ্রুত ফোন বের করে গুগলে সার্চ দেয়:
“কুরআনের প্রথম আয়াত কি?”
ফলাফল আসে:
"আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন"
(সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের প্রতিপালক।)

আলমাছের চোখ ভিজে ওঠে। আজ সে নিজের জগতের মধ্যে এক নতুন দিগন্ত খুঁজে পেয়েছে।
প্রশ্ন করার আত্মবিশ্বাস, কিন্তু উত্তর পাবার বিনয়—এই দুইয়ের মাঝে জন্ম নিচ্ছে তার ঈমান।

সে মনে মনে বলে—
“হে রব, আমি জানি না তুমি কোথায় আছো, কিন্তু তুমি যদি থাকো, আমায় ছেড়ে দিও না।”

সেই রাতে সে প্রথমবার সেজদাহর চেহারা গুগলে খোঁজে।
প্রথমবার কিবলার দিক খোঁজে।
প্রথমবার একটা নামাজের ভিডিও দেখে।

এবং, প্রথমবার নিজের বিছানায় বসেই বলে—
“রব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।”
(হে আমার রব, আমার মা-বাবার উপর দয়া করো, যেমন তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন করেছেন।)

সে জানে না, সে কি মুসলিম হয়ে যাচ্ছে...
কিন্তু সে জানে, তার হৃদয় কোনো অজানা আলোতে ধুয়ে যাচ্ছে।


চলবে…

লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।

শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকের প্রশ্নের জবাবে ঈমানের আলো | খণ্ড ১০

 নাস্তিকের চ্যালেঞ্জ ও ইসলামের জবাব | খণ্ড ১০ | প্রথম অংশ

আলমাছ ও শায়খের ইসলামিক আলোচনা, আত্মা ও ঈমান নিয়ে তর্ক, ইসলামিক গল্প সিরিজ
“যে নিজেকে জানে, সে তার রবকে চিনে।” — শায়খ আলমাছকে আল্লাহকে চেনার দাওয়াত দিচ্ছেন।


শিরোনাম: "তুমি যদি বলো আল্লাহ আছেন, তবে তিনি কোথায়?"


আলমাছ এবার একটু ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলল,

"তুমি তো খুব বড় আলেম, ঠিক আছে, আমি এবার এমন একটা প্রশ্ন করব যার জবাব দিলে মানব, তুমি সত্যের পথে আছো। তুমি যদি বলো আল্লাহ আছেন, তবে তিনি কোথায়? কিসে বসে আছেন? তাঁর অবস্থান কোথায়? চোখে দেখি না, ছুঁয়ে পাই না, তাহলে তুমি কিসের প্রমাণ দাও?"


চারপাশে নিস্তব্ধতা। কয়েকজন মুচকি হাসছে। কেউ কেউ আলমাছের কথায় কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছে। এই প্রশ্নটি বহুবার বহু জায়গায় তুলেছে আলমাছ। অধিকাংশ মানুষ কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে, তারপর চুপ করে যায়।


কিন্তু এই আলেম শায়খ জনাব আব্দুর রাজ্জাক চুপ করলেন না।


তিনি মাথা নিচু করে কুরআনের তিলাওয়াত শুরু করলেন।

 "لَا تُدْرِكُهُ ٱلْأَبْصَـٰرُ وَهُوَ يُدْرِكُ ٱلْأَبْصَـٰرَ ۖ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ ٱلْخَبِيرُ"

“চোখ তাঁকে ধরতে পারে না, কিন্তু তিনি চোখকে ধরতে পারেন। তিনি অতি সূক্ষ্ম ও সবকিছুর খবর রাখেন।”

(সূরা আন'আম, আয়াত ১০৩)


