GDPR সম্মতি

আমাদের ওয়েবসাইটে আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য আমরা কুকি এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করি। আপনার সম্মতি থাকলে আমরা এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে পারি। আপনি চাইলে আপনার সম্মতি দিতে পারেন অথবা নীচের পছন্দগুলি পরিবর্তন করতে পারেন। সম্মতি দিন | পছন্দ পরিবর্তন করুন

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫

অন্ধকারের ছায়া: সত্যের লড়াই

 উপন্যাসের নাম: ন্যায়ের প্রদীপ

ইসলামিক নৈতিকতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
সত্যের সন্ধানে—এক মহাযাত্রার শুরু


প্রথম খণ্ড: শুরুটা যেখানে


পশ্চিম আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। দীর্ঘ এক মাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর ঈদের আনন্দে মুখরিত গোটা শহর। তবে এই উৎসবের আমেজের মধ্যেও কিছু মানুষ আছে, যারা ঈদের খুশির চেয়েও বড় একটি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে—ন্যায় প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব।


মাওলানা আহমদ শফি ছিলেন একজন বিশাল আলেম ও মুজাহিদ। শুধু মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়াই নয়, প্রয়োজনে তলোয়ার হাতে নিয়ে ময়দানে নেমে আসার মতো সাহস ও যোগ্যতা ছিল তার। জালিম শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ছিল তার জীবনের একমাত্র ব্রত।


ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর মসজিদের এক কোণে কিছু যুবককে তিনি কুরআন ও হাদিসের আলোকে ন্যায়ের পথে চলার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ এক যুবক অকিল উদ্দিন এসে বলল, “শাইখ! শহরের এক বৃদ্ধা আমাদের সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তার একমাত্র ছেলে মাওলানা সোহাইলকে অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে গেছে কিছু দুর্বৃত্ত!”


মাওলানা আহমদ শফি সামান্য সময়ও অপচয় না করে সাথে সাথে রওনা হলেন। তার সঙ্গী হলেন তারই ছাত্রদের কয়েকজন, যারা দ্বীনের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে জানা গেল, ছেলেটিকে একদল নাস্তিক ধরে নিয়ে গেছে, কারণ সে তাদের ভুল যুক্তির প্রতিবাদ করেছিল।


এই নাস্তিকরা শহরের তরুণদের মধ্যে সন্দেহ ছড়ানোর জন্য কুরআন-হাদিসের কিছু আয়াতকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করত। কিন্তু মাওলানা আহমদ শফির ছাত্ররা ছিল দৃঢ়চেতা, তাদের কাছে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ছিল কুরআন-হাদিসের আলোকেই।


মাওলানা সোহাইলের সন্ধানে তারা শহরের নির্জন প্রান্তে এক গোপন আস্তানায় পৌঁছাল। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একদল যুবক মাওলানা সোহাইলকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের নেতা প্রশ্ন করছিল, “আল্লাহ যদি এত দয়ালু হন, তবে পৃথিবীতে এত কষ্ট কেন?”


মাওলানা আহমদ শফি দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিলেন, “এই পৃথিবী পরীক্ষা স্থল। যারা ধৈর্য ধরে, তাদের জন্য জান্নাত অপেক্ষা করছে। আর যারা দুনিয়াতেই সব চায়, তারা আখিরাত ভুলে যায়।”


এভাবে একের পর এক কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হলো, আর মাওলানা আহমদ শফি তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কুরআন-হাদিসের দলিল দিয়ে তাদের খণ্ডন করলেন। নাস্তিকরা বোঝার চেষ্টা করল, কিন্তু তাদের অন্তর কালো হয়ে গিয়েছিল। তারা একপর্যায়ে রেগে গিয়ে মাওলানা সুহাইলকে মারতে উদ্যত হল। কিন্তু মাওলানা আহমদ শফি ও তার সাথীরা বাধা দিলেন।


একপর্যায়ে তাদের এক নেতা রাগে ফেটে বলল, “আমরা এই শহর ছেড়ে যাব, তবে মনে রেখো, সত্য-মিথ্যার এই লড়াই চলবে।”


মাওলানা আহমদ শফি মুচকি হেসে বললেন, “সত্যের আলো কখনো নিভে না। আল্লাহর নূর তিনি যার জন্য চান, তার হৃদয়ে জ্বালিয়ে দেন।”


মাওলানা সুহাইল মুক্ত হলো, আর বৃদ্ধা তার ছেলেকে ফিরে পেয়ে অশ্রু ঝরালেন। ঈদের খুশি যেন তখন সত্যিকারের অর্থ পেল।


এভাবেই শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়—ন্যায়ের প্রদীপ জ্বালানোর অধ্যায়।


@@@

 শাওয়াল মাসের বরকত ও ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত


শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদ উদযাপনের পর, মাওলানা সালেহ আহমদ শফী তার ছাত্রদের নিয়ে মসজিদে বসে আলোচনা করছিলেন। ঈদের আনন্দের মাঝেও তার হৃদয়ে ছিল এক গভীর ভাবনা—সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, ইসলামি জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া, এবং যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলা।


মাওলানা আহমদ শফি বললেন, “রমজান আমাদের আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দিয়েছে। কিন্তু শাওয়াল মাস আমাদের আরেকটি বড় সুযোগ দেয়—এটি তাকওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাস। নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এবং শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪)”


তার কথা শুনে ছাত্রদের মধ্যে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ল। তারা জানতে চাইল, “শাইখ! এই ছয়টি রোজার গুরুত্ব কী?”


