গল্প: একটি ধ্বংসস্তূপের গল্প
![]() |
"পরকীয়ার মর্মান্তিক পরিণতি—একটি সুখী সংসার কীভাবে ধ্বংস হয় কোরআন-হাদিসের আলোকে তার বাস্তব চিত্র।" |
ভূমিকা
শফিক ও জামিলার সংসারটি ছিল আশেপাশের সবার জন্য এক উদাহরণ। তাদের দুই সন্তান,মেহেদী ও রুকাইয়া, যেন তাদের ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এই সুখী সংসারটি একটি অন্ধকার পথের দিকে ধাবিত হলো যখন পরকীয়ার বিষ তাদের জীবনে প্রবেশ করল।
শুরুর গল্প
সফিক একজন সফল ব্যবসায়ী। ব্যস্ত জীবনের কারণে সে ধীরে ধীরে জামিলাকে সময় দিতে ব্যর্থ হয়। এদিকে জামিলা তার এক পুরনো কলেজ বন্ধু রাসেলের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ স্থাপন করে। প্রথমে তাদের আলাপচারিতা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি পরকীয়ার দিকে মোড় নেয়।
রাসেল তাকে মনে করিয়ে দেয় পুরনো স্মৃতিগুলো। তার মিষ্টি কথায় জামিলা নিজের বিবাহিত জীবনের সীমা ভুলে যায়। এক সময় তাদের মেসেজ বিনিময় গভীর হয়ে যায় এবং তাদের সম্পর্কটি গোপনীয় একটি স্তরে পৌঁছায়।
পরিণতি
একদিন সফিক তাদের কথোপকথনের স্ক্রিনশট দেখে ফেলে। তার হৃদয় ভেঙে যায়। সে জামিলাকে জিজ্ঞাসা করলে জামিলা প্রথমে অস্বীকার করে, কিন্তু সফিকের সামনে প্রমাণ থাকায় অবশেষে সত্য মেনে নেয়।
সফিক তখন কোরআনের একটি আয়াত স্মরণ করল:
"আর ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই খারাপ পথ।"
(সুরা আল-ইসরা: ৩২)
সফিক তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে তারা ভুল পথ থেকে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু জামিলা ততদিনে রাসেলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল। সফিক এক পর্যায়ে জামিলাকে তালাক দিতে বাধ্য হয়।
শেষ দৃশ্য
জামিলা যখন রাসেলের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখছিল, তখন সে আবিষ্কার করল যে রাসেল কখনোই তাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেনি। সে শুধু তার সঙ্গে খেলেছে। বিধ্বস্ত জামিলা তখন বুঝতে পারে তার সংসার ও সন্তানদের সে চিরদিনের জন্য হারিয়েছে।
জামিলা তার সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকীত্বে ভুগতে থাকে। তার কাছে কোরআনের আরেকটি আয়াত ধ্বনিত হয়:
"যে নারী কিংবা পুরুষ মন্দ কাজ করে, সে তার সমান শাস্তি পাবে এবং যেই সৎকর্ম করে, সে পুরস্কৃত হবে।"
(সুরা আন-নিসা: ১২৪)
উপসংহার
এটি শুধুমাত্র জামিলার গল্প নয়, বরং এটি একটি শিক্ষা। পরকীয়ার শুরুর পেছনে হয়তো সাময়িক তৃপ্তি থাকতে পারে, কিন্তু এর শেষ ফলাফল সবসময়ই ধ্বংস। যারা আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে আফসোস করবে।
পাঠকদের চোখে পানি এনে দেয়ার মতো এই গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়:
"তোমরা তাওবা করো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।"
(সুরা আল-বাকারা: ৩৭)
শিক্ষা
এই গল্পের মাধ্যমে পাঠকদের জন্য বার্তা হল: যেকোনো সম্পর্ককে হালকা করে দেখা উচিত নয়। একটি মুহূর্তের ভুল একটি পরিবারের শান্তি ধ্বংস করতে পারে। তাই নিজেদের চরিত্র রক্ষায় সচেতন হওয়া এবং আল্লাহর সীমা অতিক্রম না করার বিষয়ে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
লেখক মাওলানা মোঃ ছাকিব
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক আমিন
উত্তরমুছুন