পরীর ছোঁয়া (৪২তম খণ্ড)
 |
| শত্রুরা আবারও আক্রমণ চালাল, কিন্তু হাসানের কৌশল ও সাহস তাদের পরাস্ত করল। এবার কি সত্যিই শান্তি ফিরে আসবে?
|
রাত গভীর হতে না হতেই গ্রামজুড়ে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এল। পাহারাদারদের চোখ সতর্ক, অস্ত্র হাতে তারা পাহারায় ব্যস্ত। শত্রুদের হামলা ব্যর্থ হওয়ার পরও হাসান জানত, ওরা এত সহজে হার মানবে না।
সন্ধ্যার আগেই হাসান ও তার সঙ্গীরা একত্রিত হয়েছিল। সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা। সুফিয়ান বলল, “আমি নিশ্চিত, ওরা আবার আসবে। তবে এবার হয়তো নতুন কোনো কৌশল নিয়ে।”
হাসান দৃঢ় স্বরে বলল, “আমরা প্রস্তুত। আল্লাহর সাহায্য চাই, তারপর আমাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করি।”
শত্রুর ছদ্মবেশ
রাতে একদল অচেনা লোক গ্রামের বাইরে অবস্থান নেয়। ওরা দেখতে নিরীহ কৃষকের মতো, কিন্তু হাসান জানত, এরা শত্রুর গুপ্তচর হতে পারে। জাবের চাপা স্বরে বলল, “ওরা কি আসলেই পথহারা, নাকি শত্রুরই দালাল?”
হাসান বলল, “আমরা ওদের যাচাই করব। কিছু লোক পাঠিয়ে দেখো, ওরা কারা।”
সুফিয়ান ও কয়েকজন গ্রামবাসী অতিথির ছদ্মবেশে ওদের কাছে গেল। একপর্যায়ে, সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল, “আপনারা এখানে কীভাবে এলেন?”
একজন বলল, “আমরা পথ হারিয়েছি, আশ্রয়ের জন্য এসেছি।”
কিন্তু সুফিয়ান লক্ষ্য করল, লোকগুলোর চোখে আতঙ্ক, যেন ধরা পড়ার ভয়। সে হাসানকে সংকেত দিল।
শত্রুর চক্রান্ত
হাসান দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল, ওদের পরীক্ষা করতে হবে। সে তাদের বলল, “আমরা আপনাদের সাহায্য করতে পারি, তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।”
লোকগুলো ইতস্তত করতে লাগল। হঠাৎ এক লোক পালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু পাহারাদাররা তাকে ধরে ফেলল।
হাসান কঠিন স্বরে বলল, “সত্য বলো, নাহলে আমরা গ্রামবাসীদের কাছে তোমাদের তুলে দেব।”
ধরা পড়া ব্যক্তি অবশেষে স্বীকার করল, “আমরা শত্রুর লোক। আমাদের পাঠানো হয়েছে গ্রামে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য।”
হাসানের বুদ্ধিমত্তা
হাসান শত্রুর পরিকল্পনা জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নিল। সে বলল, “আমরা এখনই গ্রামবাসীদের জাগিয়ে তুলব। সবাই প্রস্তুত থাকুক, কারণ শত্রুরা আবারও হামলার চেষ্টা করবে।”
রাতের অন্ধকারে সবাই প্রস্তুত হলো। পাহারাদাররা তাদের অবস্থান নিল। হাসান জানত, সত্যের পথ কঠিন, কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
@@@
গ্রামজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শত্রুরা ছদ্মবেশে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু হাসান ও তার সঙ্গীদের তৎপরতায় তারা ধরা পড়েছে। এখন প্রশ্ন একটাই—ওদের পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
শত্রুর নতুন ষড়যন্ত্র
ধরা পড়া গুপ্তচরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। সে ভয়ে কাঁপছিল, কিন্তু মুখ খুলতে চাইছিল না। মাহির শান্ত গলায় বলল, “তোমার কাছে দুটি পথ আছে—সত্য বলে মুক্তি পাওয়া, অথবা মিথ্যা বলে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা।”
লোকটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমাদের নেতারা নতুন পরিকল্পনা করেছে। তারা আরও বড় বাহিনী নিয়ে আসছে। এ বারেই তোমাদের শেষ রাত হবে।”
এই কথা শুনে সবাই শিহরিত হয়ে উঠল। জাবের বলল, “আমাদের দ্রুত কিছু করতে হবে!”
