নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – চতুর্থ খণ্ড (১ম অংশ)
![]() | ||
|
ভিতরের দ্বন্দ্ব: ইমরানের হৃদয়ে আলো ফোটে
গভীর রাত।
হলঘর ফাঁকা।
সবাই চলে গেছে।
শুধু একজন দাঁড়িয়ে আছে মঞ্চের পাশে—ইমরান।
চোখে দৃষ্টি নেই। মাথা নিচু। হাত দুটো পেছনে বাঁধা।
শায়খ আব্দুর রাজ্জাকও ধীরে ধীরে মঞ্চের নিচে নামলেন।
“তুমি এখনো গেলে না?”
ইমরান মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না, কিছু বলতে চাই।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হাসলেন, “বলো।”
ইমরান গলার স্বর নিচু করে বলল—
“শায়খ, সত্যি করে বলুন, আপনি কি এক মুহূর্তের জন্যও আমার প্রতি রাগ করেননি?”
শায়খের মুখে কোমল হাসি।
“তুমি সত্য খুঁজছো। সত্য খোঁজা অপরাধ নয়, বরং তা তো নবীদের মিশন ছিল।”
ইমরানের চোখে জল এসে গেল।
“শায়খ, আমি সারা জীবন ইসলামকে অন্ধকার, নারী নিপীড়ক, স্বাধীনতা হরণকারী বলে এসেছি। আজ মনে হচ্ছে আমি কত ভুল ছিলাম।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক ধীরে ধীরে বললেন—
“ভুলে নয়, সত্য জানার সুযোগ না পেলে অনেকেই পথ হারায়। তুমি এখন প্রশ্ন করো, যত চাও।”
ইমরান বলল—
“আমি আজ একটা অন্যরকম প্রশ্ন করতে চাই।
ইসলাম কি ভালোবাসা চেনে না?
ইসলামে কি কেবল হারাম-হালাল?
ভালোবাসা, অনুভূতি, আবেগ—এসব কোথায়?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এবার গম্ভীর হলেন।
“তুমি কি জানো? রাসূল (সা.) তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা.)-কে ভালোবেসে বলেন—
‘এই ভালোবাসা এমন, যেমন গাঁটছড়া—যা দিনকে দিন আরও মজবুত হয়।’
(তিরমিযি)
তিনি ভালোবাসতেন, কাঁদতেন, হাসতেন—
তবে সবই ছিল পবিত্রতার সাথে, আদর্শের মাঝে।
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক সামনে এগিয়ে এসে রায়হানের কাঁধে হাত রাখলেন।
“ইসলাম হৃদয়হীন ধর্ম নয়—বরং হৃদয়ের গভীর অনুভূতির আদর্শ রূপ।”
ইমরান ধীরে ধীরে বলল—
“তাহলে কেন আজ ইসলামের নামে এত ঘৃণা, এত কঠোরতা?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“কারণ মানুষ ধর্ম মানে শুধু ফতোয়া বোঝে, হৃদয় বোঝে না।
যখন ইসলাম থেকে প্রেম, দয়া আর মায়া হারিয়ে যায়, তখন তা কেবল নিয়মের খোলসে পরিণত হয়।
আর সেটাকেই মিডিয়া সামনে আনে।”
ইমরান বলল—
“তাহলে ইসলাম মানে ভালোবাসাও?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“ইসলাম মানে দায়িত্বশীল ভালোবাসা।
যা হারাম নয়, বরং হালাল পথে ফুল ফোটায়, সম্পর্ক গড়ে।
রাসূল (সা.) ছিলেন প্রেমিক, পিতা, স্বামী—এবং সব কিছুর চেয়ে বড় মানবতার নেতা।”
ইমরান এবার চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। চোখে পানি।
তার ভিতরে যেন ঝড় বইছে।
(চলবে...)
