পর্ব ২৮: সত্যের পথ—মিথ্যার ফাঁদ
রাত গভীর। চারপাশ নিস্তব্ধ। হাসান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। মনটা অদ্ভুত এক অস্থিরতায় ভরে গেছে।
গত কয়েকদিনে যা ঘটেছে, তা স্বপ্নের মতো লাগছে। পরীর সাথে পরিচয়ের পর থেকে তার জীবন একেবারে পাল্টে গেছে। একদিকে অবিশ্বাস্য সব ঘটনা, অন্যদিকে নিজের ভেতরকার দ্বন্দ্ব—কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা?
শয়তানের ধোঁকা নাকি সত্যের ডাক?
একটু আগে, এক অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। কণ্ঠটা ভারী, রহস্যময়।
— “তোমার জীবন যদি নিরাপদ রাখতে চাও, তাহলে এই অনুসন্ধান বন্ধ করো!”
হাসানের বুক ধক করে উঠলো। সে শান্তভাবে বলল, “সত্যকে জানা আমার অধিকার। আমি কেন থামবো?”
— “যদি না থামো, তবে অপেক্ষা করো… শীঘ্রই বুঝতে পারবে কিসের মুখোমুখি হচ্ছো!”
কথা শেষ হতেই ফোন কেটে গেল।
হাসান গভীর শ্বাস নিলো। ভয় পাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি, কিন্তু তার মনে অস্বস্তি যেন ঘনীভূত হচ্ছে।
সে কুরআন খুলে পড়তে লাগলো—
وَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
"যখন তুমি কুরআন পড়বে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো।" (সূরা নাহল: ৯৮)
হাসান বুঝতে পারলো—এটাই আসল সময়। শয়তান যখন তাকে সত্য থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে, তখন তার আরও বেশি আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে।
নতুন বিপদ
পরের দিন রাত। হাসান বাইরে বের হলে টের পেলো কেউ তাকে অনুসরণ করছে। সে পেছনে ফিরে তাকাতেই কালো পোশাক পরা একজন দ্রুত অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
এবার সে নিশ্চিত—এটা শুধু কল্পনা নয়।
সে দ্রুত নিজের বাসায় ফিরে এলো, দরজা বন্ধ করলো।
হঠাৎ মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এলো—
"তুমি বেশি জানতে চাচ্ছো। সাবধান!"
তার হাত কেঁপে উঠলো। এটা কি শুধুই ভয় দেখানোর জন্য, নাকি সত্যি কিছু ঘটতে যাচ্ছে?
হাসান এবার পরীর সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
পরীর দেখা মিললো
হাসান চোখ বন্ধ করে পরীর কথা ভাবতে লাগলো।
হঠাৎ বাতাসের মধ্যে একটা কোমল সুবাস ছড়িয়ে পড়লো। কক্ষের আলো যেন একটু ম্লান হয়ে গেল। তারপর এক মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে এলো—
— "তুমি ভয় পেয়েছো, হাসান?"
হাসান তাকিয়ে দেখলো, পরী নূরসাবা দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে অদ্ভুত প্রশান্তি, কিন্তু মুখে একগুচ্ছ উদ্বেগের ছাপ।
— "কেউ আমাকে হুমকি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারা চায় না যে আমি সত্যটা জানি," হাসান বলল।
পরী নূরসাবা এক মুহূর্ত চুপ রইলো, তারপর বলল—
— "এটা তোমার জন্যই একটা পরীক্ষা, হাসান। সত্যের পথে চলতে গেলে বাধা আসবেই।"
হাসান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।
— "তুমি কি জানো, হাসান, যখন কেউ সত্যের পথে আসে, তখন শয়তান তার পেছনে লেগে থাকে?"
পরী নূরসাবা কুরআনের একটা আয়াত পড়তে লাগলো—
وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
"তোমরা শয়তানের পথ অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।" (সূরা বাকারা: ১৬৮)
হাসান গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলো।
— "তাহলে আমার কী করা উচিত?"
পরী নূরসাবা হালকা হাসলো—
— "সবচেয়ে বড় শক্তি হল ধৈর্য আর ঈমান। তুমি যদি সত্যের পথেই থাকো, তবে কোনো শক্তিই তোমাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।"
হাসান বুঝতে পারলো—এটা শুধু ভয় পাওয়ার ব্যাপার নয়, বরং ঈমানের পরীক্ষা।
গোপন সত্য উদঘাটন
পরী নূরসাবার সাহায্যে হাসান এবার সত্য উদঘাটনের জন্য প্রস্তুতি নিলো।
সে কিছু পুরনো নথিপত্র বের করলো, কিছু প্রমাণ জোগাড় করলো। এরপর একটা নাম্বারে ফোন দিলো—একজন সাংবাদিক বন্ধু জাবের, যে এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখতে পারে।
— "আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। দেখা করতে পারবে?"
— "হ্যাঁ, কিন্তু সাবধান। আমাদের উপর নজর রাখা হতে পারে," বন্ধু সতর্ক করলো।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
হাসান জানে, এবার পেছনে যাওয়ার সময় নেই। সত্যের পথে তাকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হবে।
সে জানে, বিপদ আসবে, ভয় দেখানো হবে, কিন্তু তার ঈমানই তার আসল শক্তি।
পরী নূরসাবাও তার পাশে আছে, যদিও তার রহস্য এখনো পুরোপুরি জানা হয়নি।
এবার সত্য প্রকাশিত হবে? নাকি হাসানের জন্য আরও কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে?
চলবে…
nice
উত্তরমুছুনColbe