মাওলানা আহমদ শফি উত্তর দিলেন, “এটি আমাদের অতিরিক্ত নফল ইবাদতের প্রতি মনোযোগী করে এবং রমজানের পরও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ দেয়। যারা এই রোজাগুলো রাখে, তারা পুরো জীবনের জন্য রোজার সওয়াব অর্জন করতে পারে।”


তাদের আলোচনা যখন গভীর হচ্ছিল, তখন একজন যুবক দ্রুত মসজিদে প্রবেশ করল। তার মুখে চিন্তার ছাপ।


“শাইখ! শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আপনাকে দেখা করতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, শহরে এক ভয়ানক ষড়যন্ত্র চলছে, যা ইসলাম ও ন্যায়পরায়ণতার বিরুদ্ধে।”


মাওলানা আহমদ শফি কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তিনি জানতেন, সত্যের পথে বাধা আসবেই। তিনি ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “প্রস্তুত হও। শাওয়াল মাস শুধু ইবাদতের মাস নয়, এটি সত্যের জন্য সংগ্রামের মাসও।”


@@@

 শহরে এক ভয়ানক ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হবে সালেহ বিন তামীম ও তার সাথীরা।


মাওলানা আহমদ শফি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলেন যুবকের কথা। ষড়যন্ত্রের গন্ধ তিনি স্পষ্ট অনুভব করছিলেন। শহরের অভিজাত এলাকার এক ব্যক্তি তাকে গোপনে ডেকে পাঠিয়েছেন, যার পরিচয় এখনো অজানা। তিনি ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছালেন।


জায়গাটি ছিল শহরের এক প্রান্তে, যেখানে সাধারণত মানুষের আনাগোনা কম। সেখানে এক বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার সাহেব বসে ছিলেন, তার চোখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।


"শাইখ, আমি বহুদিন ধরে একটি গোপন দলকে পর্যবেক্ষণ করছি। তারা ইসলামকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। তাদের নেতা কিছু নাস্তিক ও কুফরবাদী চিন্তাবিদ, যারা তরুণদের বিভ্রান্ত করতে চায়। তারা কুরআনের আয়াতকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, ইসলামকে পশ্চাৎপদ ধর্ম হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে।" বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার সাহেব থেমে গেলেন, যেন তার ভয় আরও গভীর হয়ে উঠল।


মাওলানা আহমদ শফি ধীরে ধীরে বললেন, "আপনি কি নিশ্চিত যে এরা শুধুই বুদ্ধিবৃত্তিক ষড়যন্ত্র করছে, নাকি আরও বড় কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?"


বৃদ্ধ নিঃশ্বাস নিলেন। "তারা শুধু কথা বলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। আমি শুনেছি, তারা শহরের কিছু যুবককে অর্থ ও প্রলোভনের মাধ্যমে ভুল পথে চালিত করছে। তারা এমন একটি পরিকল্পনা করছে, যা ইসলামি শিক্ষার ভিত্তি নষ্ট করে দেবে।"


মাওলানার ছাত্রদের মধ্যে একজন বলল, "শাইখ! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে এখনই কিছু করতে পারি?"


মাওলানা আহমদ শফি বললেন, "কোনো কাজ তাড়াহুড়া করে করা যাবে না। আমাদের প্রথমে জানতে হবে, তাদের মূল উদ্দেশ্য কী। কেবল বাহ্যিক শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেই হবে না, আমাদের নিজেদের ঈমানও শক্তিশালী করতে হবে। শাওয়াল মাস আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছে। আমাদের এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও দ্বীনি জ্ঞানের মাধ্যমে।"


সবাই চুপ হয়ে গেল। শহরের আকাশে তখন সন্ধ্যার আলো-আঁধারি খেলা করছিল। সামনে অপেক্ষা করছিল এক কঠিন লড়াই—সত্যের জন্য, ইসলামের জন্য।


পরবর্তী খণ্ডে: ষড়যন্ত্রের মূল হোতারা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হবে, এবং তাদের মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু হবে।


লেখক মাওলানা মোঃ সাকিব।

২টি মন্তব্য:

আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে শালীন ভাষায় কমেন্ট করুন।"