তারপর বললেন,

"আলমাছ, তুমি কি তোমার চেতনা দেখতে পাও? তুমি কি তোমার মনের অনুভূতিগুলো হাত দিয়ে ছুঁতে পারো? পারো না, কিন্তু এগুলোর অস্তিত্বে তুমি বিশ্বাস করো। কেন? কারণ তুমি তার প্রভাব অনুভব করো। ঠিক তেমনি করে আল্লাহর অস্তিত্বকে দেখা যায় না, কিন্তু তাঁর সৃষ্টি, নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মে প্রতিদিন আমরা ডুবে থাকি।"


আলমাছ এবার একটু থমকাল। শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আবার বললেন,

"আল্লাহ 'কোথায়'—এই প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নন। তিনি স্থান-কাল-পাত্র সৃষ্টির আগে থেকেই আছেন। স্থান তাঁর জন্য নয়, স্থান তো তাঁরই সৃষ্টি!"


চোখে চোখ রেখে শায়খ বললেন,

"আল্লাহর অবস্থান বোঝার আগে আল্লাহর মাহাত্ম্য বুঝতে শিখ আলমাছ!"


(চলবে…)



নাস্তিকের চ্যালেঞ্জ ও ইসলামের জবাব | খণ্ড ১০ | দ্বিতীয় অংশ

শিরোনাম: "যিনি স্থান ও সময়ের স্রষ্টা, তাঁকে 'কোথায়' দিয়ে বোঝা যায় না"

আলমাছ একটু ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিল, বলল,
“আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি বললে আল্লাহ স্থান-কাল সৃষ্টির আগেই ছিলেন। কিন্তু তার মানে কি তিনি এখন আর কোথাও নেই? যদি আল্লাহই সত্য হন, তাহলে তিনি কোথাও থাকবেন না কেন?”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হেসে বললেন,
 “আলমাছ, তুমি ভুল জায়গায় আল্লাহকে খুঁজছ। তুমি খুঁজছ একটা ঘর, একটা দিক, একটা আকাশ—যেন আল্লাহ একটা বস্তু! অথচ আল্লাহ তো বলেছেন:

 "هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡآخِرُ وَٱلظَّاهِرُ وَٱلۡبَاطِنُۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٌ"
“তিনি শুরু, তিনি শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি অদৃশ্য, এবং তিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।”
(সূরা হাদীদ, আয়াত ৩)


“তুমি যাঁকে চোখ দিয়ে দেখতে চাও, তিনি তো তোমার চোখকেও সৃষ্টি করেছেন। তিনি বস্তু নন, তিনি সৃষ্ট নন, বরং তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। যিনি সময় ও স্থান সৃষ্টি করেছেন, তিনি নিজে সৃষ্ট জিনিসের মধ্যে কিভাবে সীমাবদ্ধ হবেন?”

আলমাছ এবার কিছুটা চুপসে গেল। শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন,
“তুমি যদি আল্লাহর অস্তিত্ব জানতে চাও, তাহলে তোমার হৃদয়ের দরজাকে খোলো, দুনিয়ার প্রতিটি কণায় তাঁর নিদর্শন খুঁজো। তিনি চুপ থাকেন না, বরং তাঁর সৃষ্টি তোমাকে ডাকছে প্রতিনিয়ত। তুমি শুনছো না।”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক একটি পাতা তুলে দেখালেন। “এ পাতাটাও বলে, কেউ আছো, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। বাতাস বলছে, আমি আপনাআপনি আসিনি। সূর্য বলছে, আমি নিখুঁত নিয়মে উঠি কারণ কেউ আমাকে উঠায়। সে 'কেউ' হলেন আল্লাহ।”

আলমাছ এবার মাথা নিচু করল। শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন,
“আলমাছ, প্রশ্ন করা দোষের নয়, কিন্তু প্রশ্নের পেছনে অহংকার নিয়ে আসা সর্বনাশের। তুমি আল্লাহকে অস্বীকার করো কারণ তুমি তাঁকে বুঝতে পারো না। কিন্তু পৃথিবীর বহু কিছু তুমি বোঝ না, তবুও বিশ্বাস করো। তাহলে আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাস কেন?”

