উপন্যাস: "রক্তের দাগ মুছে যায় না"
![]() |
"ধৈর্য, ন্যায়বিচার ও কুরআনের আলো—সত্যের পথে এক হৃদয়বিদারক সংগ্রামের গল্প।" |
প্রথম অধ্যায়: বিভীষিকার রাত
রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। মসজিদের মৃদু আযান বাতাসে ভাসছে, কিন্তু আমিনার হৃদয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তার বাবা-মা পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছেন, ছোট ভাই নাজিম গভীর ঘুমে। কিন্তু সে জানে, আজ রাতেই তার জীবন বদলে যাবে।
চার দিন আগে, তার একমাত্র অভিভাবক বাবা, খতিব ইবনুল মাহখুম, মসজিদ থেকে ফিরে বলেছিলেন,
মেয়ে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। মানুষ যতই অত্যাচার করুক, একদিন সুবিচার হবে।"
আমিমা জানত, এই কথার পেছনে লুকিয়ে আছে এক গোপন কষ্ট। তার বাবাকে কিছু লোক হুমকি দিয়েছিল, কারণ তিনি সাহস করে সত্য বলেছিলেন। পাড়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি, রফিক সাহেব, যিনি সমাজে দানশীলতার মুখোশ পরে থাকেন, তিনিই অবৈধ সম্পদ আর জুলুমের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। খতিব ইবনুল মাখদুম সেই ব্যক্তি, যিনি তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন।
সেদিন রাত গভীর হতেই দরজায় জোরে জোরে আঘাত পড়ল।
"দরজা খোল!"
আমিনার বুক কেঁপে উঠল। বাবা ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোলেন। দরজা খোলার মুহূর্তেই চার-পাঁচজন মুখোশধারী লোক বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। তারা বলল,
"তুমি বেশি কথা বলো, তাই না? আজ তোমার বিচার হবে!"
এরপরই শুরু হলো এক বিভীষিকাময় অধ্যায়।
দ্বিতীয় অধ্যায়: রক্তে লেখা রাত
সেই রাতে আমিনার সামনে ঘটে এমন কিছু, যা সে কখনো কল্পনাও করেনি। তার বাবা খতিব ইবনুল মাহখুমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, মা ও ছোট ভাইকেও রেহাই দিল না তারা। আমিনা কোনোমতে পাশের ঘরের জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল, কিন্তু তার মনে হচ্ছিল, তার আত্মাও রক্তাক্ত হয়ে গেছে।
সে দৌড়াতে থাকল, দৌড়াতে থাকল...
রাস্তার এক কোণে অচেতন হয়ে পড়ে গেল।
তৃতীয় অধ্যায়: আশ্রয় ও প্রতিশোধ
যখন চোখ খুলল, তখন সে দেখল, এক মাদ্রাসার কক্ষে শুয়ে আছে। পাশে এক বৃদ্ধা কুরআন পড়ছিলেন। তিনি বললেন,
"মা, আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়েছেন। ধৈর্য ধরো।"
কিন্তু কীভাবে ধৈর্য ধরবে? তার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে।
সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
"আমার কী দোষ ছিল? কেন আমার প্রিয়জনদের কেড়ে নিল?"
বৃদ্ধা বললেন,
"وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ"
"জালিমরা যা করে, আল্লাহ তা থেকে গাফিল নন।" (সূরা ইবরাহীম: ৪২)
আমিনার চোখে অশ্রু জমে উঠল।
সে সিদ্ধান্ত নিল—এই অন্যায়ের প্রতিকার সে চায়, তবে প্রতিশোধের নয়, ন্যায়বিচারের!
চতুর্থ অধ্যায়: আল্লাহর ন্যায়বিচার
বছর পার হয়ে যায়। আমিনা কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করে। একদিন, সে জানতে পারে, রফিক সাহেব নিজের ক্ষমতার দম্ভে এতটাই অন্ধ হয়ে গেছেন যে, তার এক আত্মীয়ই তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে।
আদালতে যখন রফিক সাহেবকে তোলা হয়, আয়শাও সেখানে উপস্থিত ছিল। বিচারক যখন বললেন,
"তোমার কোনো শেষ কথা আছে?"
তখন রফিক কাঁপতে কাঁপতে বলল,
"আমি ভুল করেছি, আমাকে মাফ করে দাও!"
সবাই তাকিয়ে আছে আয়শার দিকে। সে ধীর কণ্ঠে বলল,
"إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ"
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।" (সূরা আল-মায়িদাহ: ৪২)
সে কাঁদতে কাঁদতে বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
"আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু এই অন্যায়ের শাস্তি যেন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী হয়।"
শেষ অধ্যায়: ধৈর্যের আলো
বছর কেটে যায়। আমিনা এখন নারী শিক্ষার প্রচারক, কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। একদিন এক শিক্ষার্থী তাকে জিজ্ঞেস করল,
"আপা, আপনি কি এখনো দুঃখ পান?"
সে মৃদু হেসে বলল,
"না, কারণ আমি জানি, আল্লাহর ন্যায়বিচার কখনো বিলম্বিত হয় না।"
তার চোখে পানি আসে, কিন্তু এবার সেটা কষ্টের নয়—শান্তির অশ্রু।
উপন্যাসের শিক্ষা:
এই গল্প আমাদের শেখায়, ন্যায়বিচার ও ধৈর্যই প্রকৃত বিজয়। আল্লাহ কখনো অন্যায়কে ছেড়ে দেন না, এবং যারা ধৈর্য ধরেন, তাদের জন্য রয়েছে অসীম পুরস্কার।
লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব
Alhamdulilla
উত্তরমুছুনআপনার লেখা পড়ে শুধু অপেক্ষায় বসে থাকি পরবর্তী খন্ড কখন আসবে
উত্তরমুছুন