[দ্বিতীয় অংশে: ইমরানের প্রশ্ন—"তাহলে ইসলাম কীভাবে নারীকে সম্মান দেয়?" সেই প্রশ্নের হৃদয়ছোঁয়া জবাব]
নাস্তিকের প্রশ্ন ও ইসলামের জবাব – চতুর্থ খণ্ড (২য় অংশ)
নারী ও ইসলামের সম্মান: এক ভুল বোঝাবুঝির অবসান
ইমরান এবার শায়খের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল—
“শায়খ, আমি এখনো এক জিনিস বুঝতে পারছি না।
আপনারা বলেন ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে, অথচ কেন নারীর উত্তরাধিকার অর্ধেক?
কেন নারীর সাক্ষ্য অর্ধেক?
কেন মেয়েদের ঘরে থাকতে বলা হয়?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক হালকা হাসলেন, কিন্তু চেহারায় চিন্তার রেখা।
“তুমি জানো ইমরান, একটি আয়াত না বুঝে, একটি হাদিস না জানিয়ে রায় দিলে কী হয়? ধর্মের নামে ভুল বিচার।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“আসো, আজ আমি শুধু যুক্তি নয়, উদাহরণ দিয়ে বলি।”
প্রথমত: উত্তরাধিকার অর্ধেক কেন?
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“তুমি কি জানো, ইসলাম নারীর উপর কোনো আর্থিক দায়িত্ব চাপায়নি?
মেয়ের বিয়ে হলে স্বামী তাকে সম্পূর্ণ খরচ দেয়।
ভাইয়ের বিয়ে হলে সে তার স্ত্রীর খরচ বহন করে, বোনের নয়।
মেয়েকে যা দেওয়া হয়, তা সে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যয় করতে পারে।
তাই অর্ধেক অংশ, কিন্তু খরচ শূন্য।
আর ছেলেকে দ্বিগুণ, কারণ তাকেই স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবার দায়িত্ব নিতে হয়।”
দ্বিতীয়ত: সাক্ষ্য অর্ধেক কেন?
শায়খ শান্ত কণ্ঠে বললেন—
“সবক্ষেত্রে নারীর সাক্ষ্য অর্ধেক নয়।
শুধু কিছু নির্দিষ্ট আর্থিক লেনদেনে—যেখানে ভুল হোক, ভুল বুঝে লিখা হোক—
সেখানে নারীর স্বভাবজাত আবেগের কারণে দ্বিতীয় একজন নারীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এটা অসম্মান নয়, বরং নারীর সম্মান রক্ষায় নিরাপত্তা।”
তৃতীয়ত: নারীর ঘরে থাকা—ঘর কি বন্দি করে?
শায়খ বললেন—
“ইসলাম বলে না যে মেয়েরা বাইরে যাবে না।
ইসলাম বলে—‘তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।’
বাহিরে যাক, পড়ুক, চাকরি করুক—কিন্তু পর্দা, লজ্জা, নম্রতা বজায় রেখে।
এই তো আদর্শ।”
ইমরান কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
তার চোখ যেন কাঁচের মতো স্বচ্ছ হয়ে উঠছে।
“শায়খ, আজ আমার সব প্রশ্ন গলে যাচ্ছে।
ইসলামকে আমি যেভাবে চিনেছিলাম, আসলে তা ইসলামই ছিল না।
আমার জানা ইসলাম ছিল মিডিয়ার ইসলাম।”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বললেন—
“ইমরান, ইসলামকে জানতে হয় কোরআন ও রাসূলের জীবন থেকে।
মানুষের ভুল থেকে নয়।”
ইমরান ধীরে ধীরে বলল—
“তাহলে শায়খ, যদি কেউ সত্যিই ইসলাম জানে,
সে কি কখনো ইসলাম বিদ্বেষী হতে পারে?”
শায়খ আব্দুর রাজ্জাক মুচকি হেসে বললেন—
“না, বরং সে ইসলামকে ভালোবাসবেই।
আর ভালোবাসা মানে হলো—অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করা।”
ইমরান এবার চুপ করে রইল।
সে যেন ভেতরে ভেতরে পরিবর্তনের পথে হাঁটছে।
(চলবে...)
Masaallah
উত্তরমুছুনAlhamdulillah
উত্তরমুছুনআলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর
উত্তরমুছুন