(চলবে…)


নাস্তিকের চ্যালেঞ্জ ও ইসলামের জবাব | খণ্ড ১০ | তৃতীয় অংশ

শিরোনাম: “যে নিজেকে জানে, সে তার রবকে চিনে”

আলমাছ বসে গেল। তার দৃষ্টি এবার আর আগের মতো কঠিন নয়। একটু গম্ভীর আর চিন্তামগ্ন। শায়খ আব্দুর রাজ্জাক ধীরে ধীরে বললেন,

 “আলমাছ, তুমি নিজের দিকে একবার তাকাও। তুমি কে? কোথা থেকে এসেছো? তোমার শরীরের প্রতিটি কোষ, প্রতিটি স্নায়ু, হৃদয়ের স্পন্দন—সবকিছু তোমাকে প্রশ্ন করছে, ‘তুমি কিভাবে এমন নিখুঁত হলে? কে তোমাকে এমন করলো?’”

আলমাছ কিছু বলার আগেই শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বলতে থাকলেন—

“পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জ্ঞানী প্রফেসরও নিজের রুহ (আত্মা) বোঝে না। অথচ সেই আত্মা দিয়েই সে চিন্তা করে, প্রশ্ন করে, বিশ্বাস করে। আল্লাহ বলেন:

 "وَيَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلرُّوحِۖ قُلِ ٱلرُّوحُ مِنۡ أَمۡرِ رَبِّي..."
‘তারা তোমার নিকট রূহ (আত্মা) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, আত্মা আমার প্রভুর আদেশের বিষয়।’
(সূরা ইসরা, আয়াত ৮৫)



“আলমাছ, তুমি যদি নিজেকে জানতে, তাহলে আল্লাহকে চিনতে পারতে। কারণ রাসূল (সা.) বলেন:

 "مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ"
‘যে নিজেকে চেনে, সে তার রবকে চেনে।’


আলমাছ এবার মুখ তুলে বলল,
“তাহলে আমি কিভাবে আল্লাহকে চিনব? আমি তো চোখে দেখতে চাই।”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মৃদু হাসলেন।
“তুমি কি ভালোবাসাকে চোখে দেখেছো? কিন্তু বিশ্বাস করো, তাই না? আল্লাহকে চোখে দেখা যায় না, কিন্তু হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। যখন তুমি নামাজে দাঁড়াও, কুরআন পড়ো, চোখে পানি আসে—সেই অনুভবটাই আল্লাহর সাক্ষাৎ।”

আলমাছ বলল,
“আমি চেষ্টা করব। কিন্তু আমি খুব দ্বিধায় থাকি…”

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক শান্তভাবে বললেন,
“দ্বিধা থাকাটাই প্রমাণ যে তুমি খুঁজতে চাও। আল্লাহ বলেন:

 "وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ"
‘আর যারা আমার পথে চেষ্টা করে, অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথ দেখাব।’
(সূরা আনকাবুত, আয়াত ৬৯)



“তুমি শুধু খোঁজো, দরজায় কড়াঘাত করো, দেখবে, আল্লাহ খুলে দিবেন।”

আলমাছ চুপ করে রইল। মনে যেন আলো ফুটে উঠেছে। একটা নতুন সূর্যোদয় যেন তার হৃদয়ের দিগন্ত ছুঁয়ে গেল…

(চলবে…)


লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।


মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকের প্রশ্ন, বিজ্ঞানের সীমা ও ইসলামের যুক্তিভিত্তিক জবাব | (খণ্ড ৯)

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৯ (১ম অংশ)

আলেম ও নাস্তিকের যুক্তিপূর্ণ আলোচনা, যেখানে ইসলাম বিজ্ঞানের চেয়েও প্রগাঢ় যুক্তি তুলে ধরে।
যেখানে যুক্তি থেমে যায়, সেখানেই ঈমানের আলো জেগে ওঠে।


“তাওহিদ কি শুধু বিশ্বাস, না কি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা?”