প্রস্তুতি শুরু
হাসান ভাবছিল, কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। সে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “শত্রুরা যত শক্তিশালী হোক, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আমরা রুখে দাঁড়াব। আমাদের কৌশলী হতে হবে।”
গ্রামের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করা হলো। পুরুষেরা পাহারায় থাকল, নারীরা ঘরে থাকলেও সতর্ক ছিল। মসজিদে সবাই মিলিত হয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইল।
রাতের আক্রমণ
মধ্যরাতে, গোপন সংকেত পেল হাসান—শত্রুরা এগিয়ে আসছে! পাহারাদাররা প্রস্তুত হলো। তারপরই দেখা গেল, দূর থেকে টর্চের আলো জ্বলছে, ধীরে ধীরে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করছে একদল মানুষ।
হাসান হাত তুলে সংকেত দিল, “প্রস্তুত হও! ধৈর্য ধরো, আল্লাহ আমাদের সহায়।”
শত্রুরা গ্রামে প্রবেশের আগেই ফাঁদে পড়ল। আশেপাশে লুকিয়ে থাকা হাসানের লোকেরা একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল! আকস্মিক আক্রমণে শত্রুরা দিশেহারা হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা বুঝতে পারল, তারা পরাস্ত।
সত্যের বিজয়
যুদ্ধ খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। শত্রুরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। তাদের নেতা আহত অবস্থায় হাসানের সামনে এসে পড়ল।
হাসান দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “তোমরা কী অর্জন করতে চেয়েছিলে?”
নেতা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “ক্ষমা করুন! আমরা ভুল করেছি।”
হাসান বলল, “সত্যের পথে থাকলে ভয় থাকে না। এখন গ্রাম ছেড়ে চলে যাও, আর অন্যায় পথে ফিরে এসো না।”
শত্রুরা বিদায় নিল, গ্রামবাসীরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল।
@@@
শত্রুদের পরাজয়ের পর গ্রামের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও হাসান জানত, বিপদ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। শত্রুরা ফিরে গেলেও তারা সহজে হাল ছাড়বে না।
নতুন চক্রান্তের গন্ধ
সুফিয়ান এসে বলল, “আমাদের গুপ্তচররা খবর এনেছে, শত্রুরা আবারও সমাবেশ করছে। তারা আরও বড় বাহিনী নিয়ে ফিরে আসবে।”
হাসান চিন্তিত হয়ে বলল, “এটা অনুমান করাই যাচ্ছিল। কিন্তু এবার আমরা ওদের পুরোপুরি নির্মূল করব, ইনশাআল্লাহ।”
জাবের বলল, “গ্রামবাসীদের সতর্ক করতে হবে।”
প্রতিরক্ষার নতুন পরিকল্পনা
হাসান ও তার সঙ্গীরা গ্রাম রক্ষার জন্য নতুন পরিকল্পনা করল।
১. গ্রামের চারপাশে পাহারাব্যবস্থা জোরদার করা হলো।
২. যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো যুবকদের।
3. মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হলো।
সুফিয়ান বলল, “আমাদের শক্তি শত্রুর মতো নয়, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আছে।”
হাসান মৃদু হেসে বলল, “বিশ্বাসই হলো সবচেয়ে বড় শক্তি।”
শত্রুর পুনরাগমন
তিন দিন পর, রাতে হঠাৎ পাহারাদাররা সংকেত দিল—শত্রুরা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করছে!
হাসান দ্রুত ছুটে এল। চারপাশে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে, আগুনের আভা দেখা যাচ্ছে। শত্রুরা এবার আরও বেশি সংগঠিত হয়ে এসেছে।
হাসান গর্জে উঠল, “সবাই তৈরি হও! আমরা ন্যায়ের জন্য লড়ব!”
গ্রামের যোদ্ধারা প্রস্তুত হলো। প্রথমেই তারা শত্রুদের প্রবেশপথ বন্ধ করল। তারপর চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল।
যুদ্ধ শুরু হলো। শত্রুরা প্রবল আক্রমণ চালালেও হাসান ও তার দল কৌশলে লড়াই করছিল। তারা শত্রুদের বিভ্রান্ত করছিল, যাতে ওরা একসঙ্গে আক্রমণ করতে না পারে।
চূড়ান্ত সংঘর্ষ
যুদ্ধ তীব্র হতে লাগল। সুফিয়ান শত্রুদের একজন নেতাকে ধরতে সক্ষম হলো। সে আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল, “আমরা আর লড়তে পারছি না! আমাদের ছেড়ে দাও!”
হাসান বলল, “তোমরা কেবল ধ্বংস আর নৈরাজ্য চাও। আমরা শান্তি চাই, কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে আপস করব না!”
শত্রুরা বুঝতে পারল, তারা হাসানদের পরাস্ত করতে পারবে না। তারা পিছু হটতে বাধ্য হলো।
বিজয়ের আনন্দ
যুদ্ধ শেষ হলো। গ্রামের মানুষ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। বৃদ্ধ নেতা বললেন, “তোমরা শুধু আমাদের রক্ষা করোনি, বরং সত্যের জন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছ।”
হাসান বলল, “আমরা শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। আল্লাহই আমাদের সাহায্য করেছেন।”
(৪২তম খণ্ড সমাপ্ত। পরবর্তী খণ্ডে জানা যাবে, শত্রুরা আবার কী ষড়যন্ত্র করবে এবং হাসান কীভাবে আরও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।)
আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুন্দর
উত্তরমুছুন