GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৫

নাস্তিকের চ্যালেঞ্জ ও আলেমের জবাব (প্রথম খণ্ড) - স্রষ্টার অস্তিত্ব ও পরিকল্পিত বিশ্ব

 নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব (১ম খণ্ড)

নাস্তিকতার প্রশ্ন, স্রষ্টার অস্তিত্ব, বিগ ব্যাং, কুরআন ও বিজ্ঞান, ইসলাম বনাম নাস্তিকতা
নাস্তিকরা কীভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে এবং ইসলাম কীভাবে তাদের প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব দেয়—জানুন এই আলোচনায়।


পরিচিতি

ঢাকা শহরের এক অভিজাত ক্যাফে। রাতের বেলা আলো-আঁধারিতে মৃদু সুর বাজছে। এক টেবিলে বসে আছেন দুই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। একজন নাস্তিক, অপরজন ইসলামিক পণ্ডিত।

নাস্তিকের নাম ইমরান। তিনি নিজেকে মুক্তচিন্তার মানুষ বলে দাবি করেন। ধর্মকে তিনি শুধুই কুসংস্কার বলে মনে করেন। তার বিশ্বাস, বিজ্ঞানের সামনে ধর্মের কোনো ভিত্তি নেই। অপরদিকে, ইসলামিক পণ্ডিতের নাম শায়খ আবদুল রাজ্জাক। তিনি বহু বছর ধরে কুরআন, হাদিস এবং দর্শনের গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন।

আজকের আলোচনার বিষয়: স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন


নাস্তিকের প্রশ্ন:

"আল্লাহ আছেন—এর কোনো প্রমাণ কী? আমি এমন কিছু চাই যা বিজ্ঞান মেনে নেবে। অদৃশ্য কোনো কিছুর ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাস স্থাপন করা তো যুক্তিসঙ্গত নয়!"

শায়খের জবাব:

শায়খ আবদুল রাজ্জাক মৃদু হেসে বললেন, "চমৎকার প্রশ্ন। তবে আমি পাল্টা একটি প্রশ্ন করি। ধরুন, আপনি একটি সুন্দর প্রাসাদ দেখলেন—অসাধারণ নকশা, নিখুঁত ডিজাইন, একদম ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো। আপনি কি বলবেন এটি নিজে নিজেই তৈরি হয়েছে? নাকি এর কোনো স্থপতি আছে?"

ইমরান ভ্রু কুঁচকে বললেন, "নিশ্চয়ই কোনো স্থপতি আছে। এমন নিখুঁত কিছু আপনা-আপনি তৈরি হতে পারে না।"

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন, "ঠিক! তাহলে আপনি কি ভাবতে পারেন যে এই বিশাল পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ-নক্ষত্র, মানুষ, প্রাণী—সবকিছু আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়ে গেছে?"

ইমরান‌ একটু চুপ করে গেল।

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক কুরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন:

أَمْ خُلِقُوا۟ مِنْ غَيْرِ شَىْءٍ أَمْ هُمُ ٱلْخَٰلِقُونَ
"তারা কি সৃষ্টি হয়েছে বিনা কারণে, না তারাই স্রষ্টা?" (সূরা আত-তূর: ৩৫)

"এই আয়াতে আল্লাহ তিনটি অপশন দিয়েছেন: ১. আমরা কি বিনা কারণে সৃষ্টি হয়েছি? ২. আমরা কি নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টি করেছি? ৩. নাকি আমাদের একজন মহান স্রষ্টা আছেন?"

ইমরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, "ঠিক আছে, কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কীভাবে প্রমাণ করবেন যে আল্লাহ আছেন?"

শায়খ হাসলেন, "বিজ্ঞান তো কেবল প্রকৃতির কাজ দেখে। কিন্তু আপনি কি জানেন, মহাবিশ্বে এত নিখুঁত গণিত ও বিজ্ঞান রয়েছে, যা নিজেরাই বলে দেয় একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব?"

বৈজ্ঞানিক যুক্তি:

১. Fine-tuning of the Universe:

  • আমাদের মহাবিশ্বে যদি মহাকর্ষ শক্তি বা পরমাণুর গঠন সামান্যতম পরিবর্তন হতো, তাহলে জীবন সম্ভব হতো না। এত নিখুঁত বিন্যাস আপনা-আপনি আসতে পারে?

২. DNA কোড:

  • মানব DNA তে ৩ বিলিয়নেরও বেশি 'লেটার' বা তথ্য কোড রয়েছে। আপনি কি ভাবতে পারেন যে এত জটিল কোডিং নিজে নিজে হয়ে গেছে? প্রতিটি কোডের পেছনে তো একজন কোডার থাকা দরকার।

৩. Thermodynamics-এর Second Law:

  • মহাবিশ্বের জিনিসপত্র ধীরে ধীরে বিশৃঙ্খল হতে থাকে। তাহলে প্রথমে এত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে কেন তৈরি হলো? এটা কি বোঝায় না যে কোনো মহান পরিকল্পনাকারী আছেন?