আলমাছ এবার চুপচাপ। মুখে কোনো প্রশ্ন নেই, কিন্তু চোখে লুকানো দ্বন্দ্ব।

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বুঝলেন—এবার সময় এসেছে ‘তাওহিদের’ গভীর ব্যাখ্যার।


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (শুরু করলেন):

"আলমাছ, তুমি তো বলেছিলে—'আমি বিজ্ঞান মানি, ধর্ম না।'

তাওহিদ কি তুমি শুধু বিশ্বাস বলেই উড়িয়ে দাও, নাকি যুক্তির জায়গা দিয়েও দেখেছো কখনো?"


আলমাছ (কিছুটা কণ্ঠ নিচু করে):

“তাওহিদ মানে তো, এক আল্লাহর বিশ্বাস। কিন্তু এটা তো কল্পনা। প্রমাণ কোথায়?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক (হেসে):

“চলো তবে বিজ্ঞান দিয়েই বুঝি।”


তাওহিদ ও বিজ্ঞান – এক বিস্ময়কর সাদৃশ্য


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বলেন:

“বিজ্ঞানের প্রতিটি শৃঙ্খলা একটি মূল নিয়ম মানে—একক সূত্র, একক সিস্টেম, একক সৃষ্টিকর্তা।

ফিজিক্সে যেমন 'Law of Conservation',

জেনেটিক্সে যেমন 'একক কোড'।

এই কসমিক ইউনিফর্মিটি প্রমাণ করে, গোটা বিশ্ব কোনো এলোমেলো বিস্ফোরণে নয়,

বরং একক সত্তার সুপরিকল্পনায় গঠিত।”


কুরআনের যুক্তি ও বিজ্ঞানের সমান্তরালতা


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আবৃত্তি করলেন:

أَفِي ٱللَّهِ شَكٌّ فَاطِرِ ٱلسَّمَـٰوَٟتِ وَٱلْأَرْضِ؟

“আল্লাহ সম্পর্কে কি কোনো সন্দেহ আছে? যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা?”

(সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ১০)


আলমাছ এবার চুপ...

সে যেন শুনছে, ভাবছে, আবারো এক অজানা আলো তার ভেতরে ধাক্কা দিচ্ছে।


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:

“তাওহিদ কেবল এক বিশ্বাস নয়, বরং বিজ্ঞান ও যুক্তির পরম শেষ ঠিকানা—

যেখানে প্রতিটি সৃষ্টির সূচনা এক মহান পরিকল্পনার ছোঁয়ায়।”


(চলবে… খণ্ড ৯: দ্বিতীয় অংশে…)


নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – খণ্ড ৯ (২য় অংশ)


“যেখানে বিজ্ঞান থেমে যায়, সেখানেই আল্লাহর অস্তিত্ব জেগে ওঠে”


আলমাছ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল:

“বুঝলাম, আপনার কুরআনের আয়াতগুলো একধরনের দর্শন বহন করে।

তবে ধর্মের চেয়ে বিজ্ঞান তো বেশি এগিয়ে—এটা তো সত্য!

তাওহিদের ধারণা যদি বৈজ্ঞানিক হয়, তাহলে আজকের বিজ্ঞান কেন আল্লাহর কথা বলেনা?”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক ধীরে বললেন:

“আধুনিক বিজ্ঞান সত্যকে খোঁজে, কিন্তু সব সত্যকে মানতে প্রস্তুত নয়।

বিজ্ঞান আবিষ্কার করে ‘কেন’, আর ধর্ম বলে ‘কার জন্য’।

দুইয়ের কাজ আলাদা।

তুমি কি চাও—মাইক্রোস্কোপ দিয়ে আত্মা দেখতে? বা টেলিস্কোপে আল্লাহর চেহারা?”