নাস্তিকের প্রতিক্রিয়া:

ইমরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, "এগুলো নতুন চিন্তার বিষয়। তবে আমার আরও কিছু প্রশ্ন আছে।"

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন, "নিশ্চয়ই! আসুন, আমরা পরবর্তী আলোচনায় এগুলো নিয়েই কথা বলব।"


@@@


পরিচিতি

আগের দিনের আলোচনার পর ইমরান গভীর চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। এতদিন ধরে সে ভাবত, ধর্মের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু শায়খ আবদুল রাজ্জাকের যুক্তিগুলো তার মনে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আজ সে আবার দেখা করতে এসেছে, আরও কঠিন প্রশ্ন করার জন্য।

ক্যাফের সেই পরিচিত টেবিলে বসে দুজন মুখোমুখি। ইমরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,


নাস্তিকের প্রশ্ন:

"আচ্ছা, আপনি বললেন যে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও সুসংগঠিত নিয়ম-কানুন প্রমাণ করে যে একজন স্রষ্টা আছেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে এই বিশ্ব আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়েছে, বা একে পরিচালনা করার মতো কোনো শক্তি লাগেই না? এমন অনেক বিজ্ঞানী আছেন, যারা ধর্মের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বলেন যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্য কোনো স্রষ্টার প্রয়োজন নেই। আপনি এ বিষয়ে কী বলবেন?"

শায়খের জবাব:

শায়খ আবদুল রাজ্জাক মৃদু হাসলেন, "বিজ্ঞানীরা তো অনেক কিছু বলেন, কিন্তু বিজ্ঞান কি কখনো প্রমাণ করেছে যে স্রষ্টা নেই? বরং আধুনিক বিজ্ঞান বলছে যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সূচনা হয়েছিল এক নির্দিষ্ট সময়ে। অর্থাৎ, এর একটি সূচনা বিন্দু আছে। আপনি নিশ্চয়ই ‘বিগ ব্যাং থিওরি’ সম্পর্কে শুনেছেন?"

ইমরান মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ, এটা তো বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত যে মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে।"

শায়খ বললেন, "ঠিক! তাহলে আমার প্রশ্ন হলো, কীভাবে কিছুই না থাকা থেকে হঠাৎ করে মহাবিশ্বের জন্ম হলো? কোনো কিছু কি নিজে নিজে অস্তিত্ব লাভ করতে পারে?"

ইমরান কিছু বলার আগে শায়খ কুরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন:

أَوَلَمْ يَرَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا أَنَّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَٰهُمَا

"যারা কুফরী করে তারা কি দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী একসাথে ছিল, তারপর আমি এ দুটিকে পৃথক করে দিলাম?" (সূরা আল-আম্বিয়া: ৩০)

শায়খ ব্যাখ্যা করলেন, "এটি কীসের কথা বলে? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে আকাশ ও পৃথিবী একসময় একত্রে ছিল, পরে তারা আলাদা হলো। এটা তো ১৪০০ বছর আগেই কুরআনে বলে দেওয়া হয়েছে!"

ইমরান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর বলল, "কিন্তু এটা তো কাকতালীয়ও হতে পারে, তাই না?"

যুক্তির দ্বিতীয় ধাপ:

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন, "ঠিক আছে, তাহলে আমি আপনাকে আরও গভীর কিছু বলি। মহাবিশ্ব যদি আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে এর পিছনে কি কোনো পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য আছে? নাকি সবকিছু এলোমেলো?"

ইমরান বলল, "আমি মনে করি, মহাবিশ্ব এলোমেলোভাবে সৃষ্টি হয়নি। এটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলছে।"

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হাসলেন, "যদি নিয়ম মেনে চলে, তাহলে কে এই নিয়ম নির্ধারণ করল? কুরআন বলছে:

وَٱلسَّمَآءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ ٱلْمِيزَانَ
"তিনি আকাশকে উঁচু করেছেন এবং সবকিছু নির্দিষ্ট পরিমাপে সাজিয়েছেন।" (সূরা আর-রহমান: ৭)

"আপনি যদি স্বীকার করেন যে মহাবিশ্ব পরিকল্পিত, তাহলে এর পেছনে একজন মহান পরিকল্পনাকারী আছেন—এটাই স্বাভাবিক, তাই না?"

ইমরান এবার বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল।

নাস্তিকের নতুন প্রশ্ন:

"আচ্ছা, ধরে নিলাম একজন স্রষ্টা আছেন। কিন্তু কীভাবে নিশ্চিত হব যে ইসলামই সত্য? কেন অন্য ধর্ম নয়?"

শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হাসলেন, "অসাধারণ প্রশ্ন! আসুন, পরবর্তী আলোচনায় আমরা এই বিষয়েই কথা বলি।"


(পরবর্তী খণ্ডে: ‘নবী-রাসূলগণ কীভাবে সত্য প্রমাণিত হন?’)


লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।

৩টি মন্তব্য:

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"