আলমাছ চুপ। কণ্ঠ স্তব্ধ।


সৃষ্টিজগতের নিখুঁত ভারসাম্য – কুরআনের চ্যালেঞ্জ


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন:

“আলমাছ, তুমি তো বিজ্ঞানের ছাত্র। তাহলে বলো—এ বিশ্বে সবকিছু কি এলোমেলো?”


আলমাছ:

“না, বিশ্ব তো নিখুঁতভাবে চলে।”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:

“তবে শোন আল্লাহ কী বলছেন—”


ٱلَّذِى خَلَقَ سَبْعَ سَمَـٰوَٟتٍۢ طِبَاقًۭا ۖ مَّا تَرَىٰ فِى خَلْقِ ٱلرَّحْمَـٰنِ مِن تَفَـٰوُتٍۢ ۖ فَٱرْجِعِ ٱلْبَصَرَ هَلْ تَرَىٰ مِن فُطُورٍۢ

“তিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ স্তরে স্তরে।

রহমানের সৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?

তুমি চোখ ফেরাও, ত্রুটি খুঁজে পাও কিনা!”

(সূরা আল-মুলক, আয়াত ৩)


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক জোরে বললেন:

“আলমাছ, তুমি নিজেই বলেছো—বিশ্ব নিয়মে চলে।

এই নিয়ম কোথা থেকে এলো?

তুমি কি কোনো ‘নিয়মদাতা’ ছাড়া নিয়ম কল্পনা করতে পারো?”


একটি জটিল উদাহরণ: DNA ও কোডিং সিস্টেম


শায়খ ব্যাখ্যা করলেন:

“মানব DNA-তে চারটি বেস—A, T, C, G—এই কোড ৩ বিলিয়নেরও বেশি অক্ষরের মতো।

এটি একটি জটিল প্রোগ্রাম, যেন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার লিখেছেন!


এখন তুমি বলো—এই প্রোগ্রামটি কি এমনিতেই তৈরি হয়েছে?

না কি কোনো ‘Programmer’ আছেন যিনি জানেন কাকে কেমন বানাতে হবে?”


আলমাছ ধীরে বলল:

“বিজ্ঞানের ভাষায়, এটা তো 'র‍্যান্ডম মিউটেশন'...”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হেসে বললেন:

“বাহ! র‍্যান্ডম মিউটেশন কি কখনো এত নির্ভুল প্রোগ্রাম তৈরি করে—যা প্রতিদিন কোটি কোটি কোষে নকল হয়,

অথচ ভুল হয় না?


তাহলে বলো, র‍্যান্ডম যদি সবকিছু হয়, তুমি নিশ্চিন্তে বাসের নিচে যেতে পারো।

কারণ হয়তো র‍্যান্ডমলি তুমি বেঁচে যাবে, কে জানে!”


আলমাছ হেসে উঠল—

প্রথমবার, নিজের প্রশ্নেই যেন সে খেই হারিয়ে ফেলেছে।


যুক্তি যেখানে শেষ, ঈমান সেখানে শুরু


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার আবেগী কণ্ঠে বললেন:

“আলমাছ, তুমি জানতে চাও আল্লাহ কোথায়?

তুমি যদি তাঁর নিদর্শন না দেখো, তবে কেন আকাশের দিকে তাকাও না?


তুমি যদি তাঁর কণ্ঠ না শুনো, তবে কেন নিজের বিবেকের আওয়াজ শোনো না?”



আলমাছ এবার বলল:

“শায়খ, আপনি এমনভাবে ব্যাখ্যা করলেন, যা আগে কেউ করেনি।

আমার মনে হচ্ছে, আমি হাঁটছি... এক অজানা আলোয়।”


শায়খ আব্দুর রাজ্জাক:

“আলো তো সবসময় ছিল,

তুমি চোখ বন্ধ রেখেছিলে।”



(চলবে... খণ্ড ১০-তে…)


লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব।